২০১১ সালে সর্বপ্রথম মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করা হয় এবং ডাচ বাংলা ব্যাংকের হাত ধরে বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং এর পথচলা শুরু হয়। শুরুর দিকে এই সেবা খুব একটা নিজেকে মেলে ধরতে পারেনি। দুইটি সিম অপারেটর সিম ব্যবহার করে এই সেবা নেওয়া যেত, সেগুলো ছিল সিটিসেল ও বাংলালিংক।
মোবাইল ব্যাংকিং এর উদ্বোধন
এটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মোহাম্মদ আতিউর রহমান। ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং এর প্রয়াশ ছিল দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থা পৌঁছিয়ে দেওয়া। এই উদ্দেশ্যে তারা সফল হয়েছিলেন তা বলাই বাহুল্য।
মোবাইল ব্যাংকিং এর বিস্তার
২০১১ সালে ডাচ বাংলা ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে। কিন্তু এর কিছু মাস পর আরো ১০টি ব্যাংক এই সেবায় অন্তর্ভুক্ত হয়। গ্রাহক সংখ্যার দিক দিয়ে ডাচ মোবাইল ব্যাংক ও বিকাশ তাদের থেকে অনেক এগিয়ে ছিল। এছাড়া আরো ৮টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে রেমিট্যান্স আনতো।
মোবাইল ব্যাংকিং এর বর্তমান অবস্থা
২০১১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান পাড়ার অলিতে গলিতে শহরের আনাচে কানাচে তাদের ডিজিটাল আর্থিক সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। প্রথম দিকের মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবাগুলি এসএমএস ব্যবহার করেছিল, যা এসএমএস ব্যাংকিং নামে পরিচিত।
মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা
১৯৯৯ সালে স্মার্টফোন চালু হওয়ার সাথে সাথে ইউরোপীয় ব্যাংকগুলি সর্বপ্রথম তাদের গ্রাহকদেরকে এই প্ল্যাটফর্মে মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করতে শুরু করে। ব্যাংকের দৃষ্টিকোণ থেকে মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহকদের নগদ উত্তোলন এবং আমানত লেনদেনের জন্য একটি ব্যাংক শাখায় যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে লেনদেন পরিচালনার ব্যয় হ্রাস করে।
মোবাইল ব্যাংকিং এর সীমাবদ্ধতা
মোবাইল ব্যাংকিং সাধারণত নগদ অর্থের সাথে জড়িত লেনদেন পরিচালনা করে না এবং একজন গ্রাহককে নগদ উত্তোলন বা আমানতের জন্য একটি ব্যাংক শাখায় যেতে হয়।
মোবাইল ব্যাংকিং এর প্রতিষ্ঠানসমূহ
বাংলাদেশে প্রায় ১৫টি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। তাদের কিছু নাম হলো:
১. বিকাশ: বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত সব থেকে বড় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা।
২. রকেট: ডাচ বাংলা ব্যাংকের সাথে থেকে পথচলা শুরু করলেও এটি প্রথম সারির একটি মোবাইল ব্যাংকিং।
৩. নগদ: বর্তমান সময়ে নগদ বাংলাদেশে অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে তাদের ক্যাশ আউট খরচের জন্য।
৪. শিওর ক্যাশ: এটি ৪টি ব্যাংকের অধীনে পরিচালিত একটি মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা।
বিকাশ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য
বিকাশ কি?
বিকাশ হচ্ছে আপনার জরুরি টাকার প্রয়োজনে মোবাইল ব্যাংকিং হিসেবে বেছে নিতে পারেন বাংলাদেশের সবথেকে বড় মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম বিকাশকে। ২০১১ সালে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড ও আমেরিকার ম্যানি ইন মোশন (এলএলসি) এর উদ্যোগে তৈরি হয় বিকাশ।
বিকাশ এর যাত্রা
বিকাশ এমন একটি শব্দ যা উন্নয়নের কথা বলে। বিকাশ এর যাত্রা কাল থেকেই সকল শ্রেণীর মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের অর্থ লেনদেন শুরু করে এবং বিকাশ তাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়।
বিকাশ এর সেবা
বিকাশ দেশজুড়ে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে কার্যকর করতে সহজ, নিরাপদ এবং সময় সাশ্রয়ী ডিজিটাল লেনদেন করে। তারা নিরবিচ্ছিন্ন মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদান করে, মানুষের স্বপ্নপূরণের সহযোগী হিসেবে কাজ করে।
বিকাশ এর নেটওয়ার্ক
বিকাশ জনবান্ধব সেবা প্রদানের লক্ষ্যে দেশজুড়ে চালু করে ৩ লাখ এজেন্ট ও ৩ লাখ মার্চেন্টের বিশাল নেটওয়ার্ক। তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারিত্ব নিয়ে ডিজিটাল আর্থিক ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে সক্ষম হয়।
বিকাশ এর বিনিয়োগকারী
বিকাশ এপ্রিল ২০১৩ সালে বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের সদস্য ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) এবং ২০১৪ সালে বিল মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন বিকাশ এর বিনিয়োগকারী হয়। অ্যান্ট গ্রুপ এবং সফট ব্যাংক ভিশন এর যৌথ মালিকানাধীন বিকাশ বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রিত পেমেন্ট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক ডিজিটাল সেবা প্রদান করে যাচ্ছে।
উপসংহার
আজকে এই পর্য্যন্ত আমরা বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং এর ইতিহাস ও বিকাশ সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
ছবি: Image by freepik