স্বাস্থ্য

‘দাদ’ (Tinea Cruris): কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও ঘরোয়া চিকিৎসা

‘দাদ’ থেকে মুক্তির উপায় এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

‘দাদ’ (Tinea Cruris) সবার পরিচিত স্কিন ইনফেকশন এটি একটি ফাঙ্গাস বা ছত্রাকনাশক ইনফেকশন যা আমাদের স্কিনে গোল গোল চাকতির মত ক্ষত তৈরি করে এবং প্রচন্ড চুলকানি সৃষ্টি করে। ঘরোয়া পদ্ধতিতে খুব সহজেই ‘দাদ’ কে নিরাময় করা সম্ভব।

‘দাদ’ সাধারণত তিন প্রকার

১. Tinea Cruris: শরীরের ভাঁজযুক্ত অঞ্চলকে সাধারণত growing area বলা হয় আর এসব জায়গায় ‘দাদ’ সবথেকে বেশি হয়ে থাকে। আমাদের দেশে সাধারণত এই ‘দাদ’ টি বেশি লক্ষ্য করা যায়।
যেমন: কুচকি,বগল,নাভি,ঘাড়ে।

২. Tinea Pedis: ‘দাদ’ ভাঁজযুক্ত অঞ্চল ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন অংশে হয়ে থাকে সেসব ‘দাদ’ কে Tinea pedis বলা হয়। আমাদের দেশে সাধারণত এসব ‘দাদ’ কোম দেখা যায়। যেমন: হাতে,পেটে, পিঠে, মাথার চামড়ায়, কপালে।

৩. Tinea Corporis: যখন কোন ‘দাদ’ পায়ে বা পায়ের উপর আংশে হয়ে থাকে তখন তাকে Tinea Corporis বলা হয়। যেমন: পায়ের গোড়ালি, পায়ের তালু, পায়ের আংগুলের ভাঁজে।

‘দাদ’ হওয়ার কারণ সমূহ

আমাদের স্কিনে ক্ষুদ্র অনুজীব একপ্রকার নর্মাল ফ্লোরা হিসেবে বাস করে। মেডিকেল টার্ম এ কে Dermatophyte বলা হয়। এই Dermatophyte এর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আছে যা আমাদের শরীরের ক্ষতি করে না কিন্তু এর পরিমাণ বেড়ে গেলে স্কিন ইনফেক্টেড হয়। যেসব কারণে এই Dermatophyte বেড়ে যায়।

১. অতিরিক্ত ময়লা ধুলাবালি স্কিনে জমা হলে।

২. ময়লা কাপড় ব্যবহার করলে।

৩. অত্যাধিক ঘাম জমা হলে।

৪. স্যাঁতস্যাঁতে তরল বা আর্দ্র পরিবেশ তৈরি হলে। সাধারণত বাইক রাইড বা গোসল করার পর শরীরে অতিরিক্ত পানি জমা হয়ে থাকলে এই Dermatophyte এর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

‘দাদ’ এর লক্ষণ সমূহ

১. প্রচন্ড রকমের চুলকানি হতে পারে।

২. লাল লাল গোলাকার রিং আকৃতির দাগ সৃষ্টি হতে পারে। চারপাশের ছোট ছোট লাল দাগ থাকবে এবং মাঝখানে ক্লিয়ার থাকবে।

৩. ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে।

৪. প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটা সময়ে চুলকানি বেড়ে যেতে পারে। যেমন: গোসলের পরে, ঘুম থেকে ওঠার পর, ঘুমানোর আগে, দুপুরবেলা চুলকানি বেড়ে যেতে পারে।

৫. চুলকাতে চুলকাতে জল এবং রক্ত আসতে পারে।

৬. ক্ষত তে পুঁজের অস্তিত্ব পাওয়া যেতে পারে।

‘দাদ’ কিভাবে প্রতিরোধ করবে?

১. পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন কাপড় ব্যবহার করতে হবে।

২. টাইট ফিট জামা পরিহার করতে হবে।

৩. সুতি কাপড় ব্যবহার করতে হবে যাতে শরীরের অতিরিক্ত ঘাম শোষণ করতে পারে।

৪. আক্রান্ত ব্যক্তির কাপড় শেয়ার করা যাবে না,কারণ দাঁত একটি ছোঁয়াচে রোগ।

৫. ধূলাবালি থেকে এড়িয়ে চলতে হবে।

৬ .পুকুরের জলে গোসল করা যাবে না কারণ পুকুরের জলে Fungal Organism এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।

৭. গোসলের পর Growing Area গুলোকে গামছা বা টাওয়েল দিয়ে খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

৮. শরীরের আক্রান্ত অংশে নখ দিয়ে আঁচড়াবেন না। এতে আপনার শরীরের অন্যান্য অংশে এই ‘দাদ’ ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করতে পারে এবং আপনার চুলকানি আরও বেশি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

৯. আপনার কাপড় বা বিছানার চাদর ধোয়ার সময়, গরম পানি এবং একটি শক্তিশালী ডিটারজেন্ট ব্যবহার করুন। গরম জল কহুব দ্রুত ছাত্রাক কণা মেরে ফেলে। তবুও, নিরাপত্তার পরিমাপ হিসাবে, ডিটারজেন্ট ব্যবহার করুন, বিশেষত ব্লিচ বা বোরাক্স যুক্ত।

১০. কোনরূপ বিচিং পাউডার বা অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য ক্ষতস্থানে ব্যবহার করা যাবে না। এতে ক্ষতস্থান আরো বেশি বৃদ্ধি পেতে পারে।

১১. ক্ষারযুক্ত সাবান ‘দাদ’ রোগকে আরো বেশি বাড়িয়ে তোলে। ক্ষতস্থানে সাবান শ্যাম্পু বা ডেটল ব্যবহার করা যাবে না।

১২. সব সময় নিজেকে পরিপাটি এবং পরিষ্কার রাখতে হবে।

ক্লিনিক্যাল ট্রিটমেন্ট

১. Clotrimazole Cream USP 1% যদি তাদের পরিমাণ কম হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে এই ক্রিমটি ব্যবহার করতে হবে।

২. Terbinafine Hydrochloride & Itraconazole Cream যদি তাদের পরিমাণ বেশি হয়ে থাকে তবে Terbinafine Group এর যেকোনো ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।

৩. Miconazole nitrate cream 2%

৪. Cetoconazole গ্রুপ এর যেকোনো মলম ব্যাবহার করতে পারেন। তবে যদি অতিরিক্ত খারাপ অবস্থা তৈরি হয় তবে ক্রিম এর পাশাপাশি কিছু ওরাল ট্যাবলেটও খেতে হবে। যেমন,

  1. Fluconazole 150mg
  2. Fexofenadine 120mg
  3. Itraconazole 200 mg
  4. Terbinafine 250 mg

তথ্যসূত্র: ডা.মো.আসিফুজ্জামান বিভাগীয় প্রধান ডার্মাটোলজি গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজ ঢাকা এবং ডা. মিয়ানুর রহমান।

ঘরোয়া পদ্ধতিতে যেভাবে ‘দাদ’ থেকে মুক্ত হওয়ার উপায়

নারিকেল তেল

নারিকেল তেলে ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন কে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ যা ত্বক এবং চুলের জন্য একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর উপাদান। দাদের জায়গাতে নারিকেল তেল লাগানো হলে তা ‘দাদ’ কে সারিয়ে ফেলার জন্য অনেকটাই সাহায্য করে। বিভিন্ন ধরণের ত্বকের অ্যালার্জিকে সারিয়ে তুলতে নারকেল তেল খুবই প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে।

হলুদ

হলুদে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, অ্যান্টি-ভাইরাল ও অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান থাকে যা ‘দাদ’ সেরে উঠতে সাহায্য করে। টাটকা হলুদের পেস্ট বানিয়ে সেইটা দাদের লাগালে সেইটা ‘দাদ’ কে সারিয়ে তোলে খুবই দ্রুত।

আমাদের সবার বাড়িতেই রান্নার জন্য হলুদ থাকে। এটি দাদের জন্য অনেক কার্যকরী।

পুদিনা ও লেবুর রস

লেবুর রসে থাকে সাইট্রিক এসিড যা আ্যান্টি ফাঙ্গাল ইনফেকশন দূর করতে পারে। পুদিনা পাতা বেটে তার একটি পেস্ট বানিয়ে তার মধ্যে অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে ‘দাদ’ সংক্রামিত জায়গায় ভালো করে লাগাতে হবে। এইরকম ভাবে কয়েকদিন লাগালেই ‘দাদ’ খুব দ্রুত উধাও হয়ে যাবে।

রসুন

রসুনের এর মাঝেও আ্যান্টি ফাঙ্গাল এর গুন বিদ্যামান। যার ফলে রসুন ‘দাদ’ কে সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। রসুন বেটে নিয়মিত ক্ষতস্থানে লাগালে ‘দাদ’ এর উপশম সম্ভব।

ঘৃতকুমারী

ঘৃতকুমারী নানান রোগের ন্যায় ‘দাদ’ সারতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। প্রথমে ঘৃতকুমারীর কে কেটে জেল বের করতে হবে। তারপর সেই ঘৃতকুমারীর রস দাদের ক্ষত অংশে লাগাতে হবে। তাহলে কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা ‘দাদ’ থেকে উপসম পেতে পারি।

১. এছাড়াও ঘৃতকুমারী, মধু, লেবুর রস একসাথে পেস্ট বানিয়ে ‘দাদ’  এ লাগালে কার্যকরী বেশি হয়।

২.অথবা নিম পাত, লেবুর রস ও হলুদ গুঁড়া একসাথে পেস্ট বানিয়ে দাদে লাগাতে পারি। সবথেকে ভালো হয় ‘দাদ’ হওয়ার পূর্বে এর বিরুদ্ধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করা।

শরীরের ভাঁজ যুক্ত এলাকায় পানি জমতে বা ঘামতে না দেওয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা হতে পারে ‘দাদ’ রোগের একমাত্র প্রতিষেধক।

শামিম হাসান

I am currently a second-year student at the Nursing & Midwifery College in Jashore, where I am dedicated to advancing my knowledge and skills in healthcare. Alongside my studies, I work in Clinical Practice, gaining invaluable hands-on experience. I also contribute to Ovizatri, a news and magazine website, where I write insightful articles on health issues. Feel free to reach out to me with any health-related questions via the email provided in my profile.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button