সময় ব্যবস্থাপনার ৫টি কার্যকরী কৌশল
সময় ব্যবস্থাপনা ও সাফল্য: সময়ের সঠিক ব্যবহারে সফলতার চাবিকাঠি
একটি জনপ্রিয় আরবি প্রবাদ আছে, “Time is like a sword: if you don’t cut it, it cuts you (ইংরেজি)”। আমার আজকের আলোচনা হলো, সময় ব্যবস্থাপনা ও সাফল্য নিয়ে। আশা করছি আমার লেখা এই প্রবন্ধ আপনাদের কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। চলুন শুরু করা যাক।
সময় কি?
দুই শব্দের এই প্রশ্নবোধক বাক্যের সঠিক সংজ্ঞা কি হতে পারে তা নিয়ে প্রচুর মতানৈক্য রয়েছে। তবে, আজকের আলোচনায় আমরা তাত্ত্বিক বিজ্ঞান, দার্শনিক ব্যাখ্যা ও হাইপোথিসিসের গভীরে যাবো না। তাই, সংক্ষেপে বলা যায়, সময় হচ্ছে বিজ্ঞানের এমন একটি শ্বাশ্বত দিক যা আমাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করে।
সময়ের আদর্শ একক সেকেন্ড। আমাদের গ্রহের (পৃথিবী) তার নিজ কক্ষপথে ঘুরে আসতে ২৪ ঘন্টার কিছু বেশি সময় লাগে। তাই ২৪ ঘন্টাকে একদিন বিবেচনা করা হয় এবং ৩৬৫ দিনকে একবছর বলা হয় যা সবার জন্য সমান।
সময় ব্যবস্থাপনা
সময় ব্যবস্থাপনা হলো এমন একটি পরিকল্পনা প্রক্রিয়া যাতে সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে (অর্থাৎ, প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনের কোনটিতে কতোটুকু সময় ব্যয় করা যৌক্তিক হবে) কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির প্রত্যাশিত উদ্দেশ্যের সর্বোচ্চ অর্জন করার প্রচেষ্টায় সফলতা অর্জন করা।
একদিন বা ২৪ ঘন্টা সবার জন্য সুনির্দিষ্ট হলেও এই সময়কে কাজে লাগিয়ে কেউ কেউ সাফল্যের সুউচ্চ শিখরে আরোহন করছে আবার, কেউ হাবুডুবু খাচ্ছে পরাজয়ের অথৈ সমুদ্রে। সময়ের সঠিক ব্যবহারই সাফল্যের চাবিকাঠি একথা এখন সর্বজনবিদিত।
সময়ের সাথে সাফল্যের সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে। তাই আজকের আলোচনায় আমরা সময় ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় সম্পর্কে জানবো।
১. সময়ের হিসাবরক্ষণ
আপনি যদি একজন স্মার্টফোন ব্যবহারকারী হোন তাহলে, ফোনের নোটপ্যাডে প্রতিদিন কোথায় কোন খাতে কতোটুকু সময় ব্যয় করছেন তা লিপিবদ্ধ করুন। ছোট ছোট ব্যয়কৃত সময় থেকে শুরু করে রাতের ঘুম পর্যন্ত সব লিপিবদ্ধ করবেন খুব সচেতনতার সাথে। এবার লিপিবদ্ধকৃত সময়গুলো ভালোভাবে বিশ্লেষণ করুন।
আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন কোথায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় ব্যয় করেছেন এবং তা আরো কতো কম সময়ে করা যেত। অথবা অযথা অপ্রয়োজনীয় কাজে কতোখানি সময় ব্যয় হয়েছে। এবার সেগুলোর হিসেব কষে ফেলুন। এভাবে এক সপ্তাহ সময়ের হিসাব করে সেটার গড় হিসেব কষে ৩৬৫ দিয়ে গুণ করুন।
আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন প্রতিবছর কতোগুলো ঘন্টা আপনি শুধু শুধু অপব্যয় করছেন যেগুলো আপনি অন্য কোনো কাজে ব্যয় করতে পারতেন যা আপনার জীবনে আরো বেশি মূল্য যুক্ত করতো।
২. কাজের তালিকা
আপনি প্রতিদিন আপনার সকালে ১ টুকরো কাগজ ও একটা কলম নিন এবং আপনি সারাদিন কি কি করবেন? তার একটি তালিকা তৈরি করে ফেলুন। বিশদ আকারে তালিকা তৈরি করবেন যাতে ছোট বড় কোনো কাজই বাদ না যায় যেমন, স্বাস্থকর সকালের নাস্তা, অফিসে/স্কুলে/কলেজে যাওয়া, সকালের ব্যায়াম, বিকেলের আড্ডা কিংবা কোনো পছন্দের সিরিজ দেখা সবকিছু।
এবার, চিন্তা করুন যদি আজকে শুধু মাত্র একটি কাজই করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতো তবে কোন কাজটি আপনি করতেন সেটা প্রায়োরিটি-১ দিয়ে চিহ্নিত করুন, এরপর চিন্তা করুন যদি দুটি কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ হতো তবে, পরের কাজ কোনটি করতেন এভাবে পর্যায়ক্রমে কাজের মূল্যায়ন করুন ও সঠিক মূল্য অনুযায়ি কাজের তালিকা করুন এবং সেগুলো সম্পন্ন করুন।
৩. না বলতে শিখুন
আপনার বন্ধু আপনাকে জানালো সন্ধ্যায় রমিজ চাচার চায়ের দোকানে দেখা করতে। আপনি “না” বলতে পারলেন না। সেখানে গেলেন এবং তুমুল আড্ডা হাসি-গান শেষে বাসায় ফিরলেন। বাসায় আসার পর হুশ হলো, আগামিকাল ক্লাসে ‘কুইজটেস্ট’ আছে অথচ আপনার কিছুই পড়া হয় নাই।
কিংবা, আপনার বস আপনাকে একটা প্রেজেন্টেশন দিয়েছে অথচ সেটা আপনার খেয়ালই নাই। সবকিছুতে “হ্যাঁ” বলাটা কখনোই জীবনে সুফল বয়ে নিয়ে আসেনা। তাই ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় না বলতে শিখুন।
কারণ, যে কাজ আপনার জীবনে একটুও মূল্য যুক্ত করবে না এমন কাজ থেকে যতো দূরে থাকবেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজের কাছাকাছি থাকার ততো সুযোগ পাবেন যা আপনাকে পৌঁছে দিবে আপনার কাঙ্ক্ষিত সফলতায়।
৪. ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠা
ঘুম থেকে যতোটা সম্ভব তাড়াতাড়ি উঠুন। কারণ, যে মানুষটা ঘুম থেকে সকাল ৮:০০ টায় উঠে তারপর দিন শুরু করে তার তুলনায় যে সকাল ৫:০০ টায় দিন শুরু করে সে দিনের শুরুতেই ৩ ঘন্টা এগিয়ে থাকলো।
যদি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয় এমন অভ্যাস থাকে তবে, প্রতিদিন ১৫ মিনিট আগে ঘুম থেকে জেগে উঠার জন্য অ্যালার্ম দিয়ে রাখুন এরপর ৩ দিন পরে আরো ১৫ মিনিট আগে অ্যালার্ম দিয়ে রাখুন।
এভাবে আস্তে আস্তে একসময় সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস তৈরি হয়ে যাবে।
৫. তথ্য নির্বাচন
আমরা প্রতিদিন কতোশত তথ্য গ্রহণ করছি যার সিংহভাগই অপ্রয়োজনীয়। অথচ, এসব এলোমেলো অযাচিত তথ্য গ্রহণের ফলে কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে নজর ধরে রাখাটা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। তাই তথ্যগুলো যাচাই করতে হবে।
শুধু মাত্র যে বিষয়গুলো আমাদের ক্যারিয়ার ও দক্ষতা উন্নত করতে সহায়তা করবে সেগুলোতেই আমাদের নজর রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ, আপনি আজ যা শিখবেন আগামিকাল সেটাই আপনাকে হয় এগিয়ে দিবে, না হয় পিছিয়ে দেবে।
আর, এসব বিভিন্ন ধরণের “নিউজফিড স্ক্রল” করতে আমাদের যে সময়ের অপব্যয় হয় তা কতোটা বেশি তা সময়ের হিসাবরক্ষণ পদ্ধতিটা অনুসরণ করলে সহজেই বুঝতে পারবেন।