অনলাইন

সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ও টুইটারের আধিপত্য

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা

- Advertisement -

সারা পৃথিবীতে এখন সোশ্যাল মিডিয়া জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সমগ্র পৃথিবীর নানা দেশে এমনকি প্রতিবাদ আন্দোলন সংগঠিত করার ক্ষেত্রেও এটি বড় প্লাটফর্ম হয়ে উঠেছে। এই প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে সারা পৃথিবীর মানুষ আজ একত্রিত হতে পারছে।

১. ফেসবুক

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া হচ্ছে ফেসবুক। ফেসবুক মার্ক জুকারবার্গ ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠা করেন। ফেসবুকের সদর দপ্তর আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াতে অবস্থিত। তিনি নিজেই সিইও অব ফেসবুক।

প্রতিনিয়ত এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফেসবুকে সহজলভ্য ভাষার সংখ্যা ১১৬ টি। এছাড়া পৃথিবীর যেসব দেশে ফেসবুক নিষিদ্ধ রয়েছে সেই দেশগুলো ছাড়া সব দেশেই ব্যবহারকারী রয়েছে।

ফেসবুক একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট যাতে আপনি  আপনার পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন এবং অনেক ধরণের কাজের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করেছে।

প্রথমদিকে, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মাঝে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এটা সব ধরণের মানুষের জন্য মুক্ত করে দেওয়া হয়। বর্তমানে যে কোন ব্যক্তি ফেসবুকে যুক্ত হতে পারবেন। আজকের দিনে ফেসবুক পৃথিবীর বৃহত্তম সামাজিক নেটওয়ার্ক।

- Advertisement -

ফেসবুক একাউন্ট খুলতে বা প্রোফাইল সাইন আপের জন্য কোন রকম অর্থ প্রদান করতে হয় না। বর্তমানে ফেসবুকে যোগাযোগ করা ছাড়াও ব্যবহারকারীদের ছবি, সংগীত, ভিডিও এবং বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট পাওয়া যায়।

সম্প্রতি ফেসবুককে ব্যবসায়ের জন্য আরো বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। ফেসবুক অন্যতম সেরা সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বলে ও পরিচিত। সময়ের বিবর্তনের ফলে ফেসবুক এখন ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের প্ল্যাটফর্ম এবং বিজ্ঞাপনের সাহায্যে মানুষ তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হচ্ছে।

একটি প্রতিবেদনে থেকে আমরা জানতে পারি যে, ফেসবুকে প্রতিদিন ১.8 বিলিয়ন ব্যবহারকারী প্রবেশ করেন। সর্বমোট ৯০০ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী এই মিডিয়াতে ভ্রমণ করছেন। ফেসবুক গত কয়েক বছর ধরে বিতর্কিতভাবে তার কর্মকান্ড পরিচালনা করছে এরজন্য বিভিন্নভাবে সমালোচিত হচ্ছে।

ফেসবুক বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করেছে, অন্যান্য  সামাজিক মিডিয়ার থেকে সর্বাধিক ব্যবহারকারী রয়েছে। ফেসবুকের সাম্প্রতিক বার্ষিক মোট আয় $৪৮.৪৯ বিলিয়ন।

২. ইউটিউব

ইউটিউব একটি আমেরিকান অনলাইন ভিডিও শেয়ারিং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। তিনজন ব্যক্তির দ্বারা প্রথম এটি প্রতিষ্ঠিত হয় তারা হলেন স্টিভ চেন ও চ্যাড হার্লি এবং জাভেদ করিম।

- Advertisement -

আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার সান ব্রুনোতে এর সদর দপ্তর। ইউটিউব ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০০৫ সালে তার পথচলা শুরু করে। ইউটিউবের বর্তমান মালিকানা গুগলের। বর্তমানে গুগলের পরে দ্বিতীয় সর্বাধিক পরিদর্শন করা ওয়েবসাইট।

ইউটিউবের বর্তমান সিইও হলেন, ‘Susan Wojcicki’। বর্তমানে ইউটিউবের আয় $২৮.৮৪ বিলিয়ন। বর্তমান ব্যবহারকারীরা প্রতিদিন এক বিলিয়ন ঘন্টারও বেশি ভিডিও দেখে থাকেন। ইউটিউব সামগ্রী নির্মাতার ইউটিউবার হিসাবে পরিচিতি পেয়ে থাকেন।

ইউটিউবে এখন প্রতি মিনিটে ৫০০ ঘন্টারও বেশি ভিডিও আপলোড করা হয়। সম্প্রতি মানুষ অনলাইনে ভিডিও সংগ্রহ দেখা এবং অন্যদের সাথে শেয়ার করার জন্য ইউটিউব কে একটি সহজ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।

বর্তমান পৃথিরবীর বৃহত্তম ধনী ইউটিউবার কে জানেন? পৃথিবীর সবচেয়ে ধনীতম ইউটিউবারের নাম হলো জেফ্রি স্টার। যার আয় প্রায় $২০০ মিলিয়ন। তাঁর সম্পদের পরিমাণ দ্বিতীয় ধনী ইউটিউবার পিউডিপির চেয়ে ৫ গুণ বেশি। পিউডির সম্পদ $৪০ মিলিয়ন।

৩. ইনস্টাগ্রাম

কেভিন সিস্ট্রম এবং মাইক ক্রিগার দুইজন মিলে একটি আমেরিকান ছবি এবং ভিডিও শেয়ারিং সোশ্যাল মিডিয়াটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১২ সালে কিছু মূল্যের বিনিময়ে ইন্সটাগ্রাম পরিষেবা অধিগ্রহণ করে নেয় ফেসবুক।

- Advertisement -

ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীদের মিডিয়া আপলোড করতে দেয় যা ফিল্টার দিয়ে সম্পাদনা করা যায় এবং হ্যাশট্যাগ ও জিও ট্যাগিং দিয়ে বিন্যস্ত করা যায়। পোস্টগুলি সর্বজনীনভাবে বা আগের অনুমোদিত অনুসরণকারীদের সাথে শেয়ার করা যায়।

ব্যবহারকারীরা ট্যাগ এবং লোকেশান দ্বারা অন্যান্য ব্যবহারকারীদের কন্টেন্ট ব্রাউজ করতে পারেন এবং আলোচিত কন্টেন্ট দেখতে পারেন। শুরুর দিকে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও পরে সীমাবদ্ধতাগুলো দুর করা হয়।

সেবাটির মেসেজিং বৈশিষ্ট্যগুলি, একটি একক পোস্টে একাধিক ছবি বা ভিডিও অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষমতা এবং একটি ‘স্টোরি’ বৈশিষ্ট্যও যুক্ত করেছে। যা অন্য ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীদের প্রতিটি পোস্টের সাথে একটি অনুক্রমিক ফিডে ছবি এবং ভিডিও পোস্ট করতে দেয় যা ২৪ ঘন্টার জন্য অন্যদের কাছে দেখায়।

ইনস্টাগ্রাম দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকে এবং একবছরে ১০ মিলিয়ন এবং ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ১ বিলিয়ন ইউজার পায়। যদিও বিশেষ করে কিশোরদের এবং যুবদের মানসিক স্বাস্থ্য, নীতি এবং ইন্টারফেস পরিবর্তন, সেন্সরশিপ এবং ব্যবহারকারীদের দ্বারা আপলোড করা বেআইনি বা অনুপযুক্ত কন্টেন্টের উপর নেতিবাচক প্রভাবের জন্য ইনস্টাগ্রাম সহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া সমালোচনার বিষয় হয়ে উঠে।

এখানে প্রায় ৩২ টির মতো ভাষা ব্যবহার করা যায়।

- Advertisement -

৪. টুইটার

জ্যাক ডরসি, নোয়াহ গ্লাস, বিজ স্টোন এবং ইভান উইলিয়ামস ২০০৬ সালের মার্চ মাসে টুইটার প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেই বছরের জুলাই মাসে চালু এটি হয়। টুইটার একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, পাশাপাশি বলা যেতে পারে এটি আমেরিকা ভিত্তিক মাইক্রোব্লগিং এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং পরিষেবা।

যেখানে ব্যবহারকারীরা বার্তা পোস্ট করে এবং যোগাযোগ করে। সাইন আপ করা ইউজারেরা টুইট পোস্ট, লাইক এবং পুনঃটুইট করতে পারে, কিন্তু সাইন আপ ছাড়া ব্যবহারকারীরা শুধুমাত্র সেই টুইটগুলিই পড়তে পারে। বর্তমানে ব্রাউজারে বা এ্যাপের মাধ্যমে এটি ব্যবহার করা যায়।

আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোতে অবস্থিত একটি কর্পোরেশন দ্বারা এটি পরিচালনা করা হয়। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ২৫ টির ও বেশি দেশে টুইটারের অফিস রয়েছে। আগে টুইটারের টুইট করার ক্ষেত্রে ১৪০ অক্ষরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, পরবর্তীতে ২০১৭ সালের নভেম্বরে অক্ষরের সীমাবদ্ধতা ২৮০ করা হয়।

৫. হোয়াটসঅ্যাপ

ইয়াহুর প্রাক্তন কর্মী ব্রায়ান অ্যাক্টন ও জান কউম মিলে ২০০৯ সালে হোয়াটসঅ্যাপ তৈরি করেন। বর্তমানে হোয়াটসঅ্যাপের ৫৫ জন কর্মী রয়েছেন। সম্প্রতি হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ  ক্রয় করেছেন।

তিনি বলেন প্রতিদিন ১০ লাখ মানুষ হোয়াটসঅ্যাপ ডাউনলোড করছেন এবং ৪৫ কোটি ব্যবহারকারী রয়েছেন। ব্যবহারকারীর ফোনে থাকা ফোন নাম্বর তালিকা থেকে হোয়াটসঅ্যাপ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নম্বর সিংকক্রোনাইজ করে নেয় যার ফলে আলাদা করে আইডি যোগ করার প্রয়োজন হয় না।

- Advertisement -

স্মার্টফোনে বিনামূল্যে ব্যবহারের উপযোগী মেসেঞ্জারটিতে ব্যক্তিগত হালনাগাদ, ব্যবহারকারী যেখান থেকে চ্যাট করছেন সে এলাকা, গ্রুপ তৈরি, গ্রুপের জন্য আলাদা আইকন তৈরি করা যায়। বর্তমানে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপ্লিকেশনটিতে ভিডিও কল সুবিধা চালু রয়েছে এবং প্রতিনিয়ত ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

হোয়াটসঅ্যাপের সবচেয়ে বড় সুবিধা তার বন্ধু ও তার  মোবাইলে ডাউনলোড করে নেবেন তারপর  দুজন যত খুশি তত তথ্য লেনদেন করতে পারবেন। দিনে অসংখ্য মেসেজ পাঠালেও এক পয়সা খরচ হবে না। তবে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের জন্য শুধু ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে। এটাতে  কয়েকজন মিলে গ্রুপ চ্যাটও করা যায়।

পূর্বে হোয়াটসঅ্যাপ দাবি করেছিল তাদের ৪০০ মিলিয়ন ব্যবহারকারী রয়েছে। বর্তমানে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৫০ কোটিরও বেশি বলে দাবি করছে কর্তৃপক্ষ।

ছবি: Image by freepik

- Advertisement -
- Advertisement -

আবদুল্লাহ আল মাসুদ

ছাত্র, রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- Advertisement -
Back to top button