শহীদ কাপুর (Shahid Kapoor) এর আধুনিক কাল্ট ক্লাসিক: ৫টি অনন্য সিনেমা (শেষ পর্ব)
শহীদ কাপুর (Shahid Kapoor) এর আধুনিক কাল্ট ক্লাসিক সিনেমা নিয়ে দ্বিতীয় পর্ব। আশা করি প্রথম পর্ব আপনাদের ভালো লেগেছে। দ্বিতীয় পর্বে শহীদ কাপুরের বর্তমান সময় পর্যন্ত কাজ অনুযায়ী আমি চেষ্টা করবো বেশ কয়েকটি সিনেমা সম্পর্কে জানাতে।
সময়ের সাথে সাথে এই অভিনেতা নিজেকে আরো দক্ষ অভিনেতায় পরিণত করেছেন। বিশেষ করে ‘চকোলেট বয়’ থেকে নিজের নাম হটাতে পেরেছেন। তাঁর মতে, “একজন অভিনেতার জীবনে একাধিক ভূমিকায় অংশগ্রহণ করার মধ্যেই সার্থকতা আছে, মানুষ আমাকে ‘চকোলেট বয়’ ভালোবেসে বলে কিন্তু আমি চাইতাম এই সংক্ষিপ্ত ভূমিকা থেকে বের হতে (বাংলা ভাবার্থ)।”
১. আজকের তালিকায় প্রথম স্থানে থাকছে ২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘হায়দার (Haider)’ সিনেমা
এই সিনেমা বিশাল ভরদ্বাজের পরিচালনায় নির্মিত এবং উইলিয়াম শেক্সপিয়রের বিখ্যাত ট্র্যাজেডি ‘হ্যামলেট (Hamlet)’ নাটক এবং কাশ্মীরি সাংবাদিক বাশারত পীরের স্মৃতিকথা ‘Curfewed Night’ অবলম্বনে তৈরি। সিনেমাটি কাশ্মীরের রাজনৈতিক নৈরাজ্য এবং তার ট্র্যাজেডি নিয়ে নির্মিত। শহীদ কাপুর হায়দারের চরিত্রে এবং টাবু হায়দারের মা গাজালার চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যার জন্য তারা ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছেন। এই সিনেমাটি কাশ্মীরের সংঘাত এবং সৌন্দর্য উভয়কেই তুলে ধরেছে।
এই সিনেমা শহীদ কাপুরের ক্যারিয়ারে আরো একটি আধুনিক কাল্ট ক্লাসিক সিনেমা। এই সিনেমায় শহীদ কাপুরের অভিনয় ছিলো দুর্দান্ত। একাধিক স্বগোতক্তি এবং নিজেকে প্রকাশের ভঙ্গি শহীদ কাপুরকে অভিনয় জগতে এক অনন্য জায়গায় নিয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, এ পর্যন্ত শেক্সপিয়রের নাটকের এত ভালো ভারতীয় সংযোজন বলিউড/হিন্দি সিনেমায় নির্মিত হয় নাই।
২. তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকছে ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘উড়তা পাঞ্জাব (Udta Punjab)’
এই সিনেমা মাদকাসক্ত একজন রকস্টারের ভূমিকায় শহীদ কাপুরকে দেখা যায়; নাম ‘Tommy Singh’। অভিষেক চৌবে পরিচালিত এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন, শহীদ কাপুর, আলিয়া ভাট, কারিনা কাপুর খান, দিলজিৎ দোসাঞ্ঝ প্রমূখ। সিনেমাটি প্রযোজনা করেছেন, বিকাস বহল, অনুরাগ কাশ্যপ, মাধু মান্টেনা, বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানি, শোভা কাপুর।
‘উড়তা পাঞ্জাব (Udta Punjab)’ সিনেমা পাঞ্জাবের যুব সমাজের মধ্যে মাদকাসক্তির ভয়াবহ প্রভাব তুলে ধরে। চলচ্চিত্রটি রাজনৈতিক দুর্নীতি, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এবং মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে তাদের যোগসাজশের সমালোচনাও করে।
কিন্তু এখানেও শহীদ কাপুরের ক্যারিশমাটিক অভিনয় সত্যিই একই সাথে হাসায় আবার মনটাও খারাপ করে দেয়। খুবই অদ্ভুত একটি চরিত্র এবং আমার বিশ্বাস এই সিনেমায় অভিনয় করা শহীদ কাপুরের জন্য মোটেই সহজ ছিলো না। ঠিক যেমন করে, হায়দার সিনেমায় শহীদ কাপুরের আইকনিক মনোলগ (স্বগতোক্তি)।
একই সাথে উপরোক্ত এই দুই সিনেমা ‘হায়দার (Haider)’ এবং ‘উড়তা পাঞ্জাব (Udta Punjab)’ বহু সমালোচিত সিনেমা হলেও আধুনিক কাল্ট ক্লাসিক সিনেমায় স্থান করে নিয়েছে। বক্স অফিসে হিট করলেও এই দুই সিনেমা মুক্তির পূর্বে সেন্সরে আটকে ছিলো। বিশেষ করে উড়তা পাঞ্জাব সিনেমা নিয়ে পাঞ্জাবের যুব সমাজের নেতিবাচক দিক প্রদর্শন করা হয়েছে বলে আপত্তি ওঠে।
৩. তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকছে ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘পদ্মাবতী’ পরবর্তীতে ‘পদ্মাবত (Padmaavat)’ সিনেমা
এই সিনেমা পরিচালনা করেছেন সঞ্জয় লীলা বনশালী এবং প্রযোজনা করেছেন Bhushan Kumar, Sandeep Singh Cheema, Sanjay Leela Bhansali, Ajit Andhare।
এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন,
- Deepika Padukone – Rani Padmavati
- Ranveer Singh – Sultan Alauddin Khilji
- Shahid Kapoor – Maharawal Ratan Singh
- Aditi Rao Hydari – Mehrunissa
- Siddharth Chandekar – Raghav Dev
- Manoj Bajpayee – Badruddin Jauhar
- Swanand Kirkire – Khilji’s Spy
- Avtar Singh – Guru Jalaluddin
এই সিনেমা জুড়ে সেসময় ভারতীয় সমাজে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে, খিলজির চরিত্র বেশ শক্তভাবে প্রকাশ করা হয়েছে এবং রাণী পদ্মাবতীর চরিত্রে কলঙ্ক টানা হয়েছে। আমরা যারা শহীদ কাপুরের ফ্যান তারা জানতাম না যে, শহীদ কাপুর এই সিনেমার একটি গুরুতর চরিত্রে আছেন। শহীদ কাপুর সিনেমা ‘পদ্মাবত’ এ মহারাওয়াল রতন সিং চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই চরিত্রটি ছিল চিতোরের রাজা এবং রাণী পদ্মিনীর স্বামীর ভূমিকা। সিনেমাটি মালিক মুহম্মদ জায়সী রচিত পদ্মাবত মহাকাব্যের উপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা হয়।
‘পদ্মাবত’ সিনেমাটি একটি ঐতিহাসিক সংঘর্ষের উপর ভিত্তি করে নির্মিত। এই সিনেমাটি মালিক মুহম্মদ জায়সীর রচিত পদ্মাবত মহাকাব্যের উপর ভিত্তি করে নির্মিত, যেখানে চিতোরের রাজপুত রাণী পদ্মাবতীর কাহিনী বর্ণিত হয়েছে, যিনি মুসলিম সম্রাট আলাউদ্দিন খিলজির আক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচাতে জওহর ব্রত (আত্মবলিদান) দেন।
তবে, ইতিহাসবিদরা বলেন যে, পদ্মাবতী একটি কাল্পনিক চরিত্র এবং খিলজির চিতোর রাজ্য অভিযানের যে ঐতিহাসিক তথ্য রয়েছে, তা জায়সির কাব্য লেখা হয়েছে তার দু’শ বছর পর। সিনেমাটি নিয়ে বিতর্ক এবং বিক্ষোভও হয়েছে, কারণ কিছু কট্টর হিন্দু দল এবং রাজপুত গোত্রের লোকজন এই সিনেমার কিছু দৃশ্য নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। কিন্তু এত কিছু ছাপিয়ে পদ্মাবতী বা পদ্মাবত সিনেমা বক্স অফিসে ঝড় তুলেছিলো এবং এই সিনেমাও আধুনিক কাল্ট ক্লাসিক সিনেমায় রুপান্তর হতে দেখা যায়।
৪. তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া আলোচিত ও সমালোচিত ‘কবির সিং (Kabir Singh)’ সিনেমা
এই সিনেমা পরিচালনা করেছেন সন্দীপ ভাঙ্গা এবং প্রযোজনা করেছেন, সিনেওয়ানস্টুডিওজ ও টি-সিরিজ।
বলিউডের এই রিমেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন,
- শাহিদ কাপুর – কবির সিং
- কিয়ারা আদভানি – প্রীতি সিক্কা
- সোহম মজুমদার – শিব
- নিকিতা দত্ত – অমিত
- কুনাল ঠাকুর – কামাল
- স্বাতী শেঠ – বিদ্যা
- আনুশা সম্পথ – কীর্তি
এই সিনেমা কে নারীবিদ্বেষী সিনেমা আখ্যা দেওয়া হয়। আর এজন্যই এই সিনেমা একাধিক পুরষ্কার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, শিল্প সবসময় সমাজের বাঁধাধরা নিয়ম-নৈতিকতায় মেনে চলবে এমন নাও হতে পারে। যে কোন শিল্পের তার অভিব্যাক্তি প্রকাশ করার স্বাধীনতা না থাকলে শিল্প ঠিক শিল্প হয়ে ওঠে না।
এছাড়াও এই সিনেমা আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের বহু অংশে মিল পাওয়া যায়। আর শহীদ কাপুর এই প্রথমবার নিজেকে ‘Angry Young Men’ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। বক্স অফিস রেকর্ড ব্রেক করা এই সিনেমা শহীদ কাপুরের ডুবন্ত ক্যারিয়ারে আলো আনে। একই সাথে এই সিনেমা আধুনিক কাল্ট ক্লাসিক একটি সিনেমায় রুপান্তরিত হয়। কারণ আমাদের ‘Lived Memory’ -তে এই গল্পের চেয়েও ভয়ানক অনেক কিছুই আমরা দেখেছি।
৫. আজকের শেষ বা পঞ্চম স্থানে রাখছি ২০২৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘Teri Baaton Mein Aisa Uljha Jiya’ সিনেমা
‘Teri Baaton Mein Aisa Uljha Jiya’ সিনেমা হলো একটি আধুনিক কাল্ট ক্লাসিক সিনেমা যা বিজ্ঞান কল্পনা ও রোমান্টিক কমেডি সিনেমা হিসেবে পরিচিত। এই সিনেমাটি আধুনিক কাল্ট ক্লাসিক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, কারণ এটি একটি অনন্য ও উদ্ভাবনী গল্প বলে, যেখানে একজন রোবটিক্স ইঞ্জিনিয়ার আর্যান আগ্নিহোত্রি তার পারফেক্ট জীবনসঙ্গী খুঁজে পান না এবং একটি অফিসিয়াল অ্যাসাইনমেন্টের সময় যুক্তরাষ্ট্রে একটি মেয়ে, সিফরা, এর সাথে দেখা করেন এবং তার প্রেমে পড়েন, পরে জানতে পারেন যে এটি একটি অসম্ভব প্রেমের গল্প।
এই সিনেমার গল্প এবং চরিত্রগুলি সমসাময়িক সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রশ্ন তোলে, যেমন প্রযুক্তি এবং মানবিক সম্পর্কের মধ্যে সম্পর্ক, এবং এটি কীভাবে আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে। এই সিনেমাটি দর্শকদের কাছে একটি অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে, যা তাদের চিন্তাভাবনা এবং আবেগের সাথে যুক্ত করে।
এই সিনেমাটির অনন্য গল্প এবং প্রযুক্তির সাথে মানবিক সম্পর্কের উপস্থাপনা এটিকে একটি আধুনিক কাল্ট ক্লাসিক হিসেবে পরিচিতি দেয়। তবে আমার মতে এই সিনেমা আধুনিক কাল্ট ক্লাসিক সিনেমা বিবেচনা হতে পারে এজন্য যে, এই সিনেমা আমাদের মানে মানুষ এবং এআই (AI) এর সাথে সম্পর্ক কেমন হতে যাচ্ছে? এআই কি মানুষের অস্তিত্ব সংকটের কারণ হতে পারে? এআই কি প্রেমেও পড়তে পারে? যেমন ‘সিফরা’; ও কিন্তু পারফেক্ট, সব জানে।
‘Teri Baaton Mein Aisa Uljha Jiya’ সিনেমাটির পরিচালনা করেছেন অমিত জোশি এবং আরাধনা সাহ, এবং প্রযোজনা করেছেন ম্যাডক ফিল্মস এবং জিও স্টুডিওস।
অভিনয়ে রয়েছেন:
- শাহিদ কাপুর – অ্যারিয়ান অগ্নিহোত্রি
-
কৃতি স্যানন – সিফরা (সুপার ইন্টেলিজেন্ট ফিমেল রোবট অটোমেশন)
-
ধর্মেন্দ্র – জয় সিং অগ্নিহোত্রি
বিজ্ঞাপন -
ডিম্পল কাপাডিয়া – উর্মিলা বেদি
-
রাকেশ বেদি – অ্যারিয়ানের বাবা
-
অনুভা ফতেপুরিয়া – শর্মিলা অগ্নিহোত্রি
-
রাজেশ কুমার – গুড্ডু মামা
-
আশিষ ভার্মা – মন্টি
বিজ্ঞাপন -
গ্রুশা কাপুর – বাবলি বুয়া
-
রাশুল ট্যান্ডন – পাপ্পু
-
বৃজ ভূষণ শুক্লা – গোল্ডি
-
মাহি জৈন – টিম টিম
-
জানভি কাপুর – রিয়া
বিজ্ঞাপন -
শিবানী সোপুরি – পাম্মি
-
স্নেহাল শিদাম – মাঙ্গলা এবং আরও অনেকে
সিনেমাটির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন তনিষ্ক বাগচি, মিত্রাজ এবং সচিন-জিগর। সিনেমাটির চিত্রগ্রহণ করেছেন লক্ষ্মণ উতেকর এবং সম্পাদনা করেছেন মনীষ প্রধান। এআই (Artificial Intelligent) নিয়ে বলিউডে এটাই প্রথম সিনেমা। এর পূর্বে এআই নিয়ে বলিউডে আমার চোখে কোন কাজ পড়ে নাই, পড়লেও সেটা আংশিক, পুরো সিনেমা নয়।
আরো দায়িত্ব নিয়ে ২০১৬ সালে লিখেছিলাম শহীদ কাপুর একজন ভালো ড্যান্সার। এই সিনেমার প্রায় সব গানেই তার আইকনিক স্টেপ সেই যুক্তির হয়তো আজ অনেকটা প্রমাণ হয়ে গেছে।
প্লাস ওয়ান
‘কীসমত কানেকশন (Kismat Konnection)’ সিনেমাটির পরিচালক ছিলেন আজিজ মির্জা, প্রযোজক ছিলেন রমেশ তুরানি এবং কুমার এস. তুরানি।
এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন:
- শহীদ কাপুর – রাজ মালহোত্রা
-
বিদ্যা বালান – প্রিয়া
-
জুহি চাওলা – হাসিনা বানো জান
-
ওম পুরি – সনজীভ গিল
-
বোমান ঈরানী – বাতরা
-
শাহরুখ খান – কথক (কন্ঠ) এবং আরও অনেকে
সিনেমাটির সুরকার ছিলেন প্রিতম এবং সাজিদ-ওয়াজিদ, চিত্রগ্রাহক ছিলেন বিনদ প্রধান এবং সম্পাদক ছিলেন অমিতাভ শুক্লা। সিনেমাটি ২০০৮ সালে মুক্তি পেয়েছিলো। জীবনে এরকম হয়তো হয়, হুট করে কারো সাথে দেখা হওয়ার পর আমাদের সাথে আজব-আজব বিষয় ঘটতে থাকে। নিয়তির দর্শন বলুন বা নিয়তির খেলা বলুন কিন্তু অসামান্য একটি সিনেমা।
আর এখন পর্যন্ত ‘Farzi’ ওয়েবসিরিজ যদি না দেখে থাকেন তাহলে একবার দেখে নিয়েন। সময় নষ্ট হবে না, কথা দিলাম।
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.