আত্মসচেতনতা: সুখী ও সফল জীবনের চাবিকাঠি
নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন, সিদ্ধান্ত নিন এবং জীবনকে আরও সহজ করে তুলুন
আত্মসচেতনতা হচ্ছে আমাদের চিন্তা, আমাদের ইমোশন, আমাদের যে ইচ্ছা, আমাদের যে মোটিভেশন এবং আমাদের যে কাজকর্ম সে বিষয়ে সচেতন হওয়া। অধিকাংশ সময় আমরা এগুলো এড়িয়ে যাই।
আত্মসচেতন কেন হবো?
আত্মসচেতন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটা কারণে আপনি আপনার নিজস্ব চিন্তা, আবেগ বা মোটিভেশন এর ব্যাপারে যত বেশি সচেতন হবেন আপনি আপনার লক্ষ্যে তত বেশি সহজে নির্ধারণ করতে পারবেন।
দ্বিতীয়ত, আপনি যদি আত্মসচেতন হোন কিংবা আপনার মাথায় কি চলছে? কি আবেগ চলছে? কি কাজ করছেন? এটা যদি জানেন তাহলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।
তৃতীয়ত, আপনি যদি আত্মসচেতন হোন তাহলে ডিসিশন নেওয়ার ক্ষমতা আপনার জন্য সহজ হবে কারণ আপনার নিজের চিন্তা নিজের ইমোশন সম্পর্কে আপনার ধারণা আছে। আত্মসচেতন হওয়ার জন্য অনেকগুলো টেকনিক আছে।
আত্মসচেতন হওয়ার প্রথম টেকনিক হচ্ছে খুব শান্ত ভাবে বসে খেয়াল করুন আপনার মধ্যে কি চিন্তা আসতেছে। নিজের ইচ্ছা, নিজের আবেগ, নিজের চিন্তা কিংবা আপনি যে কাজটা করছেন সেটা কেন করছেন এই বিষয়ে সচেতন হওয়া। তারপর আপনি চিন্তা করতে পারেন আপনার মনের মধ্যে এই চিন্তাটা কেন আসে?
এই যে আপনি বসে আছেন কিংবা চিন্তা করছেন এই আবেগ টা, ইচ্ছে টা এই চিন্তাটার কারণ জানতে চাওয়া এটা কেন আসে? অর্থাৎ আমি এটা চাচ্ছি কেন? আমি এই চিন্তা করছি কেন? চিন্তা করে আমি কাজ করছি কেন? এইসব ‘কেন’ এর উত্তর যত বেশি খুঁজে বেড়াবেন আপনি তত বেশি নিজের ব্যাপারে আত্মসচেতন হয়ে যাবেন। আর আত্মসচেতন হলে আপনার ডিসিশন নেওয়ার ক্ষমতা এবং নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা উন্নত হয়।
দ্বিতীয় টেকনিক হচ্ছে আপনি অন্য মানুষের চোখ দিয়ে নিজের ইচ্ছা, নিজের আবেগ, নিজের চিন্তা বা নিজের কাজকর্ম দেখার চেষ্টা করবেন। আপনি চিন্তা করবেন আপনার সামনে একজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে এবং আপনার ব্রেনের দিকে তাকিয়ে আছে এবং আপনার ব্রেনের মধ্যে যে চিন্তা, যে আবেগ এগুলো সে দেখতে পাচ্ছে। আবার অনেকেই বলেন, আপনার সামনে একটা ক্যামেরা আছে তো ক্যামেরাটা আপনার ব্রেনের মধ্যে ফোকাস করে আছে সেখান দিয়ে আপনার চিন্তা এবং আবেগ ক্যামেরায় ধরা পড়তেছে।
প্রথম টেকনিক এবং দ্বিতীয় টেকনিক মোটামুটি কিছুটা একই। প্রথমটা হচ্ছে আপনার নিজে করেন আর দ্বিতীয়টা হচ্ছে আপনি অন্যর চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করেন। প্রথম টেকনিক অনুযায়ী আমাদের মাথায় কি চিন্তা আসে? কে আসে? আমাদের মাথায় কি চলছে? আবার আমাদের মাথায় এই চিন্তা আসে, আমরা কেন কাজ করি? এই কেন চিন্তা আসে? কেন আবেগ আসে? এটা জানার চেষ্টা করি।
আর তৃতীয় টেকনিক অনুযায়ী কোন পরিস্থিতিতে এই চিন্তা আসে কোন পরিস্থিতিতে এই আবেগ আসে – এটা বের করার চেষ্টা করি। উদাহরণস্বরূপ, আপনি কোন পরিস্থিতিতে রেগে যান, কেউ যদি আপনাকে ছোট করে কিছু বলে তাহলে কি রেগে যান, না আপনার মন মতো কোন কিছু না হলে আপনি রেগে যান? তাহলে আপনার কাজ হচ্ছে এই পরিস্থিতি গুলো যাচাই-বাছাই করা এবং এগুলো লিখে রাখা। তাহলে দেখবেন একটা বা দুইটা কারণ আছে যে পরিস্থিতিতে পড়লে আপনি রেগে যান ঠিক তখন আপনি সেই বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে পারবেন।
ঠিক একইভাবে একটা বা দুইটা কারণ আপনি খুঁজে পাবেন যে পরিস্থিতি আসলে আপনি কষ্ট পান তাহলে এই পরিস্থিতি গুলো আপনি এড়িয়ে চলতে পারবেন যে পরিস্থিতিগুলো আসলে আপনি কষ্ট পান। তো এইভাবে পরিস্থিতি গুলো খুঁজে বের করা এবং আপনাকে আত্মসচেতন হওয়া।
চতুর্থ টেকনিক: খাতা কলম নিয়ে বসবেন এক্সাক্টলি আপনার মনের মধ্যে কি চলতেছে সেটা বোঝার চেষ্টা করবেন। যেমন অনেকেই জিজ্ঞেস করে, আপনি কেমন আছেন? উত্তর দেয় যে, খারাপ আছে। খারাপ থাকা হচ্ছে অনেক বড় একটা কারণ বোঝার চেষ্টা করবেন অনেকে অনেক কষ্টের মধ্যে আছেন কিংবা দুঃখের মধ্যে আছেন উনি কি বিষণ্ণতার মধ্যে আছেন অনেকেই অপরাধের মধ্যে আছেন উনি কি নিজেকে ছোট মনে করতেছেন অনেকে অনুশাসনের মধ্যে আছেন অনেকে নিরাশার মধ্যে আছে এই জিনিসগুলা খারাপ থাকার অনেক গুলো ভাগ আছে এই জিনিসগুলো মূলত এই ভাগ গুলোকে যাচাই-বাছাই করা।
তারপর কোন পরিস্থিতিতে খারাপ আছে এবং কেন খারাপ আছেন এই জিনিসগুলো যদি আপনি বের করতে পারেন তাহলে আপনি আত্মসচেতন হতে পারবেন। পঞ্চম টেকনিক বন্ধুবান্ধব কারো কাছ থেকে সাহায্য নেওয়া। আপনি যাকে বিশ্বাস করেন তাকে জিজ্ঞাসা করবেন আমি এ কাজ করেছি বা এ আচরণটা করেছি এটা কতটুকু যুক্তিসম্মত বা কতটুকু ঠিক এটা করলে আমাকে কেমন দেখায়। অন্যর কাছ থেকে যদি আপনি সাহায্য নেন তাহলে আপনি আপনার কাজ সম্পর্কে অনেক সচেতন হতে পারবেন।
তাহলে আমরা আত্মসচেতন হওয়া সম্পর্কে পাঁচটা টেকনিক জানলাম। প্রথমটি হচ্ছে আমাদের ব্রেনের মধ্যে কি চিন্তা আসে, দ্বিতীয়টি হচ্ছে অন্যের চোখ দিয়ে দেখা, তৃতীয় হচ্ছে কোন পরিস্থিতিতে চিন্তা আসে, এই আবেগ আসে এটা নির্ণয় করা। চতুর্থ টেকনিক হচ্ছে, খাতা কলম নিয়ে বসা এবং নিজের মেন পয়েন্টগুলো সম্পর্কে যাচাই-বাছাই করা আর সর্বশেষ পঞ্চম টেকনিক হচ্ছে, অন্যর সাহায্য না।
এই বিষয়গুলো যদি আপনি চর্চা করতে পারেন আপনাকে ২৪ ঘন্টা চর্চা করতে হবে না প্রতিদিন ১০ মিনিট করে যদি চর্চা করতে পারেন আপনি আস্তে আস্তে নিজের বিষয়ে সচেতন হয়ে যাবেন। আপনি যদি নিজের বিষয়ে সচেতন হোন তাহলে নিজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে এবং কোন কিছু নির্ণয় করা সহজ হবে।
আর যদি কোন কিছু খুব সহজে নির্ণয় করতে পারেন কিংবা খুব সহজে আপনি ডিসিশন নিতে পারেন তাহলে আপনার জীবন সহজ হবে এবং জীবনের চলার পথে কোন প্রকার সমস্যা বা বাধা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে না তাই জীবনে চলার পথে আমাদের দেখানো পাঁচটি পথকে অনুসরণ করতে পারেন।
ছবি: Image by cookie_studio on Freepik
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.