লাইফস্টাইল

নিজেকে গুছিয়ে নিন, সফলতা আপনার হাতে

একটি সুশৃঙ্খল জীবনের রহস্য

জীবনে সফল হতে হলে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে চলা উচিত। এতে শুধু সফলতায় নয় মানসিক প্রশান্তিও পাওয়া যায়। অনেকেই আছেন এলোপাতাড়ি কঠোর পরিশ্রম করে থাকেন কিন্তু জীবনে সফল হতে পারেন না। তার কারণ হলো জীবনের এলোমেলো সিদ্ধান্ত এবং এলোমেলো কাজ। তাই নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে চলাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। নিজেকে গুছিয়ে নেয়ার কয়েকটি উপায় সম্পর্কে জানুন।

১. নিজেকে গুরুত্ব দেয়া উচিত

জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হল ‘আমি’ নামক সত্তাটি। তাই এই ‘আমি’ নামক সত্তাটিকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। নিজের ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা এবং একটু একটু করে নিজেকে গুছিয়ে নেয়া উচিত।

নিজের না পারাগুলো নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগা উচিত নয়। বরং নিজের ভালো গুণগুলোর জন্য নিজেকে সাধুবাদ জানিয়ে নিজেকে তৈরি করা উচিত। অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা না করে প্রতিদিন নতুন কিছু করার চেষ্টা করতে হবে।

নিজেকে গুছিয়ে নিতে এবং অন্যের থেকে আলাদা হতে অবশ্যই নিজের মতোই হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এর জন্য নিজের মাঝে কোনো অহংবোধ আনা যাবে না।

২. নিজের কাজগুলোকে গুরুত্ব দেয়া

আমরা অনেক সময় আশপাশের অনেককে দেখেই অনুপ্রাণিত হই কিংবা তার মতো নতুন কিছু করতে চাই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমরা এটা ভুলে যাই যে, আমাদের সেই কাজ করার ক্ষমতা আছে কি নেই! তাই আগে ভেবে দেখা উচিত আমাদের নিজের কতটুকু কাজ করার ক্ষমতা আছে। নিজেকে চাপ দিয়ে কোনো কিছু করা ঠিক না।

এতে নিজের কাজ করার ক্ষমতা বাড়ানোর পরিবর্তে উল্টো কমিয়ে দিতে পারে। কারণ এসব কাজের চাপের সম্মুখীন নিজের শরীর ও মন আগে কখনো নেয়নি। তাই বুঝে শুনে নতুন কাজে পা বাড়ানো উচিত।

৩. সময়ের মূল্য দেয়া উচিত

আমরা প্রায়ই কাজের সময় নিজের কাজের বাইরে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এতে সময় মত কাজ শেষ হয় না। এমনকি মূল কাজগুলো পড়ে থাকে অনেক সময়। তাই এর জন্য রুটিন করা উচিত। এবং নিজের লক্ষ্য ঠিক রাখা উচিত।

নিজেকে বলা উচিত, এই কাজটা শেষ হলে তবেই রুটিন মোতাবেক অন্য কোনো কাজ। হতে পারে তা গান শোনা কিংবা সিনেমা দেখা অথবা কেনাকাটা করতে যাওয়া। এতে একটি কাজের সময় অন্য কাজগুলো ভাবনায় আসলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারবে না।

তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, একবারেই সবাই সফল হবে না। একবার যখন সময়ের মূল্য দেয়া শিখে যাবেন, তখন নিজের প্রতি শ্রদ্ধা ও আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে।

৪. ‘না’ বলাটা শেখা উচিত

আমরা বেশিরভাগ সময় ‘না’ কথাটা বলতে পারি না। অর্থাৎ কখনো কোনো অনুরোধ ফেলতে পারি না। এটা যে শুধু অন্যের ক্ষেত্রেই হয় তা কিন্তু নয়। এটি বেশিরভাগ সময় নিজের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। আমরা আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। অথচ গুছিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে নিজেকে ‘না’ বলাটাই সবচেয়ে বেশি জরুরি।

বিজ্ঞাপন

অনেক সময় দেখা যায় ডায়েটের মাঝে খুব মজার খাবার পেলেই আমরা তা খেয়ে ফেলি। পড়তে বসে কোনো মজার সিনেমার নাম আসলেই পড়া বাদ দিয়ে সেই সিনেমাটা দেখে ফেলি। বেশিরভাগ দিনই আমরা নিজের হাতের কাজগুলো ফেলে রাখি অন্য দিনের জন্য। কিন্তু এই সবই আমাদের নিজেদের তৈরি অজুহাত।

আমরা নিজেরাই নিজেদের আশ্বস্ত করি যে, সব কাজ ঠিকঠাক ভাবে হয়ে যাবে। কিন্তু তা আসলে আর সেইভাবে হয় না। কোনো কাজ ফেলে রাখলে তা কীভাবে হবে? তাই নিজেকে না বলাটা শেখা উচিত।

সেজন্য কাজের একটা ছক তৈরি করে সারাদিনে সেগুলো কীভাবে করবেন তার একটা রুটিন করা। ছকে মানুষের জীবন বাধা না পড়লেও জীবন কিছু হিসেবে চলতে শিখবে।

৫. নিজেকে সময় দেয়া উচিত

গুছিয়ে চলার ক্ষেত্রে মানসিক অসুস্থতা দূর করা অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে আমরা সবাই-ই কমবেশি ভার্চুয়াল জগতের রোবট হয়ে গেছি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমরা এই ভার্চুয়াল জগতে সময় পার করছি। এতে মানসিক অস্থিরতা বেড়েই চলেছে আমাদের। তাই নিজেকে সময় দেয়ার মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি অর্জন করা উচিত।

নিজের একান্ত সময় কাটান প্রকৃতির কাছাকাছি কোনো স্থানে। যেখানে কোনো যান্ত্রিক কোলাহল নেই। অথবা কোথাও ঘুরে আসাও যায়। সবচেয়ে বড় কথা নিজেকে বোঝার জন্য হলেও কিছুটা সময় নিজেকে দেয়া উচিত।

হতে পারে এটি কোনো এলাকার রাস্তা বা নিজের বাগানবাড়ি অথবা বাসার ছাদে। যদি একা থাকতে কোনো সমস্যা মনে হয় তবে ছোটো খাটো একটা রিক্সা ভ্রমণও হতে পারে। সেই সময়টায় শুধু মাত্র নিজেকে নিয়ে ভাবুন।

৬. ধৈর্য্য ধারণ করা উচিত

যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখা জরুরি। এতে নিজের কাজের কোনো ক্ষতি হয় না। এছাড়াও সমস্যার আরও অনেক সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়। এতে ব্যক্তি হিসেবে নিজের প্রতি সম্মান এবং আত্মবিশ্বাসও অনেক গুণ বেড়ে যায়। আর এজন্য নিয়মিত মেডিটেশন করা যেতে পারে।

৭. আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠা উচিত

নিজেকে গুছিয়ে নিতে হলে নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো খুবই জরুরি। আর আপনি আত্মবিশ্বাস বাড়াতে বেশি বেশি ইতিবাচক বই পড়তে পারেন। যেমন ধরুন, পৃথিবীতে সফল হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের জীবনীও পড়তে পারেন। এতো আপনি আরও অনেক বেশি অনুপ্রাণিত হবে এবং সাথে সাথে আপনার আত্মবিশ্বাসও বাড়বে।

এছাড়া আমরা যেসব বিষয়কে ভয় করি সেই বিষয়গুলোর মুখোমুখি হওয়ার চেষ্টা করা উচিত। প্রত্যেকের জীবনেই এমন অনেক বিষয় আছে যার মুখোমুখি হতে অনেকেই ভয় পায় বা অস্বস্তি বোধ করে সেই বিষয়গুলোর মুখোমুখি হওয়া উচিৎ।

কারণ এসব বিষয়কে ভয় করলে কখনোই সামনে এগিয়ে যেতে পারবেন না এতে আত্মবিশ্বাসটাও ভেঙে যায়। তাই মোকাবেলা করতে হবে। আর এতে ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠা সম্ভব। ফলে জীবনে সফলতাও অর্জন করা যায়।

৮. রুটিন করে চলা উচিত

যারা নিজেদের গুছিয়ে রাখতে জানে তারা কখনোই রুটিন ছাড়া চলে না। তারা তাদের প্রত্যেকটি কাজের তালিকা তৈরি করে রাখে। এবং তারা জানে যে এই রুটিন করে চললে সময় কম লাগে। তাই তারা রুটিন অনুযায়ী তাদের কাজগুলোকে নিজের মধ্যে ধারণ করে। যা গোছানো জীবনে সত্যিই খুব জরুরি।

৯. দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া

খেয়াল করে দেখবেন গোছানো জীবনে কখনোই দায়িত্বের চাপ থাকে না। বরং দায়িত্বগুলোকে কম মনে হয়। এর কারণ হলো দায়িত্ব ভাগ করে নেয়া। আর এতে দায়িত্ব কমে যায়। আর দায়িত্ব কমে যায় বলেই কম চাপের মাঝে নিজেকে গোছানোর কাজ করা সম্ভব হয়।

বিশ্বাস না হলে নিজের কাজের তালিকা দেখে নিতে পারেন। সেখানে দেখবেন যে কাজগুলো না করলেও চলবে, সেগুলো বাতিল করে দেয়া অথবা অন্য কাউকে দায়িত্বটা দেয়া যায়। এতে যেমন আপনার ওপর চাপ কমে যাবে তেমনি নিজেকে গুছিয়েও রাখতে পারবেন।

১০. কঠোর পরিশ্রম করা

কঠোর পরিশ্রম মানুষকে বেশ গোছানো এবং সফল হতে সহায়তা করে। তাই যে সময় কঠোর পরিশ্রম করা উচিত, সেই সময়ই সেই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। তাই নিজের কাজগুলো সঠিকভাবে করলেই আপনি নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারবেন।

তাই সুন্দর, সফল এবং সুখী জীবনের জন্য নিজেকে গুছিয়ে নেওয়াটা খুবই জরুরি। এতে যেমন সুখি হওয়া যায়, তেমনি নিজের ব্যক্তিত্বও অন্যদের থেকে বেশ আলাদা এবং উন্নত মানের হয়।

পরিশেষ

সফলতার চাবিকাঠি হলো নিজেকে গুছিয়ে রাখা। নিজেকে গুছিয়ে রাখার ফলে আপনার যেমন সময়ের কাজ সময়ে হয় ঠিক তেমনি এতে দুশ্চিন্তাও কমে যায়। আর দুশ্চিন্তা কমে গেলে মানুষ শারীরিক এবং মানসিক উভয় দিকেই ভালো থাকে।

এতে সে রুটিনের অতিরিক্ত কাজও করতে পারে। তাই খুব একটা ভুল হবে না এই কথা বললে যে, সফলতার চাবিকাঠি হলো নিজেকে গুছিয়ে রাখা।

ছবি: Image by Lifestylememory on Freepik

সেলিনা আক্তার শাপলা

I'm Shelina Akter Shapla. I work as a content writer for the Ovizatri - News & Magazine online news portal. Additionally, I am a co-founder of this website along with the admin, MD Mehedi Hasan. I also have another identity: I have completed my Master's degree from the Department of Philosophy at Rajshahi University.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এছাড়াও চেক করুন!
Close
Back to top button