সিলেটের চা বাগান: প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের মেলবন্ধন
সবুজের সমারোহে হারিয়ে যান সিলেটের চা বাগানে
চারপাশে সবুজ আর সবুজ আর উপরে নীল আকাশ। দেখে মনে হয় যেন নীল আকাশের নিচে সবুজ গালিচা। প্রকৃতির কি অপরূপ সৌন্দর্য যা নিজের চোখে না দেখলেই নয়। উঁচু নিচু অসংখ্য টিলা আছে এবং এই টিলাঘেরা সমতলে হয় সবুজের চাষাবাদ। মাঝে মাঝে রয়েছে টিলা বেষ্টিত ছোট ছোট জনপদ।
আকাবাঁকা মেঠোপথ ছুটে গেছে পাহাড়ের কিনার ঘেঁষে। নেই কোন যান্ত্রিক দূষণ। কোথাও আবার ছলছল শব্দে ধাবমান পথে ছুটে চলছে রূপালী ঝর্ণাধারা। প্রকৃতির সকল সৌন্দর্যের মহামিলনে এ যেন এক স্বপ্নের জগত। এমনই সীমাহীন সৌন্দর্যে একাকার হয়ে আছে স্বপ্নের জগতগুলো অর্থাৎ সিলেটের চা বাগানগুলো।
সিলেটের চা বাগানের খ্যাতি
সারা বিশ্বজুড়ে সিলেটের চা বাগানের খ্যাতি রয়েছে। বাংলাদেশের মোট ১৬৩টি চা বাগান রয়েছে। এদের মধ্যে বৃহত্তর সিলেটে রয়েছে ১৩৫টি। অর্থাৎ দেশের মোট চায়ের ৯০ শতাংশই উৎপন্ন হয় সিলেটে। এজন্য সিলেটকে বলা হয় দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ।
আর বৃহত্তর সিলেটের মধ্যে সিলেট জেলার জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সিলেট সদর উপজেলায় রয়েছে বেশ কয়েকটি চা বাগান। এর মধ্যে মালনীছড়া চা বাগান উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও আরও অন্যান্য চা বাগানগুলোও বেশ জনপ্রিয়। এগুলো দেখতেও পর্যটকরা আসে বিভিন্ন সময়ে।
প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য আকর্ষণ
প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে এ এক অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতীক। যা বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ এবং অন্য এক ধরণের ভালোলাগার ধারক হয়ে আছে সিলেটের চা বাগান। তাই তো সবাই ছুটে যায় বিভিন্ন ছুটির অবসরে কিংবা বৈকালিক বিনোদনের তৃষ্ণা মেটাতে। চা বাগানের সবুজ অরণ্যে। সবুজের ভেতর লুকোচুরি, হৈ হুল্লোড় আর আনন্দের অবগাহন চলে সারা বিকেল ধরে।
মালনীছড়া চা বাগান
বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের বৃহত্তম এবং সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত চা বাগান রয়েছে সিলেট সদর উপজেলায়। এই চা বাগানের নাম, মালনীছড়া চা বাগান। ১৮৪৯ সালে ১৫০০ একর জায়গা জুড়ে ইংরেজ সাহেব হার্ডসনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় উপমহাদেশের প্রথম চা বাগান মালনীছড়া।
বেসরকারি তত্ত্বাবধানে বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে বাগানটি। মালনীছড়া চা বাগান হলো ভ্রমণবিলাসী মানুষের কাছে আনন্দ ভ্রমণ কিংবা উচ্ছ্বল সময় কাটানোর প্রথম পছন্দের স্থান। সিলেট শহরের একেবারেই অদূরে হওয়ায় পর্যটকরা চা বাগান দেখতে প্রথমেই ছুটে যান মালনীছড়ায়।
মালনীছড়া চা বাগানের প্রবেশদ্বার রয়েছে বেশ কয়েকটি। আপনি আপনার সুবিধা মতো যে কোন একটি পথ দিয়েই চা বাগান দর্শনের কাজ শুরু করতে পারেন। তবে কোনো রকম যেন ঝামেলা না হয় তার জন্য বাগানে প্রবেশের আগে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়াই বাঞ্চনীয়। তারপর ঘুরে দেখেন বাগানের এপাশ থেকে ওপাশ অর্থাৎ সম্পূর্ণ বাগানটি।
বর্তমানে এখানে চা-এর পাশাপাশি কমলা এবং রাবারের চাষ করা হয়। এছাড়া বাগানের বাংলোও ঘুরে দেখে আসতে পারবেন। আর মালনীছড়ার পাশেই রয়েছে আলী বাহার চা বাগান। তাই চাইলে সেখানেও ঘুরে আসতে পারেন।
কীভাবে যাবেন?
সিলেট শহরের যেকোন প্রান্ত থেকে সহজেই রিকশা, অটোরিকশা কিংবা সিএনজি ভাড়া করে মালনীছড়া চা বাগানে যেতে পারবেন। আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সিএনজিতে চড়ে যেতে ১০ মিনিট এবং রিকশায় ২৫ মিনিট সময় লাগে।
ঢাকা থেকে সিলেট
ঢাকা থেকে সিলেটে যেতে এসি বাসগুলোর জনপ্রতি ভাড়া সাধারণত ৮০০ থেকে ১১০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। এছাড়াও ঢাকা থেকে সিলেট যেতে নন এসি বাসগুলোর জনপ্রতি ভাড়া ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
এছাড়া আপনি ঢাকা থেকে সিলেট ট্রেনেও যেতে পারেন। আর ঢাকা থেকে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে ও সাচ্ছন্দে সিলেট যেতে চাইলে আকাশ পথে গমন করাটা সবচেয়ে ভালো উপায়।
কোথায় খাবেন?
খাবারের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই এই মালনীছড়া চা বাগান এলাকায়। তবে জিন্দাবাজার এলাকায় উল্লেখযোগ্য পানশী, পাঁচভাই, ভোজনবাড়ি, প্রীতিরাজ, স্পাইসি এবং রয়েলশেফ রেস্টুরেন্ট ছাড়াও বেশকিছু রেস্তোরা রয়েছে। এছাড়া সাতকরা এবং আথনী পোলাও সিলেটের তুমুল জনপ্রিয়। চাইলে এগুলোও খেয়ে দেখতে পারেন।
কোথায় থাকবেন?
মালনীছড়া চা বাগান এলাকায় একটি সমস্যা হলো এখানে কোনো আবাসিক হোটেল নেই। ভালো মানের হোটেলে থাকতে চাইলে চলে যেতে হবে হযরত শাহজালাল (রঃ) এর দরগা এলাকায়। সেখানে বিভিন্ন ধরনের এসি এবং নন-এসি রুম পাবেন ৩০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে।
সিলেটের আবাসিক হোটেলের মধ্যে রয়েছে – হোটেল রোজভিউ ইন্টারন্যাশনাল, নাজিমগড় রিসোর্ট, হোটেল ফরচুন গার্ডেন, হোটেল ডালাস, হোটেল সুপ্রিম উল্লেখযোগ্য।
সিলেটের অন্যান্য চা বাগান
মালনীছড়া ছাড়াও সিলেটে আরও অনেক চা বাগান রয়েছে যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লাক্কাতুরা চা বাগান, ফিনলে চা বাগান, এবং আলী বাহার চা বাগান। প্রতিটি চা বাগানই তার নিজস্ব সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
লাক্কাতুরা চা বাগান
লাক্কাতুরা চা বাগান সিলেট শহরের কাছেই অবস্থিত। এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান যেখানে আপনি চা বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। এখানে চা বাগানের পাশাপাশি একটি চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানাও রয়েছে যা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত।
ফিনলে চা বাগান
ফিনলে চা বাগান সিলেটের অন্যতম বৃহত্তম চা বাগান। এটি তার বিশাল এলাকা এবং চা উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এখানে আপনি চা বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি চা প্রক্রিয়াকরণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারবেন।
আলী বাহার চা বাগান
আলী বাহার চা বাগান মালনীছড়া চা বাগানের পাশেই অবস্থিত। এটি একটি ছোট কিন্তু সুন্দর চা বাগান যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এখানে আপনি চা বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি স্থানীয় সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
পরিশেষ
সিলেটের চা বাগানগুলো প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতীক। এখানে আপনি প্রকৃতির সান্নিধ্যে কিছু সময় কাটিয়ে মানসিক প্রশান্তি লাভ করতে পারেন। তাই, ছুটির দিনে বা অবসর সময়ে সিলেটের চা বাগানগুলো ঘুরে আসতে পারেন এবং উপভোগ করতে পারেন প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য।
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.