কমেডি, হরর, কালো জাদু আর মঞ্জুলিকা!
ভুলভুলাইয়া না কি ‘ভুলভুলাইয়া ২’ কোনটি বেশী গ্রহণযোগ্য?
যে মুভি সদ্য-ই মাল্টিপ্লেক্সে দেখে এলাম – তা নিয়ে তর্কের অবকাশ রয়েছে। তবু এ মুভি না দেখে এড়ানো যাবে না।
প্রেক্ষাপট
বছর পনেরো আগে প্রিয়দর্শণ এর ‘ভুলভুলাইয়া’ বানানোর সময় হরর জনরার সঙ্গে দর্শকের অতোটা পরিচিতি ছিল না মনে হয়। সাধারণ মানুষ তখন হিন্দি ইন্ডাস্ট্রিতে সাইকোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার নিয়েও কোন মাথাব্যাথা বিশেষ ছিল বলে মনে তো হয় না, যদিও সে বিষয়ে একাধিক ছবি তৈরী হচ্ছিল।
প্রথম ভুলভুলাইয়া
সেই ‘ভুলভুলাইয়া’ ছিল বিদ্যা বালান, অক্ষয় কুমার এর সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার। কিন্তু পরিচালক অনিস বাজমির ‘ভুলভুলাইয়া’ একেবারে হরর যার নাম “মঞ্জুলিকা” নামকরণ অনায়াসে রাখা যেতো।
নতুন ভুলভুলাইয়া ২
এই কথা এই জন্য বলা যে চিত্রনাট্যকার-গল্পকার আকাশ কৌশিক নতুন ছবিতে মঞ্জুলিকা কে এতো শক্ত, পোক্ত ভাবে চারিদিকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধেছেন যে সিনেমা হল থেকে বাইরে বেরিয়ে দর্শক এই মঞ্জুলিকার প্রেমে আবেশে ডুবে থাকবে।
চিত্রনাট্য ও প্লট
ছবির প্রথমে মঞ্জুলিকার অতীত বলে দেওয়া (যদিও তার একটা অতীত শেষে জানা যাবে) তাহলে ছবির শেষার্ধে কি থাকবে? সে কথা মাথায় রেখে পরিচালক-চিত্রনাট্যকার প্লট সাজিয়েছেন। এ কথা অস্বীকার যোগ্য নয় যে, ছবিটি জমজমাট ও চমকপ্রদ। যদিও ঘটনাক্রমের যুক্তি, বুদ্ধি গ্রাহ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার ছবি এটি নয়। কমেডি, হরর, কালাজাদু ও মঞ্জুলিকা কে নিয়ে তৈরী এই প্যাকেজে বিনোদন ভরা।
গল্পের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
রাজস্থানের একটি ভূতুড়ে বাড়ীতে ভূতের উৎপাতের সুচনা। ঐ বাড়ীর মেয়ে ঋত ঠাকুর (কিয়ারা আডবানী) চণ্ডীগড়ে তার আলাপ রুহান রনধাওয়ার (কার্তিক আরিয়ান) সঙ্গে। পরিবার জানে ঋত মারা গেছে। শুধু রুহান জানে ঋত জীবিত। পরে ঐ রাজবাড়ীতে ঋত লুকিয়ে থাকে নিজের বুদ্ধিতে। ঋতের ই কথায় প্রাসদসম এই বাড়ী আসলে এক ভুলভুলাইয়া। খুঁজে পাওয়া সহজ নয়।
চরিত্র ও অভিনয়
ঋতের বৌদি অঞ্জুলিকা- তার চরিত্রে তব্বু, সে-ই কি মঞ্জুলিকা? কিংবা রয়েছে কোন গোপন ভ্রান্তিবিলাস! ছবিতে কার্তিক, কিয়ারা (প্রথমার্ধে) তব্বু (শেষার্ধে) ছবির সিনিয়র-জুনিয়র শিল্পীর সুন্দর ভারসাম্য্য তৈরী করেছেন পরিচালক। ছবির প্রথমার্ধে আছে কার্তিক এর কমেডি, দ্বিতীয়ার্ধে ছবি দাঁড়িয়ে আছে তব্বুর ওপরে। কেউ ঢোকেনি কারও পরিসরে। এই ব্যালান্স উল্লেখযোগ্য।
অভিনয় শৈলী
তব্বুর অভিনয় শৈলী নিয়ে বলতে গেলে বলতে হয় যে, নব্বয়ের দশকের অভিনেত্রীর জন্য এমন চরিত্র নির্মাণ, তা প্রশংসার দাবী রাখে। কার্তিক ও কিয়ারার দক্ষতা প্রদর্শিত হয়েছে, “আমি যে তোমার…” গানটির আলাদা ভার্শন করা করা হয়েছে। তাঁরা সহজ, সাবলীল ভাবে চরিত্রে অভিনয় করলেও ভূতুড়ে অবতারে খানিক অসহজ।
সঙ্গীত ও সংলাপ
ছবির “জেন্ডার” ভাবটির ছক বদলে যায়- যখন মঞ্জুলিকার “আমি যে তোমার” এর পুরুষ ভার্শন রুহান পারফর্ম করে। তব্বুর বাংলা উচ্চারণে টান আছে, কার্তিকের বাংলায় ঝরঝরে- যে টুকু আছে সংলাপ। পার্শ্বচরিত্রে মিলিন্দ গুনাজি, রাজেশ শর্মা যথাযথ। পুরনো ছবির সঙ্গে নতুন ছবির একটি মাত্র যোগসুত্র ছোটা পন্ডিতের চরিত্রে রাজপাল যাদব। কমিক রিলিফ হিসেবে সঞ্জয় মিশ্র (জ্যোতিষী) ও তাঁর স্ত্রীর ভূমিকায় অশ্বিনী কলসেকর।
শেষ কথা
“ভুলভুলাইয়া ২” দেখতে দেখতে হল -এ আশে পাশের দর্শকের অস্ফুট কথা ভেসে আসা – আগের ছবিতে কি হয়েছিল, এখন কি হচ্ছে, তা নিয়ে হাসি ঠাট্টা, তো কখনো ভয়ে আঁতকে ওঠা চিৎকার – যাই হোক না কেন, পুরনোর সঙ্গে এই নতুনের তুলনা এসেও বলা যায় – পুরনো নষ্টালজিয়া বা হরর কমেডির আকর্ষণ এই ছবিকে ভুলতে দেবে না।
রেটিং
বক্স অফিস ভরা থাকলেও রেটিং মার্ক মনে হয় আমার মতে ৬/১০ হবে না। অবশ্য তা-ও তো কিছু কম নয়, একটি ছবির পক্ষে।
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.