মুভি রিভিউ

শহীদ কাপুর (Shahid Kapoor) এর আধুনিক কাল্ট ক্লাসিক: ৫টি অনন্য সিনেমা (পর্ব – ০১)

শহীদ কাপুর (Shahid Kapoor) বলিউড/হিন্দি সিনেমায় এখন পর্যন্ত তথাকথিত সুপারস্টার নন। কিন্তু তিনি যে একজন জাত অভিনেতা সেটার প্রমাণ তিনি তার একাধিক সিনেমায় জানান দিয়েছেন। বিশেষ করে আধুনিক কাল্ট ক্লাসিক শিল্প বা সিনেমা বলতে আমরা যা বুঝি তা শহীদ কাপুরের ক্যারিয়ারে রয়েছে। ২০০৩ সালে ‘Ishq vishk’ সিনেমার মাধ্যমে যাত্রা শুরু তারপর ২০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে একাধিক ফ্লপ/ডিজাস্টার সিনেমা উপহার দেওয়া এই স্টার অনেক ফ্যান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।

এসবের অর্থ দাঁড়ায় ঐ সিনেমাগুলো ভালো ছিলো, ঐ সিনেমাগুলোর গল্প ভালো ছিলো কিন্তু তথাকথিত বলিউড ইন্ডাস্ট্রির আশীর্বাদ পায় নাই, বলিউডের নোংরা ইন্টার-পলিটিক্স তাঁকে সামনে আসতে দেয় নাই। একজন শহীদ কাপুরের ফ্যান হিসেবে আমি তার সিনেমার গল্পের প্রতি আমার নিরপেক্ষ দৃষ্টিপাত করা হয়তো সম্ভব নয়। কিন্তু এই প্রবন্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমি চেষ্টা করবো নিরপেক্ষ থাকার, নিরপেক্ষ শব্দ ব্যবহার করবার।

১. তালিকার প্রথমে থাকছে ১০ নভেম্বর ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘Vivah (বিবাহ)’ সিনেমা

এই সিনেমায় শহীদ কাপুরের বিপরীতে অভিনয় করেছেন অমৃতা রাও। এছাড়াও অভিনয়ে ছিলেন অনুপম খের, রজনীশ রায়, অরুণা ইরাণী, মোহনলাল, শিবানী কাপুর প্রমূখ। এই সিনেমার গল্পে বিশেষ কোন জটিলতা ছিলো না। খুবই সহজবোধ্য ও সরল গল্প। কিন্তু শেষাংশের দৃশ্য অনেকের চোখে জল এনে দিয়েছে। বিশেষ করে প্রেম ও বিয়ের মাধ্যমে শেষ হওয়া এই গল্পে সম্পর্কের প্রতি আমাদের মূল্যবোধ ও মূল্যায়ন কে সুন্দভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বক্স অফিসে হিট ছিলো একইসাথে মানুষের মনেও সিনেমাটি এখন পর্যন্ত স্থান করে নিয়ে আছে।

২. তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রাখছি ২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জব উই মেট (Jab We Met)’ সিনেমা

আধুনিক এই কাল্ট ক্লাসিক সিনেমা পরিচালনা করেছেন ইমতিয়াজ আলী এবং প্রযোজনা করেছেন ধিলিন মেহতা। এই সিনেমায় শহীদ কাপুরের বিপরীতে ছিলেন কারিনা কাপুর। এই সিনেমা মুক্তির পর থেকেই এটি আধুনিক কাল্ট ক্লাসিক সিনেমার সিল পেয়ে যায়।

সে সময়ে বক্স অফিসে ঝড় তোলা এই সিনেমা আজও দর্শকদের কাছে অনেক প্রাসঙ্গিক। বিশেষ করে আদিত্য কাশ্যপ এবং গীত ঢিল্লন চরিত্র আজও আমাদের ভাবায়, নস্টালজিয়ায় নিয়ে যায় এবং পুরো গল্প আমাদের জীবনের সাথে এত বেশি সম্পর্কিত যে, চাইলেও এড়িয়ে যাওয়া যায় না।

গল্পটি লিখেছিলেন পরিচালক ইমতিয়াজ আলী সাহেব নিজেই। এই পরিচালকের ব্যাপারে একটি কথা প্রচলিত আছে, “উনি (ইমতিয়াল আলী) সময়ের অনেক সামনে গিয়ে ভাবেন (বাংলা ভাবার্থ)।” ইমতিয়াজ আলীর জীবনদর্শন সম্পর্কে আমি তেমন কিছুই জানিনা কিন্তু ‘Tamasha (তামাশা)’ সিনেমা মুক্তির পর বিষয়টি সম্পর্কে সমালোচকদের থেকেও তিনি প্রশংসা পান। যদিও এই সিনেমাটি (Tamasha) বক্স অফিসে ফ্লপ ছিলো।

৩. তালিকায় তৃতীয় স্থানে রাখছি ২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘Pathshala (পাঠশালা)’ সিনেমা

এই সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন মিলিন্দ উকে এবং প্রযোজনা করেছেন আদিত্য চোপড়া। অভিনয়ে ছিলেন, শাহীদ কাপুর, আয়েশা টাকিয়া, নানা পাটেকর, সুশান্ত সিং প্রমূখ। এই সিনেমায় শহীদ কাপুরকে দেখা যায় এক স্কুলে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে। এই ফ্যামিলি ড্রামা ঘরানার সিনেমায় দেখা যায়, একটি স্কুল নানান রকম সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে ভয়ংকর রাজনীতি আছে।

শিক্ষা ও ব্যবসা এই প্রথমবার আমার চোখে পড়ে, বিষয়টি স্পষ্ট হয়। কারণ ছোটবেলায় ভাবতাম আমার শিক্ষকেরা চাইলে সবই করতে পারেন। প্রধান শিক্ষক চাইলে তো সিলেবাস উল্টে রাখতে পারেন, গ্রীষ্মের ছুটি ছ’মাস করতেও পারেন। কিন্তু আমি বহুত ভুল ছিলাম। এই গল্পের ভিত্তি এত শক্ত যে, আজও যখন কোন স্কুলে যাবেন তখন দেখবেন কমিটি নামক এক বিশেষ মূর্খ লোকজনের সমাবেশ। তারা স্কুলের মত প্রতিষ্ঠানকেও ব্যবসায় পরিণত করতে চায়।

এখানে নানা পাটেকর স্কুল প্রধান হিসেবে ভয়ানক ভালো অভিনয় করেছেন। আর আয়েশা টাকিয়া রোমান্টিক দৃশ্যের জন্য যথেষ্ট ভালো ছিলো। কিন্তু আন্ডাররেটেড এবং বক্স অফিসে ব্যর্থ এই সিনেমা আজও অনেকের মনে জায়গা করে নিয়ে আছে। এই সিনেমার “Aye Khuda” গানটি এখনো আপনি শোনেননি এমন হতেই পারে না।

৪. তালিকায় চতুর্থ স্থানে রাখছি ২০০৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দিল মাঙ্গে মোর (Dil Maange More)’

এই নাম দেখে মনে হতে পারে এটা কীভাবে আধুনিক কাল্ট ক্লাসিক! হ্যাঁ, আমার মতে এটি একটি আধুনিক কাল্ট ক্লাসিক সিনেমা। কারণ আমরা জীবনে যত সময় আমাদের শিক্ষার জন্য ব্যয় করি, ক্যারিয়ারের জন্য ব্যয় করি তার অর্ধেক বা এক তৃতীয়াংশ সময় কি আমরা আমাদের জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গীনি নিয়ে ভাবি? বা এই ভাবনায় সময় ব্যয় করি? নিশ্চয় ভাবি না, সময় ব্যয় করি না। এসব তো ভাই সময় নষ্ট, দরকারও নাই।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু জীবনে জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনীর গুরুত্ব ক্যারিয়ার বা শিক্ষাগত যোগ্যতার বা টাকা রোজগার করার দক্ষতার চেয়ে কোন অংশে কম? ভাবুন। এরপরে বলিউডে এই ধরণের সিনেমা আমি তো আর দেখি নাই। এই সিনেমা পরিচালকা করেছেন অনন্ত মহাদেবন। অভিনয়ে ছিলেন, শহীদ কাপুর, আয়েশা টাকিয়া, তুলিপ জোশি, সোহা আলি খান (তার চলচ্চিত্র অভিষেক), গুলশান গ্রোভার, জারিনা ওয়াহাব প্রমূখ।

৫. তালিকার পঞ্চম স্থানে রাখছি ১৪ আগষ্ট ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘কামিনে (Kaminey: The Scoundrels)’ সিনেমা

এই সিনেমা ২০০৯ সালে বছরের সেরা সিনেমা ছিলো। বক্স অফিসে হিট করা এই সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন বিশাল ভরদ্বাজ। অভিনয়ে ছিলেন শাহিদ কাপুর (দ্বৈত ভূমিকায়), প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, অমোল গুপ্তে প্রমূখ। এই সিনেমা আধুনিক কাল্ট ক্লাসিক জাস্টিফাই করার প্রয়োজন নাই কারণ ইতিমধ্যেই সিনেমা সমালোচকের মতে এটি ছিলো ভারতীয় সিনেমার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।

মনে করা হয়, এই সিনেমার যে ডার্ক থিম ব্যবহার করা হয়েছে এবং চিত্রনাট্য এবং বাকগ্রাউন্ড মিউজিকে যে টেনশন জারি রাখা হয়েছে তা তখন অবধি বলিউড/হিন্দি সিনেমায় উপস্থিত ছিলো না। আরো একটি ভালো দিক হচ্ছে, এই সিনেমার সংলাপ ও চরিত্র কালজীয় সিনেমা ‘Pulp Fiction (1994)’ এর সাথে মিল পাওয়া যায়। পরিচালক ছিলেন কোয়েন্টিন টারান্টিনো।

যদিও এই সিনেমায় শাহীদ কাপুরের দ্বৈত চরিত্র একটু চোখে লাগে কিন্তু সিনেমাটি এখনও প্রাসঙ্গিক। আর পরিচালক যখন বিশাল ভরদ্বাজ তখন একটু যত্ন সহকারে দেখাও জরুরী।

মেহেদি হাসান

I'm MD Mehedi Hasan, also known by my pen name Mr. Bikel. I'm the admin of the site Ovizatri - News & Magazine. I am a versatile individual with a professional life that spans various fields. I work as a writer, actor, social worker, radio jockey, web developer, web designer, editor, presenter, blood donor, audio and video editor, photo editor, YouTuber, and drama director. I am also a developer and app developer at Microsoft.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button