আজ আবার বসেছি ভাবতে। মেয়েরা কি পেরেছে স্বাধীন হতে! না কি এখনো দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক! কতদিন হয়ে গেলো রামমোহন, বিদ্যাসাগর এসেছিলেন স্ত্রী স্বাধীনতার পথ প্রদর্শক হয়ে। মেয়েদের স্বাধীনতা নিয়ে এতো কুটকচালি। তবে নেই কেন ‘পুরুষ স্বাধীনতা’ শব্দটি? নেই কেন! তো মনে আসে সে তো পুরুষের জন্মগত অধিকার। মেয়েদের স্বাধীনতা নিতে হয়। তাদের জন্য স্বাধীনতা অর্জনে বস্তু নয়।
পতিদেবতাদের নিয়ে অনেক স্ত্রী আহ্লাদে গদগদ
পতিদেবতাদের নিয়ে অনেক স্ত্রী আহ্লাদে গদগদ। তাঁরা এক একটি ন্যাকা! বলেন, “আমায় বাড়ী থেকে অনেক স্বাধীনতা দেয়।” কারণ অধিকাংশ পুরুষই তাদের অর্ধাঙ্গিনীদের জন্য, “যতোই স্বাধীনতা দিই!” এই বাক্যসমূহ ব্যবহার করেন। এ গদগদ ঐ কথা বলতে তাদের কি একটুও কান গরম হয় না! আত্মসম্মান কি এতোটুকু ক্ষুন্ন হয় না!
স্বাধীনতা কি সীমারেখায় বেঁধে দেওয়ার জিনিস!
স্বাধীনতা কি সীমারেখায় বেঁধে দেওয়ার জিনিস! ভার্জিনিয়া উলফ বলেছেন, “তুমি গ্রন্থাগারে তালা লাগালেও কোনও প্রকার স্বাধীনতায় খিল আঁটতে পারবে না।”
মেয়েরা কি স্বাধীন আজও?
ভাবুন মেয়েরা কি স্বাধীন আজও জীবন যাপনে, কাজের ক্ষেত্রে, শিল্পচর্চায়, ভালোবাসায় যৌনতায়? সবটাই পিতৃতন্ত্র অনুমোদন সাপেক্ষ।
বিবাহের পর মেয়েদের পরিণতি
একটি মেয়ে বিবাহের পর ‘কেয়ার অব অমুক’ হয়ে যায় কেন? কেন তার নিজস্বতা হারিয়ে যায় চিরতরে! সমস্ত বিষয়ে কঠোর নিয়ন্ত্রণ পুরুষের এক মহিলা যতোই উচ্চশিক্ষিতা হোন, হোন একজন নামী লেখিকা, গায়িকা, উচ্চপদে চাকুরীরতা তাঁকে অধীন হয়ে থাকতে হয় ক্রমে ক্রমে পিতা, পতি, ভ্রাতা, পুত্র নামক পুরুষ অভিভাবকের অধীনতায়। নিয়ন্ত্রণতা স্বীকার করে। এ কি বিধির লিখন!
অবিবাহিতা মেয়েদের অভিজ্ঞতা
নিজ কথা বলতেই পারি ছিলাম যখন অবিবাহিতা, “সন্ধ্যে হবার পূর্বে গৃহে ফিরবার উপদেশ! কেন বলো তো!” তখন অতোটা অনুভব করিনি মায়ের স্নেহ আবরণ ভেবে মন্দও লাগে নি। পরে মনে হয়েছে আমাদের আগেই বুঝিয়ে দেওয়া আমরা এক পরাধীন জাতি। আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কথাটা সেঁধিয়ে দেওয়া, শরীর লোলুপ শ্বাপদ সংকুলরা পথে ঘাটে ছড়িয়ে আছে। শুধু পথে ঘাটে নয়, পাশের বাড়ীর কাকু অথবা টিউশন পড়ানোর টিউটরও এক নারী লোভী মেয়েদের শিকার করতে উন্মুখ – তাই তাঁদের পড়ানোর সময়ও অভিভাবকদের উপস্থিতি। “অপনা মাসে (মাংসে) হরিণা বৈরি” – মেয়েদের রক্তকণায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, মেয়েরা নিজেরাই নিজে পরাধীন হয়ে নিজেদের চারিদিকে প্রাচীর গড়ে তোলে। তাদের সরলতা, স্বতঃস্ফূর্ততা সব বিফলে যায়।
সামাজিক নিয়মে বেঁধে রাখা মেয়েরা
“আমায় ভালো মেয়ের তকমার গন্ডিতে থাকতে হবে। পোশাকে, ব্যবহারে, হাঁটাচলায়। তাই পাড়ায়, মোহল্লায়, কলেজে যাওয়ার সময় পথ চলতে পারিনা মাথা উঁচু করে। চলি চোখ নিচু করে, শাড়ির আঁচল গায়ে জড়িয়ে, আমায় যে, কি ভালো মেয়ে, এমনটি দেখা যায় না! সার্টিফিকেট এ নাম লেখাতে হবে! কোনোখানে পারিনা যেতে একাকীত্বর নির্জনতার অনুভূতি ভোগ করার ইচ্ছে পুরণ করতে পারিনা।
কার্যক্ষেত্রে মেয়েদের অবস্থা
কার্যক্ষেত্রে চাকুরীরতা এক অপরাধবোধে ভোগে। ভাবেন এতোটা সময় বাইরে কাটিয়ে ছেলেপুলের জন্য সময় না দিয়ে তাদের মানুষ করতে ত্রুটি থেকে যাচ্ছে (সে তিনি কতই আর্থিক সঙ্গতি জোগাড় করুন না কেন) তাই গৃহে ফিরে লেগে পড়েন চা, খাবার তৈরী করার দায়িত্বে সেখানে তার স্বামী একই উপার্জনে থেকে গৃহে আরাম কেদারায় সিগারেট ফুঁকতে ব্যস্ত।
পরিবারের চাহিদা বউ চাকরি করবে দশটা পাঁচটায়, গৃহকর্মের কোন ব্যাঘাত না ঘটিয়ে লিপ্ত থাক অর্থ উপার্জনে। আরও চান সে কাজ যেন পুরুষ ঘেঁষাঘেঁষি চাকরী না হয়।
শিল্পী ও সাহিত্যিক মহিলাদের অবস্থা
এক মহিলা শিল্পী, সাহিত্যিক, কবি তাঁরও অধিকার নেই সত্য বলার। এক মহিলা লেখকের সত্য বলতে সর্বদা কলম আটকে যায়, তা হোক না গল্পে খাতিরে! পাঁচ জনে, পাঠক ভেবে নেয় এঁর ব্যক্তিগত জীবন যাপনও কি এমন! সেন্সরবদ্ধ কলমে লিখতে হয় নারী লেখক, কবি কে।
নারীদের যৌনজীবন
নারী তার যৌনজীবন নিয়েও কত অতৃপ্তি সহকারে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত কাটান কে তার খোঁজ রাখে। সে বলে না তার প্রিয়কে। কিভাবে তার মনের চিন্তাভাবনা ব্যক্ত করবে স্বামীর কাছে। সে যে ভালবাসে তাঁকে!
একটি প্রকাশিত গল্প
এই বিষয়ে আমারি একটি প্রকাশিত গল্প আছে। একবার এক বাংলা চলচ্চিত্রে নায়িকা অনেক সাহস করে বলেছিলো এই কথা। তার স্বামী জবাবে বলেছিলেন, ‘ক’ জনের সঙ্গে শয্যাসঙ্গী হবার সৌভাগ্য লাভ করেছো যে জেনে গেছো এর যাচাই, বাছাই! তাই নারী নিজ শয্যাতেও এক হিমশীতল গন্ডির মধ্যে নিজেকে বেঁধে রাখে। এরিকস জং এর উক্তি- ঘরে ঘরে যেমন রঙিন টিভি, তেমন একদিন নারী তার অধিকার, তথা যৌনতৃপ্তি লাভ করে নেবেন।
নারীদের আলোকিত হওয়ার অপেক্ষা
কবে নারী তার নিজের আলোয় আলোকিত হবেন, এই অপেক্ষায় দিন কাটাই। সে কারোর দ্বারা প্রতিফলিত নয়, আপনিই হয়ে উঠবে আলোকিত, আশা আমাদের।
কৃতজ্ঞতা
চৈতালি চট্টোপাধ্যায়
ছবি: Image by freepik
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.