রকেট: বাংলাদেশর প্রথম মোবাইল ব্যাংকিং সেবা
ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং এর হাত ধরে রকেটের আত্মপ্রকাশ এবং গ্রাহকদের জন্য দ্রুত ও সহজ সেবা
আমরা সাধারণত জানি যে রকেট হলো দ্রুত গতি সম্পন্ন আকাশ যান, যার দ্বারা মহাকাশে ভ্রমণ করা হয়। কিন্তু আজকে আমরা জানতে চলেছি বাংলাদেশর প্রথম মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রকেট সম্পর্কে।
রকেটের আত্মপ্রকাশ
রকেট এর আত্মপ্রকাশ ঘটে ২০১১ সালে ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকের হাত ধরে। সে সময়ে রকেট নামে পরিচিতি ছিলো না, ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংক নামেই পরিচিত ছিলো। কিন্তু তারা নাম পরিবর্তন করে রাখে রকেট। বাংলাদেশ মোবাইল ব্যাংকিং এর মধ্যে অন্যতম হলো রকেট মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। এটি মূলত নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশের ডাচ বাংলা ব্যাংক নিয়ে গঠিত।
রকেটের প্রধান প্রয়াস
রকেটের প্রধান প্রয়াস ছিলো গ্রাহকদের কাছে দ্রুত গতিতে সেবা প্রদান করা। বর্তমানে তাদের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। সেই লক্ষ্য তারা ব্যাপক ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের ব্যাংকিং সেবা আপনার হাতের মুঠোয়। দ্রুত গতির জন্য টাকা উত্তোলনের জন্য রকেট হতে পারে আপনার জন্য সেরা একটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা।
রকেটের সেবা
রকেট ব্যবহার করে আপনি মোবাইল ফোনে রকেট অ্যাপ দিয়ে যে সকল ব্যাংকিং সেবা নিতে পারবেন তা হলো:
- টাকা জমা রাখা
- টাকা উত্তোলন করা
- বিভিন্ন প্রকার বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল প্রদান করা
- বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আনা
রকেটের সুবিধা
মোবাইল ব্যাংকিং যেটা কে আমরা ডিজিটাল আর্থিক ব্যাংকিং বলে থাকি এবং যার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন প্রকার মোবাইল ব্যাংক থেকে অনেক প্রকার ডিজিটাল সেবা নিয়ে থাকি, ঠিক তেমনই ভাবে আমরা রকেট থেকে যেসকল ডিজিটাল সুবিধা পেতে পারি তা নিম্নে দেওয়া হলো:
১. রকেট অ্যাকাউন্টে নগদ টাকা জমা করা ২. রকেট গ্রাহক নিবন্ধন করা ৩. রকেট থেকে যে টাকা জমা আছে তা উত্তোলন করা ৪. রকেট আপনাকে দেবে এটিএম মেশিনে ফ্রি তে টাকা উত্তোলন করার সুবিধা
রকেট থেকে আপনি বাংলাদেশের যেকোনো মোবাইল অপারেটর সিমে রিচার্জ করতে পারবেন। যে কোন ধরনের ইউটিলিটি বিল প্রদান করতে পারবেন। যেমন ধরুন: বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, ওয়াসার বিল, ডেস্কোর বিল ইত্যাদি প্রদান করতে পারবেন। বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটে কেনাকাটা করে বিল প্রদান করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে বেশি কেনাকাটা করলে রকেট আপনাকে বিশেষ ছাড় প্রদান করবে।
জরুরি টাকার প্রয়োজনে
জরুরি টাকার প্রয়োজনে আপনি মুহূর্তের মধ্যে রকেট এর দ্বারা দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে নিমিষেই টাকা পাঠিয়ে দিতে পারবেন। বেতন ভাতা প্রেরণ আজকাল বিভিন্ন কোম্পানি তাদের কর্মীদের বেতন রকেট দ্বারা প্রদান করে থাকে। রকেট দ্বারা আপনি বিভিন্ন প্রকার সরকারি বিল প্রদান করতে পারবেন। যেমন সরকারি চাকরিতে আবেদন এর সময় রকেট দ্বারা টাকা পাঠাতে পারবেন। এই সকল ডিজিটাল সেবা আপনি রকেট অ্যাপ দ্বারা নিতে পারবেন।
কীভাবে রকেট অ্যাকাউন্ট খুলবেন?
আপনার যদি একটি স্মার্টফোন থেকে থাকে তাহলে আপনি ঘরে বসে খুলে ফেলতে পারবেন একটি রকেট অ্যাকাউন্ট। নিজে নিজে রকেট অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আপনাকে প্রথমে একটি রকেট অ্যাপ নামাতে হবে।
আর যদি আপনার স্মার্টফোন না থাকে তাহলে আপনি আপনার পরিচিত রকেট এজেন্টের কাছে যাবেন। কিংবা ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং এর অফিসে যাবেন। তাহলে আপনাকে একটি রকেট অ্যাকাউন্ট তারা খুলে দেবে।
রকেট অ্যাকাউন্ট খুলতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
আপনি যদি নিজের অ্যাপ থেকে নিজের অ্যাকাউন্ট খুলতে চান তাহলে আপনাকে নিজের জাতীয় পরিচয় পত্র কিংবা পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স এর যে কোনো একটি প্রদান করতে হবে। আপনার একটি নিজস্ব ছবি প্রদান করতে হবে।
তার সাথে যে অপারেটর এর সিম দ্বারা অ্যাকাউন্ট খুলবেন তার নম্বর প্রদান করতে হবে। আর যদি আপনার স্মার্টফোন না থাকে তাহলে ডিবিএল এর এজেন্টে গিয়ে এইসব নথিপত্র জমা দিবেন। তারা আপনাকে একটি রকেট অ্যাকাউন্ট খুলে দেবে।
রকেট অ্যাকাউন্ট খুলতে পিন এর প্রয়োজনীয়তা
যেকোনো মূল্যবান সম্পদ আপনি নিরাপত্তার সহিত রেখে দেন তেমন করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আপনি আপনার মূল্যবান টাকা রকেটে জমা রাখছেন। সেটার নিরাপদ রাখার জন্য অবশ্যই আপনাকে একটি পাসওয়ার্ড প্রদান করতে হবে। কেননা টাকা জমা করার পর আপনি টাকা উত্তোলন করতে চাইলে আপনাকে সেই পাসওয়ার্ড প্রদান করতে হবে। এতে করে রকেট নিশ্চিত হবে যে আপনি-ই টাকাটা তুলছেন কেননা আপনি বাদে ঐ পাসওয়ার্ড টি কেউ জানে না। তাই একটি পাসওয়ার্ডের প্রয়োজন আছে।
রকেটের ইউএসএসডি (USSD) কোড
যেকোনো মোবাইল ব্যাংকিং এর একটি করে ইউএসএসডি কোড প্রদান করা হয়। সেই কোড ব্যবহার করে যারা স্মার্টফোন ব্যবহার করেন না তারা এই সুবিধা নিয়ে থাকেন। ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং এর পরিচালনা করার রকেট এর কোড হচ্ছে, *৩২২#
রকেট এর বিভিন্ন লেনদেনে চার্জ
অন্য মোবাইল ব্যাংকের মতোই রকেট ক্যাশ আউট চার্জ নিয়ে থাকে এবং বিভিন্ন প্রকার লেনদেন এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্যাশ আউট চার্জ নিয়ে থাকে রকেট। যার মাধ্যমে গ্রাহক দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে নিমিষেই টাকা পাঠিয়ে দিতে পারে।
দেশের অন্য সব ব্যাংকের মতোই রকেট তার নিদিষ্ট পরিমাণ চার্জ নিয়ে থাকে। সাধারণত রকেট এজেন্ট থেকে ক্যাশ আউট চার্জ একটু বেশি কাটে তাই আপনারা যদি পারেন তাহলে এটিএম শাখা থেকে ক্যাশ আউট করবেন এতে করে চার্জ কম কাটবে।
আপনি যদি রকেট এজেন্ট থেকে ক্যাশ আউট করেন তাহলে আপনাকে হাজারে ১.৮৮ টাকা ফি প্রদান করতে হবে। এর অর্থ হলো, হাজারে ১৮ টাকা। আর যদি এটিএম থেকে করেন তাহলে দিতে হবে ৯.৯৯ টাকা হাজারে। আর উপবৃত্তি এর ক্ষেত্রে হাজারে ১% বা ১০ টাকা করে চার্জ কাটবে আর সেন্ড ম্যানির ক্ষেত্রে ৫ টাকা প্রদান করতে হবে। আর সেন্ড ম্যানিতে লিমিট প্রদান করা থাকে।
রকেট থেকে চার্জ ফ্রি সেবা
- এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন একদম ফ্রি
- যে কোনো সরকারি বা কোম্পানি বেতন বা ভাতা ফ্রিতে প্রদান করে
- বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা রেমিট্যান্স ফি একদম ফ্রি
- ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে রকেট অ্যাকাউন্টে টাকা আনা একদম ফ্রি
- বেশি টাকার ক্ষেত্রে ১% প্রদান করা লাগে
- ভিসা বা মাস্টার্ড কার্ড থেকে রকেটে টাকা অ্যাড (যুক্ত) করতে কোনো প্রকার চার্জ প্রদান করা লাগে না
বিদেশ থেকে কিভাবে রকেটে রেমিট্যান্স আনবেন?
বাংলাদেশি প্রবাসীগণ সহজেই রকেট এর মাধ্যমে নিজ দেশে রেমিট্যান্স দিতে পারবেন। প্রথমে আপনাকে একটি এক্সচেঞ্জ হাউসে গিয়ে রকেট এর অ্যাকাউন্ট নম্বর প্রদান করে সেই অ্যাকাউন্টে টাকা প্রদান করতে হবে।
রেমিট্যান্স পাঠানোর নিয়ম হলো যে, বিদেশে অবস্থানরত একচেঞ্জ হাউজগুলো কে যে সকল তথ্য দিতে হবে তা হলো: টাকার পরিমাণ, যার কাছে টাকা পাঠাবেন তার নাম, ব্যাংকের নাম ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং, রকেট অ্যাকাউন্ট নম্বর। এসকল তথ্য অনুযায়ী একচেঞ্জ হাউস আপনার রকেটে টাকা পাঠাবে। টাকা পাঠানো নিশ্চিত হলে একটি মেসেজ আসবে আপনার ফোনে।
আজকাল তথ্য প্রযুক্তির যুগে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সকল প্রকার ব্যাংকগুলি। তেমনই ভাবে তারা তাদের গ্রাহকদের কে দিতে চাচ্ছে সর্বাধিক সুবিধা এবং ডিজিটাল আর্থিক লেনদেন সেবা যেটা সম্ভব হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে। আর বাংলাদেশে নিরিবিলি ভাবে এই সেবা প্রদান করে যাচ্ছে দেশের আনাচে কানাচে প্রতিটা প্রান্তে রকেট এবং চেষ্টা করছে তাদের গ্রাহকদের কে মানসম্মত সেবা প্রদান করার।