বেকারত্বের করুণ চিত্র: যুবকদের সংগ্রাম ও সমাজের বাস্তবতা
স্বাধীনতার পরবর্তী প্রজন্মের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার আলো
নিজে আমি বয়সের এমন এক প্রান্তে পৌঁছে গেছি মনে হয় সেটা বৃদ্ধাবস্থার শৈশবকাল। আমার জীবনের রঙিন যৌবন যখন সদ্যজাত, সেই রঙিন বছরগুলিতে যেমন দেখেছি, এখনো তার এমন কিছু হেরফের হয়নি মনে হয়। কোনো পরিবর্তন দৃষ্টিগোচর হয় না। ব্রিটিশ-ভারতের আমি এক প্রাচীন কন্যা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে চলছে। তখনকার মানুষ আমি।
যুবকদের সংগ্রাম
যখন থেকে জ্ঞানচক্ষু ফুটেছে, দেখেছি তখনকার যুবকদের। তাদের কি বেকার বলা যায়! তারা তো দেশের স্বাধীনতার প্রতিজ্ঞায় স্বতন্ত্রতা সংগ্রামী হয়ে বন্দুকের গুলির সামনে ঝাঁপিয়ে পড়তো। সব কিছু ত্যাগ করে, কোথায় তাদের শিক্ষাজীবন, কোথায় তাদের ঘর সংসার!
বর্তমানের যুবকগণ
বর্তমানে স্বাধীন দেশের নাগরিক আমরা। সময় পরিবর্তন হয়ে সব কিছুতে স্থিতাবস্থা প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে যে যুবকগণ কর্মজীবনে পোক্ত হয়ে সংসারে ঠাঁই শক্ত করেছে তারা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান। কিন্তু যারা ব্যতিক্রম!
উচ্চশিক্ষার ধারা
আজকের শিক্ষিত, উচ্চশিক্ষিত। কেউ পরবর্তী আরও উচ্চশিক্ষার গতিতে চলতে চাইছে। তারা যেতে চায় দূরের দেশ-বিদেশ। আমি কিন্তু করুণ মনে ভাবি, নিজ গরীব দেশের শিক্ষা সম্পদ আহরণ করে পর ভূমিতে যাচ্ছে আহরিত সম্পদ বিতরণে, সে দেশের নাগরিক হয়ে বাস করতে। এই গরীব স্বদেশী মা কে তারা ও তাদের অভিভাবক বিস্মরণ হয় কিছু পরিমাণ ধন সম্পদের পরিবর্তে।
সমাজের বর্তমান চেতনা
আজ সমাজ চেতনা এমনই যে, কাউকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা পরিত্যাগ করেছে। এটা সঠিক এক মনোভাব যে আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন বাস্তব সত্য এটি। সেই সত্য প্রমাণিত করতে কর্মহীন যুবক অসফল আজ। তারা অসহায়, আশাহত, বেদনাবিধুর।
অভিভাবকদের আশা
তাদের অভিভাবকগণও কেও দোষী করা যায় না। তাঁরা বহু আশা নিয়ে অপেক্ষা করেন ঘরের ছেলে উপযুক্ত একটি কাজের সংস্থান করে যথাযথ আর্থিক উপার্জনে রত হবে।
চাকরির অভাব
আমার খুব মনে হয়, কোনো দেশ বা রাষ্ট্রের জনসংখ্যার তুলনায় কাজ অর্থাৎ পদের সংখ্যা প্রতিশত হিসেবে নগন্য। যারা উপরওয়ালার দয়া বা অনুযোগে চাকরি পেয়ে মা, বাবার মুখে হাসি ফুটিয়েছে তারা তো স্বতন্ত্র, তারা যেন এক উচ্চশ্রেণীর অহংকারী জাতি। তারা টেরিয়ে তাকায় তুলনায় তাদের চেয়ে যারা দুর্বল। যারা কোনো দয়া উপরওয়ালার যাদের দাক্ষিণ্যে একটা চাকরি পেয়ে যাওয়া!
রাষ্ট্রের দায়িত্ব
এমতাবস্থায় তারা সেই সৌভাগ্যবান গোনাগুনতি ছাড়া কোথায় যাবে! কার দুয়ারে মাথা কুটবে! কিভাবে অগ্রসর হবে! এই সময় মনে পড়ে রাষ্ট্র বা রাষ্ট্র প্রধানের কথা। রাষ্ট্র ব্যবস্থার কি মনে হয় না এই বিপুল বেকার সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হলে দেশ কি ভাবে উন্নতির পথে অগ্রসর হবে!
সরকারি চাকরির চাহিদা
আর একটি সমস্যা। আর একটি চিন্তন। যা পূর্বে এতোটা নজরে পড়তো না, অন্ততঃ আমার দৃষ্টিতে। এক সমষ্টিগত চাহিদা, সরকারি চাকরি চাই। সেই যোগ্যতা সম্পন্ন হতে বছরের পর বছর ব্যয় করা।
বয়সের প্রভাব
বয়স তো প্রকৃতিগত কারণে থমকে থাকবে না, বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আর এক স্বভাবগত ও বাস্তবসম্মত এক স্পৃহা শরীর ও মনের দুয়ারে সঙ্গে তার অভিভাবকেরও। এক কল্যাণময়ীর আগমনে ঘর হয়ে উঠবে গুছনো এক সুখের সংসার। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় এক সরকারি চাকরি। এই জিনিসের অভাবে ঘরের বধূ হয়ে আসতে চাওয়া কন্যাটি ও তার অভিভাবক পিছিয়ে যায়। এমনকি কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে এই চাহিদা অভাবে কত ব্রেক-আপ প্রেম জুটির। তাই নিয়েও হা-হুতাশের অন্ত নেই। প্রেমিকার কাছে প্রেমিকদের যোগ্যতার মাপকাঠি বেশীর ভাগ হয়ে দাঁড়ায় ঐ সরকারি চাকরি।
প্রেমিক যুগলের সমস্যা
পাঠরত কোনো প্রেমিক যুগল রোমান্স করার অপেক্ষা পরবর্তী পরিকল্পনা করে বৈবাহিক জীবনের চাল, ডাল, আটা, পোশাক, বাড়ির ভাড়া, গাড়ির ভাড়া, সেভিংস এই সব ঐ বেতনে চালানো কতখানি সম্ভব! একি বিধির লিখন!
কর্মহীন যুবকদের সম্মান
মনে হয় যেন এক পরিহাস! এক কর্মহীন যুবক যদি সেল্ফ এপ্লয়েড হয়ে মোটামুটি কোনো কাজে লিপ্ত হয় তাহলে তো প্রভূত সম্মান হানি! আমাদের সমাজের অবক্ষয়, অবমূল্যায়ণ!
পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তানের চাপ
আরও ভাবনা এক পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তানের। তার চাপ ভীষণ, ভয়ংকর! সে নিজে থাকে অসম্ভব চিন্তায় ও তার পরিবারও সেই বড় সন্তানের মুখ চেয়ে অপেক্ষা করে।
রাষ্ট্রের দায়িত্বহীনতা
ভেবে নিন কোনো রাষ্ট্র সরকারের এক নজিরবিহীন ঘটনা। কোনো কর্মহীন যুবক কতখানি হতাশায় ডুবতে হয়, যদি যোগ্য প্রার্থীদের হুট আউট করে পয়সা কড়ির বিনিময়ে, বলা যায় অন্যদের নিকট পদগুলি বিক্রয় হয়েছে। সেই যোগ্য যুবকরা এখন ধর্নায় বসছে! যোগ্যতার বিচার এমনভাবেই হবে! এক সমাজ, রাষ্ট্রের কোনো পট পরিবর্তন!
আশার আলো
এর মাঝে আসুন একটু আশার আলো। এক যুবক তার প্রেমিকা কে ফোন দিচ্ছে –
“চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি সত্যি
কান্নাকাটির হল্লাহাটির সময় গেছে পেরিয়ে
হ্যালো তুমি (বেলা বোস) শুনতে পাচ্ছো কি?
এটা কি 2441139”
আর একজন প্রেমিক বলছে,
“তোমার বাবা কে তুমি বুঝিয়ে বলো
বেকার হলেও ছেলেটি আমি ভালো।”