Uncategorized

দৌড়ের জীবন থেকে মুক্তি: স্লো লিভিংয়ের আহ্বান

মানসিক শান্তি ও সুস্থ জীবনের জন্য

বিজ্ঞাপন

পৃথিবীকে বাঁচাতে হবে। একটু থেমে ভেবে দেখার সময় এসেছে। ইঁদুর দৌড়ের জীবন ছেড়ে সময় এসেছে জীবন যাপনের, স্বপ্ন দেখার। একটা অদৃশ্য ট্র্যাকে দৌড়ে চলেছি আমরা দিবারাত্র। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা। এই ট্রাকের দৌড়ের শেষে কেউ দাঁড়িয়ে নেই আমাকে একটস ট্রফি দেবে সেটাও কেউ বলেনি আমায়। তবু, তবু দৌড়চ্ছি আমরা সারাটা সপ্তাহ ধরে ঊর্ধ্বশ্বাসে! সপ্তাহান্তে খুঁজে নেবো, লুটে নেবো, কিনে নেবো একটি দিন জীবন সুখ শপিং মল বা পাঁচতারা হোটেলে।

আমাদের বিকেলের ছাদ নেই, সন্ধ্যের আড্ডা নেই, রাতের তারা গোনা নেই। নেই আন্তরিক প্রেমালাপ। আছে ক্লান্ত শরীরে কালি ঝুলি মেখে বাড়ী আসা টিভিতে হাবিজাবি কিছু দেখা, সঙ্গীর সাথে যান্ত্রিক যৌন বিলাসযাপন। পরে প্রকৃতিকে ধ্বংস করে যে আরাম বিলাস জুটিয়ে গুছিয়েছি তাতে ঘুমনো ঘুমের ঔষধ খেয়ে। এক রোবট জীবন যাপন করা।

আমরা কি হচ্ছি সুখী! হচ্ছি তৃপ্ত! একটু ধীরে সুস্থে এগোলে কি ভাল হয় না! জীবনের প্রত্যেক পর্যায় কে স্বাদে, গন্ধে, রুপে, রসে স্পর্শ করি যদি আমরা!

‘স্লো লিভিং’ মুভমেন্ট। একটু জানো বোঝো। ইতালিতে ১৯৮০ সালে শুরুটা। রোম শহরে একটি ফাস্ট ফুড স্টল খোলা হলো। সমাজ কর্মীরা প্রতিবাদে জড়ো হলো। আসলে ফাস্টফুড নয়, স্থানীয় উৎপাদিত খাবারের প্রচার ছিলো উদ্দ্যেশ্য। সেই স্লো ফুড কনসেপ্ট থেকে স্লো লিভিং ধারণার জন্ম। জীবনে আপনি কি চান? কোন কাজে সুখী হন সেই বিযয় গুলিকে প্রাধান্য দেওয়া স্লো লিভিংয়ের মূল লক্ষ্য।

জীবনের সিংহ ভাগ দৌড়িয়ে ব্যস্ত জীবনের সব সুখ আনন্দ বিসর্জন দেওয়ার পরিপন্থী এই ধারণা। জীবনের গতি কমানো চার পাশের পৃথিবী কে একটু দেখে শুনে চালাতে হবে। ভুল বুঝবেন না, স্লো লিভিং কিন্তু ধীর গতিতে সব করা নয়। আলস্যও নয়। চারটি শব্দ খেয়াল করুন,

বিজ্ঞাপন

১. এস – সাসটেনেবল

২. এল – লোকাল

৩. ও – অরগ্যানিক

৪. ডব্লিউ – হোল

প্রকৃতি, পরিবেশ ধ্বংস করা নয়, প্রকৃতির সমানুপাতে এগুনো এক জীবন। জনৈক ব্যক্তি সিঙ্গাপুরের চাকরী, তাঁর আরামবিলাস ছিলো প্রচুর, কিন্তু সুখ ছিলোনা। রাতে বাড়ী ফিরে ক্লান্তশরীরে পরিবারে কোন সময় দিতে পারতেন না।

বিজ্ঞাপন

সব ছেড়ে ছুড়ে গ্রামের বাড়ীতে চলে এলেন। মাটির বাড়ী করেছেন সবাই সেখানে থাকেন এসি নেই বাইরের তাপমাত্রা থেকে ১৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড কম তাপমাত্রা ঘরে প্রবেশ করে। কাছাকাছি সাইকেলে যাতায়াত করেন। বাড়ীর জমিতে ফলান চাল ডাল আনাজ। সাসটেনেবল জীবমনের ছবি পাওয়া যাচ্ছে।

জনৈকা মহিলা কলকাতার বাসিন্দা কলেজের প্রফেসর। সে সব ছেড়ে আাছেন একটি গ্রামে। নাম বল্লভপুর। শহরে একেবারে মন টিকছিলো না। তাঁর হবি ছিল প্রকৃতি ও গাছপালার সঙ্গে বন্ধুত্ব। তা কথায় স্লো ফুড ভাবনাটা আলাদা করে ভাবতে হয় নি।

আপনিই তাঁর মধ্যে ঢুকে পড়েছিলো। কত কি রান্না নিজস্ব বাগান থেকে সবজি তে হয়ে যায়। কত রকম শাক, গিমে শাক, কুলেখাঁড়া শাক। কোনো দিন ইচ্ছে করছে না রান্নার। নো পরোয়া, সব মশলা মাখিয়ে লাউ পাতায় মুড়ে কাঠকয়লার নিবুক নিবু আঁচে বসিয়ে রাখা! এক সুস্বাদু রান্না হয়ে যায়। তাঁর মতে স্থানীয় কিছু পেলে বা খেলে দৈনন্দিন চাহিদা ভালভাবে মিটে যায়।

জরুরী কিছু পদক্ষেপ নিয়ে চেষ্টা করা স্লো লিভিং এর। ছাদে অথবা ব্যালকনিতে আনাজপাতি ফলিয়ে কিছু বাজার সেখান থেকে হয়ে যায়। আর্টিফিশিয়াল পোশাকের বদলে সাসটেনেবল পোশাক বাছা যায়। একটা দিন এসি বন্ধ রাখা যায়, জানালা খুলে শোয়া যায়। ফাস্ট ফুড কেন একটু সময় নিয়ে একটা পদই রান্না করা পাঁচটা পদের পরিবর্তে। স্ক্রিনে নয়, পরিবার কে সময় দেওয়া। জার্নি ফ্লাইটে নয়, ট্রেনে সফর উপভোগ করা।

পাবলো নেরুদা

১. আমাকে বলো গোলাপ কি বিবসনা নাকি ওটাই ওর জামা?

বিজ্ঞাপন

২. সূর্যটা কি গত কালের সুর্য?

৩. এই আগুন কি ঐ আগুনের থেকে আলাদা!

৪. বৃষ্টিতে একলা দাঁড়িয়ে ট্রেন

৫. এর থেকে বিষন্ন কি!

৬. কে জাগিয়ে দেয় সূর্য কে যখন তিনি ঘুমিয়ে পড়েন বিছানায়!

বিজ্ঞাপন

৭. কে সেই নারী যে তোমাকে আদর করে তোমার স্বপ্নে, যখন তুমি ঘুমাও!

৮. বনের এই হলুদ কি গত বছরের মতো হলুদ?

৯. আর সেই মাসের নাম কি যেটি পড়ছে ডিসেম্বর আর জানুয়ারীর মাঝখানে?

১০. অন্যরা কতক্ষণ কথা বলবে যদি আমরা ইতিমধ্যেই তা বলে ফেলি!

১১. কোথায় সমুদ্রের কেন্দ্র?

বিজ্ঞাপন

১২. কেন ঢেউয়েরা কখনই সেখানে যায় না?

১৩. পাবলো নেরুদার নামে পরিচিত হবার চেয়ে বোকা ব্যাপার কি আর আছে জীবনে?

আজ হঠাৎ অনেক দিন আগে পড়া বিকাশ গণ চৌধুরীর কাছে থেকে উপহার পাওয়া তাঁর অনুবাদিত পাবলো নেরুদা পেয়ে কয়েকটি বাছা লাইন দিলাম।

হাবীব তনবীর

হবীব নাটক দিয়ে সমাজ কে লোকসত্তর সঙ্গে জুড়েছিলেন। হবীব তনবীর আজ নেই আমাদের মাঝে কিন্তু তাঁর ‘আগরা বাজার’, ‘মিট্টি কী গাড়ী’, ‘হিরমা কী অমর কহানী’, ‘এক ঔরত হিপেশিয়া’, ‘ভীথী’ আর ‘চরণদাস চোর’, ‘দেখ রহে হ্যায় নয়ণ’ এই ছত্তিশগঢ়ী নাটক গুলি সমগ্র পৃথিবী জয় করা, স্মৃতিতে ভরে থাকা। হবীব তনবীর এক লোকধর্মী নাট্যকার রুপে ভারতীয় নাট্যজগতে চিরদিন জীবিত থাকবেন।

আসলে একটু গতি কমাতে হবে। এটা ভেবে দেখবার প্রকৃতি থেকে আমরা যে সব আহরণ করেছি তা কিছুটা ফিরিয়ে দেওয়া দরকার পৃথিবীকে। প্রকৃতির নেওয়া জিনিস প্রকৃতিকে ফেরালে আখেরে লাভ আমাদেরই। পুঁজিবাদের দাস হয়ে পড়ে না থেকে নিজেদের অস্তিস্ত্ব সংকট নিয়ে ভাবা দরকার।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞানের চাকচিক্য ভুলে সারবত্তা খুঁজে নিতে হবে। প্রকৃতির ক্ষতি করে ভোগবিলাস নয়। পৃথিবীকে তার রুপ, রস, গন্ধ, বর্ণ ফিরিয়ে দিতে হবে তার লাভ আমরাই পাবো। ভেবে এবার ঠিক করা রোজকারের জীবন থেকে আমরস কি কি বদল করতে পারবো!

ছবি: Image by drobotdean on Freepik


Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

শ্রীমতী স্মৃতি দত্ত

অ্যাডভোকেট, লেখিকা, বঙ্গীয় সাহিত্যের সদস্য, কীবোর্ড প্লেয়ার, অ্যামওয়ে ব্যবসার মালিক। আমার লেখা সর্বশেষ বইয়ের নাম, ‘কেমেষ্ট্রি প্র্যাকটিক্যাল ও টি.ভি শো’ এবং ‘লেনিন সাহেবের সাথে দেখা’ বইটি Flipkart -এ নেবার জন্য ক্লিক করুন: https://www.flipkart.com/lenin-saheber-sathe-dekha/p/itmc9bfae4c39392

Related Articles

Leave a Reply

বিজ্ঞাপন
Back to top button

Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading