টিন (TIN) নম্বর কেন গুরুত্বপূর্ণ? জানুন বিস্তারিত
কেন আপনার একটি টিন সার্টিফিকেট থাকা জরুরি?
টিন (TIN) কি?
TIN (Tax Identification Number) বা ‘ট্যাক্সপেয়ার আইডেনটিফিকেশন নম্বর’ হলো এমন একটি ডকুমেন্টস যা দ্বারা একজন নিয়মিত করদাতা কে চিহ্নিত করে থাকে। একজন নিয়মিত করদাতা স্বাভাবিক ভাবে এই নাম্বারের আওতায় এসে থাকে তাই আমরা মূলত ‘টিন’ বলতে একজন করদাতার সার্টিফিকেট নাম্বারকে বুঝে থাকি।
সাধারণত আয়কর নিবন্ধন ওয়েবসাইটে গিয়ে টিন সার্টিফিকেট এর আবেদন ও সার্টিফিকেট সংগ্রহ করা যায়। যদি কোন কারণে সার্টিফিকেট হারিয়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায় তবে পুনরায় ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে আবারো সার্টিফিকেট সংগ্রহ করা যাবে তবে অবশ্যই আইডি ও পাসওয়ার্ড মনে রাখতে হবে। টিন নম্বর মূলত ১২ ডিজিটের হয়ে থাকে।
যেসকল কাজে টিন লাগে: যেসকল মানুষের বাৎসরিক ইনকাম ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি তাদেরই মূলত আয়কর পরিশোধ করতে হয়। ইনকাম ট্যাক্স ফরম পূরন করার আগে টিন সার্টিফিকেট করতে হয়।
সরকারের যেসকল সেবা পেতে টিন লাগবে: বাংলাদেশ নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ। প্রত্যেক দেশের মত বাংলাদেশেও প্রতি বছর বাৎসরিক আয়ের উপর সরকারকে কর দিতে হয়। এক্ষেত্রে টিন সার্টিফিকেট এর আওতায় এসে সরকারকে তার আয়ের উপর নির্ভর করে ট্যাক্স প্রদান করা হয়।
টিন এর আওতাভুক্ত হলে সরকারি অনেক সেবা খুব সহজেই পাওয়া যায়। ব্যাংক থেকে ঋণ উত্তোলন, লাইসেন্স প্রাপ্তি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হতে বেতন উত্তোলন সহ অনেক সুবিধাদি প্রাপ্তি হয়ে থাকে যা অনেক প্রাপ্তির একটা বিষয়।
৩৬ টি সেবার তালিকা –
১. ব্যাংক হতে ৫ লক্ষাধিক টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে।
২. কোন কোম্পানি পরিচালনার ক্ষেত্রে।
৩. পন্য আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে।
৪. ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া বা নবায়নের ক্ষেত্রে।
৫. সমবায় সমিতির লাইসেন্স প্রপ্তির ক্ষেত্রে।
৬. বীমা প্রতিষ্ঠান এর লাইসেন্স পাওয়া বা নবায়নের ক্ষেত্রে।
৭. জমি ক্রয় বিক্রয় জায়গা হস্তান্তর সহ এই ধরনের সম্পৃক্ত কাজে যদি ১০ লাখ টাকার উপর খরচ হয় সেই ক্ষেত্রে।
৮. ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে।
৯. চিকিৎসা, আইন, প্রকৌশল সহ এইসকল সংগঠনের সদস্যপদ লাভের ক্ষেত্রে।
১০. মুসলমানদের বিবাহ ও তালাক সম্পাদনকারি অর্থাৎ মৌলভি লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে।
১১. কোন ব্যবসায়ি সংগঠনের সদস্যপদ প্রাপ্তি লাভের ক্ষেত্রে।
১২. বিএসটিআইয়ের লাইসেন্স প্রাপ্তি, অগ্নিনিরাপদ লাইসেন্স, সহ বিভিন্ন লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে।
১৩. শিল্প, বানিজ্যিক ও আবাসিক এলাকাই গ্যাস লাইন পাওয়ার ক্ষেত্রে।
১৪. সার্ভে সার্টিফিকেট যেমন লঞ্চ, ট্রলার ইত্যাদির ক্ষেত্রে।
১৫. ইট ভাটায় ইট তৈরীর অনুমতি গ্রহনের ক্ষেত্রে।
১৬. সন্তানকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে।
১৭. সেনাবাহিনীর আবাসিক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে।
১৮. কোন কোম্পানির এজেন্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে।
১৯. অস্ত্রের লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে।
২০. কোন কিছু আমদানি করার লক্ষে ঋণপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে।
২১. পোস্টাল সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলার উদ্যেশ্যে (৫ লাখ টাকার অধিক)।
২২. ক্রেডিট কার্ডে ১০ লাখ টাকার উপর বেশি টাকা থাকলে সেই অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে।
২৩. সঞ্চয়পত্র কিনার ক্ষেত্রে (৫ লাখ টাকার বেশি পরিমাণ)।
২৪. সংসদ নির্বাচন সহ জেলা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে।
২৫. স্থাবর সম্পদ সংশ্লিষ্ট অংশিদার হিসেবে ব্যাবসা সম্পাদনের ক্ষেত্রে।
২৬. বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হতে বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রে।
২৭. ১৬ হাজারের অধিক বেতন পাওয়ার জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান হতে বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রে।
২৮. মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ও ইলেকট্রনিক লেনদেন কমিশন ফি পাওয়ার ক্ষেত্রে।
২৯. সিকউরিটি এজেন্ট জাতীয় প্রতিষ্ঠান যারা বেসরকারি ভাবে সার্ভিস দিয়ে থাকে তাদের বেতন উত্তোলনের ক্ষেত্রে।
৩০. এমপিএ ভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ১৬ হাজারের বেশি বেতন উত্তোলনের ক্ষেত্রে।
৩১. বীমা কোম্পানির এজেন্সি প্রাপ্তি ও নবায়নের ক্ষেত্রে।
৩২. ভাড়ায় চালিত মোটর গাড়ির নিবন্ধন ও মালিকানা পরিবর্তন এর ক্ষেত্রে।
৩৩. কোন এনজিও বিদেশি অর্থ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে।
৩৪. অনলাইন প্লাটফর্মে কোন কোন সেবা বা পন্য বিক্রি করার ক্ষেত্রে।
৩৫. নির্দিষ্ট কোন ক্লাব বা এরুপ প্রতিষ্ঠান এর সদস্যপদ পাওয়ার ক্ষেত্রে।
৩৬. টেন্ডার এর কাগজপত্র জমা দিয়ে কোন টেন্ডার পাওয়ার ক্ষেত্রে।
৩৭. আমদানি ও রপ্তানির উদ্দ্যেশ্যে বিল অফ এন্ট্রি জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে।
৩৮. নতুন ভবন নির্মান এর জন্য যাবতিয় কাগজপত্র নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদনপত্র জমাকরনের ক্ষেত্রে।
উপরোক্ত সকল সেবাই মুলত টিন এর আওয়ার মধ্যে পরে।
বাজেটের যৌক্তিকতা ও অযৌক্তিকতা
২০২২-২০২৩ সালের বাজেট বিশ্লেষন করলে আমাদের প্রথমেই যা দৃষ্টিগোচর হয় তা হল বাজেটে প্রকাশিত আয়-ব্যয় মিলিয়ে প্রায় ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি রয়ে যায় যা পূরন করে বাজেট সমন্বয় অনেকটাই জটিল।
ছয় লাখ আটাত্তর হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেটে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি ঘাটতি অনেকটাই অনাকাঙ্খিত। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি লক্ষ করলে আমরা দেখতে পাচ্ছি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আকাশ ছুঁই ছুঁই ভাব। মধ্যম আয়ের পরিবার গুলোর এমনিতেই চলা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ভিতরে কিছু কিছু দ্রব্যে শুল্ক কর আরোপে তাদের পরিবার চালানো অনেকটাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে।
সরকারের উচিত ছিল নিত্য দ্রব্যের বাজার পরিস্থিতিতে গুরুত্বারোপ করে বাজার সমন্বয়ের প্রচেষ্টা চালানো। উক্ত বাজেট একটি চ্যালেঞ্জিং বাজেট হিসেবেই পরিগনিত হয়েছে। একদিকে সামনের নির্বাচন অন্যদিকে এমন বাজেট সবমিলিয়ে সাধারন জনগন একটু সমস্যার মধ্যে দিয়ে এই বছর পার করতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তাই বলা যেতেই পারে এরকম বাজেট মধ্যবিত্ত সমাজের মানুষদের ক্ষেত্রে অযৌক্তিত বলেই বিবেচিত হয়।