দর্শন

রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ-সুবিধা: শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সুবিধা ও সামাজিক প্রভাব

কেন রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা গুরুত্বপূর্ণ? জানুন বিভিন্ন সুবিধা ও তাদের প্রভাব

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করানো হয় কেন? শুধু তাই নয়, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করানোর পাশাপাশি তাদেরকে নানান ধরণের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়। এই নিবন্ধে আমরা এই সুযোগ-সুবিধাগুলো এবং তাদের সামাজিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব।

রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ-সুবিধা

রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করানো হয় কেন? শুধু তাই নয়, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করানোর পাশাপাশি তাদেরকে নানান ধরণের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়। যেমন:

  • ফ্রি ট্রান্সপোর্টেশন: বাস সরবরাহ করা হয় ফ্রি-তে যাতায়াত করার জন্য।
  • ফ্রি মেডিকেল সার্ভিস: বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে প্রায় ফ্রি-তে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
  • ফ্রি রিক্রিয়েশন ফ্যাসিলিটি: খেলাধূলা ও বিনোদনে ভালো ভূমিকা রাখার জন্য ফ্রি-তে বিভিন্ন প্লাটফর্মের উপস্থিতি বিদ্যমান (যেমন: স্টেডিয়াম, অডিটোরিয়াম, টিএসসি ইত্যাদি)।
  • কম খরচে থাকা ও খাওয়া: বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলোতে থাকার জন্য নূন্যতম খরচ সহ খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যান্টিনে কম খরচে খাবার দেওয়া হয়।
  • স্কলারশিপ ও বৃত্তি: ভালো নম্বর পেলে স্কলারশিপ সহ একাধিক ধরণ ও রকমের বৃত্তি পর্যন্ত প্রদান করা হয়।
  • ওয়াই-ফাই সার্ভিস: ইন্টারনেট সার্ভিসের জন্য ওয়াই-ফাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে বিস্তৃত।

সুযোগ-সুবিধার পেছনে কারণ

কোনকিছু ফ্রি-তে প্রাপ্ত বস্তু মানেই যে ভেজালযুক্ত তা বলার চেষ্টা করছি না। কিন্তু কৌতুহল জাগে যে, এত এত ‘ফ্রি’ সেবা একটি রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় না দিলেও পারতো। পড়াশোনা করার জন্য যে কোর্স ফি বা শিক্ষদের বেতন সেটাও তো রাষ্ট্র বহন করছে। তাহলে কেন এই ‘ফ্রি’ সেবাসমূহ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া হচ্ছে?

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা-নিরিক্ষা

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ও তথাকথিত শায়িত্ব শাসনে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশের সবচেয়ে ‘গ্রেট মাইন্ডস’দের তাদের নির্দিষ্ট পরীক্ষা-নিরিক্ষার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই করে নিচ্ছে। এবং শুধুমাত্র এই কিছু ৩-৫% শতাংশ ছাত্রছাত্রীদের জন্য এই সমস্ত সেবা সমূহ ফ্রি-তে দেওয়া হয়ে থাকে; সবাইকে কিন্তু নয়।

সুযোগ-সুবিধা প্রদানের কারণ

প্রশ্ন হলো, এই ৩-৫% শতাংশ ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ রাষ্ট্রীয় সেবা সমূহ প্রদান করা হয় কেন? অবশ্য যেটাকে অর্জন হিসেবে দেখানো হয়। আবার বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত শব্দ ‘মেধা’ দ্বারা এক ধরণের ‘যাজকতন্ত্র (Hierarchy)’ প্রদর্শন করা হচ্ছে কেন?

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্র যখন বাছাইকৃত ‘গ্রেট মাইন্ডস’দের নিয়ে কাজ করতে চায় তখন তাকে তার চাহিদা নিয়েও ভাবতে হয়। চাহিদা বিবেচনায় সিট নির্ধারণ করা হয়। যে রাষ্ট্রের চাহিদা তার মোট জনসংখ্যার যত ঠিক ততটাই সিট বরাদ্দ থাকতে পারে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই ক্যালকুলেশন কে বা কারা করেন তা চিন্তার বিষয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিভাগে সিট সংখ্যা বাড়ানোর তাগাদা দেওয়া হয় সেটাও কিন্তু ঐ চাহিদা মোতাবেক।

পরীক্ষা-নিরিক্ষায় বাদ পড়া ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যত

কিন্তু যারা এই পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বাদ পড়েন জরুরী নয় তাদের ‘মেধা’ কম। কারণ আমার মতে, পৃথিবীতে কোন মানুষ মেধাহীন নন। এক্ষেত্রে উক্ত পরীক্ষা-নিরিক্ষায় পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে। যেটা অবশ্য সময় সময় কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বা কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট বিভাগ আপ-টু-ডেট রাখার চেষ্টা করছেন। তবুও যারা বাদ পড়ছেন তারা স্বাভাবিকভাবেই এক ধরণের যাজকতন্ত্রের মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার যাজকতন্ত্র

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন তিনি কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেবা পাবেন না। একই সাথে সমাজও তাকে কম মেধাসম্পন্ন মনে করেন। এবং, বাকি শিক্ষার্থী প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছেন যেখানে পরীক্ষা-নিরিক্ষার জটিলতা কম বা নাই। নিজ টাকা খরচ করে পড়ছেন। এখানে যে এক ধরণের যাজকতন্ত্র তৈরি হচ্ছে তা অস্বীকার করবার জায়গা নাই। কিন্তু একই সাথে আপনি পর্যবেক্ষণ করে এটাও দেখবেন, এই যাজকতন্ত্র মোটামুটি ফাংশনাল।

যাজকতন্ত্রের পিরামিড স্তর

এখানে যে পিরামিডীয় স্তর তৈরি হচ্ছে সেক্ষেত্রে হয়তো খোলাখুলি ভাবে বলা যায়, সবার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান থাকবেই। তারপর বাকি রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। তারপর ক্রমান্বয়ে খুব সম্ভবত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এবং ডিগ্রী কলেজের পর সবশেষে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। আমি এই যাজকতন্ত্র কতটুকু মানি তারচেয়ে বড় কথা হলো, এই যাজকতন্ত্র আমাদের সমাজ ও আমাদের মার্কেট খুব দাম দেয়; এটা অনস্বীকার্য।

যাজকতন্ত্র ও অভিজাততন্ত্র

বাংলাদেশের এই যাজকতন্ত্রের সাথে সবাই ‘অভিজাততন্ত্র (Elitism)’ কে গুলিয়ে ফেলছেন; যা ভুল। কারণ এখানে কারো টাকা-পয়সা থাকলেও তিনি রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বহু চেষ্টা করেন। যখন এই চেষ্টা বিফলে যায় এরপর হতে পারে তিনি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হোন। মানে এই ভর্তির যুদ্ধে অবতারণ ঘটে দেশের সমস্ত শ্রেনীর মানুষদের। সুতরাং এই যাজকতন্ত্রের সাথে অভিজাততন্ত্রের বিশেষ কোনো সম্পর্ক আমার চোখে আমি দেখতে পাচ্ছি না। এছাড়াও আমার দাবী, এই যাজকতন্ত্র মোটামুটি সফল একটি যাজকতন্ত্র। আপনি ১৯৫২ সাল, ১৯৭১ সাল, ১৯৯০ সাল, ২০২৪ সাল এবং বর্তমান সময়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

বিজ্ঞাপন

মিশেল ফুকোর দৃষ্টিভঙ্গি

১৯৭৫ সালে মিশেল ফুকো একটি বই প্রকাশ করেন ‘Discipline and Punish: The Birth of the Prison’ নামে। এই বইয়ের আলোকে যদি এই ‘ফ্রি’ সেবা সমূহ ব্যবচ্ছেদ করা যায় তাহলে আরো অনেক তিতা সত্য জানা যেতে পারে। দরজা বন্ধ করে আবদ্ধ জায়গায় একধরণের সময়ানুবর্তিতা কিছুটা হলেও সহজ।

সময়ানুবর্তিতা ও নজরদারিত্ব

আপনি নিশ্চয় খেয়াল করবেন, বিপ্লব বা বিপ্লবী হবার ধারণা ফেলে আসা পৃথিবীতে শুধুমাত্র হাতেগোনা কিছু মানুষদের মস্তিষ্কে ছিলো। কিন্তু আধুনিক পৃথিবীতে তথ্যের অবাধ প্রবাহের কারণে রাষ্ট্র যদি ‘গ্রেট মাইন্ডস’দের নজরে রাখতে না পারেন তাহলে বিপ্লব ঘটার যে সমূহ সম্ভাবনা এবং সার্বভৌমত্ব হারানোর যে ভয় তা কিন্তু থেকেই যায়। সুতরাং বিপ্লব হওয়ার পূর্বেই বিপ্লবীদের একধরণের প্রোফাইলিং করে তাদের এক ধরণের প্রাইভেট ডিসিপ্লিনে এমন শিক্ষা দেওয়া যা রাষ্ট্রের জন্য কোনোভাবেই ক্ষতিকারক হতে না পারে বা, কম ক্ষতিকারক হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়ানুবর্তিতা

বাস্তব প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ে এত এত ফ্রি সেবা আছে কিন্তু এসবের সাথে যুক্ত আছে ‘ঘড়ি’। আপনি কখন সকালে উঠবেন? কখন ক্লাসে যাবেন? কখন বাসে উঠবেন? কখন থিয়েটারে যাবেন? কখন ফুটবল/ক্রিকেট খেলবেন? কখন গাইবেন? কোন অনুষ্ঠানে কি গান গাইবেন? কখন নাচবেন? হিন্দি না বাংলা না ইংরেজি গানে নাচবেন? – এই সমস্ত কিছুই আপনাকে ঘড়ি ধরে করতে হবে। এবং একই সাথে যে ধরণের পাঠ্যক্রম সাজেস্ট করা হয় সেটাও কিন্তু রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক নীতি-নৈতিকতাকে সাবক্রাইব করে এমন কিছু। মিশেল ফুকো এই সময়ানুবর্তিতা কে বলেছেন, ‘Disciplinary Mechanism’।

সার্বক্ষণিক নজরদারিত্ব ও নরমালাইজেশন

সার্বক্ষণিক নজরদারিত্ব এবং নরমালাইজেশন এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান আছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় যেকোনো বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরণের সিস্টেম ইনস্টল করা থাকে বা থাকবার কথা। কতটুকু কার্যকরী সেটা উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন শুধু জানাতে পারবেন। আপনার মনে হবে আপনার বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ড এর সাথে যা কিছুই করছেন তা প্রাইভেট কিন্তু মূলত এখানে কোনোকিছুই প্রাইভেট নয়। এমনকি আপনি দিনে কতটি বিড়ি ফুঁকছেন সেটাও না।

স্টেডিয়ামে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে কে কবে কত বড় ছক্কা হাকিয়েছেন সেটাও এই প্রতিষ্ঠানগুলোর জানা। আমরা নিজে জানি আমরা কতবড় গাধা বা ঘোড়া। তারপর হয়তো উপর আল্লাহ্‌ জানেন। কিন্তু এই ধরণের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ এর মাঝখানে আছেন যারা আপনার চেয়েও আপনাকে বেশি জানেন।

বিজ্ঞাপন

মিশেল ফুকো এই কনসেপ্টের নাম দিয়েছেন ‘Panopticon’। এটা এক ধরণের নাট্যমঞ্চ। এই নাট্যমঞ্চ এমনভাবে সাজানো যে, অভিনেতা ও অভিনেত্রী একে অপরকে দেখতে পেলেও তারা জানেন না তাদের কে একদল পর্যবেক্ষকও দেখছেন। এই ধরণের নাট্যমঞ্চে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কেন্দ্রীয় চরিত্রে রাখা হয় মূল্যবান বোধ করার জন্য।

শিক্ষার্থীদের উপর প্রভাব

কারণ আপনি যদি বুঝতে পারেন আপনাকে পর্যবেক্ষণ বা নজরদারিত্বে রাখা হয়েছে তাহলে খুব সম্ভব আপনি আপনার প্রকৃত আচরণ প্রকাশ করবেন না। এজন্যই এই গোপন নজরদারিত্বের আশ্রয় নেওয়া হয়ে থাকে। মানে আমি জানি আমি একজন গাধা। কিন্তু আমি কতবড় গাধা সেটা আমার চেয়ে ভালো আমার শিক্ষকগণ জানেন।

মিশেল ফুকো আরো বলার চেষ্টা করছেন, জ্ঞান-ই যদি শক্তি বা ক্ষমতা হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় হলো সেটার পাওয়ার-হাউজ। সুতরাং একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কি ধরণের মূল্যবোধ নিয়ে বেড়ে উঠবেন, কি ধরণের জাতীয়তাবাদ তার মধ্যে থাকবে, কি ধরণের ইতিহাস তিনি জানবেন, কি ধরণের মানসিকতা তার মধ্যে বেড়ে উঠবে, রাষ্ট্রের প্রতি তার সম্মান ও বিভিন্ন সামাজিক নিয়ম-নীতি কীভাবে জন্ম নেবে – এই সমস্ত কিছু রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে ঢুকানো হয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়ার আগের ব্যক্তিত্ব ও বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স শেষ করার পরের ব্যক্তিত্ব খোদ ঐ শিক্ষার্থীও মেলাতে পারবেন না। মানে কিছু না কিছু আপনার মধ্যে থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। উচিত শিক্ষার খাতিরে।

মিশেল ফুকো আরো বলছেন, পানিশমেন্ট বা শাস্তি দেওয়া-ই তো মূল উদ্দেশ্য নয়। তাকে আরো দক্ষতা সম্পন্ন মানুষে পরিণত করাও তো রাষ্ট্রের লক্ষ্য। বিশ্ববিদ্যালয়েও এটাই করা হয়। ‘জিরো’ স্কিল নিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থী চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাজার রকম স্কিল অর্জন করতে পারেন। তাও একদম ফ্রি-তে। এছাড়াও যে প্রত্যাশিত আচরণ চাওয়া হচ্ছে সেটা ঐ শিক্ষার্থীদের থেকে বের করে আনা হয়।

মানে এমন একটি কৃত্রিম পরিবেশ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর সামনে পরিবেশন করা হয় যা তাকে মুগ্ধ করে এবং একই সাথে তা পালন করতেও বাধ্য করে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ কেউ হলিউডের কিছু বোরিং কাল্ট ক্লাসিক সিনেমা দেখার মধ্যে দিয়ে নিজের ক্লাস বাড়ানোর যে চেষ্টা করেন বা আরো ক্লাসিক সব বই নিয়ে হুদাই ঘাটাঘাটি করেন সেটাও কিন্তু এই প্রক্রিয়ার শুরুর অংশ মাত্র। অথবা, আপনার শরীরে নতুন যে বিশ্ববিদ্যালয়ী জামাটা!

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীদের উপর প্রভাব

এখন এসব তিতা কথা এজন্যই বকা যাতে করে আপনি এই ‘Essence’ টা বুঝতে পারেন। আপনি যখন মদ্যপান করে টাল হয়ে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা করছেন তখন আপনি স্রেফ একজন শিক্ষার্থী কে হত্যা করলেন এর মধ্যে বিষয়টি আর সীমাবদ্ধ থাকে না। তিনি একজন ‘গ্রেট মাইন্ডস’দের মধ্যে একজন। তিনি রাষ্ট্রের সরাসরি একটি মূল্যবান শক্তি। একইসাথে তার একাধিক দক্ষতাও থাকতে পারে; যা রাষ্ট্র হারায়।

একজন রিক্সাওয়ালার রিক্সা চালানোর দক্ষতা আছে। কিন্তু এখানে এই দক্ষতার কথা বলা হচ্ছে না। এখানে দক্ষতা বলতে যার বাস্তব প্রয়োগ আছে এবং একই সাথে মার্কেটে বা রাষ্ট্রের কাছে মূল্যবান। অনেকসময় এই ধরণের দক্ষতা অর্জনে লেগে যাতে পারে বছরের পর বছর। আরো সোজা বাংলায়, আপনি রাষ্ট্রের একটি মূল্যবান ব্যক্তিকে নাশ করলেন।

সুতরাং এই আলোচনায় স্বাভাবিকভাবেই রাষ্ট্র এই হত্যাকাণ্ড কে মোটেই সহজভাবে নেবে না। কারণ রাষ্ট্রের সরাসরি খরচ আছে তার পেছনে। রাষ্ট্র তাকে বড়-ই করছে সুনির্দিষ্ট কিছু কাজ করে নেবার জন্য। আপনি রহিম না করিম তাতে রাষ্ট্রের অত যায় বা আসে না যতটা রাষ্ট্রের সম্পত্তি নষ্ট হলে তার যায় বা আসে। তাই তার মিডিয়া কভারেজ বেশি করা হতে পারে। তার নির্দিষ্ট কমিউনিটি কিন্তু গ্রেট মাইন্ডস’দের কমিউনিটি তারাও মোটেই চুপ থাকবেন না।

সোশ্যাল মিডিয়া তো বটেই মেইনস্ট্রিম মিডিয়া থেকে প্রশাসনকেও সার্বক্ষণিক ভাবে চাপে রাখবেন। কারণ এই হত্যা সরাসরি কিন্তু এই গ্রেট মাইন্ডস’দের কমিউনিটির উপর একধরণের থ্রেট। বাকিটা আপনারা যা ভালো মনে করেন। তবে এর সাথে অভিজাততন্ত্রের কোনো লিংক আমি খুঁজে পেতে ব্যর্থ।

উপসংহার

রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করানো হয় কেন? শুধু তাই নয়, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করানোর পাশাপাশি তাদেরকে নানান ধরণের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়। এই সুযোগ-সুবিধাগুলো শিক্ষার্থীদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, এই সুযোগ-সুবিধাগুলো শুধু একটি উপহার নয়, বরং একটি যাজকতন্ত্রের অংশ যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে নির্দিষ্ট মূল্যবোধ ও আচরণ প্রতিষ্ঠা করে। এই যাজকতন্ত্র রাষ্ট্রের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নীতি-নৈতিকতাকে সাবক্রাইব করে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট মানসিকতা ও দক্ষতা গড়ে তোলে।

বিজ্ঞাপন

এই নিবন্ধে আমরা রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ-সুবিধা, যাজকতন্ত্র ও শিক্ষার্থীদের উপর এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি, এই আলোচনা আপনার জন্য উপযোগী ও জ্ঞানবর্ধক হবে।


Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

মেহেদি হাসান (বিকেল)

প্রধান সম্পাদক, অভিযাত্রী

আপনার মতামত জানান?

বিজ্ঞাপন
Back to top button

Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading