মনোবিজ্ঞান

ফলস হোপ সিনড্রোম (False Hope Syndrome) কী? স্বপ্ন আর বাস্তবের ফাঁক

SMART গোল সেটিং: আপনার লক্ষ্য পূরণের চাবিকাঠি

- Advertisement -

নতুন বছর শুরু হলে নানান রকম পরিকল্পনা করি, প্রতিজ্ঞা করি, ওজন কমাবো, আগের চেয়ে ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করবো, আগের চেয়ে পড়াশোনা বেশি করার চেষ্টা করবো। সাত থেকে দশ দিন এটা মেনে চলি দেখা যায় তারপর থেকে আবার আগের মতন অবস্থা। কেন এমন হয়? সেটাই আজকে জানার চেষ্টা করব।

মানুষ কেন তার প্রতিজ্ঞা রাখতে পারে না এর অনেকগুলো কারণ আছে। এই কারণ গুলো কে বলা হয় ‘ফলস হোপ সিনড্রোম’। ফলস হোপ সিনড্রোম হচ্ছে, বারবার একই আশা করা এবং পূর্বে এই ব্যর্থতার পেছনে অনেক ইতিহাস আছে। মানুষকে কি কি কারনে ব্যর্থ হতে পারে কিংবা কিভাবে পরিকল্পনা করি বলে ব্যর্থ হতে হয়।

খুব সিম্পল একটা থিওরি আছে ফলস হোপ সিনড্রোম এর। ফলস হোপ সিনড্রোম মনে করে মানুষ চারটা কারণে ব্যর্থ হতে পারে অর্থাৎ মানুষ যখন পরিকল্পনা করে চার ভুলের  কারণে মানুষ ব্যর্থ হতে পারে। প্রথম ভুল হচ্ছে আমরা পরিমাণ নির্ধারণ করতে ভুল করি অর্থাৎ আমরা যে পরিমাণ লক্ষ অর্জন করতে পারবো তার চাইতে কম বা বেশি নির্ধারণ করে থাকি।

যেমন একজন মানুষ চিন্তা করে যে, আমি দুই মাসে ১০ কেজি ওজন কমাবো কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দুই মাসে হয়তোবা চার কেজি ওজন কমানো সম্ভব এই যে পরিমাণ নির্ধারণ করতে ভুল করি এর ফলে আমরা লক্ষ্য অর্জন করতে পারি না।

আরেকটা যেটা হতে পারে আমরা পরিকল্পনা করার সময়, সময় নির্ধারণ করতে ভুল করি। ধরা যাক একজনের সামনে পরীক্ষা তো সে চিন্তা করতেছে আগামী সাত দিনের ভিতর সবকিছু আমার কমপ্লিট হয়ে যাবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার ১৪ থেকে ১৫ দিন দরকার। এই যে সময় নির্ধারণ এর কারণে আমরা আমাদের পরিকল্পনা বা প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে বাধ্য হয়।

- Advertisement -

পরবর্তী কারণ হচ্ছে আমাদের কতটুকু পরিশ্রম করা দরকার সেটা আমরা ঠিকভাবেই বুঝতে পারি না। একটা লক্ষ্য পূরণের জন্য কি পরিমান পরিশ্রমের দরকার এই বিষয়ে আমাদের কোন জ্ঞান থাকে না। ধরা যাক, আমার ইউনিভার্সিটিতে চান্সের দরকার তো চান্স পাওয়ার জন্য মোটামুটি ভাবে তিন-চার মাস খুব মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করতে হবে খুব সকাল সকাল উঠতে হবে সাত-আট ঘন্টা পড়াশোনা করতে হবে। স্মার্ট ফোন বা টিভি দেখা থেকে বিরত রাখতে হবে। এগুলো সব পরিশ্রম এর কাজ তো আমরা কতটুকু পরিশ্রম করলে আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণ করতে পারবো এটা যদি নির্ধারণ না করতে পারি তাহলে আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণ করতে পারবো না।

পরবর্তী কারণ হচ্ছে আমরা আমাদের জীবনের লক্ষ্য পূরণ করলে কতটুকু অভাব পড়ে বা পড়বে সে বিষয়ে আমরা অবগত নই। আমরা মনে করি আমি যদি আমার জীবনের লক্ষ্য পূরণ করতে পারি তাহলে অনেক বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে আমার জীবনে তো দেখা যায় লক্ষ্য পূরণ হওয়ার পর তেমন পরিবর্তন আসতেছেনা জীবনে।

যেমন অনেকেই আছে ওজন কমায় আবার মনে করে থাকি যে ওজন কমাইলে আমাদেরকে দেখতে সুন্দর লাগবে বা লোকজন এটেনশন দিবে কিন্তু মানুষের এটেনশন পাওয়ার জন্য বাহ্যিক সৌন্দর্যের দরকার কিন্তু কিছুদিন পর থেকে মানুষ তার দিকে অ্যাটেনশন দেয় না ফলে আমরা হতাশার মধ্যে পড়ে যাই এবং আমরা আমাদের লক্ষ্যে পূরণে উদ্দেশ্য বন্ধ করে দেই। এই ফলস হোপ সিনড্রোম বলে যে, আমরা এই চার ধরনের ভুল করি,

(১) পরিমাণ নির্ধারণে ভুল করি।

(২) কতটুকু সময় লাগবে সেটা নির্ধারণ করতে ভুল করি।

- Advertisement -

(৩) কতটুকু পরিশ্রম করা দরকার সেটা নির্ধারণ করতে ভুল করি।

(৪) আমাদের জীবনের উপর যে লক্ষ্য পূরণ করতে চাচ্ছি তার ওপর আমাদের প্রভাব কতটুকু সেই প্রভাব নির্ণয় করতে ভুল করি।

এই চার ধরনের ভুলের কারণে আমরা আমাদের প্রতিজ্ঞা রাখতে পারি না। ফলস হোপ সিনড্রোম কাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়? মানুষ পরিকল্পনা করতেছে কিন্তু বারবার কোন না কোন কারণে সে পরিকল্পনাটা ভেস্তে যাচ্ছে এমনটা হয়ে থাকে বিশেষ করে অল্প বয়সের মানুষের মধ্যে আবার আছে অনেক মানুষ ডায়েট করে বা ওজন কমানোর চেষ্টা করে আবার আছে যারা নেশা করে তারা মনে করে আজকেই শেষ কিন্তু এরকমভাবে তারা পরিকল্পনা করতে থাকে করতেই থাকে আবার আছে ওভার স্মার্ট কিন্তু বাস্তববাদী অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের জন্য এদের মধ্যে ফলস হোপ সিনড্রোম দেখা যায়।

যদি বলেন ফলস হোপ সিনড্রাম থেকে কিভাবে বের হতে পারবো বা কিভাবে পরিকল্পনা করলে আমি আমার লক্ষ্য পূরণ করতে পারবো সেটার কোন সূত্র আছে কি না। এটার কতগুলো সূত্র আছে তার মধ্যে সবচেয়ে কমন সূত্র হচ্ছে ‘SMART’ এটা যারা বড় বড় অরগানাইজিং বা উদ্যোক্তা আছে তারা এই টেকনিকটা অনুসরণ করে।

S – দিয়ে হচ্ছে স্পেসিক। আমি আমার লক্ষ্য পূরণ করতে চাই আমি আমার শরীরের ওজন কমাবো বা আমি সারাদিনে কোন মিথ্যা কথা বলবো না বা সারাদিনে আমি পাঁচজন মানুষের ভালো করবো এটাই হচ্ছে স্পেসিক।

- Advertisement -

M- মেজারেবল। আপনি যেটা করতে চান সেটা মেজারেবল হতে হবে পরিমাপ করা যায় এমনটা যেমন পরীক্ষায় আমি ৮০% মার্ক পেতে চাই।

A – এটেনএবল। আপনি যে পরিকল্পনা করেছেন সেটা লক্ষ্য অর্জন করতে হবে।

R- রিলেভেন্ট। আপনার জীবনের মূল্যবোধের সাথে প্রাসঙ্গিক হতে হবে যেটা আপনার সাথে প্রাসঙ্গিক না সেই লক্ষ্য আপনি পূরণ করতে পারবেন না।

T- টাইম। আপনি যে বিষয়ে পরিকল্পনা করতেছেন সে বিষয়ে অবশ্যই একটা সময় থাকা চাই। একটা লক্ষ্য থাকা চাই। ধরা যাক, আমি তিন মাসের মধ্যে একটা বই পড়ে শেষ করবো এইভাবে টাইম স্পেসিক ধরতে হবে।

ছবি: Image by Freepik

- Advertisement -

- Advertisement -
- Advertisement -

আল-মামুনুর রশিদ সাগর

আমার জীবনের লক্ষ্য হলো পৃথিবীকে এগিয়ে নেয়া। আমি জলবায়ু পরিবর্তন, মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা, ক্রীড়া উন্নয়ন, প্রকৃতি ও পরিবেশের উন্নয়ন, দারিদ্র্য বৈষম্য এবং দুর্নীতি রোধে কাজ করতে চাই। সর্বোপরি, আমি আগামীর শিশুদের জন্য একটি টেকসই ব্যবস্থা রেখে যেতে চাই। আমি পুরুষ, নারী এবং তৃতীয় লিঙ্গ সবার জন্য সমান গ্রহণযোগ্যতা আনয়নে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- Advertisement -
Back to top button