জীবনী

এলগিন রোডের অদৃশ্য নায়ক: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর কি গুমনামী সাধুর রূপে আজও ফিরে আসার অপেক্ষায়?

নেতাজি কি সত্যিই চিরতরে অদৃশ্য? - বাঙালির মনে নেতাজির অমলিন বিশ্বাস ও প্রত্যাশার অমলিন আলো

বিজ্ঞাপন

কোথায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু! সেই যে কাবুলিওয়ালা সেজে তুমি চলে গেলে আর ফিরলে না! গভীর গোপন। এলগিন রোডের সেই চায়ের দোকানে বসে থাকা। ইতিহাস বসে রয়েছেন। সময়টা সাত সকাল। তারিখ ১৬ জানুয়ারী পেরিয়ে পা রেখেছে সতেরো তে। সাল, ১৯৪১ হতে পারে, হতে পারে ১৯৭১ সাল, ১৯৯৭ সাল, কিংবা ২০২২ সাল।

এলগিন রোড ও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু

এলগিন রোডে ওই চায়ের দোকানে ভীড় বাড়ছে এ বোধ হয় পঞ্চাশ বছর আগেকার একটি সময় বিন্দু। প্রতি বছর ২২ জানুয়ারী গভীর রাতে একদল লোক ওর সামনে ভীড় জমাতো তারা এই বিশ্বাসে আসতো নেতাজী কোনও সাধুর বেশে ফিরে এসেছেন মাতৃভুমি ভারতবর্ষে তথা কলকাতায়!

ফিরে এলে সুভাষ জন নায়কই থাকতেন, শৌলমারিতে ধুনি জ্বালিয়ে সাধু হয়ে বসতেন না। তাঁর চরিত্রের একটি বড় দিক তিনি যাবতীয় বিষয় যতটুকু বলা দরকার ততটুকুই বলতেন বেশীও না কমও না। মহানিষ্ক্রমনের সম্পুর্ন নকশা কারও কাছে মেলে ধরেন নি সুভাষ।

সুভাষ তুমি কোথায়! ফিরে এসো এখনো পথ দেখি!

১৯৫০- ৬০ দশকে আদর্শ হিসেবে নেতাজী সুভাষ কে তুলে ধরা হতো। বলা হতো, “নেতাজী থাকলে দেশের চেহারা অন্যরকম হতো।” মাঝে মাঝেই খবর রটতো অমুক অনুস্থানে নেতাজী দেখা দেবেন। ব্যস, কি উত্তেজনা! একবার তো একটি সভায় নেতাজীর প্রত্যাশিত দেখা না পেয়ে বেশ দাঙ্গা হাঙ্গামা হয়ে কিছু মানুষ মারা গিয়েছিল। বা রটতো অমুক সাধু অথবা তমুক বাবা আসলে নেতাজী। না কি ছদ্মবেশ ধরে আছেন।

বড়দের জিজ্ঞাসা করা হতো, “কেন ছদ্মবেশ? দেখা দিলে তো কত খুশী হওয়া যেতো।” বড়রা জবাবে বলতেন, “অত সোজা নয়। উনি দেখা দিলে ওঁকেই সবাই দেশের নেতা হিসেবে চাইবেন তখন নিদেন পক্ষে ভয় পেয়ে নেহরু ওঁকে জেলে পুরে ফেলবন না? ওঁর প্রাণ নিয়েও তো টানাটানি হতে পারে।”

বিজ্ঞাপন

ছোটরা রোমাঞ্চিত হয়ে ভাবতো একদিন ঠিক ছদ্মবেশের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসবেন নেতাজী। ঘোড়ার পিঠে, মিলিটারী পোশাক পরা সামনে এসে বলবেন উদাত্তস্বরে, “তোমরা আমায় রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো।”

কিন্তু বছরের পর বছর চলে গেল ছোটরা বড় হতে হতে এক সময় ভাবলো এই এতো দিন বেঁচে থাকলেও এই বুড়ো বয়সে আর কি ফিরে আসবেন? এর পরেও ওঁর বয়সটা এতোটাই বেড়ে গেল যে ফিরে আসার গল্পটা আর বিশ্বাসে আসতো না!

সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘গুমনামী’ ও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু

কয়েক বছর আগে তৈরী সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘গুমনামী’ ছবিটি ও তাই নিয়ে টেলিভিশমন তর্কে বোঝা গেল বাঙালী এখনো নেতাজীর অন্তর্ধান রহস্য খুঁজে বেড়াচ্ছে। তাইওয়ানে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু সংবাদ তাই বড় পানসে লাগে। নেতাজী যে বাঙালীর স্মৃতিতে বেঁচে আছেন তা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। এখনো বছরের পর বছর হাজার হাজার বাঙালী নেতাজীর প্রত্যাবর্তনের পথ চেয়ে থাকেন।

“Freedom Is Not given – It Is Taken.”

– Netaji Subhas Chandra Bose

বিজ্ঞাপন

ধর্ম, ভারত কিছুই ছাড়বো না এই শর্তে এক মুসলিম মেয়ে কে বিয়ে করলেন এক হিন্দু ছেলে গোয়ালিয়র, ভারতে। প্রেম তো আড়াই অক্ষরের একটি একটি শব্দ! তার জন্য কতো!

১৯৪৩ এর শেষদিক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু

আজাদ হিন্দ ফৌজের সদর দপ্তরে কাজ করছিলেন নেতাজী। একদিন দেখা করতে এলেন চেট্টিয়ার ব্রাহ্মণ সিঙ্গাপুর প্রবাসী ব্রিজলাল জয়সওয়াল- অর্ডার সাপ্লাইয়ের কথা বলতে। নেতাজী তাঁর কাছে সবিনয় আবেদন রাখলেন কিছু অনুদানের জন্য।

ব্রিজলাল জানান, নিশ্চয় দেবেন তিনি তবে নেতাজী যদি বীর সুভাষ হিসেবে তাঁর মন্দিরে পদধুলি দেন। নেতাজী বললেন – সুভাষ আর নেতাজী এক ব্যক্তি নন। আজাদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়ক হিসাবে তাঁর মন্দিরে যাওয়া শোভা দেয় না। ব্রিজলাল চান ফৌজি পোশাকেই আসুন নেতাজী। সর্বসমক্ষে মন্দিরে এসে টাকা গ্রহন করবেন। নেতাজী শর্ত রাখলেন তিনি গেলে সঙ্গে থাকবেন তাঁর সহযোগী শিখ,  মুসলিম খ্রিস্টান সহ যোদ্বারা।

ব্রিজলাল চুড়ান্ত অসম্মতি জানান। হিন্দু ভিন্ন আজ অবধি অন্য কেউ মন্দিরে পা রাখেন নি। নেতাজী জানালেন ব্রিজলাল যেন মন্দির কমিটির সঙ্গে আলচনা করে আসেন। ব্রিজলাল দান করতে এসেছিলেন সাত লক্ষ টাকা। এখন কার হিসেবে কত হয়!

পরের দিন ফিরে এলেন ব্রিজলাল। সঙ্গে আরও কয়েকজন। তাঁরা নেতাজীর কথায় রাজী হয়ে নেতাজী ও তাঁর সহযোদ্বাদের নিমন্ত্রন করতে এসেছেন। দুশো বছরের সংস্কারকে ছিন্নকরে সেদিন সিংগাপুর মন্দির খুললো বিধর্মী দের জন্য।

বিজ্ঞাপন

সিঁড়ির পাশে সুভাষ বসু খুলে রাখলেন তাঁর মিলিটারী বুট। পাশাপাশি নিষ্ঠাবান খ্রিস্টান আইয়ার, ধার্মিক মুসলিম কিয়ানী আর হাবিবুর রহমান। সুভাষ চন্দ্রবোস এক কালাপাহাড়। জগদ্দলপাহাড় কে আঙুলের টোকায় ঝেড়ে ফেলে দেওয়ার হিম্মত দেখিয়েছিলেন।

পরাধীন ধর্ম নিগড়ে বাঁধা সংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে!

কৃষ্ণমাচারি আইয়ার- সুভাষের স্টোনো গ্রাফার। শ্যাম বাজার পাঁচমাথার মোড়ে নেতাজী মূর্তিটি প্রতিস্থিত করা হয় তাঁর ৭২ তম জন্মদিনে। বম্বের ব্যবসাযী নরেশ ইয়া ওয়ালার ১৫ ফিট মুর্তি উঁচু চার টন ওজনের এই ব্রোঞ্জ মুর্তি স্থাপন করা হয় ১৬ ফিট বেদীর ওপর।

এক বাঙালী শিল্পী সুনীল পাল বেদীর ওপর দিকে নেতাজীর জীবন থেকে চিত্রমালা ও বাণীর সারংশ খচিত করেন। এই মুর্তিটি ধাবমান ঘোড়ার পিঠে খানিকটা আড়াআড়ি করে ও ঘোড়ার লেজ ভুমির সমান্তরাল করা হয়েছে।

মুর্তি উদ্বোধনের দিন ১১.৪৫ মি.পুলিস ব্যনড বন্দেমাতরম ও ইকবালের লেখা সুরে “সারে জাঁহাসে অচ্ছা…” বাজনা বাজিয়ে শুরু হয়। আর হয় কাজী অনিরুদ্বর পরিচালনায় আজাদ হিন্দ ফৌজের গান “কদম কদম বাড়ায়ে যা…”

এরপর আসেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র ও স্পীকার বিজয় ব্যানার্জি, মেয়র গোবিন্দ চন্দ্র দে ও মুখ্য অতিথি জাতীয় অধ্যাপক সত্যন্দ্রনাথ বসু মহাশয়। এরপর বাসন্তী দেবীর টেপ করাকন্ঠে সুভাষ বসুর বিষয়ে কিছু কথা শোনানো হয়।

বিজ্ঞাপন

এই উপলক্ষে ভারতের রাষ্ট্রপতি জাকির হোাসেন, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, ও উপ-প্রধান মন্ত্রী মোরাজী দেশাইয়ের পাঠানো বাণী শোনানো হয়। সব শেষে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গলায় “তোমার আসন শুন্য আজি হে বীর পুর্ন করো…” গানটি শুনিয়ে ভারতের বীর কে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

আমি মিথ্যার আশ্রয় নেয়নি

গতকাল আমার এক বন্ধু বলেছেন আমি না কি সব বানিয়ে বলি। তা নয়। আমি কিছু বাস্তব ঘটনা কাহিনী আকারে আমার রচনায় ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস করি। তেমন একটি গল্প আমার “আলো” গল্পটি। এক হিন্দু মেয়ে এক মুসলিম ছেলে কে বিয়ে করেছে ভালবেসে। এই চরিত্ররা এখনো রয়েছেন পঃ বাংলায়। গল্পে এর পরে কাহিনী আরও অগ্রসর হয়েছে। এই গল্প পড়ে আমার বন্ধু বলেছে এক মুসলিম মেয়ের সঙ্গে এক হিন্দু ছেলের বিয়ের গল্প লিখতে যদি সাহস থাকে।

সেই ঘটনা বাস্তবে ঘটিত হয়েছে। সুদুর আফ্রিকার মরক্কো থেকে এক মুসলিম মেয়ে গোয়ালিয়র, ভারত এ চলে এসেছে প্রেমিক। হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করতে বিয়ে সম্পন্নও হয়ে গেছে। এই টি জানায় আমার সেই বন্ধু বললো – ভারত এর আর বাইরের মুসলিম না কি আলাদা। এর অর্থ বোধগম্য হয় নি আমার কাছে। আমি বুঝতে অক্ষম।


Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

শ্রীমতী স্মৃতি দত্ত

অ্যাডভোকেট, লেখিকা, বঙ্গীয় সাহিত্যের সদস্য, কীবোর্ড প্লেয়ার, অ্যামওয়ে ব্যবসার মালিক। আমার লেখা সর্বশেষ বইয়ের নাম, ‘কেমেষ্ট্রি প্র্যাকটিক্যাল ও টি.ভি শো’ এবং ‘লেনিন সাহেবের সাথে দেখা’ বইটি Flipkart -এ নেবার জন্য ক্লিক করুন: https://www.flipkart.com/lenin-saheber-sathe-dekha/p/itmc9bfae4c39392

Leave a Reply

বিজ্ঞাপন
এছাড়াও চেক করুন!
Close
Back to top button

Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading