মুভি রিভিউ

ওপেনহাইমার: ক্রিস্টোফার নোলানের মাস্টারপিস ও পারমাণবিক বোমার জনকের জীবন

কিলিয়ান মার্ফির অভিনয়ে ওপেনহাইমার: বিজ্ঞানী থেকে মারণাস্ত্রের নির্মাতা

সদ্য মুক্তি পেয়েছে ‘ক্রিস্টোফার নোলান’ পরিচালিত ‘ওপেনহাইমার’ সিনেমাটি। যেখানে প্রধান চরিত্রে (ওপেনহাইমার) অভিনয় করেছেন ‘কিলিয়ান মার্ফি’। আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, যে মানুষটা পারমাণবিক বোমার মত মারণাস্ত্র আবিষ্কার করেছেন। যা এমন এক হাতিয়ার যার একটি বিষ্ফোরন একটি শহরকে ধূলিসাৎ করতে যথেষ্ট। এমন এক মহাশক্তির আবিষ্কারক বাস্তব জীবনে কেমন ছিলেন?

ওপেনহাইমার: একজন খারাপ মানুষ ছিলেন কি?

হয়তো আমাদের উত্তর হবে এককথায় তিনি একজন খারাপ মানুষ! আর এই সিনেমাটি মূলত পারমাণবিক বোমা আবিষ্কারক ‘জুলিয়াস রবার্ট ওপেনহাইমার’ এর একটি বায়োপিক যার গল্প ‘The American Prometheus’ নামক বইয়ের উপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছে।

সিনেমার কাহিনী এবং উপাদান

এটি এমন কোনো সিনেমা নয় যেখানে কিভাবে পারমাণবিক বোমা তৈরী করা হয়েছিলো তা দেখানো হয়েছে। আবার এমন কিছু দেখানো হয়নি যেখানে কেউ এমন একটি হাতিয়ার তৈরী করতে পারছে না সেখানে সিনেমার হিরো তার অসাধারণ ট্যালেন্ট দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করে দিলেন।

গল্পের সারমর্ম

প্রকৃতপক্ষে, সিনেমার গল্পের সারমর্ম সেই গ্রন্থের (The American Prometheus) নামের মধ্যেই বিদ্যমান। এখানে Prometheus হলেন একজন গ্রীক দেবতা যিনি অন্যান্য দেবতাদের কাছ থেকে আগুন বা সূর্যের শক্তি নিয়ে মানবজাতিকে প্রদান করেন, ফলে তাকে অন্যান্য দেবতারা কঠিন শাস্তি দেন। ঠিক এমনভাবেই কিছুটা সাজানো হয়েছে ওপেনহাইমার সিনেমার গল্প।

ওপেনহাইমারের জীবন

এখানে বিজ্ঞানী ওপেনহাইমার এর জীবন কিভাবে শুরু হয়, কীভাবে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন এবং মার্কিন পারমাণবিক প্রজেক্ট ম্যানহাটন এ যুক্ত হন ও এই মিশনের প্রধান হয়ে ওঠেন তা দেখানো হয়েছে। তবে সিনেমায় ওপেনহাইমার এর পারমাণবিক বোমা সফলভাবে বানানো এবং তার পরীক্ষামূলক বিষ্ফোরণ ছাড়াও অনেক কিছু রয়েছে দেখার মত।

পারমাণবিক বোমার পরিণতি

কেননা একবার যখন মানবজাতির হাতে এমন শক্তিশালী একটি হাতিয়ার এসে যায় তখন তারা সেটির কিরূপ ব্যবহার করে কিংবা এর ফলাফল দেখে সেই মরণাস্ত্রের নির্মাতা যখন এসবের বিরোধিতা করেন তখন তার সাথেই বা কি করা হয় তা দেখানোটাও জরুরী।

ক্রিস্টোফার নোলানের পরিচালনা

আর তার চেয়েও বড়কথা সিনেমার নির্মাতা যখন ক্রিস্টোফার নোলান, আর যারা নোলানের বিগত সিনেমা ইতোপূর্বে দেখেছেন তারা ভালোই জানেন যে তার সিনেমা কখনোই সাদামাটা চিত্রনাট্য অনুসরণ করে না।

টাইমলাইন এবং সংযোগ

পরিচালক ওপেনহাইমার এর টাইমলাইনকে এত ছোট ছোট করে বিভক্ত করে একটার পর একটা অংশের সংযোগ স্থাপন করেছেন তা অবশ্যই উপভোগ করার মত। তবে এই সিনেমার বিভিন্ন অংশ আলাদা আলাদা সাজিয়ে যেভাবে একটি গোলক ধাঁধাঁ সৃষ্টি করা হয়েছে তা দর্শক হিসেবে আপনাকে বিভ্রান্তিকর অবস্থায় ফেলে দিতে বাধ্য।

সিনেমার উপাদানসমূহ

সিনেমায় অ্যাকশন সিনের তেমন সমৃদ্ধি নেই। তবে অনেক গভীর ও অর্থবাচক সংলাপের উপস্থিতি আছে। ফলে এক মহূর্তের জন্য মনোযোগ এদিক-ওদিক হলেও কথাগুলো মাথার ওপর দিয়ে যেতে পারে। সিনেমার চরিত্র তাদের একে-অপরের সাথে কি কথা বলছে বা পেছনে কি তথ্য দেখানো হচ্ছে তা স্থির মনোযোগ সহকারে দেখতে পারলে তবেই এর সার্থকতা।

অভিনেতাদের কেমিস্ট্রি

বিশেষ করে কিলিয়ান মার্ফি আর ম্যাট ডেমন এর মধ্যকার কেমিস্ট্রি সিনেমায় যেন আলাদা একটি আভিজাত্য এনে দেয়। রবার্ট ডাউনি জুনিয়র ও এমিলি ব্লান্ট এদের অল্প সময়েও একদম টপ নচ কাজ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

সাউন্ড ডিজাইন এবং ভিজুয়ালস

সিনেমার সাউন্ড ডিজাইন অনবদ্য! বিশেষ করে ওপেনহাইমার যখন কোনো কিছু ভাবতে বা চিন্তা করতে থাকে সেই সময়কার যে থিম ছিলো তা যেন একদম জীবন্ত ও দৃশ্যমান করে তুলছিল এর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। যখন প্রথমবারের মত বোমা বিষ্ফোরণের দৃশ্য দেখানো হয় সেখানকার সিনেমাটোগ্রাফি আর পেছনের মিউজিক যেন হার্ট অ্যাটাক এনে দিচ্ছিলো।

ভিজুয়াল এফেক্টস

সিনেমার ভিজুয়ালস ছিলো এককথায় অসাধারণ। প্রথমত IMAX ক্যামেরার যাদু আর VFX টিমের নিখুঁত কাজ, এসব মিলিয়ে একটি রোমাঞ্চকর একটি অভিজ্ঞতা দিয়েছে সিনেমাটি। সিনেমায় দেখানো সাদা-কালো দৃশ্য সমূহ ছিলো ওপেনহাইমারের বাস্তব জীবনের কিছু ডকুমেন্টারি যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই সিনেমায়।

সিনেমার প্রভাব

এটি একটি জটিল চিত্রনাট্য, ভারী ও গভীর অর্থবাচক সংলাপ বিশিষ্ট একটি ফিল্ম। যারা একটি সিনেমায় ভরপুর কমেডি, ড্রামা, অ্যাকশন বা মারধার দেখতে ভালোবাসেন তাদের জন্য এই সিনেমা নয়। তবে একটি সত্যিকারের বায়োপিক কেমন দেখতে হয় বা কেমন করে বানাতে হয় তা দেখতে চাইলে এই সিনেমাটি আপনার জন্য।

নোলানের ভক্তদের জন্য

আর যারা ‘ক্রিস্টোফার নোলান’ এর কাজ দেখে অভ্যস্ত এবং তার সিনেমাটোগ্রাফি ভালোমত ধরে ফেলতে পারেন তাদের জন্য বেস্ট একটি ফিল্ম।

ওপেনহাইমারের জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা

ঘটনা বিবরণ
জন্ম ২২ এপ্রিল, ১৯০৪
শিক্ষা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়
পারমাণবিক বোমার প্রজেক্ট ম্যানহাটন প্রজেক্ট
মৃত্যু ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৭

ওপেনহাইমারের প্রভাব

ওপেনহাইমারের কাজ এবং তার জীবন মানবজাতির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। তার আবিষ্কার এবং তার জীবনের ঘটনাবলী আজও বিজ্ঞান এবং ইতিহাসের এক অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।

ওপেনহাইমারের প্রভাব: কিছু তথ্য

  • পারমাণবিক বোমা: ওপেনহাইমার পারমাণবিক বোমার জনক হিসেবে পরিচিত।
  • ম্যানহাটন প্রজেক্ট: তিনি ম্যানহাটন প্রজেক্টের প্রধান বিজ্ঞানী ছিলেন।
  • বিজ্ঞানের অগ্রগতি: তার কাজ বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে।

উপসংহার

‘ওপেনহাইমার’ সিনেমাটি একটি জটিল চিত্রনাট্য, ভারী ও গভীর অর্থবাচক সংলাপ বিশিষ্ট একটি ফিল্ম। যারা একটি সিনেমায় ভরপুর কমেডি, ড্রামা, অ্যাকশন বা মারধার দেখতে ভালোবাসেন তাদের জন্য এই সিনেমা নয়। তবে একটি সত্যিকারের বায়োপিক কেমন দেখতে হয় বা কেমন করে বানাতে হয় তা দেখতে চাইলে এই সিনেমাটি আপনার জন্য।

আর যারা ‘ক্রিস্টোফার নোলান’ এর কাজ দেখে অভ্যস্ত এবং তার সিনেমাটোগ্রাফি ভালোমত ধরে ফেলতে পারেন তাদের জন্য বেস্ট একটি ফিল্ম।

আমিনুর রহমান

My name is Âminur Rahman. I am a content writer at ovizatri.com, where I also manage the English version of this news and magazine website as a sub-editor. I am learning development skills such as programming and coding, and I am pursuing a degree in Political Science from Rajshahi College, Rajshahi, Bangladesh. I have a passion for writing movie and series reviews. Please check out my writings and stay updated with ovizatri in both English and Bengali.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button