কলম

বাংলাদেশে LGBTQ+ কমিউনিটি: বিদ্যমানতা, চ্যালেঞ্জ এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি

একটি বিশ্লেষণ: বাংলাদেশের LGBTQ+ কমিউনিটির বর্তমান অবস্থা, সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা এবং সম্পর্কের জটিলতা

- Advertisement -

বাংলাদেশে LGBTQ+ কমিউনিটি বিদ্যমান ও সক্রিয়। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার কত শতাংশ LGBTQ+ কমিউনিটি আছে? এ বিষয়ে সঠিক সংখ্যা আমাদের জানা নেই। গ্লোবাল রেঞ্জে, মোট জনসংখ্যার ৫-১০% শতাংশ মানুষ LGBTQ+ কমিউনিটির।

বাংলাদেশে কমবেশি সবাই জানেন এই কমিউনিটি সম্পর্কে। আমি এসবের কিছুই জানিনা শর্তে কেউ কেউ চোখ বন্ধ করে রাখেন। তাদের জন্য অবশ্য আমার কাছে যথেষ্ট প্রমাণ আছে। আমি একজন ‘স্ট্রেইট’ হিসেবে এই ধরণের ‘Sexual Orientation’ কে আমার জন্য হজম করা অনেক শক্ত।

কেমন লাগবে, একজন ছেলে এসে যদি এক ছেলেকে বলে, “আমি তোমার প্রেমে পড়েছি”, অথবা, একজন মেয়ে এসে আরেকজন মেয়েকে বলে, “আমি তোমার প্রেমে পড়েছি”। আবার আরেকজন যদি এসে বলে, “আমার বয়ফ্রেন্ড আছে কিন্তু আমার একজন গার্লফ্রেন্ডও চাই!” এমনও আছে, “প্রেম/বিয়ে করেছি কিন্তু সেক্স করতে আগ্রহী নই!” ঐ যে ‘+’ দেখছেন উপরে, এরা আবার কিন্তু এরকম।

বাংলাদেশের মানুষ এখনো এত প্রগতিশীল নয়, বা হতে চায় না যে, এই কমিউনিটির সাথে হাত মেলাবে এবং বৈবাহিক সম্পর্কের জন্য আইন করে দেবে। কিন্তু এরা এতটুকু উদার যে, এই কমিউনিটির প্রতি যথেষ্ট বিরুক্ত হওয়া সত্ত্বেও চুপ আছে। এখানে ‘Sex’ নিয়ে পাবলিক প্লেসে আলোচনা করা ট্যাবু হলেও, সম্মতিক্রমে বিভিন্ন হোটেলে সবই চলে।

এই যে ‘Consent… Consent…’ বলা শুরু হয়েছে। ‘Consent’ মানে ‘কবুল’ নয়, ‘সম্মতি’ বুঝায়। কিন্তু এদেশে এক ধরণের অবাধ যৌনতা চলে। সব হোটেলেই কমবেশি চলে। ছাত্রজীবনে মেসেও চলে। দরবেশ/শায়েখ/ওলি-আউলিয়াদের স্তরে তো আমরা কেউ নই। প্রেম এখানে কিছুটা হলেও নরমালাইজ করে দেখা হয়। মানে শরীফ-শরীফার গল্প পড়ে এদেশের বাবা-মা লজ্জায় অন্তত এখন চায়, প্রেম কর বাপ! স্কুলে ক্লাস ফাইভে পড়া বাচ্চাটাও খেলার সাথী খোঁজে না! প্রেমিক/প্রেমিকা খুঁজছে।

- Advertisement -

পরকীয়ার তালিকায় শীর্ষে বাংলাদেশ। কিন্তু দীর্ঘদিন বিশ্বাসযোগ্য কোন জরীপ করা হয় নাই। যা পেলাম, যা দেখলাম ও দেখছি, তাতে কার স্ত্রী/স্বামী কখন কার হাত ধরে চলে যায় তার ঠিক-ঠিকানা নাই। নিজের বাচ্চাকে ছেড়েও চলে যায়, মিডিয়ায় এসে কাঁদেন অভাগা বাবা/মা। সবাই দেখছি, সবাই জানি।

এই পরকীয়ার জন্য বাংলাদেশে বিশেষ কি কোন আইন আছে? যা আছে, ওটাকেই বলা হয়, “যা লাউ, তাই কদু”। মানুষ ইচ্ছেমতো পরকীয়া করছে, আমি তো তাই দেখতে পাচ্ছি! যারা এখনো চোখ বন্ধ করে আছেন, নিজের স্ত্রী/স্বামী পালিয়ে গেলে না-হয় চোখ খুলবেন। কারণ সত্য স্বীকারে নির্ভীক থাকা জরুরী। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সত্যিই অনেক সহনশীল।

আমি আজ পর্যন্ত ভুক্তভোগী যত মেয়ের সাথে কথা বলেছি, তারা একটা বিষয় সাফ সাফ জানিয়েছেন, “ধর্ষণ/Molestation/খারাপ কিছু যা-ই ঘটেছে সেটা পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের সদস্যদের মধ্যে কেউ ছিলো।” মানে প্রথম বাজে অভিজ্ঞতা যদি জিজ্ঞাসা করেন তাহলে এই উত্তরই পাবেন।

এখানে আমরা ছেলেরাও নিরাপদে নাই। সম্মতি নিয়ে কিছু করার পর ব্রেক-আপ এবং বিয়ের পর তালাক দিয়েছেন তো মরেছেন। এখানে এমন কিছু আইন আছে, এসব আইনে ফাঁসলে এবং ঐ মামলা মিথ্যে হলেও আমাদের এক জীবন শ্যাষ। তাই যাদের মাথায় একটুও ঘিলু আছে সে কিন্তু দেখবেন মেয়েদের আশেপাশে যায় না। আর যদি যায়ও তো তাহলে কথা এমনভাবে বলে যেন মনে হয় এই প্রথম ‘সুবোধ’ কোন মেয়ে দেখলো।

সুবোধের জন্য এসব ঝামেলার হলেও বাকিদের জন্য কিন্তু বিষয়টি প্লে-গ্রাউন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোটাদাগে, এদেশের মিডিয়া জগত, কর্পোরেট জগত, মেডিক্যাল জগত, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জগত… থেকে শুরু করে বস্তির জগত পর্যন্ত বৈষম্যহীন যৌনতার যে অশ্লীল চর্চা তার পুরোপুরি অস্বীকার করতে পারবেন? অবশ্য যৌনতা নয়, ‘অশ্লীল’ শব্দটাকে বুঝতে হবে আগে।

- Advertisement -

আমাদের সামনে এমন কত বিষয়ে কতরকম বাস্তবতা। চলমান ২০২৪ সালে প্রতি লাখে ৩.৭ শতাংশ মানুষ আত্মহত্যা করছেন যাদের বেশিরভাগ প্রেমে ব্যর্থ হয়ে। সম্পর্কের জটিলতা কোন পর্যায়ে গেলে আমাদের প্রতি বছর এতগুলো মানুষকে হারাতে হয়? কিন্তু আমাদের সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেন এমন সাইকিয়াট্রিস্ট ক’জন?

কিন্তু তবুও কিছু মানুষ একটু পর পর একের পর এক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রসব করছেন। ভাই! আমাদের বর্তমান বাস্তবতা এত ঝামেলার ও বিভৎস এসবের সাথে একটা মীমাংসায় আসুন। এত এত অমীমাংসিত বিষয় পূর্বেও ছিলো, আজও আছে। আলোচনার টেবিলে আনুন, তাহলে হয়তো কিছু মীমাংসা আমাদের মধ্যে হবে। আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশ হতে পারবো। এখন সেটার জন্য কাছের মানুষকে জানান। কিছু লিখুন।

বাক-স্বাধীনতা ফিরে পেলাম ঠিকই কিন্তু ‘Conspiracy Theory (ষড়যন্ত্র তত্ত্ব)’ যেভাবে সামনে আসছে, আমাদের মনোযোগ বিঘ্নিত করছে। মনে হচ্ছে নোবেলে যদি এই ক্যাটেগরি থাকতো তবে বাংলাদেশের একটি পুরষ্কার নিশ্চয় পেত!

- Advertisement -
- Advertisement -

মেহেদি হাসান (বিকেল)

প্রধান সম্পাদক, অভিযাত্রী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- Advertisement -
Back to top button