অনলাইন

বাংলাদেশে ওয়েব কন্টেন্ট রাইটিং: নতুনদের জন্য গাইডলাইন

ওয়েবসাইট ও ব্লগের জন্য মানসম্মত কন্টেন্ট লেখার কৌশল

বাংলাদেশে খুব দ্রুত গতিতে ওয়েবসাইট/ব্লগের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডোমেইন ও হোস্টিং সার্ভিসও মিলছে খুব কম টাকায়। তাই চাইলেই যে কেউ আজ অনলাইনে একটি সুন্দর ওয়েবসাইট বা ব্লগ তৈরি করতে পারছেন। ওয়ার্ডপ্রেস আসায় থাকছেনা কোডিং করার ঝামেলা পর্যন্ত।

অন্যদিকে এত এত ওয়েবসাইট এবং ব্লগ পরিচালনার জন্য প্রয়োজন পড়ছে বিপুল পরিমাণ ওয়েব কন্টেন্ট রাইটারদের। প্রতিযোগীতাও ভিন্ন পর্যায়ে চলে গেছে। লড়াই চলছে এক ওয়েবসাইটের সাথে আরেক ওয়েবসাইটের। কীভাবে বা কি ধরণের তথ্য দ্বারা সমৃদ্ধ করলে একটি ওয়েব কন্টেন্ট গুগলে প্রথমে জায়গা করে নিতে পারে ঠিক সেটা নিয়ে তোলপাড় কম নয়।

পাশপাশি কন্টেন্ট রাইটার এবং তাদের যথাযথ সম্মানী দিতেও অনেকে হিমশিম খাচ্ছেন। মুদ্রার উল্টোপিঠ, যে বিষয় কখনো বিশেষ আলোচনায় ঠাঁই পর্যন্ত পেলো না! সে বিষয় আজ একটি দুর্দান্ত পেশা হিসেবে রুপান্তরিত হয়েছে। শুধুমাত্র বাংলায় লিখেও মাসে হাজার টাকা নিমিষে আয় করা এখন খুব সহজ। এটা কোনো জাদুর বিষয় নয়; বাস্তব ঘটনা।

কিন্তু ওয়েব কন্টেন্ট লেখাটাও দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। দীর্ঘ প্রায় ৬ বছরের বেশি সময় ধরে লেখালখির জগতে থাকলেও লক্ষ্য করেছি, এই নিয়ে বর্তমান কন্টেন্ট রাইটারদের মান তেমন একটা ভালো নয়। ডেডলাইন নিয়ে ঝামেলা তো হরহামেশাই চলছে। কিন্তু সহী কন্টেন্ট পর্যন্ত মিলছে না।

তাই আজকের আলোচনায় আমি চেষ্টা করেছি, নতুন কন্টেন্ট রাইটার যারা আছেন তাদের যেসব বিষয় মাথায় না রাখলেই নয়, সেসব বিষয়ে বিশদ বর্ণনা দেবার। কারণ, লেখালেখি এখন আর শুধু নেশা নয়; পেশাও বটে।

গুগল অ্যাডসেন্স অনুমোদন ও ৫টি গুরুত্বপূর্ণ পেজ

গুগলের বর্তমানের পলিসি অনুযায়ী প্রত্যেকটি ওয়াবসাইট বা ব্লগে ৫টি পেজ অবশ্যই থাকতে হবে। এই ৫টি পেজ না থাকলে আপনি কোনদিন-ই গুগল অ্যাডসেন্স দ্বারা অনুমোদন পাবেন না। কারণ, গুগল এই ৫টি পেজের মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগের বিশ্বস্ততা যাচাই করেন বলে আমার মনে হয়েছে।

হ্যাঁ, দৈবক্রমে আজকাল অনেক কিছুই ঘটছে এবং সেটা আমার আলোচ্য বিষয় নয়। নিম্নে, আমি উক্ত ৫টি পেজ উল্লেখ করলাম এবং কীভাবে কন্টেন্ট না লিখেও ফ্রিতে এই পাঁচটি পেজের কন্টেন্ট পেয়ে যাবেন সেটাও বলে দেওয়া হলো,

১. About Us

২. Contact Us

৩. Privacy Policy

৪. Disclaimer

৫. Terms of Use or, Terms & Conditions

হ্যাঁ, এই পাঁচটি পেজ আপনার গুগল অ্যাডসেন্স অনুমোদনের জন্য খুবই জরুরী। এই পেজ-গুলোর কন্টেন্ট লেখার ক্ষেত্রে আমাদের ইংরেজি জানার দরকার পরে। এছাড়াও “Privacy Policy” এবং “Terms & Conditions” ইত্যাদি পেজ লেখার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হয়, খানিকটা আইনজীবির মত ভূমিকাও পালন করতে হয়। কিন্তু একটু বুদ্ধি খাটালে আপনাকে এর কোনটাই আর নিজেকে লিখতে হবে না।

এজন্য আপনাকে শুধু গুগলে শুধু সার্চ করতে হবে “Generate Privacy Policy Page/Terms & Conditions Page/About Us Page/Disclaimer Page” লিখে। এতে করে আপনি অনেক ওয়েবসাইট পেয়ে যাবেন যাদেরকে কিছু তথ্য দিলেই ১ মিনিটের মধ্যে আপনার এই কাজ করে দেবে বিনা পয়সায়। সো, ওয়ার্ক স্মার্ট।

কীভাবে একটি ভালো কন্টেন্ট লিখবেন?

প্রথমে এটা মাথায় রাখুন, এটা কোনো রকেট সায়েন্স নয় যে, আপনার মাথায় ঢুকবে না। কিন্তু সামান্য কিছু ভুলের জন্য আপনার কন্টেন্টের কোয়ালিটি নেমে যেতে পারে। তাই কিছু পয়েন্ট আমি তুলে ধরলাম,

১. উদ্দেশ্য জানুন

আপনার নিজের মনের কথা লেখার জন্য ডায়েরি ব্যবহার করুন। কিন্তু ওয়েবসাইট বা ব্লগ নয় (ব্যক্তিগত হলে ভিন্ন কথা) । তিতা হলেও সত্য, কেউ এখানে আপনার দুঃখ-দূর্দশা শুনতে আসে নাই। না কারো ফারাক পড়ে যে, আপনি ভালো আছেন? না কি ভালো নেই? সুতরাং যে বিষয়ে লিখছেন সে বিষয়ে অদৌ কারো আগ্রহ আছে কিনা সেটা অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে।

২. আপনার পাঠকদেরকে বুঝুন

কীভাবে আপনার পাঠকদের বুঝবেন? এ বিষয়ে ছোট্ট একটি উদাহরণ দেওয়া যায়, যে অঞ্চলে বা যে দেশে আপনি বাস করছেন সে দেশের মানুষদের প্রধান ইন্টারেস্ট ঠিক কি নিয়ে? যদি এটা খুঁজে পান তাহলে অর্ধেক কাজ তো এখানেই হয়ে গেল। এখন আপনার মনে হলো, বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের ঘাটতি আছে। যদি আপনার এটা মনে হয় তাহলে “জব সার্কুলার” নিয়ে কাজ করতে পারেন।

এছাড়া জীবনী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, গেম, লাইফস্টাইল, রাজনীতি, অর্থনীতি, ব্যবসা ও বাণিজ্য বা বিনোদন নিয়েও লিখতে পারেন। খেয়াল করবেন, এতে করে আপনার পাঠকদের বয়সের ব্যাপারটা এদিক-ওদিক হবে। যিনি জব খুঁজছেন এবং যিনি ক্রিপ্টো-কারেন্সি তে ইনভেস্ট করবেন বলে ভাবছেন এই দুই মানুষ একই বয়সের হওয়া প্রায় অসম্ভব।

৩. প্রতিযোগীদের মাথায় রাখুন

দেখুন, একই ব্যক্তি নিয়ে হাজারো আর্টিকেল অনলাইনে পরে আছে। তাহলে সেই ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার লেখাটা সবাই কেন পড়বে? সুতরাং এমন কিছু নতুন তথ্য দেন যা অন্য কেউ দিতে পারেন নি। গুগল আপনাকে প্রথমে রাখতে বাধ্য হবে। তারমানে এই নয় যে, আপনি উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে ভুল তথ্য দেবেন। মিথ্যা বা অসত্য বিষয় নিশ্চয় বর্জনীয়। পাশাপাশি ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে মানুষ সত্যি-ই কি জানতে চায়? যদি হ্যাঁ হয়; তাবেই লিখুন। কারণ একটি পূর্ণ আর্টিকেল আপনার কাছে থেকে অনেক সময় খেয়ে নেবে। কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করুন; তারপর লিখুন।

৪. স্ট্রাকচার বা গঠন লক্ষ্য করুন

আর্টিকেলে এস.ই.ও এর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, চমৎকার শিরোনাম এবং হেডিং। ক্রমান্বয়ে আপনার টপিক বা বিষয় কে সুন্দর করে সাজিয়ে লিখুন। মনে পড়ে! আমরা ছোটবেলায় বা এখনো পরিক্ষার খাতায় রচনা লিখে থাকি। এবং সেখানে কিছু পয়েন্ট উল্লেখ করে লিখে থাকি। আমাদের স্যার’রা সবসময় বেশি বেশি পয়েন্ট এবং তথ্য দেবার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন বহুবার। ওয়েব কন্টেন্টও অনেকটা সেরকমই।

যত বেশি পয়েন্ট; যত বেশি তথ্য, ঠিক ততবেশি নম্বর। ওয়েব পেজ হলে তত ভালো র‍্যাঙ্কিং। এখানে আরো একটি বিষয় হলো, “মূল বিষয় বা শব্দ নিয়মিত ব্যবহার করা জরুরী” । এটাকে SEO -এর ভাষায় “Focus Keyphrase” বলা হয়ে থাকে।

৫. প্রুফ-রিডিং বা সম্পাদনা

পয়েন্ট টেবিলে অনেক পয়েন্ট থাকলে তার যথাক্রম সবসময় সুষ্ঠ না-ও হতে পারে। তাই লেখা শেষে অবশ্যই অন্তত একবার বা দুইবার ভালো করে পড়ে নেবেন। অনেকক্ষেত্রে বানান ক্রুটি থেকেই যায়। আর এই বানান ক্রুটি আপনার আর্টিকেলের মান কমিয়ে দেবে।

৬. প্লাগারিজম চেক

ওয়েব কন্টেন্টের ক্ষেত্রে আপনার লেখা চুরি হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। অনেক কষ্ট করে রাত জেগে লেখাগুলো হঠাৎ চুরি হতে দেখলে খারাপ লাগার-ই কথা। তাই আপনি নিশ্চিত হোন যে, আপনি কারো লেখা চুরি করছেন না। এখানে সিন্থেসিস আলাদা বিষয়।

অনেকক্ষেত্রে বারবার এই ভুলের কারনে বা চুরির কারণে আপনার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হতে পারে “DMCA” নোটিশ। এরপর যা হবার! এতে করে আপনার গুগল অ্যাডসেন্স ব্যান করাও হতে পারে। সুতরাং চুরি না করে একটু মাথা খাটিয়ে লিখুন। তাও না পারলে ঐ ভাবনাটা ধার করে নিজের মত করে আবার লিখুন। কিন্তু চুরি বিদ্যা বড্ড ভয়ানক; অন্তত ওয়েব কন্টেন্টের ক্ষেত্রে।

এবার পুরো আর্টিকেল পড়ে দেখুন যে, আমি “ওয়েব কন্টেন্ট/কন্টেন্ট” কতবার লিখেছি! সুতরাং গুগলে “ওয়েব কন্টেন্ট/কন্টেন্ট” লিখে সার্চ দিলে আমার লেখাটা যদি সামনে এসেই যায় তাহলে খুব সম্ভবত আমি সেটা ডিজার্ভ করি। গুগলের এলগোরিদম আর আমার সস্তা মাথা।

যাইহোক, আজ এই পর্যন্তই। উপকারী হলে মন্তব্যে জানাবেন। আর ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ

মেহেদি হাসান (বিকেল)

I'm MD Mehedi Hasan, also known by my pen name Mr. Bikel. I'm the admin of the site Ovizatri - News & Magazine. I am a versatile individual with a professional life that spans various fields. I work as a writer, actor, social worker, radio jockey, web developer, web designer, editor, presenter, blood donor, audio and video editor, photo editor, YouTuber, and drama director. I am also a developer and app developer at Microsoft.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button