ব্যবসা ও বাণিজ্য

অ্যাপল ইনকর্পোরেটেড: প্রযুক্তির শীর্ষে এক যুগান্তকারী যাত্রা

স্টিভ জবস থেকে টিম কুক: উদ্ভাবন, সফলতা এবং ভবিষ্যতের দিগন্ত

আজকে আমরা জানতে চলেছি একটি বিখ্যাত আমেরিকান বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি সম্পর্কে, যেটি কম্পিউটার সফটওয়্যার, কনজুমার ইলেকট্রনিক্স এবং বিভিন্ন অনলাইন সেবা ডিজাইন, ডেভেলপ ও বিক্রি করে থাকে।

এপ্রিল ১৯৭৬ সালে স্টিভ জবস, স্টিভ ওজনিয়াক এবং রোনাল্ড ওয়েন অ্যাপল ১ ব্যক্তিগত কম্পিউটার ডেভেলপ ও বিক্রির জন্য অ্যাপল কোম্পানি গঠন করেন। জানুয়ারি ১৯৭৭ সালে এটি অ্যাপল কম্পিউটার ইনকর্পোরেটেড হয়। ফলে কিছু বছরের মধ্যে স্টিভ ও ওজনিয়াক কম্পিউটার ডিজাইন এর জন্য কর্মী নিয়োগ দেন।

আর্থিক সফলতা ও নতুন উদ্ভাবন

১৯৮০ সালে অ্যাপল আকস্মিকভাবে ব্যাপক আর্থিক সফলতা পায় ফলে তারা আইপিও এর ঘোষণা দেন। অ্যাপল পরের কিছু বছরে ইনোভেটিভ গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস সহ বেশ কিছু নতুন কম্পিউটার বিশ্ব বাজারে ছাড়ে।

ম্যাকিন্টশ কম্পিউটার অ্যাপলের বিজ্ঞাপন বিপণনের জন্য ১৯৮৪ সালে ব্যাপক সফলতা লাভ করে। তবে অ্যাপলের উচ্চ মূল্য থাকার কারণে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়। এর ফলে কিছু নির্বাহী কর্মকর্তার মাঝে লড়াই শুরু হয়ে যায়। এর প্রেক্ষিতে ১৯৮৫ সালে ওজনিয়াক অ্যাপল কোম্পানি থেকে সরে দাঁড়ান।

প্রতিযোগিতা ও পুনরুত্থান

অ্যাপলের ব্যক্তিগত কম্পিউটার উচ্চমূল্য এবং অন্য কোম্পানির কম্পিউটারের দাম কম হওয়ায় অ্যাপলের বিক্রি কমে যায়। মাইক্রোসফট উইন্ডোজের কম্পিউটারগুলোর বিক্রি বৃদ্ধি পায়। এর ফলে আরো অনেক কর্মকর্তাগণ চাকরি ছাড়তে লাগলেন।

১৯৯৭ সালে নির্বাহী কর্মকর্তা গিল এমেলিও নেক্সট কোম্পানি ক্রয় করে স্টিভ জবসকে আবার অ্যাপলে ফিরিয়ে আনেন। এর ফলে কাজের গতি বৃদ্ধি পায়। কিছুদিনের মধ্যে স্টিভ জবস কোম্পানির সিইও হন এবং ২০০১ সালে অ্যাপলের নিজস্ব রিটেল স্টোর খোলার উদ্যোগ নেন। এছাড়া তাদের কিছু কম্পিউটারে হার্ডওয়্যার পরিবর্তন আনা হয়।

স্মার্টফোন যুগের সূচনা

এই প্রক্রিয়া অবলম্বনের কারণে অ্যাপল আবার সফলতা পেতে থাকে। ২০০৭ সালে স্টিভ জবস ঘোষণা দেন যে অ্যাপল স্মার্টফোন বানাবে। ২০০৭ সালে আইফোনের ঘোষণা দেন যা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রশংসা অর্জন করে এবং ব্যাপকভাবে সফল হয়।

আইফোনের বিভিন্ন সিরিজ বাজারে আসে, আইফোন ১ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আইফোন ১৪ পর্যন্ত রয়েছে যা অসাধারণভাবে সফলতা অর্জন করেছে এবং আর্থিক লাভবান হয়েছে। ২০১১ সালে স্টিভ জবস শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে অবসর নেন এবং টিম কুক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হন।

বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ

স্টিভ জবসের মৃত্যুর পর, ২০১৭ সালে অ্যাপলের বিশ্বব্যাপী বার্ষিক আয় হয় ২২৯ বিলিয়ন ডলার। মুনাফার ভিত্তিতে এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানি। স্যামসাং ও হুয়াওয়ের পর এটি তৃতীয় বৃহত্তম উৎপাদনকারী কোম্পানি। ২০১৮ সালে অ্যাপল যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম পাবলিক কোম্পানি যা ১ ট্রিলিয়ন ডলার সম্পদ অর্জন করে। তাদের কর্মী সংখ্যা হলো ১,২৩,০০০। অ্যাপল বিশ্বের সবচেয়ে দামি ব্রান্ড হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

প্রধান পণ্য ও সেবা

অ্যাপলের প্রধান পণ্যগুলো হলো:

  • ম্যাকিন্টশ
  • আইপড
  • আইফোন
  • আইপ্যাড
  • অ্যাপল ওয়াচ
  • অ্যাপল টিভি
  • হোমপড
  • ম্যাক ওএস
  • আইওএস
  • আইলাইফ
  • লজিক প্রো

কোম্পানির প্রধান ব্যক্তিবর্গ

  • চেয়ারম্যান: আর্থার ডি. লেভিনসন
  • প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা: টিম কুক
  • প্রধান ডিজাইন কর্মকর্তা: জনি ইভ

তথ্যবহুল টেবিল

বছর ইভেন্ট ফলাফল
১৯৭৬ অ্যাপল প্রতিষ্ঠা অ্যাপল ১ কম্পিউটার
১৯৮০ আইপিও আর্থিক সফলতা
১৯৮৪ ম্যাকিন্টশ লঞ্চ বিপণন সফলতা
১৯৯৭ স্টিভ জবসের প্রত্যাবর্তন পুনরুত্থান
২০০৭ আইফোন লঞ্চ স্মার্টফোন যুগের সূচনা
২০১৮ ১ ট্রিলিয়ন ডলার সম্পদ বৃহত্তম প্রযুক্তি কোম্পানি

উপসংহার

অ্যাপল ইনকর্পোরেটেড একটি উদ্ভাবনী এবং প্রভাবশালী প্রযুক্তি কোম্পানি যা তার পণ্য ও সেবার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছে। স্টিভ জবসের নেতৃত্বে শুরু হওয়া এই যাত্রা টিম কুকের অধীনে আরও বিস্তৃত হয়েছে। অ্যাপলের উদ্ভাবনী পণ্য এবং সেবা প্রযুক্তি জগতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এবং এটি ভবিষ্যতেও প্রযুক্তি জগতে নেতৃত্ব দিতে থাকবে। জানাবেন।

সাদিকুর রহমান (সাব্বির)

I'm Sabbir Ahmed. I'm a content writer for the online news portal Ovizatri - News & Magazine. My focus is on gadgets and sports topics. I also handle editing in the absence of admin MD Mehedi Hasan and manage our small team.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button