আপনাকে যদি নতুনভাবে জীবন শুরু করার সুযোগ দেওয়া হয় আপনি কি নতুন ভাবে জীবন শুরু করবেন? অধিকাংশ মানুষের জীবন অসুখী বা অতৃপ্ত অবস্থায় জীবন যাপন করে থাকে। যখন তাদের পরিবর্তনের কথা বলা হয় তখন তারা পরিবর্তন চায় না। মানুষ কেন পরিবর্তন চায় না? মানুষ কেন তার স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি দিয়ে কেন তার জীবন পরিবর্তন করতে চায় না?
আজকে আমরা সে বিষয়টা জানার চেষ্টা করবো সেটা হলো, দুটি প্রবৃত্তি রয়েছে যা মানুষকে দারিদ্র করে তোলে,
(এক) অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করার ইচ্ছা
(দুই) আনন্দ লাভের ইচ্ছা
এই দুটি প্রবৃত্তি মানুষের জীবনে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আসে। ধরেন, একজন ছোট মানুষ ছোট থাকা অবস্থায় যে ফুটবল দলকে সাপোর্ট করে বড় হওয়ার পর দেখা যায় যে ঠিক সেই একই দলকে সাপোর্ট করে অথবা ছোটবেলায় আপনার বাবার সাথে আপনার যেমন সম্পর্ক বড় হওয়ার পর ঠিক আপনার বাবার সাথে তেমন সম্পর্কটাই রয়ে যাবে কিংবা আপনার বাবা বয়সে কিংবা বাবার মতন দেখতে কাউকে ঠিক তত পরিমাণ সম্মানটুকুই করে থাকে।
মানুষ হচ্ছে অতীতের কাছে বন্দী, একই কাজ বারবার করতে থাকে শুধুমাত্র ঘটনার সেটিংস চেঞ্জ হয়। এই মতের বিপক্ষে সাইকোলজিক্যাল মতভেদ আছে, মানুষের স্বাধীনতার ইচ্ছা শক্তি আছে। মানুষ চাইলে তার জীবনের পরিবর্তন আনতে পারে। তাহলে এখন প্রশ্ন আসতে পারে আমাদের চারপাশে মানুষ যে আছে, কেউ অসুখী অতৃপ্ত ভাবে জীবনযাপন করে তাহলে তারা কেন তাদের জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসে না।
এখানে সাইকোলজির মতভেদ যে, মানুষ চাইলে তার জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে কিন্তু মানুষ তার জীবনের দায়িত্ব থেকে এড়িয়ে চলার জন্য অসুখী অতৃপ্ত অবস্থায় চলতে পছন্দ করে। দায়িত্ব এড়িয়ে চলা পছন্দ করার অবশ্যই একটা কারণ আছে। দায়িত্ব নেওয়া মানুষের মধ্যে এক ধরণের দুশ্চিন্তা বা আশঙ্কা তৈরি করে।
আপনি যখন কোন কিছুর দায়িত্ব নেবেন এর পরবর্তীতে ফলাফল পর্যন্ত সবকিছুর দায়িত্ব শুধুমাত্র আপনাকে নিতে হবে। ধরুন, আপনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চাকরি ছেড়ে দিবেন চাকরি জীবন আপনার ভালো লাগছে না, আপনি ব্যবসা করতে চান এখন ব্যবসায় আপনি সফল হোন বা বিফল হোন এর পরবর্তীতে যা কিছু হবে সবকিছুর দায়িত্বটা শুধুমাত্র আপনাকে নিতে হবে।
মানুষ নিজেকে চাপে রাখতে চায় না। তাই মানুষ কোন কিছুর দায়িত্ব নিতে চায় না বা দায়িত্ব নিতে পছন্দ করে না। এর আরেকটা কারণ হতে পারে মানুষ ব্যর্থতাকে ভয় পায়। প্রত্যেকটা মানুষের নিজের সম্পর্কে পজিটিভ ধারণা থাকে এবং মানুষ পজেটিভ ধারণা নিয়ে থাকতে চায়। আপনি যদি কখনো কোন দায়িত্ব নেন কিংবা কোন কাজ করতে চান আর সে কাজে যদি ব্যর্থ হোন তাহলে বুঝতে পারবেন আপনি নিজেকে যতটা মূল্যবান যতটা যোগ্যবান বা যতটা জ্ঞানী মনে করেন আপনি ঠিক ততটা না। মানুষ এ ধারণা কাটিয়ে ওঠার জন্য মানুষ কখনো কোন কাজের দায়িত্ব নেয় না।
আমরা কীভাবে নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে পারি?
দায়িত্ব সম্পর্কে আমরা সচেতন হয় না। কারণ আমরা পরাধীন থাকতে পছন্দ করি। কীভাবে অন্য মানুষের কাজের দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া যায় আর দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেওয়া মানেই আমরা পরাধীন হয়ে যাই এমন ধারণা আমাদের মধ্যে এখনো আছে। আমরা মনে করে থাকি, দায়িত্ব না নেওয়া মানে আমরা দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দায়িত্ব না নেওয়া মানে হচ্ছে ব্যর্থতা থেকে মুক্তি। এখান থেকে যদি আমরা বের হয়ে আসতে চাই সর্বপ্রথম আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
কিছু কিছু মানুষ আছে তারা দায়িত্ব এড়িয়ে চলার জন্য বলবে আমি কোন কিছু করার জন্য এনার্জি পাই না বা শক্তি পাই না। আমার কিছু ভালো লাগে না। আর সবচেয়ে কমন টেকনিক হচ্ছে কিছু কিছু ব্যবহার আছে যেগুলো ব্যবহার করার জন্য কোন টেকনিকে হয় না। যেমন শপিং করা, খাওয়া, নেশা করা, মোবাইল ব্যবহার করা কিংবা অন্যদিকে তাকিয়ে থাকা কিংবা ক্লান্ত এমনটা ব্যবহার করার জন্য কোন অভিনয় জানতে হয় না। এগুলো করা মানে হচ্ছে দায়িত্ব এড়িয়ে চলা।
তাহলে আপনি আপনার জীবনের কোন কোন ক্ষেত্রে দায়িত্ব এড়িয়ে চলছেন এটা বুঝবেন কি করে? বা জীবনের কোন কোন ক্ষেত্রে আপনার পরিবর্তন আনা দরকার? এটা বোঝার জন্য আপনাকে পাঁচ ধরণের আবেগ আছে। পাঁচ ধরণের এই ইমোশনাল আমাদেরকে গাইড করে যে আমাদের জীবনের এক ক্ষেত্রগুলোতে পরিবর্তন হওয়া দরকার।
১. অপরাধবোধ: অপরাধবোধ হচ্ছে আপনি এমন কিছু করে বসেছেন যার জন্য আপনাকে অপরাধী মনে হচ্ছে। যেমন আপনি কারো ক্ষতি করেছেন কিংবা কারো মনে আঘাত দিয়েছেন এটা আপনাকে অপরাধবোধ তৈরি করতেছে। অর্থাৎ জীবনের এই ক্ষেত্রে আপনার পরিবর্তন দরকার।
২. অনুতপ্ত হওয়া: আপনি এমন কোন কিছু করে বসেছেন যার জন্য আপনাকে অনুতাপ হতে হচ্ছে যেমন আপনি কাউকে অপমান করেছেন এজন্য আপনি অনুতপ্ত।
৩. অনুশোচনা: আপনার এমন কিছু করার দরকার ছিল যেগুলো আপনি করেননি যার জন্য আপনি এখন অনুশোচনায় ভোগছেন। যেমন আপনি চাকরির পরীক্ষার ভালোভাবে প্রস্তুতি নেন নি, তার কারণে আপনার চাকরি হয়নি। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য আপনি অনুশোচনায় ভুগছেন।
৪. লজ্জা: আমরা মিথ্যা কথা বলে ধরা পড়লে আমার লজ্জিত হই লজ্জা আপনাকে বলে দেয় যে, জীবনের এই জায়গাতে আপনি দায়িত্ব নিচ্ছেন না।
৫. ঘৃণা করা: নিজেকে আপনি যে কারণে ছোট মনে করেন বা ঘৃণা করেন সে কারণটা যদি বুঝতে পারেন তাহলে বুঝে নিবেন জীবনের এই জায়গাতেই পরিবর্তনের দরকার।
তাহলে আমরা পাঁচটা ইমোশন দেখলাম একটা হল অপরাধবোধ হওয়া, ঘৃণা করা, লজ্জা করা, অনুতপ্ত হওয়া। এই পাঁচটা ইমোশন বলে দেয় যে, জীবনের আমরা এ জায়গাতে দায়িত্বের অবহেলা করেছি বা এ জায়গাতে আমাদের পরিবর্তনের দরকার ছিল বা আমরা দায়িত্বের অবহেলা করেছি।
পরিশেষে একটা কথা না বললেই না, আপনাকে আপনার আচার আচরণের মূল্যবোধের এবং মনুষ্যত্বের দায়িত্ব অবশ্যই নিতে হবে এবং আমাদের দেখানো পাঁচটা ইমোশন যদি আপনার নিজের জীবনের উপর প্রয়োগ করতে পারেন বা অনুসরণ করতে পারেন তাহলে জীবনকে অবশ্যই পরিবর্তন করতে পারবেন।
ছবি: Image by jcomp on Freepik
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.