ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স: সংজ্ঞা, গুরুত্ব ও উন্নয়নের কৌশল
Empathy এবং অন্যান্য টেকনিকের মাধ্যমে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বৃদ্ধি
ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স: সংজ্ঞা ও গুরুত্ব
ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স মানে হচ্ছে, নিজের সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা, অন্যদের সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা, অন্যদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা বা অন্যদের উপর নিজের প্রভাব বিস্তার করা। আপনি কিভাবে অন্য মানুষ সম্পর্কে সচেতন হবেন বা অন্য মানুষ সম্পর্কে সচেতন হওয়া কেন জরুরি? অর্থাৎ আপনি অন্য মানুষ সম্পর্কে কেন চিন্তা করতে যাবেন? বা তাদের আচরণের পিছনে কারণ খুঁজতে যাবেন?
অন্যদের সম্পর্কে সচেতন হওয়ার কারণ
এর একটি কারণ হচ্ছে মানুষের চিন্তা ও আচরণের কারণ খুঁজতে গেলে আপনি তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন এবং তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে পারবেন। অন্যটি হচ্ছে, আপনার আচরণ অন্য মানুষের উপর কেমন প্রভাব করছে তাও আপনি বুঝতে পারবেন। ঠিক এই কারণে অন্য মানুষের আচরণ বুঝতে পারা উচিত।
প্রথম টেকনিক: Empathy
প্রথম টেকনিক হচ্ছে, ‘Empathy’ বা বাংলায় যেটা বলে দয়া বা মমতা। বেসিক্যালি একজন মানুষ একটি পরিস্থিতিতে কি চিন্তা করছে বা সেই পরিস্থিতিতে কি চিন্তা করতে পারে বা কি আবেগ অনুভব করছে এটা বুঝতে পারা। কিংবা আপনি যদি তার জায়গায় থাকতেন আপনার মাথায় কি চিন্তা আসতো এটা বুঝতে পারা। ধরুন, আপনি রাস্তায় একজন ভিক্ষুককে দেখলেন, এখন আপনি কল্পনা করুন, আপনি যদি ওই ভিক্ষুকের জায়গায় থাকতেন তাহলে কি চিন্তা বা আবেগ আসতো?
Empathy এর গুরুত্ব
এটা উপলব্ধি করতে পারাকে ‘Empathy’ বলে। আমাদের ব্রেনের মধ্যে কিছু নিউরন আছে যেগুলোকে বলা হয় ‘মিরর নিউরন’। অর্থাৎ অন্য মানুষের আচার-আচরণ, ব্যবহার, আবেগ এগুলো আমরা কপি করার চেষ্টা করি। এই ‘মিরর নিউরন’ হচ্ছে অন্য মানুষের অবস্থান বুঝতে সহযোগিতা করে।
মিরর নিউরনের ভূমিকা
আপনি যখন সিনেমা দেখেন, অনেক সময় ভয়ের দৃশ্য আসে তখন আপনি বলেন যে, এটা পাস করে দিতে। কেন পাস করে দিতে বলেন? কারণ এই যে, মিরর নিউরন অ্যাক্টিভেট হয় তখন আপনার ওই সিনেমার ভয়ের অংশটা মনে হবে যে আপনি। তো আপনার ব্রেনে যখন ওই সিনেমার মতো ভয়ের অংশের মতো আপনার মনের মধ্যে ভয় ঢুকে যায় তখন আপনি পাস করতে বলেন।
Empathy তৈরি করা
এই মিরর নিউরনের কাজ হচ্ছে ‘Empathy’ তৈরি করা। অধিকাংশ মানুষই এমপ্যাথেটিক, আর কিছু কিছু মানুষ এমপ্যাথেটিক না। তাদের মনের মধ্যে কোন দয়া-মায়া, সহানুভূতি, আবেগ কোন কিছু নেই। সাধারণত যারা ক্রিমিনাল হয়, সাইকোপ্যাথেটিক হয়, আবার কিছু কিছু হাজবেন্ড আছে যারা তাদের বউকে সারাদিন পেটায়। অন্য মানুষ কষ্ট করলে কি অবস্থায় যাচ্ছে আপনি যদি সাইকোপ্যাথিক না হতেন তাহলে আপনিও বুঝতে পারতেন না কোন মানুষের আবেগ, মানুষের কষ্ট এগুলো কোন কিছুই বুঝার মত ক্ষমতা আপনার থাকতো না।
মনোযোগ দিয়ে কথা শোনা
আমরা যখন কারো কথা শুনি তখন কারো কথা মনোযোগ দিয়ে শুনি না বরং নিজের কথা বলার জন্য অপেক্ষা করি। তাহলে আপনাকে মনোযোগ দিয়ে কথা শুনতে হবে এবং কথা শোনার অভ্যাস করতে হবে। আপনি যখন কথা শুনবেন, কথার পেছনে যে মিনিং সেটা বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে মিশা
আপনি যখন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে মিশবেন, তাদের কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করবেন এবং তাদের কথার পেছনে থাকা যে মিনিং গুলো সেগুলো মনোযোগ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করবেন, তাহলে আস্তে আস্তে আপনার ‘Empathy’ ডেভেলপ করবে। পরবর্তীতে ‘Empathy’ যদি ডেভেলপ করতে চান তাহলে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে মিশতে হবে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে যখন মেলামেশা করবেন তখন আপনার ভিতরে একটা অভিজ্ঞতা সৃষ্টি হবে, এটা আপনাকে অন্য মানুষকে বুঝতে সহযোগিতা করবে।
বই পড়া
আর একটি উপায় হচ্ছে বই পড়া। বইয়ের মধ্যে প্রচুর চরিত্র থাকে এবং প্রত্যেকটা চরিত্রের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য, আচার-আচরণ, চিন্তা-ভাবনা, আবেগ সবকিছু আলাদা। তো আপনি যখন আলাদা মানুষের আচার-আচরণ, আবেগ, দৃষ্টিভঙ্গি লাভ করবেন তখন আপনার মধ্যে ‘Empathy’ ডেভলপ করা শুরু করবে।
রোল প্লে করা
‘Empathy’ ডেভলপ করার আরেকটি মাধ্যম হচ্ছে রোল প্লে করা। অনেক সময় হাজবেন্ড-ওয়াইফ এর মধ্যে ঝগড়া হয়, তো সে ক্ষেত্রে আমার পক্ষ থেকে এটাই সাজেশন থাকবে হাজবেন্ড ওয়াইফ এর রোল করবে। ওয়াইফ হাজবেন্ডের রোল প্লে করবে, তারপর তারা বাসায় যেভাবে ঝগড়া করে ঠিক সেভাবে ঝগড়া করবে।
অনুকরণ করা
এছাড়া আরেকটি কৌশল আছে, সেটা হচ্ছে মানুষকে অনুকরণ করা। একজন মানুষ যখন বসে থাকে, তার নির্দিষ্ট অঙ্গভঙ্গি থাকে। তার হাত-পা-মাথা সবকিছুর একটি অঙ্গভঙ্গি আছে। তো একজন মানুষের মনে কি চলতেছে সেগুলো জানতে হলে তাকে অনুকরণ করতে হবে। ধরুন, একজন মানুষ নাকে হাত দিয়ে আছে, ঠিক আপনি সেভাবে আপনার নাকে হাত দিয়ে থাকবেন। আবার আরেকজন তার মাথায় হাত দিয়ে আছে, ঠিক সেভাবে আপনার মাথায় হাত দিন।
আবেগ ও চিন্তা
আবার একজন তার এক পায়ের উপর আরেক পা তুলে দিয়ে আছে, আপনি ঠিক এক পায়ের উপর আরেক পা তুলুন। যদি আপনি তার মত করে অনুকরণ করতে পারেন তাহলে তার আবেগ এবং তার মনের মধ্যে কি চলতেছে কিছুটা হলেও আপনি বুঝতে পারবেন। অর্থাৎ আপনি মানুষকে রিড করতে পারবেন।
সার্বজনীন আবেগ
এখন প্রশ্ন হলো, কেন এমন হয়? বলা হয়ে থাকে, আমাদের যে আবেগ আছে এই আবেগগুলো ইউনিভার্সাল বা সার্বজনীন। যেমন পৃথিবীর সব মানুষ যখন হাসে সবাই একইভাবে হাসে, বিরক্ত হলে একইভাবে বিরক্ত হয়, কান্না করলে একইভাবে কান্না করে।
অনুকরণ ও আবেগ
আপনি যখন কাউকে অনুকরণ করেন, অর্থাৎ তার আচরণগুলো ঠিক তেমনভাবেই করেন, অটোমেটিক্যালি আপনার আবেগ ও চিন্তা তার মতো করেই আসে। তো এটা একটি টেকনিক অন্য মানুষের মাথায় কি চলতেছে বা তার আবেগ বোঝার জন্য তাকে অনুকরণ করা।
ছবি: Image by freepik
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.