কলম

ভোগবাদের ফাঁদে নারী-পুরুষ সম্পর্ক: সমাজের নতুন বাস্তবতা

টাকা, ক্ষমতা ও সম্পর্ক: বর্তমান সমাজের প্রতিচ্ছবি

- Advertisement -

নারী-পুরুষ সম্পর্কে নিয়ে যে অহেতুক ক্যাচাল হচ্ছে সেটার শেকড় খুব গভীরে। উপরিভাগ থেকে দেখলে জল স্বচ্ছ; প্রথম শ্রেণীর মাছগুলো সকালবেলা যেন জিরিয়ে নিচ্ছে। কালচার এবং পুঁজিবাদের প্রবল স্রোতের কারণে যে আরো ধাক্কা খাবেন সেটা মানিয়ে নিতে শিখুন কিন্তু পাশাপাশি এই অভিশাপের মধ্যে একটু ব্যাখ্যাও খুঁজুন।

পণ্য হিসেবে মানুষ

ক্রমাগত আমরা বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় ‘পণ্য’ হয়ে যাচ্ছি। এখন একজন পুরুষ একজন নারীর দিকে চোখ রাখছেন বা একজন নারী একজন পুরুষের দিকে চোখ রাখছেন ‘পণ্য’ হিসেবে। তিনি আরো ভালো খুঁজছেন। আরো ভালো বৈশিষ্ট এবং আচরণ খুঁজছেন। সাধারণত নারী-পুরুষ এখন একে অপরকে স্বভাবতই জিগ্যেস করেন, “আপনার কেমন ছেলে/মেয়ে পছন্দ?”

সম্পর্কের নতুন সংজ্ঞা

হতে পারে আমার হাতে থাকা এই মডেলের ফোনটি পছন্দ কিন্তু একজন নারী বা পুরুষ ‘পণ্য’ নয় এবং তাকে মাপজোখ করবার নির্দিষ্ট মাপকাঠিও নেই। ভোগবাদ এর দিকে এগুতে এগুতে আমাদের খুব চেনা ‘পরিবার’ ও ‘সমাজ’ বিলুপ্ত প্রায়; এখন ‘শুধু আমি’ প্রজন্মের জয়জয়কার। তাতে অন্যায় হলো, না কি ন্যায় হলো? – এত এত ভেবে দেখার অবকাশ নেই।

সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব

গত প্রায় দীর্ঘসময় ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় যেমন এক ধরণের ট্রেন্ড চলছিলো, আমরা সবাই খুব হাসছিলাম। কখনো পুরুষ রুপে আটকায় তো কখনো পুরুষ ঢঙে আটকায়। পুরুষরা নাকি আজকাল ‘শখের নারী’ পুষছে। বিশ্বাস করুন, এই কথাগুলোও পুরোপুরি মিথ্যে নয়।

ভোগবাদের বাস্তবতা

ঠিক যেমন করে নারীরা সুগার ড্যাডি পেলে আটকায়, ব্যক্তিত্বে নয় টাকায় আটকায়, চার রাউন্ড খেলা শেষে বলে মাঝখানে আবার জালটাল ছিলো নাকি! জানি না তো – এসবও কিন্তু পুরোপুরি সত্য নয়।

- Advertisement -

শিক্ষার অভিশাপ

সামান্য একটু সিজিপিএ খারাপ হলে চাকুরী জোটে না, তাই তো সার্টিফিকেট পোড়াতে বাধ্য হোন, আর পড়াশোনায় খারাপ করলে মধ্যপ্রাচ্যে! আর যারা স্কলারশিপ পেয়ে বাইরে গেছেন/যাচ্ছেন ওসব একেকটা ‘Homage Loan’ বৈ আর কি! এই সবকিছুর মধ্যে টাকা ছাড়া আর কিছু কি অদৌ দেখতে পান?

চাকুরীর অভাব

বেশিরভাগ গ্রাজুয়েট নিজ নিজ জায়গায় ভালো করতে না পারায় এই সার্টিফিকেট এর অভিশাপ নিয়ে ঘুরছে। কারণ সেসময় হয়তো অন্য কোনো দক্ষতাও শেখা হয়ে ওঠেনি। চাকুরী নেই, ব্যবসা নেই তাই টাকাও নেই।

সম্পর্কের বাস্তবতা

তবু আজও দেখি, এক মেয়ে কে বলতে, “তোমার মাইনে ১০-১৫ হাজার টাকা হলেও আমি সব সামলিয়ে নিতে পারবো।” কেউ কেই নারীবাদ নিয়ে সারাক্ষণ ফেসবুকে ঝগড়া না করে কাজ করছে। সন্ধ্যায় ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়ি ফিরছে, সে-ও এক নারী।

পুরুষদের অবদান

আর ছেলেরা? সত্যি বলতে বাঙালী ছেলেরা কি করছে না? আপনার জন্য জীবনও দিয়ে দিতে পারে এরা। একটা কথা জানবেন যে, ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতা কিন্তু পুরোপুরি সত্য নয়। আপনার জন্য এই পুরুষরা এক জীবন অপেক্ষা করতে পারে আবার ভালোবেসে একাসাথে জীবনও পাড়ি দিতে পারে।

ভোগবাদের প্রভাব

কিন্তু ভোগবাদ যে সমাজের রন্ধে রন্ধে, যেখানে টাকায় কেনা যায় রুপ সেখানে ক’জন আর সাহস করে সত্যি করে একে অন্যের হাত ধরতে চায় বলুন!

- Advertisement -

সমাজের ভুল অঙ্ক

নারী-পুরুষ সবাই আটকায়। কিন্তু এই ভুল সমাজের ভুল অঙ্কে। ওরা উচ্চবিত্ত, ওদের বাড়িতে ঈশ্বর প্রবেশ করতেও অনুমতি নেন। ওখানের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেন, ওখানেই থাকেন এবং ওখানেই ভাগ্য লিখেন।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঈশ্বর

এই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঈশ্বর আমাদের ঘরে খুঁজে পাওয়া যায় না। তিনি এসব চরম ভোগান্তির মধ্যে স্বস্তি বোধ হয়তো করেন না। তাই জীবন যেখানে যেমন…

- Advertisement -
- Advertisement -

মেহেদি হাসান (বিকেল)

প্রধান সম্পাদক, অভিযাত্রী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- Advertisement -
Back to top button