২০২১ সালের ৩ অক্টোবর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়াল্টন এর কারখানা পরিদর্শন করতে গাজীপুর যান প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। সেখানে তিনি একটি সেমিনারে বলেন যে, ডিসেম্বর ২০২১ সালেই আসবে পেপ্যাল। এদিকে ১১ ডিসেম্বর বাংলাদেশের অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিস এর বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড ২০২১ এক অনুষ্ঠানে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আমরা পেপ্যাল এর উচ্চ কর্মকর্তা দের সাথে কথা বলেছি। আশা করি একটি ভালো সংবাদ দিতে পারবে অল্প কিছু দিনের মধ্যে।
তিনি আরো বলেন যে, কিভাবে পেপ্যাল বাংলাদেশে চালু হবে তা সঠিক ভাবে বলা যাচ্ছে না। তার ধারবাহিকতায় পেপ্যাল এখনো চালু হয়নি, এর আগে ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর একটি ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড মেলায়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পেপ্যাল চালুর ঘোষণা দিয়েছিলো সরকার। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো যে, পেপ্যাল এর একটি সেবা জুম। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরা জুম মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাতো, পেপ্যাল চালু হওয়ার বিষয় টি বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে কেন?
এ সম্পর্কে একটি খুদে বার্তায় জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন যে, এই ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। এবং বাংলাদেশে আ্যসিসিয়েশন অব কল সেন্টার আ্যন্ড আউটসোর্সিং এর সভাপতি জনাব ওয়াহিদ শফিক একটি সাক্ষাৎকারে বলেন যে, পেপ্যাল কবে বাংলাদেশে আসবে একমাত্র পেপ্যাল -ই ভালো জানে। তারা ছাড়া কেউ নির্দিষ্টভাবে বলতে পারছে না যে কবে পেপ্যাল চালু হবে।
বেসিস এর সহ সভাপতি ফারহানা এ রহমান বলেন যে, ব্যাংকের নিতিমালার সাথে না মিলায় পেপ্যাল আসছে না বাংলাদেশে। আর এর মধ্যে দেশে পেপ্যাল আসার কথা আমি শুনি নাই। কিন্তু পেপ্যাল কে দেশে আনার ব্যাপক ভাবে চেষ্টা। চলছে হয়তো তাড়াতাড়ি আসতেও পারে। তথ্য প্রযুক্তি খাতে ৫০০ কোটি ডলার আয়ের চিন্তা ভাবনা করা হয়েছে। কিন্তু যদি পেপ্যাল আনা হয় এই মাত্রা টা আর বাড়বে বলে আশা করা যায়।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছেলেমেয়েরা আজকাল অনলাইনে কাজ করে থাকে তাই যদি পেপ্যাল দেশে আসে তাহলে তাদের টাকা দেশে আনা টা অনেক সহজ হয়ে যাবে। আমরা ২০১০ সাল থেকে পেপ্যাল কে দেশে আনার চেষ্টা করসি। টেকনোবডিওয়েব সলিউশন এর পরিচালক শাহ ইম্রাউল কায়েস বলেন যে পেপ্যাল নতুন কোনো দেশে আসার আগে সে দেশের বাজার সম্পর্কে বিস্তারিত দেখবে।
আর জানামতে পেপ্যাল যদি নতুন দেশ আনে সেটা হবে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে বেসিস আউটসোর্সিং পুরস্কার পাওয়া সুমন সাহা বলেন যে, ফিলান্সারদের পেমেন্ট গেটওয়ের মধ্যে সবথেকে বেশি পছন্দের হলো পেপ্যাল। পেপ্যাল নাই বলে যে বাংলাদেশ ফিলান্সারযে দের উপার্জিত টাকা পড়ে থাকবে তা হয় না। যে কোনো ভাবেই তাদের টাকা দেশে তারা এনে থাকে কিন্তু পেপ্যাল না থাকার কারণে কিছু ঝামেলার মধ্যে পড়তে হয়। যদি পেপ্যাল থাকতো তাহলে দেশে টাকা আনা অনেক সহজ হতো। অনলাইনভিত্তিক অর্থ লেনদেন এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে পেপ্যাল এর নিতিমালাসংক্রান্ত সমস্যা ছিলো বলে জানান।
বাংলাদেশ ফিলান্সার ডেভেলপমেন্ট এর সভাপতি তানজিবা রহমান এর সাথে তিনি আরো বলেন যে এই সব সমস্যা সমাধান করা হয়েছে ২০২২ সালে পেপ্যাল বাংলাদেশে আসবে। তিনি বলেন পেপ্যাল আনলেও শুধু হবেনা বাংলাদেশের এর অর্থ পাচারের বিষয় টাও মাথায় রাখতে হবে কেননা বাংলাদেশ এমন চোর ডাকাত এর অভাব নেই যে যারা নিজের দেশের ক্ষতি করতে দ্বিধা বোধ করবে না।
আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান দ্য সফটকিং এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাফায়েত রিফাত বলেন যে আমরা যারা ফিলান্সসিং করি। তারা তাদের কাজের টাকা পাঠানোর অন্যতম মাধ্যমে হলো পেপ্যাল বিভিন্ন দেশে ফ্রিলান্সে পেমেন্ট গেটওয়ে হিসেবে পেপ্যাল কে বেছে নেই।
যদি পেপ্যাল বাংলাদেশে আসে তাহলে তথ্য প্রযুক্তি তে আমাদের বিলিয়ন ডলার আয়ের সম্ভাবনা আছে। দেশে পেপ্যাল না থাকায় বিদেশ থেকে অর্থ আনতে হয় অনলাইন ভিত্তিক সেবা পেওনিয়ার, ওয়াইজ, জুম, এর মাধ্যমে নিজের ব্যাংক হিসেবে এনে থাকেন। কখনো কখনো মানিগ্রাম এর মাধ্যমে অর্থ আনতে হয়। তার ফলে বিভিন্ন ঝামেলায় পড়তে হয় তাই পেপ্যাল সবাই পছন্দ করে থাকে।
পেপ্যাল এখনো না আসার মূল কারণ
বেশির ভাগ মানুষ মনে করে যে পেপ্যাল ইচ্ছে করে তাদের সেবা বাংলাদেশে চালু করছে না। কিন্তু এই ধারণা টা আসলে একদম ভুল। কেননা একটি দেশে সার্ভিস চালু করলে তাদের অনেক লাভ আছে। কিন্তু তাহলে বাংলাদেশে কেন আসছে না পেপ্যাল? আসলে একটি দেশে বিভিন্ন রকম নিয়ম কানুন আছে বাংলাদেশ ব্যাংক নিতিমালার সাথে প্রধানত মিলে না পেপ্যাল এর নিয়ম।
বাংলাদেশ এর আইন অনুযায়ী সব দেশ থেকে দেশে টাকা আনা যাবে কিন্তু বাংলাদেশ থেকে অন্য কোনো দেশে টাকা পাঠানো যাবে না। যদি পাঠায় তাহলে সেটা টাকা পাচার এর বলে ধরা হয়। পেপ্যাল নিয়ম অনুযায়ী যে কেউ বিভিন্ন দেশ থেকে টাকা আদান প্রাদন করতে পারবে সে জন্য বাংলাদেশে আসছে না পেপ্যাল।
কিন্তু কয়েক বছর আগে পেপ্যাল বাংলাদেশে একটি সেবা চালু করে যে সেটার নাম হলো জুম (Xoom) এটির মাধ্যমে অন্য দেশ থেকে টাকা আনা হয়। প্রধানত আমেরিকান প্রবাসীরা এইটা ব্যবহার করেন। কিন্তু এইটা চার্জ কাটে অনেক। তাই সহজে কেউ ব্যবহার করতে চায় না। এদিকে বাংলাদেশে অনলাইন ভিত্তিক কাজ বাড়তে থাকায় ব্যাংকগুলো তাদের নীতিগুলো পরিবর্তন করতে যাচ্ছে। ফলে আশা করা যায় দ্রুত পেপ্যাল আসবে বাংলাদেশে।
আশা করা যাচ্ছে যে, এই অপেক্ষার প্রহর শেষ করে খুব দ্রুতই বাংলাদেশে পেপ্যাল আসবে এবং বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সিং খাতে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে।