কলম

জুয়া: যুব সমাজের জন্য এক বিশাল হুমকি

জুয়ার ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য কিছু পরামর্শ

“সহজে বড় লোক কে না হতে চায়! আবার তা যদি হয় কোন কষ্ট ছাড়া!” এরকম বিজ্ঞাপনে এখন আমাদের ফেসবুক বলেন, ইউটিউব বলেন সর্বত্র ভরে গেছে। আর এই ফাঁদে আমাদের যুব সমাজ পা দিয়ে তাদের সর্বস্ব হারিয়ে ফেলছে। হ্যাঁ, আমি জুয়া খেলার কথাই বলছি।

এখন মানুষ খেলা বিনোদনের জন্য দেখে না, এখন এটা যুব সমাজের কাছে হয়ে গেছে এক রকম টাকা কামানোর পন্থা। শোনা কথা, এক সময় হাতে হাতে নগদ টাকা নিয়ে জুয়া খেলা হত, আর এখন প্রতি হাতে হাতে জুয়া, স্মার্টফোন থাকলেই তাতে জুয়া। আর এই সব জুয়ার সাইটের প্রমোশনই করছে আমাদেরই রোল মডেল খেলোয়াড়রা।

জুয়া হয় লাখপতি বানিয়ে দিচ্ছে নতুবা পথের ফকির। কিন্তু লাখপতি হওয়ার ঘটনা খুবই কম, সেখানে ফকির হওয়ার গল্প ঘরে ঘরে। এই গুলা নিয়ে যখন হাল্কা পাতলা গবেষনা করছিলাম তখন দেখলাম, আগে জুয়া খেলার জন্য দুইটা পক্ষ দরকার হত, এক পক্ষের কাছে টাকা না থাকলে খেলা হত না, কিন্তু এখন জুয়া খেলার জন্য এত অ্যাপ্লিকেশন আছে যে এখন লোকের প্রয়োজন হয়ই না।

যেমন: 1xBet, Baji, Dream11, Crickbuz… আরো কত হাবিজাবি তা গুনে শেষ করার উপায় নাই। এই সব অনলাইন সাইট গুলো বসে আছে আপনার বিনিয়োগের অপেক্ষায়। আর বিনিয়োগের মাধ্যম গুলোও বেশ হাতের নাগালে – বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায় ইত্যাদি।

বিনিয়োগ করা শেষ তারা বিভিন্ন উপায়ে প্রলোভন দেখিয়ে আপনার থেকে ওই টাকা তাদের পকেটে নিয়েই যাবে। নিতান্ত আপনার ভাগ্য যদি সহায় থেকে যায় তবে যদি কিছু আসে। তবে যদি বেশি পেয়ে যান, তবে লোভের ফাঁদে আপনি তাও হারাবেন এটা শিওর।

সবাই কেন এই দিকে ঝুঁকছে?

কারণ এখন আমরা সবাই একটু বেশি আরাম প্রিয় হয়ে উঠেছি। কষ্ট করে খাওয়া আমাদের এখন সহ্য হয় না। তাই আমরা ছুটি কোন দিকে কম কষ্টে বেশি লাভ। কিন্তু কথায় আছে না… “কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না।” কথাটা আসলেই সত্য।

আর অপরদিকে বেকারত্ব তো আছেই। বেকারত্বের টানাপোড়নে সব নিজের হাতখরচ জোগাড়েও এই দিকে ঝুঁকছে। আমার দেখা অনেকে আছে যারা কিনা শখের বসে শুরু করে ব্যাপারটাকে এখন প্রফেশনালি নিয়ে নিছে।

এরকম লোকও দেখেছি যার কিনা এত কিছু ছিল নিজের কিছু না করলেও যা আছে তা বর্গা দিয়ে খাইলেও চলে যায় আজকে এই নেশা তাকে দিনমজুর বানায় দিছে। অন্যের ক্ষেতে কাজ করে খাওয়া লাগতেছে।

এই জুয়া জিতে যাওয়ার পরে যেমন আপনাকে এক পৈশাচিক সুখ দেয় তেমন হেরে যাওয়ার পরে দিবে চরম হতাশা। প্রতি মুহুর্তে মনে হবে এইটা না করলেও হইতো। আর এরপরে এই লস উঠাতে আপনি আবার বুক ভরা আশা নিয়ে নতুন করে শুরু করবেন কিন্তু দিনশেষে আবার সেই হারই আপনার প্রাপ্য হবে। আর এভাবে আস্তে আস্তে নিজের অজান্তে সহায় সম্বল কবে বিলুপ্ত হয়ে যাবে টেরই পাবেন না।

ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়, এইসব সহজ উপায় না খুঁজে প্রতিদিন দিনমজুর বা রিক্সা চালায় জীবনে কে যে একটা ভারসাম্য রুপ দেয়া যায় তা এই জুয়া খেলে দেয়া সম্ভব না। জীবনের সব কাজেই লাভ লস থাকবেই, কিন্তু জুয়াতে শুধুমাত্র লস ছাড়া লাভের দিক তেমন নেই বললেই চলে।

বিজ্ঞাপন

জুয়া খেলা আর টাকা জলে ঢালা একদম এক জিনিস। এছাড়াও এই সাইট গুলো প্রমোশনের ব্যাপারে আমাদের কতৃপক্ষের যদি কঠোর নির্দেশ বহাল থাকে আর পেমেন্ট সিস্টেম গুলা এদের সাথে যুক্ত না হয় তাইলে মনে হয় আমরা সহ আমাদের যুব সমাজ কে এর থেকে অনেকটা দূরে রাখা সম্ভব।

তাই যত দ্রুত সম্ভব এই জুয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে আনুন এবং এমন কিছু করার চেষ্টা করুন যা আপনার আর আপনার পরিবারের কল্যাণে কাজে লাগে। কোন কাজ না পাইলে স্বল্প ঋনে ছোট খাটো উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করুন, তাতে অনেক লাভ না হলেও আপনার কাঁচামালে হয়তো আপনার লস রিকোভার হয়ে যাবে, তবু এই অনিশ্চিত কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখুন, জীবন সুন্দর করুন।

ছবি: Image by rorozoa on Freepik

চন্দ্রকান্ত সেন

I'm Chandrakant Sen. I'm a student, striving to acquire knowledge. I'm currently studying at the Nursing and Midwifery College in Jessore (2nd year). My district is Narail. I also write for Ovizatri, a news and magazine website or online portal, focusing on health-related issues.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button