সম্পর্ককে সুন্দর ও সুস্থ রাখার ১০টি কার্যকর উপায়
বিশ্বাস, সততা, অনুভূতির প্রকাশ এবং আরও অনেক কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা যা আপনার সম্পর্ককে করবে আরও মজবুত ও সুখী
আমরা সবাই চাই আমাদের সম্পর্কগুলো সুন্দর হোক। তবে বুঝতে পারি না কিভাবে তা সুন্দর রাখা যায়। অনেক ছোট ছোট বিষয়ের মাধ্যমেই একটি সম্পর্ককে সুন্দর করে তোলা যায়। আর সেই মানুষগুলোই সম্পর্কে সফল হয় যারা সম্পর্ককে সুস্থ এবং সুন্দর রাখতে পারে।
তাই সম্পর্ককে সুন্দর ও সুস্থ রাখার কয়েকটি মৌলিক বিষয় সম্পর্কেই আমাদের আজকের এই আর্টিকেল।
১. বিশ্বাস
যেকোনো সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো বিশ্বাস। পরিবার, সমাজ এমনকি এই পুরো দুনিয়াটাই টিকে আছে বিশ্বাসের উপর। বিশ্বাস ছাড়া মানুষ কখনই বাঁচতে পারে না। এজন্যই সম্পর্কের মূল ভিত্তি বলা হয় বিশ্বাসকে।
মানুষ দিন শেষে এমন একজনের কাঁধ খোঁজে, যা তার কাছে অতি বিশ্বাসের। কারণ একটা বিশ্বস্ত কাঁধ পেলে মানুষের জীবন ও মৃত্যু দুটোই খুব আরামের মনে হয়। বিশ্বাস না থাকলে অথবা এই বিশ্বাস একবার ভেঙে গেলে তার কাছে সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা তো দূরের কথা, সম্পর্কটাই মূল্যহীন হয়ে যায়।
এজন্যই কথায় বলে, “আয়না ও বিশ্বাস একবার ভেঙে গেলে তা আর জোড়া লাগে না।” তাই, একটি সুস্থ এবং সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করতে এবং সেই সম্পর্কে সফল হতে বিশ্বাস একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশ্বাস হলো একে অন্যের সাথে টিকে থাকার একটি মূলমন্ত্র।
২. সততা
বিশ্বাসের মূলমন্ত্র হলো সততা। আমরা কেবল তখনই একজন মানুষকে বিশ্বাস করি যখন সেই মানুষটি আমাদের কাছে সৎ হয়। অর্থাৎ একজন মানুষের সততা দেখেই আমরা তাকে বিশ্বাস করে থাকি। আর আমরা পৃথিবীতে এমন সব মানুষেরই সঙ্গ কামনা করে থাকি, যারা কোনোভাবেই আমাদের বিশ্বাসের অমর্যাদা করে না। সুতরাং এই বিশ্বাস তৈরী হওয়াটাও সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে একজন মানুষের সততার উপর।
কথায় কথায় কাছের মানুষদের সাবধান করতে আমরা একটি কথা প্রায় সময়ই বলে থাকি যে, সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস আর অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। কেই বা চায় তার জীবনে স্বর্গের সুখের পরিবর্তে সর্বনাশ নেমে আসুক।
সুতরাং একটি সুন্দর ও সুস্থ সম্পর্ক গড়তে এবং সেই সম্পর্কে সফল হতে সততা একটি বিশেষ প্রয়োজনীয় উপাদান।
৩. অনুভূতির প্রকাশ
একটি সুস্থ সম্পর্ক তৈরী করতে এবং সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে অনুভূতির প্রকাশ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা কেবল সেইসব মানুষের সাথেই আত্মিক যোগাযোগ খুঁজে পাই, যেই মানুষগুলোর কাছে খুব সহজেই আমরা আমাদের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে পারি। কারণ মানুষ অন্তর্যামী নয় তাই তারা অন্যের না বলা কথা কখনোই বুঝতে পারে না।
অনেক সময় এই ‘না’ বলার কারণেই সম্পর্কের জটিলতা সৃষ্টি হয়। তাই এই সম্পর্কের জটিলতা এড়াতে নিজের অনুভূতিগুলো সরাসরিভাবে আমাদের কাছের মানুষের কাছে ব্যক্ত করা উচিত। এতে সেই মানুষগুলোর সাথে আমাদের একটা আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়।
যার ফলে, আমাদের ভালোলাগা, খারাপ-লাগা গুলো খুব সহজেই বলে ফেলতে পারি। যা অনেক ক্ষেত্রেই সম্পর্কের বিবাদ থেকে দূরে রাখে এবং সম্পর্ক ভাঙ্গনের কোনো সুযোগ থাকে না। সুতরাং সম্পর্ক সুন্দর এবং সুস্থ রাখতে অনুভূতির প্রকাশ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
৪. সময় ও গুরুত্ব প্রদান
একটি সুন্দর ও সুস্থ সম্পর্ক তৈরি করতে সময় এবং সেই মানুষগুলোকে গুরুত্ব দেয়া একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আর একটি সম্পর্কে সফল হওয়ার প্রাথমিক শর্তই হলো একে অপরকে সময় এবং পারস্পরিক মর্যাদা দেওয়া।
আমরা সবাই চাই আমাদের কথাগুলোও কেউ একজন শুনুক এবং বুঝুক। আমাদের কদর করুক। আর এর জন্যও আমাদের একে অপরকে সময় দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সম্পর্কে থেকে যদি কেউ একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয় কিংবা কারও প্রাপ্য মর্যাদা না দেওয়া হয়, তবে সেই সম্পর্কে নানা জটিলতা সৃষ্টি হতে থাকে।
সম্পর্কে সফল হতে হলে একে অপরের প্রতি সমপরিমাণ মর্যাদা থাকা উচিত। আর এই সমপরিমাণ মর্যাদা তখনই সম্ভব যখন আমরা একে অপরকে সময় এবং গুরুত্ব প্রদান করবো। আর সম্পর্কে সফল হতে এবং একজন মানুষকে পরিপূর্ণভাবে ভালোবাসতে হলে সবার আগে প্রয়োজন তাকে তার প্রাপ্য সম্মান দেওয়া উচিত।
৫. মানিয়ে নেওয়া
একটি সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করতে এবং সেই সম্পর্কে সফল হতে একে অপরকে মানিয়ে নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি সম্পর্কে জটিলতা ঠিক তখনই সৃষ্টি হয় যখন আমরা একজন অন্য জনকে নিজের মতো করতে চাই।
আমরা সবাই আলাদা আলাদা পরিবেশে বেড়ে উঠি। ফলে আমাদের আচার, আচরণ, ভালো লাগা, মন্দ লাগাগুলোও আলাদা হয়ে থাকে। কিন্তু যখন আমরা সম্পূর্ণ আলাদা একজন মানুষকে আমাদের নিজেদের মতো করে পরিবর্তন হতে বলি বা করতে চাই তখন অপরজনের মধ্যে নানা জটিলতা সৃষ্টি হতে থাকে।
তার ভালো লাগা, মন্দ লাগা গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এতে সেই সম্পর্কটা সেই মানুষটার কাছে দিনে দিনে ভারি হতে থাকে। ফলে সম্পর্কের তিক্ততা সৃষ্টি হয়। আর পৃথিবীর কোনো তিক্ত সম্পর্কই বেশিদিন টিকে থাকে না।
তাই সম্পর্কে তিক্ততা এড়াতে এবং সুস্থ সম্পর্ক তৈরি করতে একে অপরকে মানিয়ে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
৬. পারস্পরিক সমর্থন
একটি সম্পর্ককে সুন্দর এবং সুস্থ রাখতে পারস্পরিক সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন আমরা একে অপরকে সমর্থন করি, তখন সম্পর্কের বন্ধন আরও দৃঢ় হয়। পারস্পরিক সমর্থন মানে হলো একে অপরের সুখ-দুঃখে পাশে থাকা, একে অপরের সমস্যাগুলো সমাধানে সাহায্য করা এবং একে অপরের স্বপ্নগুলো পূরণে উৎসাহ দেওয়া।
৭. যোগাযোগ
একটি সুস্থ সম্পর্কের জন্য সঠিক যোগাযোগ অপরিহার্য। আমরা যখন আমাদের অনুভূতি, চিন্তা এবং উদ্বেগগুলো সঠিকভাবে প্রকাশ করি, তখন সম্পর্কের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সম্ভাবনা কমে যায়। সঠিক যোগাযোগের মাধ্যমে আমরা একে অপরকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি এবং সম্পর্কের মধ্যে সৃষ্ট জটিলতাগুলো সহজেই সমাধান করতে পারি।
৮. ক্ষমা
একটি সুন্দর সম্পর্কের জন্য ক্ষমা একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ। আমরা সবাই মানুষ, তাই আমাদের ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক। সম্পর্কের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি বা মতবিরোধ হলে, একে অপরকে ক্ষমা করতে শিখতে হবে। ক্ষমা করার মাধ্যমে সম্পর্কের মধ্যে সৃষ্ট তিক্ততা দূর হয় এবং সম্পর্ক আরও মজবুত হয়।
৯. ধৈর্য
ধৈর্য একটি সুস্থ সম্পর্কের জন্য অপরিহার্য। সম্পর্কের মধ্যে নানা সমস্যা এবং চ্যালেঞ্জ আসতে পারে, কিন্তু ধৈর্য ধরে সেই সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে হবে। ধৈর্য ধরে একে অপরকে বুঝতে এবং সমাধান খুঁজতে পারলে সম্পর্ক আরও মজবুত হয়।
১০. পারস্পরিক সম্মান
একটি সুস্থ সম্পর্কের জন্য পারস্পরিক সম্মান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যখন একে অপরকে সম্মান করি, তখন সম্পর্কের মধ্যে শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। পারস্পরিক সম্মান মানে হলো একে অপরের মতামত, অনুভূতি এবং ব্যক্তিত্বকে সম্মান করা।
পরিশেষ
এছাড়াও আরও অন্যান্য অনেক বিষয়ও আছে, যা মানুষের চাওয়া-পাওয়ার ওপর নির্ভর করে। তবে আমি শুধু মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কেই বলার চেষ্টা করেছি। যা একটি সম্পর্কের মূলভিত্তি। আজ এই পর্যন্তই। আবারও নতুন কোনো বিষয় নিয়ে হাজির হবো আপনাদের কাছে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন এবং সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.