জীবনের সংগ্রাম: এক সাধারণ মেয়ের অসাধারণ যাত্রা
প্রেম, প্রতিযোগিতা এবং সফলতার পথে জীবনের গল্প
এক সাধারণ মেয়ের জীবনের গল্পের অধ্যায়। যখন তার HSC পরীক্ষার ছয় মাস আগে এক ছেলের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠে, যে ছিল তার ক্লাসমেট। তাদের সম্পর্ক সুন্দরভাবে এগিয়ে চলছিল, কিন্তু একে অপরকে সময় দেওয়ার চেষ্টায় তাদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছিল। মাঝে মাঝে তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো, আবার রাগ করে কথা বন্ধ করে দিতো।
এই নিত্য দিনের কাজগুলো চালিয়ে যেতে যেতে তাদের পরীক্ষার সময় এসে পড়ে। পরীক্ষা মোটামুটি ভাবে শেষ হয়। এরপর জীবনকে ঢাকায় পাঠানো হয় তার পরিবার থেকে, মেডিকেলে কোচিং করার জন্য। সে তার ফুপুর বাসায় থাকতো। তার এক ফুফাতো ভাই ছিল, যেও মেডিকেলে কোচিং করতো। তারা একসাথে পড়াশোনা করতো এবং একসাথে কোচিং এ ভর্তি হয়।
পড়াশোনা ভালোভাবে চলতে থাকে। কিন্তু একদিন রেজাল্ট বের হয় এবং জীবন HSC তে প্লাস পায় না, যা তার জন্য খুবই হতাশাজনক ছিল। অন্যদিকে, তার ফুফাতো ভাই গোল্ডেন প্লাস পেয়ে খুব খুশি হয় এবং তাদের বাসায় আনন্দের বন্যা বইতে থাকে।
জীবনের মন খুব খারাপ হয়ে যায়। তার ফুফাতো ভাই তাকে মিষ্টি খাওয়াতে চাইলেও জীবন খেতে চায় না, এবং জোর করে খাওয়ানো হলে তার খুব কষ্ট হয়। এরপর থেকে তার ফুফাতো ভাই তাকে নিয়ে খোঁচা মেরে কথা বলতে থাকে।
এই ঘটনার পর জীবন প্রতিজ্ঞা করে যে সে যেভাবেই হোক মেডিকেলে চান্স পেতে হবে। সে মন দিয়ে পড়াশোনা শুরু করে। এদিকে, তার বয়ফ্রেন্ড তাকে সময় না দেওয়ায় অন্য একটি মেয়েকে গার্লফ্রেন্ড বানিয়ে ফেলে।
জীবনের পথে বাধা আসলেও, সেই বাধাগুলো তাকে আরও দৃঢ় সংকল্পে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে উৎসাহিত করে। সময় যেতে যেতে মেডিকেল পরীক্ষার দিন এসে পৌঁছায়, এবং জীবনের পরীক্ষা ভালোই হয়। অন্যদিকে, তার ফুফাতো ভাইও দাবি করে যে তার পরীক্ষা ভালো হয়েছে এবং তার দাদু মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় তার কোটা আছে। সে জীবনকে বলতে থাকে, “আমার পরীক্ষা ভালো হয়েছে, আমার রেজাল্ট ভালো, আমার কোটাও আছে, আমি তো চান্স পাবোই।”
পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে, জীবন চান্স পায়, কিন্তু তার ফুফাতো ভাই চান্স পায় না। তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল তীব্র। পরের বছর, জীবনের ফুফাতো ভাই আবার মেডিকেল পরীক্ষা দেয়, কিন্তু আবারও চান্স পায় না এবং প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তি হয়। দুজনেই মেডিকেলে পড়াশোনা করছে, জীবন সরকারি মেডিকেলে এবং তার ফুফাতো ভাই বেসরকারি মেডিকেলে।
পড়াশোনা ভালোই চলছিল, কিন্তু ফোর্থ ইয়ারে জীবনের রেজাল্ট খারাপ হলে, তার ফুফাতো ভাই অনেক কথা বলে। সে বলে, “পড়াশুনা করে না, মেডিকেল চান্স পেয়ে ঘুরে ঘুরে খায়, আড্ডা মারে,” এবং আরো অনেক কথা। পরের বছর, জীবন ও তার ফুফাতো ভাই উভয়েই পরীক্ষা দেয়, জীবন পাশ করে যায় কিন্তু তার ফুফাতো ভাই ফেল করে।
সমাজের নিয়ম হলো, যে নরম সেই বেশি কথা শোনে। জীবনের জীবনে এসেছে নতুন অধ্যায়, যেখানে তার নামের আগে যোগ হয়েছে ‘ডক্টর’ উপাধি। এই সময়ে, তার সাথে এক ছেলের সাথে দুই বছরের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
জীবনের পরিবার চাপ দিচ্ছে বিয়ের জন্য, তার বাবা-মা চান একজন ডাক্তার ছেলেকে বিয়ে দিতে। কিন্তু জীবনের নিজের কোনো ইচ্ছা নেই ডাক্তার ছেলেকে বিয়ে করার। সে একেবারেই রাজি নয় এই বিয়েতে। তার বাবা-মা ডাক্তার ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে দিতে চান না, এই নিয়ে পরিবারে বিবাদ চলছে।
পরিবার যতগুলো ডাক্তার ছেলে দেখেছে, তারা বলেছে বিয়ের পর জীবনকে আর পড়াশোনা বা প্র্যাক্টিস করতে দেবে না। জীবন ভাবে, বাবা-মা এত কষ্ট করে তাকে পড়াশোনা করিয়েছেন, তাহলে চাকরি না করতে দিলে তার পড়াশোনার মানে কী?
অবশেষে, জীবনের পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে হয়ে যায়, যে ঢাবিতে পড়া একজন ছাত্র। মানুষের জীবন অনেকটা অগোছালো, গোছানোর চেষ্টায় অনেক বাধা আসে। যে এই বাধাগুলো অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে পারে, সে সাফল্যের মুখ দেখে। যে পারে না, সে শুকনো পাতার মতো ঝরে পড়ে। এটাই হলো মানুষের বাস্তব জীবন। ধন্যবাদ