ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল: ‘লেডি অব দ্য ল্যাম্প’ যিনি আধুনিক নার্সিংয়ের জন্ম দিয়েছিলেন
আন্তর্জাতিক নার্সিং দিবসে তাঁর অবদানের স্মরণ
প্রত্যেক সেবিকা (নার্স) এর ভিতর লুকিয়ে রয়েছে এক ‘লেডি অব দ্য ল্যাম্প’। করোনা মহামারীকালে প্রাণ হারিয়েছেন লক্ষ লক্ষ জন। আর কোটি কোটি জনের প্রাণ বাঁচিয়েছেন নার্সিং পেশায় রত সেবিকা গণ।
তাঁরা নিজেদের সংক্রমিত হওয়ার ভয় কে দুরে ঠেলে ফেলে বেশী সংখ্যক লোকের জীবন রক্ষায় এগিয়ে এসেছিলেন। তাঁদের প্রফেশনাল কর্মক্ষেত্রে এই টার্গেট ছিলো তাঁদের। আজ ১২ মে তাঁদের সম্মানে পালিত হয় অন্তর রাষ্ট্রীয় নার্সিং দিবস। তাঁদের জানাই প্রণাম ও অন্তরের ভালবাসা।
ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল কে তাঁর সেবা যোগদানের জন্য তাঁর স্মৃতিতে পালিত হয় আজকের ১২ মে ইন্টারন্যাশনাল নার্সিং দিবস। তিনি ‘আধুনিক নার্সিং’ এর জন্মদাত্রী রুপে খ্যাতি প্রাপ্তা ‘লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’।
আজ থেকে ২০৩ বছর পুর্বে ১২ মে ১৮২০ তে ইতালির ফ্রোরেন্স শহরে জন্ম নেওয়া তাঁর নামে ভারত সরকার তাঁর অনুনোকারীয় কাজের সম্মান প্রদর্শণে ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গেল ‘সম্মান’ স্থাপিত করেছে। তিনি বলতেন, “এক প্রতিষ্ঠানের বুদ্ধিমত্তা ও মানবীয়তা এক রোগীকে সংক্রমনের কবল হতে রক্ষা করতে পারে।”
ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল ইতালির এক সমৃদ্ধ ও উচ্চ বিত্ত ব্রিটিশ পরিবারে ১২ মে ১৮২০ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। নিজের মা-বাবা কে বলে দিয়েছিলেন ক্যারিয়ার হিসেবে তিনি সেবিকা (নার্স) হতে চান। তখন এমন একটা সময় ছিলো যখন হাসপাতাল গুলি শহরের মন্দ (নোংরা) এলাকায় স্থাপিত হতো।
রোগীর মৃত্যুর পর হাসপাতালের পরিবেশ ভয়াবহ হয়ে উঠতো। মা-বাবার বিরোধী মনোভাব হওয়া সত্ত্বেও তিনি ১৮৪৫ সাল থেকে অভাবগ্রস্তদের সেবায় নিজেকে রত করবেন এই প্রতিজ্ঞা করেন। এমন কি নিজ বিবাহ প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেন।
১৮৫০ সালে জার্মানির এক হাসপাতালে নার্সিং প্রশিক্ষণ নেন। ১৮৫৪ সালে ক্রিমিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁর নার্সিং কর্মক্ষেত্রে তাঁর সেবাদান সবার দৃষ্টিগোচর হয়। তাঁর কাজের জন্যই সৈনিকগণ আদর সহকারে তাঁকে ‘লেডি অব দ্য ল্যাম্প’ সম্মানে ভূষিত করেছিলেন।
প্রকৃতরুপে ডঃয়ের দল যখন তাঁদের ডিউটি শেষ করে ফিরে যেতেন তখন সারা রাত হাতে একটি লালটেনের আলো সম্বল করে সেই আলোয় ঘুরে ঘুরে ঘায়েল সৈনিক দের দেখাশুনো (সেবা) করতেন।
১৮৫৬ তে যুদ্ধ সমাপ্ত হলে তিনি ফিরে আসলে সংবাদপত্রগুলিতে তাঁর ঐ সেবাদানের চর্চার সংবাদ প্রকাশিত হয়। মহারাণী ভিক্টোরিয়া তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে পত্র লিখেছিলেন। পরবর্তীকালে রাণী ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সেনা হাসপাতালের জন্য বৃহৎ পরিসরে চিকিৎসাপ্রণালী শুরু করবার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
তাঁরই প্রচেষ্টায় লন্ডনে নাইটিঙ্গেল নার্সিং ট্রেনিং স্কুল ফর নার্সেস খোলা হয়। যোগদানেই নার্সিং ব্যবসা এক ভাবনামূলক কার্যক্রমে পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিলো।
নার্সিং এর সেবামূলক কাজে উৎকৃষ্ট পুরস্কার দেওয়া শুরু ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল নাম দিয়ে। ১৮৬৯ সালে মহারাণী ভিক্টোরিয়া তাঁকে ‘রয়েল রেডক্রস’ দিয়ে সম্মান জানিয়েছিলেন। ১৩ আগষ্ট ১৯১০ এ ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের নিধন হয়।
উনবিংশ শতকে ‘নার্সিং’ এক উল্লেখযোগ্য প্রাসঙ্গিকতা হয়ে উঠলো। আজকের দুনিয়ায় নার্সিং এক প্রফেশনাল কার্যরূপে চিকিৎসা জগতে এক মেরুদণ্ড রূপে প্রতিষ্ঠিত।
কৃতজ্ঞতা
যোগেশ কুমার গোয়েল