বিশেষ প্রতিবেদন

সহানুভূতির অভাব: আমাদের সমাজের বাস্তব চিত্র

কেন আমরা একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত এবং কিভাবে এটি আমাদের সমাজকে উন্নত করতে পারে?

এই আর্টিকেলটি আমাদের সমাজে সহানুভূতির অভাব এবং এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে। বিভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে কেন আমাদের একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত এবং কিভাবে এটি আমাদের সমাজকে উন্নত করতে পারে।

পরীক্ষার ফাইনাল ফলাফলে ১ নম্বরের জন্য ভালো মানের CGPA/GPA মিস হয়ে গেলে কেমন লাগে?

যার সাথে ঘটে তিনি কিন্তু এই অনুভূতি খুব ভালো করে বুঝতে পারবেন। কিন্তু সহপাঠী হিসেবে তার প্রতি আমাদের অনুভূতি কেমন হওয়া উচিত? হাসিঠাট্টা করা উচিত নাকি আফসোস করা উচিত? তার এই ১ নম্বর কম পাওয়া হতেও পারে খুবই যৌক্তিক। এমনকি পরীক্ষক বারবার খাতাটার এপাশ-ওপাশ বুলিয়েছেন শুধু ঐ ১ নম্বর দেবার জন্য কিন্তু কোনোভাবেই তিনি পারেন নাই।

রেলওয়ে স্টেশন/বাস স্ট্যান্ডে টিকিট মিস করা

রেলওয়ে স্টেশন বা বাস স্ট্যান্ডে এমন কতজনের সাথে দেখা হয়ে যায়। মাত্র ৫ মিনিট পূর্বে উপস্থিত হলেই পেয়ে যেতে পারতেন টিকিট। মিস হয়ে গেল… চারপাশে তিনি ছোটাছুটি করছেন পরবর্তী ট্রেন/বাস কখন তার গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। আমাদের পকেটে টিকিট সংরক্ষিত। ঐ ট্রেন/বাস ছেড়ে দেবে এখন। মানুষটার ছোটাছুটি আমাদের কাছে কেমন লাগা উচিত? তিনি যেহেতু দেরি করেছেন তাই ট্রেন/বাস মিস করাটাই স্বাভাবিক! এমন চিন্তা? নাকি আফসোস হওয়া?

বিসিএস পরীক্ষায় শেষ সুযোগ মিস করা

একজন সাধারণ ছেলে। খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করেছেন। গত পাঁচটি বিসিএসের মধ্যে একটিতে ভাইভা পর্যন্ত গেছিলেন কিন্তু ক্যাডার পেলেন না। এমনকি নন-ক্যাডার পদেও নিয়োগ পেলেন না। এই বিসিএস ছিলো তার বয়সসীমার শেষ বিসিএস। সুতরাং নতুন করে আরো একবার এই পরীক্ষায় উপস্থিত হতে পারবেন না। এই যে তার পাঁচ বছরের শ্রম, কষ্ট, ধৈর্য্য, অপেক্ষা ও অধ্যবসায় কোন মানেই পেল না। একটি পুরো পরিবার তার এই ভাইভার জন্য অপেক্ষা করছিলো। তার এই খালি হাতে বাড়িতে ফিরে আসা দেখে পাড়া প্রতিবেশি হিসেবে আমাদের কি করা উচিত? যেহেতু তার যোগ্যতা তুলনামূলক সামান্য কম ছিলো তাই তাকে নিয়ে প্রচুর হাসিঠাট্টা করা উচিত? নাকি আফসোস করা উচিত?

মায়ের ক্যান্সার চিকিৎসার খরচ

মায়ের ক্যান্সার (ব্লাড ক্যান্সার)। আপনি আপনার মা কে ভালো মানের হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। রোজ রোজ খরচের খাতা বাড়ছে। ধরে নিচ্ছি, এই ক্যান্সার থেকে মুক্তিতে নূন্যতম ৩০ লাখ টাকার দরকার। আমাদের যেহেতু আজও একটি তথাকথিত সমাজ আছে; যদিও যথেষ্ট ভালো নয়। তবুও ধরা যাক, সমাজ আপনাকে সর্বোচ্চ কত টাকা দেবে? ৫ লাখ? ১০ লাখ? কিন্তু বাকি ২০ লাখ টাকা কোত্থেকে আসবে? বন্ধুরা মিলে আরো ৫ লাখ। জমিজমা বিক্রি করে আরো কয়েক লাখ। কিন্তু আরো ১ লাখ ঘাটতিতে চিকিৎসা সম্পূর্ণ করা সম্ভব হলো না। আমাদের এই মুহূর্তে কি করা উচিত? আফসোসের মধ্যেই আবদ্ধ থাকা উচিত? যা আমরা বরাবর করে থাকি। নাকি একটি সমাধানের রাস্তা খোঁজা উচিত?

শিক্ষকের আর্থিক কষ্ট

একজন শিক্ষক আমাদের সমাজে খুবই সম্মানিত ব্যক্তি। কিছু ব্যক্তির ভুলভাল কর্মকাণ্ড যদি বাদ দেওয়া যায় তাহলে শিক্ষকতা কিন্তু আজও মহান পেশা। কিন্তু এই বেতন স্কেলে আপনার প্রিয় শিক্ষক/শিক্ষিকা সংসার চালাতেই পারছেন না। তারপরেও শেষ জীবনে এসে একটি ঠিকঠাক বাড়ি করতে চাইলেন, একটি সেকেন্ড হ্যান্ড কার ক্রয় করতে চাইলেন। সেভিংস থেকে সবটাকা বের করতেই দেখলেন নিজের ছেলে/মেয়ে দেশের বাইরে গিয়ে পড়াশোনা করতে চায়। অনেক ব্যয়। এই যে একজীবনে তাদের একটি নিজস্ব বাড়ি হলো না, নিজস্ব গাড়ি হলো না, পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাতায়াত করেন আজও। এরমধ্যেই হঠাৎ শুনলেন রিটায়ার্ড হয়ে গেছেন। কিন্তু পেনশনের টাকাও সরকার কবে দেবে নিশ্চিত নন। সব জেনে আমাদের মধ্যে কি একধরনের ঈর্ষা হওয়া উচিত যে, বাড়ি বা গাড়ি হয় নাই তো কি হয়েছে! সন্তান তো দেশের বাইরে পড়াশোনা করছে। নাকি আফসোস হওয়া উচিত? তাঁর পেনশনের টাকাটা সময়মত পাইয়ে দেবার জন্য নূন্যতম চেষ্টা করা উচিত?

ব্যাংকারের হোম লোন সমস্যা

একজন ব্যাংকার মানেই হোম লোন তার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে বিষয়টি তো এমন নয়। ক্রেডিট স্কোর, ডাউন পেমেন্টে কিছু গড়বড় ঘটে গেছে। অন্তত আগামী পাঁচ বছরে হোম লোন পাওয়া আর সম্ভব নয়। এই বিষয়টি কি বেকার সমাজের জন্য উৎসাহের বস্তু হওয়া উচিত? নাকি মনের মধ্যে কোথাও না কোথাও খারাপ লাগা উচিত? হোম লোন যদি না-ই পান, আমরা কি তাকে আমাদের পকেট থেকে একই পরিমাণ সুদে সমান পরিমাণ লোন কাউকে দিতে পেরেছি? বা অন্তত এই চেষ্টাটুকু করেছি?

রিক্সাওয়ালার সহানুভূতি

একদিন রাজশাহী শহরে এক রিক্সাওয়ালা কে মিথ্যা বলেছিলাম, “মামা, আমার কাছে টাকা নাই, ওয়ালেট নিয়ে আসতে ভুলে গেছি। আমি মেসে ফিরতে পারছি না… আমাকে একটু পৌঁছে দেবেন?” রিক্সাওয়ালা মামা বললেন, “সমস্যা তো হয় মামা, তাই বলে নিয়ে যাবো না! আপনাকে ভাড়া দিতে হবে না।” হ্যাঁ, প্রত্যেক শহর-ই কমবেশি খারাপ। কিন্তু এই ভালো মানুষগুলো? ওদের কি দোষ? ভাড়া নিয়ে জেরা করুন কিন্তু এই মারমুখী আচরণ আমরা কাদের থেকে শিখলাম? আজকাল প্রায় দেখি আমাদের রিক্সাওয়ালাদের সাথে ঝগড়া হতে। বাজে ভাষায় ঝগড়া করা অবজ্ঞার করার চেয়ে খারাপ জিনিস হতে বাধ্য। হয়তো একটি পুরো পরিবার তার উপর নির্ভরশীল। আমরা কি এসবও ভেবে দেখি? নাকি আমাদের কিছুতেই কিছু আসে বা যায় না?

পারিবারিক ঝগড়া

পাশের ফ্লাটে, বাড়িতে ভীষণ ঝগড়া। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায় ডিভোর্স হতে চলেছে। আমাদের কি করা উচিত? দরজা-জানালা বন্ধ করা উচিত যাতে আওয়াজ না আসে? নাকি একদিন সত্যিই সত্যিই বের হয়ে প্রয়োজনে আরো দুজন সাথে নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করা উচিত?

চায়ের দোকানদারের ঋণ

প্রত্যেকদিন যে চায়ের দোকানদার হাসিমুখে চা দিয়ে যাচ্ছে তার খাতায় হাজার থেকে লাখ টাকা বাকির রেকর্ড আছে এই দেশে। আমাদের কি এমন করা উচিত? নাকি ঋণগুলোর অল্প করে হলেও পরিশোধ করা উচিত? কিছু কিছু এমন টুকিটাকি দোকান বাকির ভার সহ্য করতে না পেরে দোকান বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। আমরা এমন মানুষের খোঁজ কি রাখি? রাখা কি উচিত? যদি উচিত হয় তাহলে তাদের মধ্যে ক’জনকে আমরা পুনর্বাসন করতে পেরেছি?

কৃষকের শস্যের ন্যায্য দাম

কৃষক যখন শস্যের মৌসুমে শস্য বিক্রি করতে যান তখন উক্ত শস্যের ন্যূনতম দাম পাচ্ছেন। আর বাজার সিন্ডিকেট আপনার থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন অতিরিক্ত টাকা। কৃষকদের প্রতি কি এতে করে ন্যায় হচ্ছে? যদি ন্যায় না হয়, তাহলে এ বিষয়ে আফসোস ছাড়া আমরা অদৌ কি আজ পর্যন্ত এই দেশে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি? বিশেষ করে যারা এত কষ্ট করে আমাদের পাতে খাবার তুলে দিচ্ছেন ন্যূনতম পারিশ্রমিকে।

জেলের ইলিশ বিক্রির সমস্যা

আমাদের জেলে সমাজ কি ইলিশ খুব উচ্চ দামে বিক্রি করে থাকে নাকি ‘মহাজন’! আমার কাছে ইলিশ বর্তমানে খুব গুরুত্বপূর্ণ মাছ। যাকগে, এই মহাজনেরা কারা? আর যাইহোক আমাদের ভাষায় মূর্খ জেলে সমাজ তো নয়! এই দামে ইলিশ বেচলে ওদের ইটের বিল্ডিং থাকতো বলে আমার ধারণা। কিন্তু এই মহাজনদের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান কি আজ পর্যন্ত স্পষ্ট করেছি? বা এই বিষয়ে অদৌ আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করা উচিত কি? যদি উচিত হয় তাহলে এ পর্যন্ত কি কি ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি?

উপসংহার

আমাদের সমাজে সহানুভূতির অভাব একটি বড় সমস্যা। প্রতিটি ক্ষেত্রে, আমরা যদি একটু সহানুভূতি দেখাই, তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে। আমাদের উচিত একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং সমস্যার সমাধানে একসাথে কাজ করা।

মেহেদি হাসান (বিকেল)

I'm MD Mehedi Hasan, also known by my pen name Mr. Bikel. I'm the admin of the site Ovizatri - News & Magazine. I am a versatile individual with a professional life that spans various fields. I work as a writer, actor, social worker, radio jockey, web developer, web designer, editor, presenter, blood donor, audio and video editor, photo editor, YouTuber, and drama director. I am also a developer and app developer at Microsoft.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button