মুভি রিভিউ

মিথ্যে প্রেমের গান – দুটো সংলাপ, বাকি সময় নষ্ট

ত্রিকোণ প্রেমের গল্পে ‘অভীক’ ও ‘অন্বেষা’: প্রেমের মাধুর্য ও হতাশা

“আমি জানি, সব প্রেমের গল্প মিথ্যে,

কিন্তু তোমার আর আমার গল্পটা যেন শেষ অবধি সত্য হয়”

এই লাইনগুলো মাথায় এখনো ঘুরপাক খাচ্ছে। শব্দগুলোর সাথে প্রেমের সম্পর্কের মাধুর্য ঘনিষ্টভাবে মিশে আছে। খুব সম্ভবত অভীক (অনির্বাণ ভট্টাচার্য) এর কথাগুলো আমাদের জীবনে এসে সাগরের ঢেউয়ের মত আছড়ে পড়ছে, বারবার…

কিন্তু গল্পে ছিলো না এমন তীব্রতা, ফ্লপ বক্স অফিসে। দর্শক হিসেবে আমি প্রায় পুরোপুরি হতাশ। অনির্বাণ তার দুর্দান্ত অভিনয় দিয়ে মোটামুটি একাই টেনেছেন সিনেমাটি। পাশাপাশি অন্বেষা (ইশা সাহা) গল্পে কিছুটা প্রাণ জুগিয়েছেন। অন্যদিকে আদিত্য (অর্জুন চক্রবর্তী) কে ভীষণ বিরুক্ত লেগেছে।

টালিগঞ্জের নবাগত পরিচালক ‘পরমা নেওটিয়া’ কি নিজের জীবন ছাপিয়ে দিয়েছেন? উঁহু! আমার জীবন ছাপিয়ে দিলেও নির্ঘাত হিট হত! (বিশ্বাস করুন)। পরমা নেওটিয়ার কাল্পনিক শক্তি এত কম যে, যা তা চিত্রনাট্য দিয়ে এই সিনেমাটি সাজিয়েছেন। আর খুব সম্ভবত তিনি তার ব্যক্তিগত ডায়েরির কিছু দুর্দান্ত বাক্য সংলাপে যুক্ত করেছেন।

গল্প হচ্ছে, ত্রিকোণ প্রেমের গল্পে। একটু সরলীকরণ করলে দেখবেন, অভীক এবং অন্বেষা একে অপরকে খুব ভালোবাসে, আদিত্য ওদের মধ্যে ব্যর্থ প্রেমিক ‘বাপ্পারাজ’ এর ভূমিকা পালন করেছেন। গল্পের একাধিক বিষয় আমার কাছে স্পষ্ট নয়,

১. অভীকের বাবা সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা পাওয়া যায় না। তিনি কি শুধুই মদ খান? আবার অভীকের মায়ের ভুল সম্পর্ক থেকে ‘সিঙ্গেল মাদার’ থিওরি কি? জানিনা।

২. আদিত্য এতবড় শিল্পী। মানে শাস্ত্রীয় সংগীতে খুব ভালো করছেন; এতটুকু বোধগম্য। কিন্তু ‘জে জি’ এসবের ধার যে ধারেনা সেটা ফোকাসে এনেও আবার অন্ধকারে চলে গেলেন কেন? পরমা? মানে পরমা চাইছেন এসব বিতর্কে জড়াতে কিন্তু শেষের দিকে খুব ভয় পেয়ে গেছিলেন কি!

৩. বাকিটা, “আমার কিছু নেই, তাই হারানোরও কিছু নেই” তত্ত্ব দিয়ে শেষ করা। মাত্র ৮ মিনিটের মধ্যে এই সিনেমার গল্পের মোড় ঘুরেছে ঢাকায় সিএনজির মোড় ঘুরানোর মত করে।

৪. ৬ বছরের দুরত্ব। অথচ কথা হচ্ছে, একে অন্যের ঠিকানা জানা। আবার লিফটে হঠাৎ দেখা হয়ে ‘আন-ব্লক’ করে দেওয়া অন্বেষাও হয়তো নিজে নিজে ভাবছিলেন, আমি কি করছি? এসব কি হচ্ছে?

৫. পানশালায় (ক্লাব) এর বন্ধু সম্পর্কেও স্পষ্ট কিছুই বুঝা যায় না। যা বুঝার, চিত্রনাট্য দেখে বুঝতেও বিপাকে পড়া।

তাহলে কেন দেখা? কেন-ই-বা এই সমালোচনা! একমাত্র কারণ হচ্ছে, এই সিনেমার একেকটি গান। ভয়ানক সুন্দর, পুরো অ্যালবাম ‘Spotify’ তে প্রিয় তালিকায় রাখতে পারবেন কোনরুপ চিন্তা ছাড়াই। কিন্তু এতবড় শিল্পী অভীকের হেয়ার স্টাইল কে করেছিলেন তার সাথে একবার পরিচিত হবার ইচ্ছে থেকেই গেল। কারণ চুল, সে তো আরেক ভালোবাসার নাম, ‘টেকো’ সিনেমা না দেখলে তা আজ এত স্পষ্ট হত না।

এই সিনেমা দেখার জন্য আলাদা রকমের দর্শক হওয়া জরুরী। ব্যক্তি প্রেমের সম্পর্কে কতিপয় প্যাচ না লাগলে ‘Ae Dil Hai Mushkil (২০১৬)’ এর মত করে এই সিনেমাও বুঝা মুশকিল হয়ে উঠবে আপনার জন্য। অবশ্য নেশায় থাকলে মন ছুঁয়ে যাবে। আলাদা একরকম ঝাঁজ আছে।

আধুনিক প্রেমের গল্পে সত্য/মিথ্যে প্রেমের যে দিক এবং এর মধ্যকার একটি খাঁজকাটা লাইন জীবনের বাঁক যেমন পাল্টে দেয় ঠিক তেমন করে অভীক এবং অন্বেষার জীবনেও তা দেখতে পাওয়া যায়। এই ‘Undefined Name of a Relationship’ বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় ভালোলাগার এবং প্রচন্ড ভীতির।

অভীকের জীবন কিছুটা ‘Sanam Teri Kasam (২০১৬)’ থেকে চুপ থাকা সেই যুবক। কিন্তু এখানে নায়কের কন্ঠে জোর নেই, সুর নেই; অর্থ-বিত্ত-ও নেই। সে ডুবে আছে সুরের আশীর্বাদ এবং গান কখনো জীবন থেকে চলে যাবে না সূত্রের নিষ্ঠুর মিশ্রণে। এটাও বোধহয় বাঙালী ভার্সন।

‘জেনারেশন আমি’ এবং ‘জেন জি’ – এই দুই প্রজন্মকেই হতাশ করেছেন পরমা। কিন্তু নবাগত পরিচালক হিসেবে নিশ্চয় ছাড়া পেতে পারেন। টালিগঞ্জের গল্পে এমন শূণ্যতা দেখে খারাপ লেগেছে। কিন্তু প্রেমের গল্পে নতুনত্ব বলতে হয়তো কিছুই নেই, এই অনুভূতি সব প্রজন্মের জন্যই এক। তবুও ৮০’র দশকের দৃশ্যায়ন এবং সংলাপে আমরা অনেকেই ব্যর্থ এই সিনেমাটি বুঝতে। প্রেমটা বোধগম্য; কিন্তু এ প্রেম বড্ড বেসুরে।

ব্যক্তিগত রেটিং: ৩/১০ (শুধুমাত্র গানগুলো এবং কতিপয় সংলাপের জন্য)। ধন্যবাদ

মেহেদি হাসান (বিকেল)

I'm MD Mehedi Hasan, also known by my pen name Mr. Bikel. I'm the admin of the site Ovizatri - News & Magazine. I am a versatile individual with a professional life that spans various fields. I work as a writer, actor, social worker, radio jockey, web developer, web designer, editor, presenter, blood donor, audio and video editor, photo editor, YouTuber, and drama director. I am also a developer and app developer at Microsoft.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button