লাইফস্টাইল

সোশ্যাল মিডিয়ার ছায়া: বাস্তব জীবনের সম্পর্কের সংকট

ডিজিটাল যুগে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করার উপায়

বিজ্ঞাপন

বর্তমান ডিজিটাল যুগে সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটি আমাদের বন্ধু-বান্ধব, পরিবার এবং পরিচিতদের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করতে সাহায্য করে। কিন্তু, এই ভার্চুয়াল দুনিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের বাস্তব জীবনের সম্পর্ক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সম্প্রতি একটি ছেলের আত্মহত্যার ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে। এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে এবং কীভাবে আমরা ভার্চুয়াল ও বাস্তব জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারি।

পিতার পরামর্শ

তার পরিবর্তে তাকে পরামর্শ দেন যতো ইচ্ছে ততো বন্ধু বাড়াতে ও তাদের সঙ্গে সংযোগ রাখতে এবং গল্প, খেলাধুলা করতে।

তিনি ছেলেকে বললেন:

  • মোবাইলের ব্যবহার কমানো: “তুমি সব সময় মোবাইল নিয়ে থাকো। নিজের জন্য কিছু করবার, কিছু নতুন চিন্তা ভাবনা কেন করো না! নিজের জন্য সময় বের করো, বই পড়ো, খানিকটা দৌড়ে এসো, ইচ্ছে হলে জিম যাও, ছবি আঁকো, গান গাও, সাঁতার কাটতে সুইমিং ক্লাবে ভর্তি হতে পারো।”
  • আত্মার তৃপ্তি: “এই সব তোমার আত্মা কে তৃপ্ত করবে। তোমার বন্ধুদের, পরিচিতদের চিঠি পত্র লেখো, তোমার কত আত্মীয়জন আছে, তুমি কি ঠিক করে জানো! তাদের জানো, তাদের কাছে যাও, পরিচিত হও।”

ডিজিটাল সঞ্চার থেকে দূরে থাকা

এই ব্যাপারগুলো শুধু যে তোমায় তরতাজা করে দেবে, তাই নয়, তোমায় ডিজিটাল সঞ্চার থেকে এক পা হলেও দূরে রাখবে। এতোগুলো এক নাগাড়ে পিতার ভাষণ শোনবার পর সেই ছেলেটি বললো- তার আসল ও সত্যিকার সম্পর্ক তার ‘ফোন’ এর সঙ্গে, হাতে বিনা ফোনে তার যেন মনে হয় দম বন্ধ হয়ে নিঃশ্বাস আটকে আছে।

সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব

এই একই অবস্থা অধিকাংশ শহরের বেশীর ভাগ ঘরে ঘরে! যদি বিজ্ঞানকে মান্য করা যায়, তাহলে কোনো এক সময়ে স্রেফ ১৫০টি ব্যক্তিগত সম্পর্ক সামলানো যায়। তাহলে সেখানে সোশ্যাল মিডিয়া কীভাবে ফিট হয়?

বিজ্ঞাপন

এই নেটওয়ার্কে তো আমাদের হাজারের বেশী কনেকশন আছে! এই রকম বলা হয় বা মানা হয় যে আমাদের ‘ব্রেন’ বা মস্তিষ্ক পরিচিতদের সঙ্গে অনলাইন চ্যাট আর সামনা সামনি কথাবার্তায় ‘তফাৎ’ করতে পারে।

অনলাইন সম্পর্কের প্রভাব

কিন্তু তার জন্যও কিছু সংজ্ঞামূলক শক্তির প্রয়োজন। এর প্রকৃত পক্ষে নিষ্কর্ষ বেরুল যে সামনে উপস্থিত জনের সঙ্গে বন্ধুত্ব প্রগাঢ় করার জায়গায় কিছু পরিমাণ মিত্রতার শক্তি বা এনার্জি এই অনলাইন সম্পর্কের জন্য খরচা হয়ে যায়।

সময়ের অপচয়

অনলাইন আমাদের সময় লুটে নেয় আর আমাদের আসল জীবনে ব্যয় করার কিছু মাত্র মুহূর্তই রয়ে যায়। সোশ্যাল মিডিয়া নিশ্চিত রূপে আমাদের জুড়ে থাকার বোধ তো করায় কিন্তু কোন অনুমাণ কি লাগানো যায় যে কতটা?

মেন্টাল হেলথের প্রভাব

সেই জায়গায় আমাদের আসল জীবনের দুনিয়ার সম্পর্কগুলোতে ভালো প্রভাব ফেলে। সেখানে সোশ্যাল মিডিয়ার যদি সমস্ত লাভের খাতা দেখি, তবুও নজরে পড়ে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর অশুভ প্রভাব ফেলে- এটাই সোশ্যাল মিডিয়ার কালো ছায়া বলা যায়।

সমাধান

আলোচনার এতখানি এগিয়ে এসে বলা যায় যে হতে পারে ছেলেটি সোশ্যাল মিডিয়ার থেকে আলাদা হবার কথা ভাবতেও পারেনি। অথচ পুরোপুরি আলাদা হতে তাকে বলা হয়নি কিন্তু। তার পিতা সোশ্যাল মিডিয়ার সংখ্যা সীমিত রেখায় অনেকবার কথাও বলেছিলেন।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু ছেলেটি ভার্চুয়াল দুনিয়া জুড়ে থাকবার সঙ্গে সঙ্গে তার থেকে দূরে থাকবার কথা অস্বীকার করেছিলো। এটাও হতে পারে ছেলেটি বুঝতেই পারেনি সোশ্যাল মিডিয়া কন্ট্রোল কিভাবে করা যায়, যা না কি অনেক বয়স্ক, অভিজ্ঞজনও পারেন না!

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সীমা

আমেরিকায় ২০১৮ তে এক সার্ভেতে পাওয়া গিয়েছে, ৪২% ফেসবুক ব্যবহারকারী নিজের “পেজ” চেক করতে কম করেও কয়েক সপ্তাহ ব্রেক নিয়েছে ও এক-তৃতীয়াংশ লোক ‘অ্যাপ’ ডিলিট করে দেয়। সত্যি, কিছু প্রকৃত কারণ তো আছে যার ফলে আমরা সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়তে পারিনা বা ছাড়তে চাই না।

এটাও এক চিন্তা করার বিষয় আমরা সোশ্যাল মিডিয়া কেন ছাড়তে চাই না বা ছাড়তে পারি না! কিন্তু এখনো আমরা এক কদম ফিরে দেখতে পারি তথা সময় সীমা কম করবার জন্য ব্যক্তিগত লক্ষ নির্ধারণ করতে পারি।

ভার্চুয়াল ও বাস্তব জীবনের সমন্বয়

ভার্চুয়াল বেশ ধরে জুড়ে থাকা ও ব্যক্তিগত রূপে সবার সঙ্গে আলাদা আমাদের লোকসানের স্থিতিই আনতে পারে। এই জন্য এক ছন্দবদ্ধ লয় নির্ধারণ করুন আর ধীর গতিময়তায় সোশ্যাল মিডিয়া আর আসল জীবনের সমন্বয় করে জীবনের আনন্দ নিতে থাকুন।

উপসংহার

আমরা এক সময় এক এমন দুনিয়ায় থাকতাম যখন ‘বুড়ো আঙুলের ছাপ’ এখনকার, আজকের দুনিয়ার ‘লাইকস’ তৈরি হয়েছে। সত্যিই কি আমাদের নিজেদের আঙুলের ওপর এতো জ্ঞান রাখবার প্রয়োজন আছে?

বিজ্ঞাপন

যাকে বলে বিভিন্ন বিকল্পের নামে এতো “বোম্বারী” কে হজম করার মানসিক রূপে ক্লান্ত করে দেয় না? এই জন্য কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয় যে বাচ্চারা এতো নিঝুম হয়ে থাকা অবস্থায়, এতো ক্লান্ত চেহারায় নজরে আসে!

এটা এই জন্য যে তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশীর ভাগ অন্যদের জীবন নিয়ে চিন্তা করে, ভাবে, সময় তাতেই কেটে যায়, সেই অন্যদের তারা জানুক, না জানুক!

ছবি: Image by freepik

বিজ্ঞাপন


Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

শ্রীমতী স্মৃতি দত্ত

অ্যাডভোকেট, লেখিকা, বঙ্গীয় সাহিত্যের সদস্য, কীবোর্ড প্লেয়ার, অ্যামওয়ে ব্যবসার মালিক। আমার লেখা সর্বশেষ বইয়ের নাম, ‘কেমেষ্ট্রি প্র্যাকটিক্যাল ও টি.ভি শো’ এবং ‘লেনিন সাহেবের সাথে দেখা’ বইটি Flipkart -এ নেবার জন্য ক্লিক করুন: https://www.flipkart.com/lenin-saheber-sathe-dekha/p/itmc9bfae4c39392

আপনার মতামত জানান?

বিজ্ঞাপন
Back to top button

Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading