মনোবিজ্ঞান

মৃত্যুর চিন্তা ও জীবনের প্রভাব

অবচেতন ও সচেতন মন

বিজ্ঞাপন

মৃত্যুর চিন্তা আমাদের অচেতন মনেও থাকলেও তা আমাদের জীবনকে গভীরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ মৃত্যুর চিন্তা দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয় না। তারা জীবনে টাকা-পয়সা, ক্ষমতা, সামাজিক মর্যাদা এই জিনিসগুলো চায়। খুব অল্প সংখ্যক মানুষ মৃত্যুর চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হয়।

অবচেতন ও সচেতন মন

আমরা জানি মৃত্যু মানুষের অবচেতন মনের মধ্যে থাকে। যখন এটি সচেতন মনের মধ্যে আসার চেষ্টা করে, মানুষ তখন মৃত্যুর চিন্তা অস্বীকার করে বা চাপা দেয়। অনেকেই মৃত্যুকে জয় করার জন্য নানা রকম উদ্ভট কাজ করে থাকে।

জীবনের মূল সুখ

অধিকাংশ মানুষ মৃত্যু নিয়ে অবচেতন থাকে না। তাদের জীবনের মূল সুখ হলো টাকা-পয়সা, সামাজিক মর্যাদা, ক্ষমতা অথবা বিখ্যাত হওয়ার নেশা। খুব অল্প কিছু মানুষ মৃত্যুর চিন্তা দ্বারা সচেতন হয়। যেমন, স্টিভ জবসকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, মৃত্যুকে আপনি কিভাবে চিন্তা করেন? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, মৃত্যু হলো আমার বন্ধুর মত, সে প্রতিদিনই আমার পাশে এসে বসে এবং আমাকে জড়িয়ে ধরতে চায়। আমি তাকে জড়িয়ে ধরতে দিতে চাই না। আমি তাকে বলি, বন্ধু, এখনো আমার সময় হয়নি। অর্থাৎ তিনি মৃত্যু সম্পর্কে খুব সচেতন ছিলেন।

মৃত্যুর মোটিভেশন

মৃত্যু মূলত দুইভাবে মোটিভেট করে। মৃত্যু হচ্ছে আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ভয়। এই ভয়কে যদি আমরা জয় করতে পারি, তাহলে জীবনের ছোটখাটো ভয়ও আমরা জয় করতে পারবো। যে বনে বাঘ আছে, সে বনে আপনি কখনো কুকুরের জন্য ভয় করবেন না। ঠিক তেমনি জীবনে যদি মৃত্যুর ভয় থাকে, ছোটখাটো সব ভয় এমনিতেই কেটে যাবে।

বিজ্ঞাপন

মানুষের সাধারণ ভয়

মানুষের সবচেয়ে কমন দুইটি ভয় হচ্ছে:

১. মানুষে কি বলবে?

২. আমি যদি ব্যর্থ হই তাহলে কি হবে?

অর্থাৎ মানুষের কথা শোনার ভয় আর ব্যর্থ হওয়ার ভয়। মৃত্যু ভয়ের কাছে এ দুটো ভয় কিছুই না। আপনি যখন মৃত্যু ভয়কে জয় করবেন, অন্যান্য সকল ভয়কে এমনিতেই জয় করতে পারবেন।

সময়ের মূল্য

মৃত্যু আপনাকে এই শিক্ষা দেয় যে, আপনার জীবনের সময় খুব সীমিত। আপনি এটাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন। যখন কোন কিছুকে আপনি আর ভয় করবেন না, তখন আপনি খুব সহজে আপনার লক্ষ্য পূরণ করতে পারবেন।

বিজ্ঞাপন

জীবনের পরিবর্তন

মৃত্যু যখন আপনাকে মোটিভেট করবে, তখন বিভিন্নভাবে নিজেকে পরিবর্তিত অবস্থায় দেখতে পাবেন। অর্থাৎ আপনার জীবনে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ আর কোনটা গুরুত্বপূর্ণ না, এই জিনিসটা খুব সহজে বুঝতে পারবেন। আপনি এক ধরনের মুক্তির অনুভব করবেন।

তুচ্ছ বিষয়গুলো এড়িয়ে চলা

মানুষ সব সময় মনে করে যে অন্য মানুষ কি মনে করবে যদি আমি এটা না করতে পারি! আমি যদি ব্যর্থ হই! যখন মৃত্যুর চিন্তা আপনার মধ্যে আসবে, আপনার মধ্যে অটোমেটিক্যালি এক ধরনের মুক্তি মিলবে। আপনি তুচ্ছ বিষয়গুলো ইগনোর করবেন। যেমন, একজন ডাক্তার তার বায়োগ্রাফিতে বলছেন, আমি আগে আমার স্ত্রীর সাথে প্রচুর ঝগড়া করতাম। খুঁটিনাটি অনেক বিষয় নিয়ে ঝগড়া হতো। একটা সময় এসে আমার ক্যান্সার ধরা পড়লো। পরে আমি বুঝতে পারলাম কত তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে আমি আমার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করতাম।

বর্তমানের মনোযোগ

মৃত্যুর চিন্তা যখন আপনার ভিতরে আসবে, তখন আপনি এই তুচ্ছ ব্যাপারগুলো ইগনোর করতে পারবেন। মৃত্যুর ভয় যখন আপনাকে তাড়া করবে, আপনি তখন অতীত এবং ভবিষ্যতের চিন্তা করা ছেড়ে দিবেন। আপনি তখন বর্তমানের মনোযোগ দিবেন বেশি।

জীবনের ছোট ছোট বিষয়গুলো

আরেকটা বিষয় হচ্ছে জীবনের ছোট ছোট বিষয়গুলো, যেগুলো করে আমরা মজা পাই না। যখন আপনাকে মৃত্যুর ভয় তাড়া করবে, তখন আগে যে বিষয়গুলোতে মজা পাচ্ছিলেন না, এখন সে বিষয়গুলোতে মজা পাবেন। মৃত্যু ভয় যখন আপনাকে মোটিভেট করবে, তখন আপনি বুঝতে পারবেন জীবন মহামূল্যবান। এই পরিবর্তন আপনাকে আপনার লক্ষ্য পূরণের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

স্টিভ জবসের মত মোটিভেশন

এমন কোন উপায় আছে কি না যে স্টিভ জবসের মত মৃত্যু আপনাকে মোটিভেট করে? বলা হচ্ছে, একটা উপায় হলো, আপনি একজন ভাগ্যবান এটা প্রতিদিন মনে করা। আপনি যে ভাগ্যবান তার তিনটা কারণ আছে। এ তিনটা কারণ আপনি প্রতিদিন ঘুমানোর সময় মনে করবেন। একটা হচ্ছে, আপনি কিভাবে মারা যাচ্ছেন এটা এনালাইজ করা।

বিজ্ঞাপন

মৃত্যু সম্পর্কে সচেতনতা

হুমায়ূন আহমেদের নাটকে একটা ক্যারেক্টার ছিল যে সব সময় কফিনের মধ্যে শুয়ে থাকতো। সে মৃত্যু কে এনালাইজ করতো বা প্রাক্টিক্যালি দেখানোর চেষ্টা করত। এ জিনিসগুলো আমাদেরকে মৃত্যু সম্পর্কে সচেতন করে।

ডেট ক্যাফে

ইউরোপের বড় বড় দেশে ডেট ক্যাফে নামে বড় বড় ক্যাফে আছে। এখানে যারা বয়স্ক মানুষ তাদেরকে নিয়ে আসা হয় এবং তাদের কাছ থেকে গল্প শোনা হয়। এটা মানুষের জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের সহায়তা করে। যদিও এমন ক্যাফে আমাদের বাংলাদেশে নেই, কিন্তু আপনি চাইলে হাসপাতাল বা কবরস্থান থেকে ঘুরে আসতে পারেন। তাহলে জীবনকে অন্য দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার সহায়তা করে।

মৃত্যু ও জীবনের মূল্য

আমরা কথা বলছিলাম অধিকাংশ মানুষ অর্থবিত্ত, ক্ষমতা বা সামাজিক মর্যাদা এসব বিষয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। অল্প কিছু মানুষ মৃত্যু দ্বারা তাড়িত হয়। মৃত্যু আমাদের বলে দেয় সময় মূল্যবান। মৃত্যু সম্পর্কে আমরা সচেতন হই। মৃত্যু কোন ভয়ের ব্যাপার না। এটা আমাদের মোটিভেট করে বেঁচে থাকার জন্য।

মৃত্যুর চিন্তা ও নিয়ন্ত্রণ

আপনারা মৃত্যু নিয়ে চিন্তা করবেন। আপনাকে মৃত্যু মোটিভেট করে কিনা এটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন। মৃত্যুর চিন্তা আমাদের অবচেতন মনে থাকলেও গভীরভাবে আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এ নিয়ন্ত্রণ কেন করতে পারে না সেটা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে।

জীবনের বড় বিষয়গুলো

আবার দেখা যায় অধিকাংশ মানুষ মৃত্যু চিন্তা করেন না। তারা টাকা-পয়সা, ধনসম্পত্তি, পদমর্যাদা, আধিপত্য এগুলোকে অনেক বড় হিসেবে দেখে।

বিজ্ঞাপন

উপসংহার

আমাদের আজকের এই ধারণা থেকে আপনার কিছুটা হলেও ব্যক্তি জীবনে উপকারে আসতে পারে। মৃত্যুই আমাদের শেষ কথা। মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে আমাদের সমস্ত অহংকার শেষ হয়ে যাবে। আপনি মানুন আর না মানুন, মৃত্যু নামক এই জিনিসটা আমাদেরকে একদিন স্পর্শ করবেই।

ছবি: Image by mdjaff on Freepik


Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

আল-মামুনুর রশিদ সাগর

আমার জীবনের লক্ষ্য হলো পৃথিবীকে এগিয়ে নেয়া। আমি জলবায়ু পরিবর্তন, মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা, ক্রীড়া উন্নয়ন, প্রকৃতি ও পরিবেশের উন্নয়ন, দারিদ্র্য বৈষম্য এবং দুর্নীতি রোধে কাজ করতে চাই। সর্বোপরি, আমি আগামীর শিশুদের জন্য একটি টেকসই ব্যবস্থা রেখে যেতে চাই। আমি পুরুষ, নারী এবং তৃতীয় লিঙ্গ সবার জন্য সমান গ্রহণযোগ্যতা আনয়নে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি।

আপনার মতামত জানান?

বিজ্ঞাপন
Back to top button

Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading