কলম

বাঙালির গৌরবময় অতীত ও বর্তমান: এক নতুন দৃষ্টিকোণ

সংস্কৃতি, শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নের পথে বাঙালির অগ্রযাত্রা

বিজ্ঞাপন

এক কালে বাঙালি এক প্রভুত সম্ভ্রম আদায়কারী জাতি ছিলো। তার সেই ঈর্ষণীয় রূপ জগৎ সংসারে এখনো বজায় আছে কি? কতগুলি বিশেষ বিষয় চিন্তা ভাবনার সময় এসেছে মনে হয়। তার আগে মনে করে নেওয়া ভালো আমাদের গর্বের সেই সব আদরণীয় বাঙালীদের স্মরণ করে নেওয়া। সেই মণি রত্নগুলি।

গর্বের বাঙালিরা

এখানে কোন মতেই রবীন্দ্রনাথ, নজরুল এর কথা বলা হচ্ছে না। তাঁরা আছেন মাথার ওপর। বলবার কথা- অমর্ত্য সেন, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক, কেতকী কুশারী ডাইসন, আবদুল্লাহ আবু সৈয়দ ও আরও কত শত!

একবার নবনীতা দেব সেন বলেছিলেন, “বিশ্বে এমন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই, যেখানে একজনও বাঙালি অধ্যাপক নেই।” কত অহংকার হয় বলো তো! প্রভূত অহংকার হয়। সংস্কৃতি ও শিক্ষায় অহংকার দোষের নয়।

বাঙালির কৌতূহল ও সংস্কৃতি

অতি মাত্রায় রবীন্দ্র অনুরাগী এই বিদ্রুপ বাণী শুনেও বাঙালি তার নিজের অটলতা ত্যাগ করে নি। অবশ্যই রবীন্দ্রনাথ বাঙালিকে জিজ্ঞাসু করে তোলেন। বাঙালি পাঠ করে বিশ্ব সাহিত্য। রেনেসাঁস নিয়ে অসীম কৌতূহলী হয়ে ওঠে। পুরাতন ও নবীন আর্ট ছবিগুলি দেখে। সমগ্র পৃথিবীর ফিল্ম সম্বন্ধীয় ফিল্ম সোসাইটির কোলাহলে মেতে ওঠে। নাটকেও বিশ্বায়ণ ঘটায়। এমনিতে বাঙালি অত্যন্ত কৌতূহলপ্রবণ জাতি। সে এক ব্যাকুল পাগল, যাযাবর যেন! বিশ্বময় সংস্কৃতিক মণিমুক্তোর জন্য সে ডুব দিতে পারে অতল গভীরতায়।

বর্তমানের বাঙালি

কিন্তু আজ! সেই জ্ঞানপিপাসু বাঙালি কোথায়? কলকাতায় আন্তর্জাতিক বই মেলা হয়, জেলাগুলিতেও হয়। কিন্তু আজকাল সাহিত্য আলোচনা তেমন ভাবে হয় কি? এবারে আমি অবশ্য বই মেলায় অবলোকন করেছি ‘মৃণাল সেন মুক্ত মঞ্চে’ বহিরবঙ্গের বাঙালি সাহিত্য তথা বাংলা সাহিত্য নিয়ে আলোচনা সভা। তাতে আমিও ছত্তিশগড়, ভিলাই এর প্রতিনিধি হবার গৌরবে সেখানে বলেছি আমাদের এখানকার কথা। এই বিষয় আমার ভালো লেগেছে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু সে এক কালের সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ বসু, সমরেশ মজুমদার, বুদ্ধদেব গুহ, শঙ্খ ঘোষ! তাঁদের সময়কার বই মেলায় এসে রসালাপ, আলোচনা, পাঠকদের হাতে নিজেদের বইয়ে সই দেওয়া! সে সব যেন অনেক দিনের আড়ালে থাকা ঘটনা! অবশ্য আছেন এখনো আমাদের প্রিয় সম্মানীয় শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এখনো জ্বলজ্বল হয়ে থেকেও বাতিঘরের টিমটিমে আলো হয়ে রয়েছেন।

বর্তমানের সাহিত্যিকরা

আছেন স্মরণজিৎ চক্রবর্তী, প্রচেত গুপ্ত ও আরও সাহিত্যজন আছেন অবশ্যই। কিন্তু “পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়!” তো থেকেই যায়!

কেন মনে হয় বাঙালির বোধ, বুদ্ধি ভোতা হয়ে পড়েছে! সাহিত্যে সেই গভীরতা কই! গোয়েন্দা গল্প, রান্নাবান্না, ঘর সাজানো! এ সবও নিশ্চয় সাহিত্য বিশেষত গোয়েন্দা গল্প, থ্রিলার, রোমান্স এ সব ও পাঠকের মনে ধরে বৈ কি! গোয়েন্দা গল্পে ফেলুদা এবং মিতিন মাসী (সত্যজিৎ রায় আর সুচিত্রা ভট্টাচার্য) এক নতুন সাহিত্য পথের দিশারী। আমি ব্যক্তিগত ভাবে একটি মত প্রকাশ করি। এখানে এক নবীন লেখকের থ্রিলার ছোট গল্পের প্রকাশ করে দেখেছি নবীন প্রজন্মের বাহাদুরি কারিকুরি।

সাহিত্য ও বিনোদন

মনের অসুখ সারাতে কিন্তু চলমান জীবনের গল্প ধারাপ্রবাহ বওয়া চাই। এখন প্রকাশনা জগতেও এসেছে ফাঁকিবাজী, ‘প্রিন্ট অব ডিমান্ড’ মানে ২৫ কপি বইও ছাপা হতে পারে।

এখন সিনেমা হিট করতে ভালো সাহিত্যের প্রয়োজন নেই। বিনোদন সম্পূর্ণ বদল হয়েছে। একবার সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, “সাহিত্যের মান খাটো করা চলবে না, দর্শকের রুচির জন্য।” এখন থিয়েটারের সেই গৌরবোজ্জ্বল দিক ম্লান। যাত্রাও একই পথের পথিক। বাংলা ভাষার প্রতি বাঙালির রুচি নিম্নমান। বাঙালির উপেক্ষা যেন দিনে দিনে বাংলা ভাষার প্রতি উদাসীন!

বিজ্ঞাপন

টেলিভিশন ও আধুনিকতা

আজকাল গল্পের খিদে মেটে টেলিভিশনের সিরিয়ালগুলি দ্বারা। সব অর্ডার দেওয়া গল্প। তাতে শুধু অগভীর চটুলতা, পোশাক-আশাকে দেশী কম পাশ্চাত্য প্রাধান্য বেশী। আর ভাষার প্রতি এমন ভাব দেখানো যেন আমরা এখন আধুনিক! এই এক লোক দেখানো ব্যাপার।

শিকড় বিচ্ছিন্নতা

এই শিকড় বিচ্ছিন্নতা কিন্তু পৃথিবীর বহু সংস্কৃতিকে হারিয়েছে। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো অত্যন্ত জরুরী।

এক ব্রিটিশ বিবেকানন্দকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আচ্ছা তুমি জেন্টলম্যানদের মতো পোশাক পরো না কেন?”

বিবেকানন্দ হাসলেন, বললেন, “তোমাদের সংস্কৃতিতে জেন্টলম্যান বানায় দর্জি। আমাদের সংস্কৃতিতে জেন্টলম্যান তৈরী হয় চরিত্র দিয়ে।”

বাঙালির ভবিষ্যৎ

শিক্ষার গুরুত্ব

বাঙালির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষার মাধ্যমে বাঙালি তার হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করতে পারে। শিক্ষার মান উন্নত করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতা ও কৌতূহল জাগ্রত করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

সংস্কৃতির সংরক্ষণ

বাঙালির সংস্কৃতি সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরী। আমাদের ঐতিহ্য, ভাষা, সাহিত্য ও শিল্পকলা সংরক্ষণ করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে এই সংস্কৃতির সাথে পরিচিত করাতে হবে এবং তাদের মধ্যে এই সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা জাগ্রত করতে হবে।

প্রযুক্তির ব্যবহার

প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার বাঙালির উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে উন্নতি করা সম্ভব। তবে প্রযুক্তির অপব্যবহার থেকে সতর্ক থাকতে হবে।

সামাজিক উন্নয়ন

সামাজিক উন্নয়ন বাঙালির ভবিষ্যতের জন্য অপরিহার্য। সমাজের সকল স্তরের মানুষের মধ্যে সমতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন, শিশুদের সুরক্ষা ও প্রবীণদের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরী।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

শ্রীমতী স্মৃতি দত্ত

অ্যাডভোকেট, লেখিকা, বঙ্গীয় সাহিত্যের সদস্য, কীবোর্ড প্লেয়ার, অ্যামওয়ে ব্যবসার মালিক। আমার লেখা সর্বশেষ বইয়ের নাম, ‘কেমেষ্ট্রি প্র্যাকটিক্যাল ও টি.ভি শো’ এবং ‘লেনিন সাহেবের সাথে দেখা’ বইটি Flipkart -এ নেবার জন্য ক্লিক করুন: https://www.flipkart.com/lenin-saheber-sathe-dekha/p/itmc9bfae4c39392

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন
Back to top button