বিশেষ প্রতিবেদন

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা: কারণ, পরিসংখ্যান ও প্রতিকার

কেন শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে এবং কীভাবে আমরা এই প্রবণতা কমাতে পারি

বিজ্ঞাপন

প্রথম প্রকাশ: ২৬ মে, ২০২৩

দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ভর্তি পরীক্ষা নামক মহাযুদ্ধ জয় করতে হয় তাদের। তবে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ে ভর্তির পরও অনেকে আত্মহত্যা করছে।

আত্মহত্যার কারণ

করোনা মহামারীর পর থেকে নানা কারণে এই আত্মহননের পথ বেশি বেছে নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। সম্পর্ক বিচ্ছেদ, মানসিক অশান্তি, পারিবারিক ঝামেলাসহ নানা কারণে তারা এ পথ বেছে নিয়েছে। তবে পৃথিবীর সব ধর্মে এবং নৈতিকতায় আত্মহত্যার পক্ষের কোনো আলাপ নেই। তাহলে মানুষ কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়?

আত্মহত্যার পরিসংখ্যান

সামাজিক সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী:

  • ২০২২ সালে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৫৩২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
  • ২০২১ সালে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।
  • ২০১৮ সালে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছিলেন।
  • ২০১২ সালে এ ধরনের ঘটনা ঘটে মোটে একটি।

আত্মহত্যার কারণ বিশ্লেষণ

আত্মহত্যার কারণ অনুষন্ধান করে দেখা গেছে, আত্মহত্যার অন্যতম কারণ হচ্ছে সম্পর্কের অবনতি। আত্মহত্যা করাদের মধ্যে:

বিজ্ঞাপন
  • ২৪.৭৫% বিভিন্ন ধরনের সম্পর্কের অবনতির কারণে আত্মহত্যা করেছে।
  • ১৯.৮০% পারিবারিক সমস্যার কারণে।
  • ১৫.৮৪% মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে।
  • অন্যান্য ছোট ছোট কারণও রয়েছে।

আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান

আন্তর্জাতিক এক সংস্থার গবেষণা বলছে, বিশ্বে বর্তমানে ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী মানুষের মৃত্যুর প্রধান তিনটি কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে ‘আত্মহত্যা’। মানসিক দুশ্চিন্তাই আত্মহত্যার একমাত্র কারণ নয়। এর পেছনে কাজ করে অর্থনৈতিক অবস্থা এবং জীবন ধারণের অবনতির আশঙ্কা।

সাম্প্রতিক ঘটনা

সর্বশেষ রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষার্থীর লাশ নিজ কক্ষ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। সহপাঠীদের দাবি, একাডেমিকসহ কিছু ব্যক্তিগত কারণে তারা এ পথ বেছে নিয়েছেন। তবে কারণ যাই হোক না কেন, আত্মহত্যা কোনো সমস্যার সমাধান নয়।

প্রতিকার ও সুপারিশ

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী তথা তরুণ সমাজ জাতির ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি। তাদের মানসিক সুস্থতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জীবন ও জগৎ সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ার জন্য তাদের পর্যাপ্ত অনুপ্রেরণা প্রদানের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের রয়েছে বিরাট ভূমিকা।

প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ:

  • নীতিনির্ধারকদের প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে।
  • গণসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
  • সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে সমন্বিত প্রকল্প ও কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন।
  • উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মের সুযোগ সৃষ্টি ও কর্ম নিশ্চয়তা প্রদান।
  • ক্রমবর্ধমান অসমতা দূরীকরণ ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি।
  • মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রচারণা, প্রতিরোধ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসন এর ব্যবস্থা।
  • আত্মকর্মসংস্থান তৈরি, কমিউনিটি ও পরিবারের সহায়তায় হতাশামুক্ত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরি।
  • প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সেলর নিয়োগ।

বাস্তবমুখী জ্ঞান:

বিজ্ঞাপন
  • আর্থিক ব্যবস্থাপনা
  • আবেগ নিয়ন্ত্রণ
  • ক্যারিয়ার কেন্দ্রিক দক্ষতা উন্নয়ন

তথ্যবহুল টেবিল

বছর আত্মহত্যার সংখ্যা প্রধান কারণ
২০১২ সম্পর্কের অবনতি
২০১৮ পারিবারিক সমস্যা
২০২১ ১০২ মানসিক যন্ত্রণা
২০২২ ৫৩২ সম্পর্কের অবনতি

মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা

শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:

  • মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা: শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করা।
  • পরামর্শদান সেবা: প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সেলর নিয়োগ।
  • সহযোগিতা ও সমর্থন: শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমাতে পরিবার ও কমিউনিটির সহযোগিতা।
  • সামাজিক সংযোগ: শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক সংযোগ বৃদ্ধি করা।

শিক্ষকদের ভূমিকা

শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদের উচিত শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সহায়তা করা এবং তাদের মানসিক চাপ কমাতে পরামর্শ প্রদান করা।

ছবি: Image by creativeart on Freepik

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

আব্দুস সবুর (লোটাস)

My name is Abdus Sabur Lotus. I am a sub-editor at ovizatri.com and a co-founder of this online news and magazine portal. I have worked as a journalist for various Bangladeshi news portals and agencies, both online and offline. I contribute to Haal Fashion and previously served as the Rajshahi University Correspondent for Kalbela. I was also the General Secretary of the Rajshahi University Journalists' Association. I graduated with a degree in Journalism from Rajshahi University. Stay updated with ovizatri.com.

আপনার মতামত জানান?

বিজ্ঞাপন
Back to top button

Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading