আমরা ইবনে রুশদ, ইবনে খালদুন কিংবা আল ফারাবির নাম বেশ শুনে থাকি। কিন্তু আল আরাবী বা ইবনে আরাবীর নাম হয়তো খুব কমই শুনে থাকি। ইতিহাসে তাকে কেবলই একজন সুফি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অথচ তিনি ধর্মকে বিজ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা করেছেন, পবিত্র আল-কুরআনের বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা, হাদীসের দার্শনিক ব্যাখ্যা, আইনশাস্ত্র, অতীন্দ্রিয়বাদ ইত্যাদি নিয়ে বিস্তর লেখালেখি করে গেছেন।
তবে এটাও ঠিক যে, তিনি সুফিবাদ নিয়েই বেশি কাজ করে গেছেন। আজ আমি বিখ্যাত এই সুফি দার্শনিক সম্পর্কে খুব ক্ষুদ্র পরিসরে জানানোর চেষ্টা করবো।
ইবনে আরাবীর জীবনী
ইবনে-আরাবি যার পারিবারিক নাম হচ্ছে আবু আব্দুল্লাহ মোহম্মদ ইবনুল আলী ইবনুল মোহাম্মদ ইবনুল আরাবী। তিনি ১৭ রমজান, ৫৬১ হিজরিতে তৎকালীন আন্দালুসিয়া বা বর্তমান স্পেনের মূর্সিয়া নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন।
তবে তাঁর মূল নাম মোহাম্মদ। আন্দালুসিয়া বা মূর্সিয়া নগরীতে জন্ম বলে তাঁকে ‘আন্দালুসি’ ও ‘আল—মূর্সি’ নামেও অবিহিত করা হয়। তাছাড়াও তাঁকে ‘দামেস্কি’ বলেও ডাকা হয় কারণ দামেস্কেই তিনি মৃত্যু বরণ করেন সেজন্য।
আরও একটি মজার বিষয় আছে যা হয়তো অনেকেই জানেন না। ‘হাতেম তাঈ’ নামের বিখ্যাত কাহিনী জানেন না এমন মানুষ হয় তো খুব কমই আছে তাই না! ইয়েমেনের সুপ্রসিদ্ধ দাতা এই হাতেম তাঈ ছিলেন তাঁর পূর্বপুরুষ। এজন্য ইবনে আরাবীকে ‘আল-হাতেমী’ এবং ‘আল-তাঈ’ উপনামেও তার প্রসিদ্ধ করা হয়।
আন্দালুসিয়ার একজন সুফি সাধক, লেখক ও দার্শনিক ছিলেন ইবনে আরাবী। সুফিতত্ত্বে তাঁর অবদান ছিলো অনবদ্য। তার এই অবদানের কারনে ‘শেখ আল আকবর মুহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী নামেই সমধিক পরিচিত তিনি।
এছাড়া তাকে শেখুল আকবর বা জ্ঞানীকুল শিরোমণি, হুজ্জাতুল্লাহিল যাহিরা- আল্লাহর প্রত্যক্ষ্য সাক্ষ্য ও আয়াতুল্লাহিল যাহিরা- আল্লাহর আশ্চ্যর্য ইঙ্গিত নামেও সকলে চেনেন।
ইবনে আরাবীর প্রাথমিক জীবন
ইবনে আরাবীর বাল্য ও শিক্ষাজীবন কেটেছে সিভিলে। তার পিতা আলী ইবনে মুহাম্মাদ কাজ করতেন মুর্সিয়ার স্বাধীন শাসক আবু আব্দুল্লাহের প্রশাসনে। কিন্তু পরবর্তীতে আল-মুওয়াহিদীন সুলতান প্রথম আবু ইয়াকুব ইউসুফ মুর্সিয়া, ভ্যালেন্সিয়া, লোরকা ইত্যাদি দখল করে নেন। এজন্য ১১৭২ খ্রিস্টাব্দে ইবনে আরাবির পিতা সিভিলে স্থানান্তরিত হন।
ইবনে আরাবীর শিক্ষাজীবন
ইবনে আরাবীর বাবা একজন নামকরা প্রশাসক এবং প্রসিদ্ধ সুফি ছিলেন। এই গুণী ব্যক্তির সন্তান হওয়া সত্ত্বেও ইবনে আরাবি খুবই সংবেদনশীল, বুদ্ধিমান এবং সুশৃঙ্খল পরিবেশের মধ্যে বেড়ে ওঠেন। বাল্যকালেই তিনি আরবি ভাষা, সাহিত্য এবং প্রথাগত ইসলামী জ্ঞানার্জনে নিয়োজিত থাকেন।
সুফিবাদের প্রতি ছিলো তার গভীর অনুরাগ। এজন্য তিনি বাল্যকাল থেকেই ইসলামের অন্তর্নিহিত বিষয়াবলী সম্মন্ধে জানার জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ইবনে-আরাবির মতে, তাঁর বয়স যখন পনের তখন তিনি জগদ্বিখ্যাত মুসলিম দার্শনিক এবং স্পেনীয় আইনজ্ঞ ইবন রুশদ এর সাথে সাক্ষাতলাভ করেন। শুধু তাই নয় ইসলামিক শিক্ষা ও আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে ইবনে রুশদের চিন্তা দ্বারা ইবনে আরাবী গভীরভাবে প্রভাবিত হন।
সুফী দার্শনিক ইবনে আরাবী অল্প বয়সে বিয়ে করেন। যার ফলে তিনি সিভিলের গভর্নরের করণিক সহকারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এখানেই তা শেষ নয়। এর পরবর্তী দশকে তিনি তাফসির, হাদিস এবং ফিকাহ বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন।
জাহিরি আইনি চিন্তাধারার ব্যাপারে তিনি বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তৎকালীন সিভিল এবং সেউতার শ্রেষ্ঠ ইসলামিক পন্ডিতদের নিকট তিনি শিক্ষালাভ করেন। তাঁর অধিকাংশ শিক্ষকই ছিলেন আল-মুওয়াহিদীন যুগের ধর্মগুরু।
ইবনে আরাবীর স্পেন ত্যাগ
ইবনে আরাবী ৩০ বছর বয়সে স্পেন ত্যাগ করে উত্তর আফ্রিকা গমন করেন। তিউনিসে থাকাকালীন সময়েই তিনি ইসলামের পুবাঞ্চলীয় পবিত্রভূমি সম্পর্কে জানার গভীর ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। এভাবেই ইবনে আরাবী ১২০০ সালে ইসলামের পূর্বের পথে যাত্রা করেন। তাছাড়াও তিনি জীবনের বাকি সময়টা এই অঞ্চলেই কাটান।
ইবনে আরাবীর হজ্বব্রত পালন
ইবনে আরাবি ৫৯৮ হিজরীতে হজ্জব্রত পালন করতে মক্কায় যান এবং তিনি তা পালনও করেন। সেখানে তিনি তিন বছর বসবাস করেন। আর সেই সময়েই সেখানে অবস্থানকালে ইবমে আরাবীর সঙ্গে পারস্যের এক রহস্যবাদী ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব হয়।
সেই ব্যক্তির আকর্ষণীয় এবং ধার্মিক কন্যার সাথে তার বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এবং সেই কন্যায় তাকে ‘তরজুমান আল-আশওয়াক্ব’ বা “The Interpreter of Desires” নামক গ্রন্থ রচনা করতে অনুপ্রাণিত করেছিলো।
এটি একটি বেশ চমৎকার একটি রহস্যময়-কাম-রোমান্টিক গীতিকাব্য। এ সময়ই তিনি তাঁর সবচেয়ে প্রভাবশালী গ্রন্থ ‘আল-ফুতুহাত আম মাক্কিয়া’ যেখানে মক্কার রহস্যোদঘাটন সম্পাদক লেখা হয়েছে শুরু করেন।
বিরামহীন ভ্রমণ শেষে দামেস্কতে অবস্থান
এরপর ইবনে আরাবী পরের দুই দশক পর্যন্ত জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে বিরামহীন দেশভ্রমণ শুরু করেন। এই সময়ে ইসলামিক আধ্যাত্মিকতা ও নৈতিকতার সকল দিক সম্পর্কে গভীর জ্ঞানলাভ করেন তিনি।
একে একে তিউনিসিয়া, মিশর, জেরুজালেম, বাগদাদ, মক্কা, মদিনা, আলেপ্পো, মসুল, সেন্ট্রাল এশিয়া ও তুরস্কের কিছু অংশ ভ্রমণ করা শেষ করেন। এবং এরপর তিনি শিষ্যদের ছোট একটা দল নিয়ে ১২২৩ খ্রিস্টাব্দে দামেস্কতে স্থির হন।
ইবনে আরাবীর গভীর পান্ডিত্য অর্জন
ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে যে, ইবনে আরাবী প্রথাগত ইসলামিক বিজ্ঞানের যথা, তফসীর, হাদীস, ফিকাহ, এবং ইলম আল-কালামের একজন সত্যিকারের ‘মাস্টার’ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেন। শুধু তাই নয় এর পাশাপাশি সুফিবাদের এক দিকপাল হিসেবেও তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
অতীতের অন্য অনেক মুসলিম পন্ডিতগণের মত তিনিও ইসলামিক বিজ্ঞানের উপর এক অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। এজন্য তাঁর ঘনিষ্ঠ শিষ্যরা তাঁকে মনে করতেন যে, ইসলামিক নীতি ও অনুশীলনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিভাশালী ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ মানুষ তিনি। আর তাঁর এই অভ্যন্তরীণ গুণাবলী, আধ্যাত্মিক জ্ঞান এবং শক্তিশালী কল্পনাই তাঁকে অন্যান্যদের থেকে আলাদা করেছিল।
অন্য কথায় বলা যায়, ইসলামের রহস্যবাদ সম্পর্কে তাঁর গভীর জ্ঞান ও বোঝার ক্ষমতা, তাঁর আধ্যাত্মিক শিক্ষা এবং গভীর অন্তর্দৃষ্টি, ভক্ত-অনুসারীদের মৌখিক ও লিখিত উভয়ভাবে জানার অসাধারণ ক্ষমতা তাঁকে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে দূরকল্পী প্রতিভা ও লেখক হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছে।
ইবনে আরাবির চিন্তাধারা
সুফি আন্দোলনের দূরকল্পী দর্শনের কাঠামোগত আকৃতি দিয়েছিলেন ইবনে আরাবী। তাঁর মূখ্য রচনা হল হিকমত আল-ইশরাক বা ঔঊজ্জ্বল্যের জ্ঞান। এই নামেই ডাকা হতো ঐ চিন্তার অনুসারীদের। ইবনে আরাবী তার অনুগমীদের কাছে ছিলেন আল-শায়খ আল-আকবার বা মহান শিক্ষক।
এছাড়াও বিশালাকার অসংখ্য রচনাবলীর মাধ্যমে তাঁর দর্শনচিন্তার পরিচয়ও পাওয়া যায়। রহস্যময় ভাবধারার চরম উৎকর্ষ এবং শরীয়তী গোড়ামীর এক অপূর্ব সংমিশ্রন ছিলো ইবনে আরাবীর জীবন।
ইবনে আরাবীর রচনাসমগ্র
ইবনে-আরাবি ছিলেন একজন উচ্চমানের লেখক। অনেক জীবনীকারের মতে, ইবনে আরাবির বহু পান্ডুলিপি এখনো অপ্রকাশিত অবস্থায় আছে। তাঁর কিছু বিখ্যাত রচনা সম্পর্কে সংক্ষেপে বলা যায়। চলুন জেনে আসি সেইসব রচনাবলি সম্পর্কে।
১. ফুতুহাত আল-মক্কিয়া – The Makkan Revelations
‘ফুতুহাত আল-মক্কিয়া’ গ্রন্থটি তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত কর্ম। মক্কায় অবস্থানকালীন সময়ে তিনি এটি রচনা করেছিলেন। এটি ৩৭ টি সফরকে ৬টি ভাগে, ৫৬০টি অধ্যায়ে বিভক্ত করেন। ধর্মীয় ও আধ্যাত্বিক জ্ঞানের বিশ্বকোষ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এই গ্রন্থকে।
ইসলামী শরীয়ত, মারিফত নিয়ে এই গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করেন তিনি। মানুষের স্বর্গে আরোহণ সম্মন্ধে একটি রহস্যময় রূপক কাহিনী আছে আছে এখানে। যা ফুতুহাত-এর ১৬৭ তম অধ্যায় কিমিয়া আল-সাআদাহ এ উল্লেখ করেন।
২. ফুসুস আল হিকাম
‘ফুসুস আল হিকাম’ তাঁর আরেকটি সুবিখ্যাত বই। অনেকেই এই গ্রন্থটিকেই ইবনে আরাবির সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। কমপক্ষে একশো’র বেশী মন্তব্য লেখা হয়েছে এই বইটির উপর।
তিনি বইটি একটি স্বপ্নের মাধ্যমে নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হতে লাভ করেন এবং সেভাবেই তিনি এই তা লিপিবদ্ধ করেন। এই বইটি বিভক্ত করা হয়েছে ২৭ টি অধ্যায়ে। আর এতে ইবনে-আরাবীর সমগ্র শিক্ষার সংক্ষিপ্তসার উল্লেখ রয়েছে।
৩. কিতাব আল ইসরা ইলা মাকাম আল আসরা
‘কিতাব আল ইসরা ইলা মাকাম আল আসরা’ তার অপ্রকাশিত একটি গ্রন্থ। তিনি মহানবী (সাঃ) এর মিরাজ বা নৈশযাত্রার বিশদ বিবরণ দিয়েছেন এই বইটিতে। আর এই সপ্তম স্বর্গে মহানবী (সাঃ) এর ভ্রমণবৃত্তান্তের বর্ণনা বিখ্যাত ইতালীয় কবি দান্তের বহু আগে ইবনে আরাবী করেছিলেন।
৪. ওয়াহাদাত আল-উজুদ
ইবনে আরাবি এর ‘তরজুমান আল আশওয়াক’ গ্রন্থটি একটি কবিতার বই। ইবনে আরাবী এই গ্রন্থটি রচনা করেন নিজামকে উদ্দেশ্য করে।
৬. দাখায়িরুল আলাক
‘দাখায়িরুল আলাক’ গ্রন্থটি তরজুমান আল আশওয়াকের একটি ভাষ্য।
৭. রিসালা রুহুল কুদস
‘রিসালা রুহুল কুদস’ গ্রন্থে তিনি তার সমকালিন বহু সুফির জীবন ইতিহাসগুলোকে সংকলন করেন।
৮. তানাজজুলাত আল মাওসিলিয়াহ
এতে তিনি ধর্মীয় রীতিনীতির আধ্যত্বিক ব্যাখ্যা দেন। এই সকল কাজের মধ্যে ‘ফুতুহাত আল-মক্কিয়া’ এবং ‘ফুসুস আল হিকাম’ বই দুটো তাঁর সমগ্র শিক্ষার ভান্ডার। এই বই দুটিকে ইসলামি সুফিতত্ত্বের উপর রচিত অমূল্য রতনস্বরূপ বলা হয়।
ইবনে আরাবীর প্রভাব
মুসলিম সমাজে ইবনে আরাবীর প্রভাব ব্যাপক। তবে এমন নয় যে, সমস্ত মুসলিমরা ইবনে আরাবীকে চেনে বা সবাই তার শিক্ষাকে মেনে চলছে। ইবনে আরাবীর শিক্ষা বিভিন্নভাবে তাঁর শিষ্য এবং অনুসারীদের মাধ্যমে সর্বত্র বিস্তৃত হয়।
অটোমান তুরস্কে ইবনে আরাবীর সৎ পুত্র সদরুদ্দিন কুনাভি এবং সেই কুনাভির শিষ্যদের মাধ্যমে এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে, অটোমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে “ফুসুস আল হিকাম” গ্রন্থটি পাঠ্যপুস্তকের মর্যাদা পায়।
পারস্যে এবং হিন্দুস্থানে ফারসি ভাষার সুফি সাধকদের মাধ্যমে তার শিক্ষা বিস্তৃত হয়। নুরুদ্দিন আল জামি এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেন। বিখ্যাত বিখ্যাত হাজারো সুফি সাধকদের মধ্যে ইবনে আরাবীর প্রভাব ব্যাপক রয়েছে।
আর এদের মাধ্যমেই বিস্তৃত হয় মুসলিম সমাজে ইবনে আরাবীর চিন্তা-চেতনা। এই বিস্তৃতি খুব সহজ ছিলো না। কারণ অনেকেই তাঁর শিক্ষার বিরোধিতা করেন। কিন্তু কোন কিছুই তাঁর প্রভাবকে অতিক্রম করতে পারে নি। আর দেখা যায় শেখ আল আকবর হিসেবে তিনি তার স্থানে আজও রয়ে গেছেন।
ইবনে আরাবীকে নিয়ে বিতর্ক
বহু শতাব্দি কেটে যাওয়ার পরও আজও ইবনুল আরাবীর এসব আশ্চ্যর্য মতবাদ নিয়ে মুসলিম ধর্ম তাত্ত্বিকদের মধ্যে বদানুবাদের শেষ হয় নি। তাদের অনেকে একটি বিষয়ে একমত যে, সাধারন লোকের বোধগম্য নয় ইবনুল আরাবীর দুর্জ্ঞেয় মতবাদগুলো।
এজন্য তার চিন্তা চেতনায় আস্থা রেখেও তারা সেগুলির প্রচার নিষিদ্ধ করেছেন। তবুও ইবনুল আরাবীর রচনাবলী প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্যে সাদরে ও সম্ভ্রমের সঙ্গে পঠিত হয় মুসলিম জগতের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত।
শেখুল আকবর ইবনুল আরাবী সম্বন্ধে মুসলিম আলেমদের বিভিন্ন মত প্রকাশ রয়েছে। ইবনে তাইমিয়া, আল-তাফতাযানী ও ইব্রাহীম আল-বিকায় তাকে কাফের ফতোয়া দিয়েছেন। শুধু তাই নয় তার হুলুল বা নরদেবতা ও ইত্তেহাদ বা অদ্বৈতবাদ মত প্রচারের জন্য তীব্র প্রতিবাদও করেছেন।
তবে হযরত মুজাদ্দিদ আলফেসানী র. ইবনে আরাবির চিন্তা-চেতনার বিরুদ্ধে কার্যকর লড়াই করেছিলেন। তিনি ওয়াহাদাতুল ওজুদ ধারনার বিপরীতে ওয়াহাদাতুশ শহুদকে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।
মৃত্যুবরণ
মহান জ্ঞান সাধক ইবনে আরাবি ২২ রবিউস-সানী ৬৩৮ হিজরিতে মারা যান। ৭৫ বছর বয়সে দামেস্কের কাযি মুহিউদ্দিন ইবনে আল-জাকির বাড়িতে ইন্তেকাল করেন তিনি। তাঁকে দাফন করা হয় দামেস্কতেই।
পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ ১৬ শতকে অটোমান সুলতান প্রথম সেলিম এর সময়ে ইবনে আরাবির স্মরণে একটি সমাধিস্তম্ভ নির্মাণ করেন। আর এই সমাধিস্তম্ভটি এখনো টিকে আছে সগৌরবে।