বিনোদন

বিটিএস (BTS): কিভাবে তারা পপ জগতে বিপ্লব ঘটালো?

কোরিয়ান পপ সেন্সেশন বিটিএসের উত্থান

সঙ্গীতের প্রতি মানুষের টান

আদিকাল থেকে সঙ্গীতের প্রতি মানুষের ভিন্ন রকম টান ছিল। সভ্যতার সাথে সাথে সঙ্গীতের নতুন নতুন বিভিন্ন ধারা এসেছে। তবে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি ধারা হলো পপ সঙ্গীত। বিশ্বের পপ ধারার গায়করা এখন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।

বিটিএস (BTS) এর উত্থান

সবকিছু ছাড়িয়ে এখন এই পপ ধারার গানের একটি ব্যান্ড নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে সেটি হলো বিটিএস। এই দলের সদস্য সংখ্যা মোট ৭ জন। দলের পুরো নাম হলো ‘ব্যাংতান সোনিয়ন্দন’, যার অর্থ, বুলেটপ্রুফ বয় স্কাউট।

প্রচলিত ধ্যান-ধারণার বিপরীতে তাদের শক্ত অবস্থান, সে জন্যই এমন নাম। এই ব্যান্ডের সবচেয়ে দারুণ বিষয় হলো গানের সাথে সাথে ব্যতিক্রমী নাচ, মেকআপ ও এক্সপ্রেশন। সেসব কারণে খুব অল্প সময়ের মধ্যে সারা বিশ্বে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করেছে।

বিটিএস (BTS) এর ইতিহাস

দক্ষিণ কোরিয়ার ৭ জন সদস্য নিয়ে গঠিত জনপ্রিয় ব্যান্ড হলো বিটিএস বা বাংতান বয়েজ। এই ব্যান্ড বিগহিট মিউজিক এর অধীনে ২০১০ সালে ট্রেইনি হিসেবে এবং ২০১৩ সালে ২ কুল ৪ স্কুল অ্যালবাম নিয়ে পুরো বিশ্বের সামনে নিজেদের আত্মপ্রকাশ করে।

তারা মূলত হিপ হপ সঙ্গীতের গ্রুপ হলেও তাদের গানগুলোতে বিভিন্ন সঙ্গীতের ধরন প্রকাশ পায়। গানের মাধ্যমে তারা সাহিত্য, মনোস্তাত্বিক বিষয় এবং নিজেকে ভালোবাসার গুরুত্ব তুলে ধরে। এরপর ২০১৪ সালে প্রকাশ করে তাদের প্রথম কোরিয়ান স্টুডিও অ্যালবাম ‘ডার্ক এন্ড ওয়াইল্ড’।

পরবর্তীতে জাপানিজ স্টুডিও অ্যালবাম ‘ওয়েক আপ’ প্রকাশ হয়। তাদের দ্বিতীয় স্টুডিও অ্যালবাম ‘উইংস’ (২০১৬), ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম যার ১ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে কোরিয়ায়। ২০১৭ সালে পুরো বিশ্বের সঙ্গীত জগতে নিজেদের স্থান করে নেয় তারা।

সদস্য পরিচিতি

  • র‌্যাপার ও ড্যান্সার আরএম (কিম নামজুন)
  • ভোকাল ও ভিজ্যুয়াল জিন (কিম সকজিন)
  • লিড র‌্যাপার সুগা (মিন ইয়ুঙ্গি)
  • র‌্যাপার/ড্যান্সার জে-হোপ (জং হোসক)
  • মেইন ভোকাল জিমিন (পার্ক জিমিন)
  • ভোকাল ভি (কিম তেহিয়ং)
  • ড্যান্সার ও লিড ভোকাল জংকুক (জন জংকুক)

বিটিএস (BTS) এর জনপ্রিয়তার কারণ

২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর খুব অল্প সময়ে নানা কারণে এই ব্যান্ডটি জনপ্রিয় হয়ে যায়। এরমধ্যে ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে টাইম ম্যাগাজিনের সেরা ২৫ উদ্বুদ্ধকারীর নামের তালিকায় স্থান দেয় বিটিএস।

এরপর ২০১৯ সালে ছোট্ট কারণ ব্ল্যাকপিংক এর কারণে তাদের জায়গা হারায় কিন্তু ২০২০ ও ২০২১ সালে আবার আগের জায়গা ফিরে পায়। এই ব্যান্ড সব থেকে বেশি সক্রিয় হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে। ব্যাংতান বয়েজের সদস্যরা টুইটারে অনেক বেশি সক্রিয়।

তারা পরিচিত ‘বিটিএস আর্মি’ নামে। টুইটারে অনুসরণকারী এই আর্মির সংখ্যা ৩১ মিলিয়নের বেশি। ২০১৭ সালে তারা গিনেস বুক রেকর্ড করে তারকাদের মধ্যে সর্বোচ্চ রিটুইট পেয়ে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সংগীততারকা জাস্টিন বিবারের রিটুইটকে পেছনে ফেলে এই রেকর্ড করে বিটিএস। তাই সবার দৃষ্টি পড়ে ব্যান্ডটির ওপর।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ভক্তদের সঙ্গে বেশি যোগাযোগ রাখাটাই বিটিএসের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে টপ সোশ্যাল আর্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার পর থেকেই তাদের নিয়ে আলোচনা বেড়ে যায়।

এক দিকে বিলবোর্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ড পাওয়া প্রথম কোরিয়ান ব্যান্ড হিসেবে, আরেক দিকে পশ্চিমাদের মধ্যে বিশাল এক অংশ বিটিএস আর্মি তৈরি হওয়ায় সহ নানা কারণে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে বিটিএস।

বর্ণবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান

এই দল একবার খুব কঠিনভাবে বর্ণবাদের শিকার হয়। তারপর অফিসিয়াল ভাবে তারা টুইট করে জানায়, ‘আমরা জানি, বর্ণবাদী আচরণের শিকার হওয়ার পর কীভাবে আত্মবিশ্বাস ভেঙেচুরে যায়। নিজেদের ‘ছোট’ আর ক্ষমতাহীন বলে মনে হয়। কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের বলা হয়েছে, ‘তোমরা কেন এ রকম অদ্ভুত দেখতে? ওমা, তোমরাও ইংরেজিতেও কথা বলো!’ তারা চেয়েছিল বিশ্বজুড়ে বর্ণবাদ নিপাত যাক। শুধু এইটুকু…

পরবর্তীতে তারা বর্ণবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন, যেখানের ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনে ১০ লাখ ডলার বা ৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছিল বিটিএস। প্রিয় ব্যান্ডকে অনুসরণ করে একই তহবিলে একই পরিমাণ অর্থ দিয়েছিলেন ভক্তরাও।

সমালোচনার কারণ

বিটিএস আর্মিরা বিভিন্নভাবে বলার চেষ্টা করেন এই ব্যান্ড গানের তালে তালে নাচের দিকে বেশ পারদর্শী কিন্তু আদতে সেভাবে তারা ভালো নাচতে পারেন না। এছাড়া কোরিয়ান অনেক ব্যান্ড আরো বেশি ভালো নাচতে পারেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

অন্যদিকে পপ মিউজের যে উচ্চ স্কেলে গানের রেওয়াজ সে অনুসারে এই ব্যান্ডের গানের স্কেল তেমন উচ্চ নয়। বিভিন্ন জায়গায় কনসার্টে তারা যে ধরনের পোষাক পড়েন সেটি নিয়ে অনেকেই কঠোরভাবে মন্তব্য করে বসেন।

তারা যে ধরণের মেকআপ করে সবার সামনে আসেন সেটি অন্যান্যদের সাথে মিল না হওয়ার কারণে ব্যাপক সমালোচনা চলে। তবে বর্তমানের বিশ্বায়নের যুগে সব ধরনের সাংস্কৃতিক বৈচিত্রকে স্বাগত জানানো অনুরোধ করেন বিটিএস ফ্যানরা।

তবে খুব অল্প সময়ে প্রতিষ্ঠিত ব্যান্ডের গান যখন প্রায় ২ মিলিয়ন অ্যালবাম বিক্রি হয় বিশ্বব্যাপী, তাদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হবেই।

বিটিএস (BTS) আর্মিদের কার্যক্রম

কোরিয়ান বাংতান বয়েজ গানের দলের ভক্তদের মূলত বিটিএস আর্মি বলা হয়। এই ব্যান্ড দলের জনপ্রিয়তার সমানুপাতিকভাবে ফ্যানদেরও অবস্থা ভালো হয়েছে। ব্যান্ড দলের মত ফ্যানদেরও অনেকে চেনেন।

তারা ব্যান্ড দলের বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে দলের জন্য ভালোবেসে নানা রকমের স্বেচ্ছাসেবী কাজ করে থাকেন। ব্যান্ড দলের ৭তম প্রতিষ্ঠাবর্ষিকীতে তারা বন্যার্ত মানুষের পাশে কয়েক লাখ টাকার জরুরী সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।

এছাড়া ব্যান্ড দলের সদস্যদের জন্মদিনে তারা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে খাদ্য বিতরণসহ সহযোগিতামূলক কাজ করেন। সার্বিকভাবে গানের দলের সমালোচনার বাইরে এসে আর্মিদের কার্যক্রম অনেক বেশি প্রশংসার দাবিদার।

শেষ কথা

সার্বিকভাবে বলা যায় আমরা নিজেদের পছন্দের বাইরের বিভিন্ন কিছুকে নেতিবাচকভাবে না দেখে ভালোভাবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, ভাষা, পোষাক অনেক কিছু ভিন্ন তাদেরকে নিজেদের সাথে তুলনা করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

আব্দুস সবুর (লোটাস)

My name is Abdus Sabur Lotus. I am a sub-editor at ovizatri.com and a co-founder of this online news and magazine portal. I have worked as a journalist for various Bangladeshi news portals and agencies, both online and offline. I contribute to Haal Fashion and previously served as the Rajshahi University Correspondent for Kalbela. I was also the General Secretary of the Rajshahi University Journalists' Association. I graduated with a degree in Journalism from Rajshahi University. Stay updated with ovizatri.com.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button