Disclaimer: The information provided in this article is intended for general knowledge and informational purposes only, and does not constitute medical advice. It is not a substitute for professional medical advice, diagnosis, or treatment. Always seek the advice of your physician or other qualified health provider with any questions you may have regarding a medical condition. Never disregard professional medical advice or delay in seeking it because of something you have read in this article.

UTI (Urinary Tract Infection) অর্থাৎ, মূত্র সম্পর্কিত পথে প্রদাহ। মানুষের শরীরের যেই অঞ্চল গুলো মূত্র বা প্রস্রাব তৈরি হওয়া এবং তৈরি প্রসাব বহিঃনির্গমন হওয়ার সাথে জড়িত সেই অঞ্চল কোনো ভাবে ঐ অঞ্চলের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলে যেই ইনফেকশন বা প্রদাহ সৃষ্টি হয় তাকেই UTI (Urinary Tract Infection) বলা হয়।

এটা এক ধরণের সাধারণ সংক্রমণ যা সাধারণত ত্বক অথবা মলদ্বার থেকে ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীতে প্রবেশের ফলে ঘটে থাকে।

UTI (Urinary Tract Infection) যা মূলত‌ ইউরিনারি সিস্টেম বা মূত্রতন্ত্রের যেকোনো অংশে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। এখন প্রশ্ন হলো ইউরিনারি সিস্টেম বা মূত্রতন্ত্রের মধ্যে কোন কোন অঙ্গ ইনক্লুডেড। ইউরিনারি সিস্টেম বা মূত্রতন্ত্রের মধ্যে রয়েছে কিডনি, মূত্রাশয়, মুত্রথলি ও মূত্রনালী।

সাধারণত পুরুষদের তুলনায় নারীদের ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন বা মূত্র সম্পর্কিত পথে ইনফেকশন বা প্রদাহ বেশি হয়ে থাকে। কেন পুরুষদের তুলনায় নারীদের এই রোগ বেশি হয়ে থাকে সে বিষয়ে নিচে আলোচনা করা হবে।

যদি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ মূত্রনালী থেকে মূত্রাশয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তবে সেক্ষেত্রে বেদনাদায়ক অনুভূতি ও বিরক্তিকর অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে। তবে যদি কোন কারনে সংক্রমণ কিডনিতে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে তা অত্যন্ত গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ডাক্তাররা সাধারণত এন্টিবায়োটিক দিয়ে UTI তথা মূত্রতন্ত্রের ইনফেকশন এর চিকিৎসা করে থাকেন। যদি প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা নেওয়া যায় তবে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে বাঁচা সম্ভব।

মূত্রতন্ত্রে ইনফেকশনের প্রকারভেদ

মূন্ত্র তন্ত্রের ইনফেকশন মূলত মূত্র তন্ত্রের কোন অঙ্গে হয়েছে তার উপর নির্ভর করে আলাদা করা হয়। প্রতিটি আলাদা অঞ্চলে ইনফেকশনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু উপসর্গ থেকে থাকে যার ফলে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন যে কোথায় ইনফেকশনটি হয়েছে। এছাড়া কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেও রোগ নির্ণয় করা হয়।

নিচে মূত্রতন্ত্রে ইনফেকশনের প্রকারভেদ বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. কিডনিতে ইনফেকশন এর লক্ষণ

• পিঠে বা পিঠের পাশে ব্যথা
• মাত্রাতিরিক্ত জ্বর
• ঝাঁকুনি দিয়ে জ্বর আসা এবং প্রচন্ড ঠান্ডা অনুভব
• বমি বমি ভাব
• বমি

২. মূত্রাশয়ে ইনফেকশন এর লক্ষণ

• শ্রোণী বা পেলভিক অঞ্চলে চাপ
• নীচের পেটে অস্বস্তি
• ঘন ঘন, বেদনাদায়ক প্রস্রাব
• প্রস্রাবে রক্ত

৩. মূত্রনালীতে ইনফেকশন এর লক্ষণ

• প্রস্রাবের সাথে জ্বালা
• স্রাব

প্রস্রাবের পথে ইনফেকশনের কারন সমূহ

UTI (Urinary Tract Infection) সাধারণত ঘটে মূত্রনালী দিয়ে ব্যাকটেরিয়া মূত্রথলিতে ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে। মানুষের মতো তন্ত্র সৃষ্টিকর্তা এমনভাবে ডিজাইন করেছেন যেন এখানে ব্যাকটেরিয়া বেশিক্ষণ টিকতে না পারে।

তবুও অনেক সময় এই অঞ্চল ব্যাকটেরিয়ার সাথে ডিফেন্স করতে ব্যর্থ হয়। যার ফলে ব্যাকটেরিয়া বংশ বিস্তারের সুযোগ পেয়ে যায় এবং এই অঞ্চল ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে সংক্রমিত হয়। সবচেয়ে সাধারণ UTI (Urinary Tract Infection) গুলো প্রধানত মহিলাদের মধ্যেই ঘটে যা মূত্রনালী ও মূত্রাশয়কে প্রভাবিত করে।

মূত্রাশয়ের সংক্রমণ সাধারণত Escherichia Coli (E.coli) ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে হয়ে থাকে। ই.কোলাই হল এমন এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া যা সাধারণত গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল (GI) ট্র্যাক্টে পাওয়া যায়। কিন্তু কখনও কখনও অন্য ব্যাকটেরিয়ার দ্বারাও সংক্রমণ হয়।

যৌন সম্পর্কের কারণেও অনেক সময় মূত্রাশয়ে ইনফেকশন হতে পারে এই সংক্রমণ বিকাশের জন্য আপনাকে সেক্সুয়ালি একটিভ থাকতে হবে এমনটা নাও হতে পারে।

মহিলারা সাধারণত তাদের শারীরিক গঠনের কারণে মূত্রথলিতে ইনফেকশনের ঝুঁকিতে থাকেন। তাদের ক্ষেত্রে মূত্রনালী মলদ্বারের কাছাকাছি থাকে। এবং মূত্রণালী খোলা থাকে মূত্রাশয়ের কাছাকাছি। মহিলাদের এই গঠন তাদের মলদ্বারের চারপাশে অবস্থানরত ব্যাকটেরিয়া দের মূত্রনালীতে প্রবেশ এবং মূত্রনালী থেকে মূত্রথলিতে প্রবেশের পথকে সহজ করে দেয়।

মূত্রনালীতে সংক্রমণের ক্ষেত্রে মলদ্বার থেকে মূত্রনালীতে জিআই ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়লে এই ধরনের ইউটিআই ঘটতে পারে। যৌনবাহিত সংক্রমণের কারণেও মূত্রনালীতে সংক্রমণ হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে হারপিস, গনোরিয়া, ক্ল্যামাইডিয়া এবং মাইকোপ্লাজমা। এটি ঘটতে পারে কারণ মহিলাদের মূত্রনালী যোনিপথের কাছাকাছি থাকে।

ঝুঁকির কারণসমূহ

মহিলাদের মধ্যে ইউটিআই একটি সাধারণ ঘটনা। অনেক মহিলা তাদের জীবদ্দশায় একাধিকবার ইউটিআই-এর সম্মুখীন হন। মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট ইউটিআই-এর ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে।

নারীর শারীরিক গঠন: পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মূত্রনালী ছোট হয় যার ফলে মূত্রাশয়ে পৌঁছানোর জন্য ব্যাকটেরিয়ার ভ্রমণের দূরত্ব কম থাকে।

যৌন সম্পর্ক: যৌনভাবে সক্রিয় থাকার ফলে আরও বেশি ইউটিআই হতে পারে। একটি নতুন যৌন সঙ্গীও ইউটিআই এর ঝুঁকি বাড়ায়।

জন্ম নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া: জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য ডায়াফ্রাম ব্যবহার করলে UTI-এর ঝুঁকি বাড়তে পারে। স্পার্মিসাইডাল এজেন্ট ব্যবহার করাও ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

মেনোপজ: মেনোপজের পরে, ইস্ট্রোজেনের সঞ্চালনের হ্রাস মূত্রনালীতে পরিবর্তন ঘটায়। পরিবর্তনগুলি UTI-এর ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

ইউটিআই-এর অন্যান্য ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে

মূত্রনালীর সমস্যা: মূত্রনালীর সমস্যা নিয়ে জন্মানো শিশুদের প্রস্রাব করতে সমস্যা হতে পারে। প্রস্রাব মূত্রনালীতে ব্যাক আপ হতে পারে, যার কারণে ইউটিআই হতে পারে।

মূত্রনালীতে ব্লকেজ। কিডনিতে পাথর বা বর্ধিত প্রস্টেট মূত্রাশয়ে প্রস্রাব আটকে রাখতে পারে। ফলস্বরূপ, ইউটিআই-এর ঝুঁকি বাড়ে। একটি চাপা ইমিউন সিস্টেম। ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করতে পারে এবং এটি UTI-এর ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

ক্যাথেটার ব্যবহার: যারা নিজেরাই প্রস্রাব করতে পারে না তাদের প্রায়শই প্রস্রাব করার জন্য ক্যাথেটার নামে একটি টিউব ব্যবহার করতে হবে। ক্যাথেটার ব্যবহার করলে UTI-এর ঝুঁকি বাড়ে।মূত্রনালীর অস্ত্রোপচার বা আপনার মূত্রনালীর পরীক্ষা যাতে চিকিৎসা যন্ত্র জড়িত থাকে উভয়ই ইউটিআই হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

অবিলম্বে এবং সঠিকভাবে চিকিত্সা করা হলে, নিম্ন মূত্রনালীর সংক্রমণ খুব কমই জটিলতার দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু চিকিত্সা না করা হলে, ইউটিআই গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।

সঠিক চিকিৎসা না নিলে যে সকল জটিলতা দেখা দিতে পারে

• বারবার সংক্রমণ, ছয় মাসের মধ্যে দুইবার বা তার বেশি ইউটিআই অথবা এক বছরের মধ্যে তিনবার বা তার বেশি।
• চিকিৎসা না করা ইউটিআই-এর কারণে কিডনি সংক্রমণ থেকে স্থায়ীভাবে কিডনির ক্ষতি হতে পারে।
• গর্ভাবস্থায় ইউটিআই হলে কম ওজন বা অকাল শিশুর জন্ম দেওয়া।

নিচের পদক্ষেপগুলি UTI-এর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে

• প্রচুর তরল পান করুন, বিশেষ করে পানি। পানি পান করা প্রস্রাব পাতলা করতে সাহায্য করে। এটি প্রায়শই প্রস্রাবের দিকে পরিচালিত করে – সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগে ব্যাকটেরিয়াগুলিকে মূত্রনালী থেকে ফ্লাশ হয়ে যায়।
• ক্র্যানবেরি জুস পান করুন। ক্র্যানবেরি জুস ইউটিআই প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
• সামনে থেকে পিছনে মুছা। প্রস্রাব করার পরে এবং মলত্যাগের পরে এটি করুন। এটি মলদ্বার থেকে যোনি এবং মূত্রনালীতে ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার রোধ করতে সাহায্য করে।
• সহবাসের পরপরই আপনার মূত্রাশয় খালি করুন। এছাড়াও ব্যাকটেরিয়া ফ্লাশ করতে এক গ্লাস পানি পান করুন।
• সম্ভাব্য ক্ষতিকর মেয়েলি পণ্য এড়িয়ে চলুন। যৌনাঙ্গে এগুলি ব্যবহার করলে মূত্রনালীতে জ্বালা হতে পারে। এই পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে ডিওডোরেন্ট স্প্রে, ডুচ এবং পাউডার।
• ডায়াফ্রাম, আনলুব্রিকেটেড কনডম বা স্পার্মিসাইড দিয়ে তৈরি করা কনডম ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে।

সর্বোপরি সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসকের পরামর্শে আপনি পেতে পারেন একটি সুস্থ সুন্দর জীবন।

ছবি: Image by Freepik