সিজোফ্রেনিয়া: মানসিক স্বাস্থ্যের এক জটিল চ্যালেঞ্জ
লক্ষণ, কারণ, ঝুঁকি এবং চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত বিশ্লেষণ
Disclaimer
The information provided in this article is intended for educational and informational purposes only. It is not a substitute for professional medical advice, diagnosis, or treatment. Always seek the advice of your physician or other qualified health provider with any questions you may have regarding a medical condition. Never disregard professional medical advice or delay in seeking it because of something you have read in this article.
The content discussed here is based on general knowledge and research on schizophrenia and related mental health issues. While every effort has been made to ensure the accuracy of the information, the author and publisher make no representations or warranties of any kind, express or implied, about the completeness, accuracy, reliability, suitability, or availability with respect to the article or the information contained within it for any purpose. Any reliance you place on such information is therefore strictly at your own risk.
In no event will the author or publisher be liable for any loss or damage including without limitation, indirect or consequential loss or damage, or any loss or damage whatsoever arising from loss of data or profits arising out of, or in connection with, the use of this article.
If you suspect you or someone you know may have schizophrenia or any other mental health condition, it is important to seek professional help immediately. This article does not endorse or recommend any specific tests, physicians, products, procedures, opinions, or other information that may be mentioned within. Reliance on any information provided in this article is solely at your own risk.
মানসিক অন্যান্য সমস্যার মধ্যে সিজোফ্রেনিয়া একটি জটিল মানসিক রোগ। এই রোগের অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে চিন্তাধারা এবং অনুভূতি প্রকাশের মধ্যে কোনো সঙ্গতি থাকে না। যেমন পরিবারের কেউ অথবা পরিচিত যারা আছেন তাদের প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করা। অর্থাৎ এই রোগীরা মনে করে তার খাবারে বিষ মিশিয়ে দিচ্ছে। এ ছাড়াও আরও অহেতুক বিষয়ে সন্দেহ করে থাকেন তারা। এ ধরণের রোগীদের নিয়ে খুব সমস্যায় পড়ে যান তার চারপাশের লোকজন। রোগীর এমন অদ্ভুত আচরণগুলো মানিয়ে নিতে বেশ কঠিন হয়ে যায় সবার জন্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাতে সিজোফ্রেনিয়াকে একটি মস্তিষ্ক-সম্পর্কিত রোগ বলে অবহিত করা হয়, যা সারা বিশ্বের মানুষকে আক্রান্ত করে। যার সংখ্যা প্রায় ২১ মিলিয়ন। এর সংখ্যা এতো হওয়া সত্ত্বেও এখনো সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা প্রায় ৫০ শতাংশ সঠিক চিকিৎসা পায় না। কারণ মানুষ এখনো এই সিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত নয়।
সিজোফ্রেনিয়া কি?
সিজোফ্রেনিয়া এমন একটি মানসিক ব্যাধি যা আক্রান্ত ব্যক্তির চিন্তাভাবনা এবং বোঝার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। এমনকি এই ধরনের রোগীরা একটি কাল্পনিক জগতে বসবাস করতে শুরু করে। তারা বিভিন্ন ধরনের কণ্ঠস্বর শুনতে পায় যার অস্তিত্ব আসলেই নেই। এটি তার পুরো জীবনকে প্রভাবিত করে।
সিজোফ্রেনিয়ার প্রকারভেদ
সিজোফ্রেনিয়া বিভিন্ন ধরণের আছে। এগুলোকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়।
Paranoid schizophrenia
এই রোগীর সবসময় মনে হয় তার উপর অত্যাচার করা হচ্ছে কিংবা অন্যরা তাকে গোপনে দেখছে।
Disorganized schizophrenia
এই ধরনের রোগীকে দেখে বিভ্রান্ত মনে হয়।
Catatonic schizophrenia
রোগী স্থির হয়ে থাকে অথবা কথা বলতে না পারে।
Undifferentiated schizophrenia
একটা উপশাখা যেটাতে কোনো Paranoid, Disorganized এবং Catatonic এর উপশাখার বৈশিষ্ঠগুলো লক্ষণীয় না।
Residual Schizophrenia
যখন সাইকোটিক লক্ষণগুলো কমতে থাকে কিংবা আর দেখা যায় না।
উপসর্গ
প্রথম দিকে এই রোগটির লক্ষণগুলি হঠাৎ করেই দেখা দেয় এবং গুরুতর হয়। এজন্য সিজোফ্রেনিয়ার কমন উপসর্গগুলোকে তিনটি বিভাগে ভাগ করা যায়। যথা; পজিটিভ উপসর্গ, কগনিটিভ উপসর্গ এবং নেগেটিভ উপসর্গ।
সিজোফ্রেনিয়া এর পজিটিভ উপসর্গ
এখানে পজিটিভ কথাটিকে অনেকেই ভালো বলে মনে করতে পারেন। আসলে এই পজিটিভ কথাটি দিয়ে ‘ভালো’ বোঝানো হচ্ছে না। বরং এর চিন্তাভাবনা এবং ব্যবহার যা বিচারশক্তিহীন হয়ে যায় এমন কিছুকে বোঝানো হচ্ছে। মাঝেমধ্যে এগুলোকে সাইকোটিক উপসর্গও বলা হয়।
পজিটিভ উপসর্গগুলো হচ্ছে –
ক. বিভ্রম বা Delusions
বিভ্রম বা Delusions হচ্ছে অদ্ভুত বিশ্বাস যার সাথে বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক নেই। এই ধরনের ব্যাক্তিদের বাস্তবিক তথ্য দেওয়া হলেও তাদের বিশ্বাসের পরিবর্তন হয় না। যেমন এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মনে হতে পারে তাকে সবাই ভুল বোঝাচ্ছে অথবা মানুষ তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে ইত্যাদি অমূলক চিন্তা হতে পারে।
খ. অলীক কিছুর অস্তিত্বে বিশ্বাস বা Hallucinations
অলীক কিছুর অস্তিত্বে বিশ্বাস বা Hallucination এ আক্রান্ত ব্যাক্তি সবসময় অবাস্তব জিনিস অনুভব করে। তাদের সবসময় মনে হয় তারা কিছু দেখতে পাচ্ছে বা শব্দ শুনতে পাচ্ছেন বা অদ্ভুত গন্ধ পাচ্ছে অথবা শরীরে কোনো জিনিস লেগে না থাকলেও কিছু একটা শরীর স্পর্শ করছে এমন মনে হতে পারে।
গ. Catatonia
রোগী দীর্ঘ সময় ধরে একটা জায়গায় স্থির থেকে যায়।
কগনিটিভ উপসর্গ
ক. ঠিকমতো তথ্য না বুঝে, চিন্তা না করে কাজ করা।
খ. অমনোযোগী হওয়া।
গ. কোনো তথ্য জানা সত্ত্বেও সেটা কোন কাজে ব্যবহার করতে না পারা।
নেগেটিভ উপসর্গ
এখানে নেগেটিভ বলতে আবার ‘খারাপ’ বোঝানো হয় না। বরং ব্যক্তির সাধারণ কিছু ব্যবহারের অনুপস্থিতিকে বোঝানো হয়।
ক. আবেগের অনুপস্থিতি
খ. সব কিছু থেকে বিরত থাকা অর্থাৎ একা একা থাকা
গ. শক্তি হ্রাস পাওয়া
ঘ. অনুপ্রেরণার অভাব
ঙ. জীবনের প্রতি অনীহা
চ. শরীরের যত্ন না নেওয়া
সিজোফ্রেনিয়া হওয়ার কারণ
সিজোফ্রেনিয়া কেন হয় তার সঠিক কারণটা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে গবেষকরা সিজোফ্রেনিয়া হওয়ার কয়েকটি কারণের কথা উল্লেখ করেন।
বংশগত বা জেনেটিক্স
বাবা-মা’র মাধ্যমেও এই রোগ সন্তানের হতে পারে। অর্থাৎ বংশগত কারণেও এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
পরিবেশগত কারণ
ভাইরাস সংক্রমণ, টক্সিনের আশেপাশে সময় ব্যয় করা, অত্যন্ত চাপগ্রস্থ পরিস্থিতি ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে সিজোফ্রেনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
সিজোফ্রেনিয়ার ঝুঁকি
সিজোফ্রেনিয়া হওয়ার ঝুঁকি কিছু নির্দিষ্ট কারণে বেড়ে যেতে পারে। যেমন:
- পারিবারিক ইতিহাস: যদি পরিবারের কারও সিজোফ্রেনিয়া থাকে, তাহলে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- গর্ভাবস্থায় সংক্রমণ: গর্ভাবস্থায় ভাইরাস সংক্রমণ বা অপুষ্টি সিজোফ্রেনিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- মানসিক চাপ: অত্যন্ত মানসিক চাপের পরিস্থিতি সিজোফ্রেনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।
- মাদকদ্রব্যের ব্যবহার: কিশোর বয়সে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার সিজোফ্রেনিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
সিজোফ্রেনিয়ার জটিলতা
সিজোফ্রেনিয়া রোগীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন:
- অবসাদ: সিজোফ্রেনিয়া রোগীরা প্রায়ই অবসাদে ভোগেন।
- আত্মহত্যার প্রবণতা: সিজোফ্রেনিয়া রোগীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি থাকে।
- মাদকাসক্তি: সিজোফ্রেনিয়া রোগীরা মাদকাসক্ত হতে পারেন।
- আর্থিক সমস্যা: সিজোফ্রেনিয়া রোগীরা কাজ করতে অক্ষম হওয়ায় আর্থিক সমস্যায় পড়তে পারেন।
- সামাজিক বিচ্ছিন্নতা: সিজোফ্রেনিয়া রোগীরা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারেন।
চিকিৎসা
কোনো রোগীকে দেখার পর যদি ডাক্তার বোঝেন যে তার সিজোফ্রেনিয়ার উপসর্গ আছে তাহলে তিনি রোগীকে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট অথবা সাইকোলজিস্ট এর কাছে অবশ্যই পাঠাবেন। সাইকিয়াট্রিস্ট এবং সাইকোলজিস্টরা রোগীর মানসিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করে এবং তারা কমপক্ষে ৬ মাস রোগীকে দেখেন। এর মধ্যে যদি রোগীর সিজোফ্রেনিয়ার উপসর্গ থাকে তাহলে তাকে সিজোফ্রেনিয়া রোগী বলে ধরা হয়।
প্রথমে সাইকিয়াট্রিস্ট এবং সাইকোলজিস্টরা বিভিন্ন মানসিক চিকিৎসা দ্বারা সিজোফ্রেনিয়া এর বিভিন্ন উপসর্গকে ভালো করার চেষ্টা করে থাকে। এতে অনেক রোগী সিজোফ্রেনিয়া উপসর্গগুলোকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে শিখে।
ওষুধ
সিজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়। যেমন:
- অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ: এই ওষুধগুলো সিজোফ্রেনিয়ার পজিটিভ উপসর্গগুলো কমাতে সাহায্য করে।
- অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ: এই ওষুধগুলো সিজোফ্রেনিয়ার সাথে সম্পর্কিত অবসাদ কমাতে সাহায্য করে।
- অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি ওষুধ: এই ওষুধগুলো সিজোফ্রেনিয়ার সাথে সম্পর্কিত উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।
থেরাপি
সিজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের থেরাপি ব্যবহার করা হয়। যেমন:
- কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT): এই থেরাপি রোগীর নেতিবাচক চিন্তাভাবনা পরিবর্তনে সাহায্য করে।
- পারিবারিক থেরাপি: এই থেরাপি রোগীর পরিবারের সদস্যদের সাথে কাজ করে রোগীর চিকিৎসায় সাহায্য করে।
- সাপোর্টিভ থেরাপি: এই থেরাপি রোগীকে মানসিক সমর্থন প্রদান করে এবং তার মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে।
রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম: এই প্রোগ্রামগুলো রোগীকে সামাজিক এবং পেশাগত দক্ষতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
সিজোফ্রেনিয়ার প্রতিরোধ
সিজোফ্রেনিয়া প্রতিরোধের কোনো নিশ্চিত উপায় নেই। তবে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে এর ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। যেমন:
- মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি: মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে সিজোফ্রেনিয়ার প্রাথমিক লক্ষণগুলি সনাক্ত করা যেতে পারে।
- পরিবারের সমর্থন: পরিবারের সদস্যদের সমর্থন এবং সহযোগিতা সিজোফ্রেনিয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- মানসিক চাপ কমানো: মানসিক চাপ কমানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম, যোগব্যায়াম এবং মেডিটেশন করা যেতে পারে।
- মাদকদ্রব্যের ব্যবহার এড়ানো: মাদকদ্রব্যের ব্যবহার এড়িয়ে চলা সিজোফ্রেনিয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
সিজোফ্রেনিয়া নিয়ে কিছু ভুল ধারণা
সিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। যেমন:
- সিজোফ্রেনিয়া মানেই দ্বৈত ব্যক্তিত্ব: অনেকেই মনে করেন সিজোফ্রেনিয়া মানেই দ্বৈত ব্যক্তিত্ব, কিন্তু এটি সঠিক নয়। সিজোফ্রেনিয়া একটি মানসিক ব্যাধি যা চিন্তাভাবনা এবং বাস্তবতার মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
- সিজোফ্রেনিয়া রোগীরা সবসময় সহিংস হয়: সব সিজোফ্রেনিয়া রোগী সহিংস হয় না। অনেক রোগীই শান্তিপূর্ণভাবে জীবনযাপন করেন।
- সিজোফ্রেনিয়া নিরাময়যোগ্য নয়: সঠিক চিকিৎসা এবং সমর্থনের মাধ্যমে সিজোফ্রেনিয়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
উপসংহার
সিজোফ্রেনিয়া একটি জটিল মানসিক রোগ যা আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। তবে সঠিক চিকিৎসা, থেরাপি এবং পরিবারের সমর্থনের মাধ্যমে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রাথমিক লক্ষণগুলি সনাক্ত করে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আজ এই পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ
ছবি: Image by katemangostar on Freepik
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.