বাইস্ট্যান্ডার এফেক্ট (Bystander Effect): কেন আমরা সাহায্য করতে পিছিয়ে যাই?
বাংলাদেশে বাইস্ট্যান্ডার এফেক্টের প্রভাব ও প্রতিরোধের উপায়
Disclaimer
Content Warning: Sensitive Material
This article discusses the psychological phenomenon known as the Bystander Effect and includes references to real-life incidents of violence and murder. The content may be distressing to some readers. Viewer discretion is advised.
Graphic Image Warning
Please be aware that this article contains a graphic image related to a sensitive murder case. The image is intended for educational and informational purposes only. It is not meant to sensationalize or exploit the tragedy. Viewer discretion is strongly advised.
Responsibility and Ethics
The author and publisher of this article do not endorse or condone any form of violence. The inclusion of sensitive material is solely for the purpose of raising awareness and understanding of the Bystander Effect. We urge readers to approach the content with empathy and respect for the victims and their families.
Legal Notice
By continuing to read this article and view the associated images, you acknowledge that you are doing so at your own risk. The author and publisher are not responsible for any emotional distress or harm that may result from viewing the content.
বাইস্ট্যান্ডার এফেক্ট: একটি মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ
আপনি রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন, তখন হঠাৎ দেখলেন একটি মোটরসাইকেল রাস্তা খারাপ হওয়ায় পিছলে পড়ে গেছে। আপনার থেকে সামান্য একটু দূরে। ধরে নিচ্ছি, যিনি পড়ে গেছেন তিনি বেশ সাবধানেই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন, কিন্তু রাস্তা অধিক খারাপ হবার জন্য হোক বা অজানা রাস্তার গর্ত হোক, তার কিন্তু এখন আপনার সাহায্যের খুবই প্রয়োজন। কিন্তু আপনি মনে মনে ভাবছেন যে, এই রাস্তায় অনেক মানুষের ভীড় দেখছি। যেহেতু মোটরসাইকেলের ড্রাইভার বাজেভাবে জখম হতে পারেন বা সম্ভাবনা আছে, সেহেতু আমাকে বাকিদের প্রতিক্রিয়া দেখে তাকে সাহায্য করতে হবে।
মোটরসাইকেল নিয়ে আমাদের অনেকের মনে এমনিতেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া বিদ্যমান। সেক্ষেত্রে আপনি অন্য কোন যানবাহন নিয়ে পুরো বিষয়টি কল্পনা করতে পারেন। এখন যিনি মোটরসাইকেলের নিচে পড়ে আছেন (ড্রাইভার), তাকে সবাই ‘হা’ করে দেখছেন এবং দুর্ভাগ্যবশত সবাই আপনার মত করেই ভাবছেন। হতে পারে কিছু মানুষ আপনাকে চেনেন বা জানেন। তাই তারা চাইছেন যে, আপনি কি করেন বা করবেন সেটা দেখেই তারা তাদের ভূমিকা নির্ধারণ করবেন। এই চিন্তার ‘সময়কাল/ব্যাপ্তি’ ঐ আহত ব্যক্তির অবস্থা নিহত হওয়ায় পরিণত করতে পারে।
বাইস্ট্যান্ডার এফেক্ট: বাংলাদেশে এর প্রভাব
বাংলাদেশে প্রায় ক্ষেত্রে মানুষ এগিয়ে আসেন না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়া কিন্তু সত্যিই উক্ত ব্যক্তির জীবনে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু আমি যদি সমস্যা সৃষ্টি হত না এমন ঘটনাও উল্লেখ করি তাহলেও মানুষের মধ্যে একইরকম প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। আর এই মনস্তাত্ত্বিক প্রবণতাকে বলা হয়, ‘বাইস্ট্যান্ডার এফেক্ট/প্রভাব (Bystander Effect)’। মানুষের এই মানসিক প্রবণতা প্রথম ব্যাপক আলোচনার টেবিলে আসে ১৯৬৪ সালে কিটি জেনোভেসের হত্যাকাণ্ডের পর। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিক। তার হত্যাকাণ্ডের সময় চিৎকার চেঁচামেচি করার কারণে বহু প্রত্যক্ষদর্শী দেখেও না দেখার ভান করেন এবং সবার সামনে তিনি নিহত হন।
বাংলাদেশে বাইস্ট্যান্ডার এফেক্টের উদাহরণ
১. বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড: বিশ্বজিৎ হত্যার সময় আমরা দেখতে পাই মাত্র কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীর আক্রোশে পড়ে কুপিয়ে হত্যার বিষয়টি। এই ভিডিওটি আজও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমসহ নিউজ পোর্টালে বিদ্যমান। মানে হলো, ভিডিও ধারণ করার লোক পর্যন্ত সেখানে উপস্থিত ছিলো, তাও একাধিক এঙ্গেলে! কিন্তু অন্তত একজন বিশ্বজিৎকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলেন না। এই দৃশ্য একজন বাংলাদেশী হিসেবে প্রথমবার আমাকে ছোটো-খাটো ট্রমায় পাঠিয়ে দিয়েছিলো।
২. কিশোর গ্যাং ও নয়ন বন্ডের হত্যাকাণ্ড: কিশোর গ্যাং ও নয়ন বন্ডের জনসম্মুখে একাধিক হত্যাকাণ্ড আমাকে শুধু শিহরিত করে নি, রীতিমতো ট্রমায় পাঠিয়ে দিয়েছে। সর্বশেষ, একটি অপ্রকাশিত ফুটেজে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গণহত্যা দেখতে পাই। এখানে অপ্রকাশিত ফুটেজসহ একাধিক প্রকাশিত ফুটেজে আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবার কথা আমরা জাতি হিসেবে কি ভয়ানক পরিমাণ ‘বাইস্ট্যান্ডার এফেক্ট (Bystander Effect)’ দ্বারা প্রভাবিত।
বাইস্ট্যান্ডার এফেক্টের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ
আমাদের ভুলে যাওয়ার কথা নয়, জেলে লেখক মুশতাক আহমেদকে ইলেক্ট্রিক শক্ দিয়ে হত্যার কথা। অথচ, তিনি ছিলেন হাই-সিকিউরিটি কারাগারে বন্দী। এখানে বাংলাদেশ সরকারের জবাবদিহিতার জন্য কলামিস্ট, ব্লগার, লেখক, বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা অতি লঘু মানের ছিলো। মানছি, দুই-একজন কথা বলেছিলেন কিন্তু তা দিয়ে চাপ তৈরি করা সম্ভব হয় নাই। আমি নিজেও একজন ব্লগার হিসেবে প্রতিবাদ করার জন্য ভয় করেছিলাম। কারণ রুই-কাতলাদের ভূমিকা বোধহয় আমিও দেখছিলাম। তাঁরা যেহেতু চুপ আছেন সেহেতু একধরনের ‘Conformity’ আমার কাছে ছিলো যে, আমাকেও চুপ থাকতে হবে যা ‘বাইস্ট্যান্ডার এফেক্ট (Bystander Effect)’ এর যথার্থ প্রতিফলন ছিলো।
বাইস্ট্যান্ডার এফেক্টের কারণ
বাইস্ট্যান্ডার এফেক্টের পেছনে কিছু মনস্তাত্ত্বিক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো:
১. দায়িত্বের বিভাজন: যখন অনেক মানুষ কোনো ঘটনা প্রত্যক্ষ করে, তখন প্রত্যেকেই মনে করে অন্য কেউ সাহায্য করবে। ফলে কেউই এগিয়ে আসে না।
২. সামাজিক প্রভাব: মানুষ সাধারণত অন্যদের আচরণ দেখে নিজের আচরণ নির্ধারণ করে। যদি কেউ সাহায্য না করে, তাহলে অন্যরাও সাহায্য করতে আগ্রহী হয় না।
৩. আত্মবিশ্বাসের অভাব: অনেকেই মনে করে যে, তারা সাহায্য করতে সক্ষম নয় বা তাদের সাহায্য প্রয়োজনীয় নয়।
বাইস্ট্যান্ডার এফেক্ট প্রতিরোধের উপায়
বাইস্ট্যান্ডার এফেক্ট প্রতিরোধের জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:
১. সচেতনতা বৃদ্ধি: মানুষকে বাইস্ট্যান্ডার এফেক্ট সম্পর্কে সচেতন করা এবং এর প্রভাব সম্পর্কে জানানো।
২. প্রশিক্ষণ: মানুষকে জরুরি পরিস্থিতিতে কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে সে সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া।
৩. সাহসিকতা বৃদ্ধি: মানুষকে সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্য উৎসাহিত করা এবং তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করা।
উপসংহার
আজকের এই প্রবন্ধ এখানেই শেষ করছি একটি বিখ্যাত উক্তি দিয়ে,
“এই পৃথিবী কখনো খারাপ মানুষের খারাপ কর্মের জন্য ধ্বংস হবে না। যারা খারাপ মানুষের খারাপ কর্ম দেখেও কিছু করে না তাদের জন্যই পৃথিবী ধ্বংস হবে।” – আলবার্ট আইনস্টাইন
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.