Uncategorized

চুপ থাকার জাদু: কীভাবে নিঃশব্দতা বাড়ায় সুস্থতা

কীভাবে চুপ থাকা আমাদের জীবনকে বদলে দিতে পারে?

বিজ্ঞাপন

কথা বলা ভালো তবে চুপ থাকারও উপকারিতা আছে। এটি বিজ্ঞানসম্মত কথা। অর্থাৎ গবেষকদের একাংশের মতে, চুপ থাকলে দুশ্চিন্তা কমে আর এতে কর্মক্ষমতা বাড়ে। আর কথা বলা অবশ্যই ভালো। কারণ তা মনের ভাব প্রকাশ করতে সাহায্য করে। কিন্তু কিছু কথা নিজের মনের সঙ্গেও বলা উচিত। এতে মস্তিষ্ক ভীষণভাবে উপকৃত হয়।

চুপ থাকার উপকারিতা

১. মস্তিষ্কে নতুন কোষ জন্মায়

একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়েছে যে, নিয়ম করে প্রতিদিন যদি কয়েক মিনিট চুপ থাকা যায় তবে তা গান শোনার থেকেও বেশি স্বস্তি দেয় মানুষের মস্তিষ্ককে এবং এতে মস্তিষ্কে নতুন সেলের জন্মহার অনেকাংশেই বৃদ্ধি পায়। এতে ব্রেনের নিজের কাজগুলো সঠিকভাবে করতে বা ব্রেনের ক্ষতগুলোকে সারিয়ে তুলতে সুযোগ পায়। আর এই নতুন কোষগুলো জন্ম নেয় মস্তিষ্কের হিপোকম্পাসে। ফলে আমাদের নতুন কিছু শেখার ক্ষমতা বেড়ে যায় ও স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটে।

২. জ্ঞান বিকাশে সহায়তা করে

সারাদিনের সকল ঘটনা প্রবাহ এলোমেলোভাবে আমাদের মস্তিষ্কে জমা হয়। বিভিন্ন কারণে সেগুলো সঠিকভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কিন্তু চুপ থাকার ফলে সেগুলো স্তরে স্তরে আমাদের মস্তিষ্কে গেঁথে যায়। ফলে তখন আমরা সেখান থেকে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানলাভ করে থাকি। তাই কয়েক মিনিটের নীরবতা মানব শরীরে জ্ঞানের বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে। আর এর ফলে ভাষার দক্ষতাও বাড়ে।

বিজ্ঞাপন

৩. মনসংযোগ বাড়ায়

মানব জীবনে মনঃসংযোগ হওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আর এই মনঃসংযোগ বাড়াতে কয়েক মিনিট চুপ থাকাকে বা নিঃশব্দতাকে সঙ্গী করা উচিত। যোগব্যায়ামের মাধ্যমে কয়েক মিনিট চুপ থাকার অনুশীলন করা যেতে পারে। এতে করে মনোসংযোগ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে কর্মক্ষমতাও।

৪. মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে

যখন মানুষ অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো বিষয়ে উত্তেজিত হয় তখন তার স্ট্রেস লেভেলও বেড়ে যায়। আর তখনই যদি একটা নিস্তব্ধ জায়গায় গিয়ে কিছুক্ষণ বসে বড় বড় শ্বাস নেয়া যায় তবে দেখা যাবে যে, অল্প সময়ের মধ্যেই মানসিক চাপ অনেকটা কমে যাবে। মাত্রাতিরিক্ত শব্দ মস্তিষ্ককে বিচলিত করে তোলে। এর ফলে সারা শরীরে একটা বিরূপ প্রভাব পড়ে। আর নিঃশব্দতা ব্রেণকে শান্তি প্রদান করে, যা মানসিক চাপ দূর করতে সহায়তা করে।

৫. সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়

বিজ্ঞাপন

চুপ থাকার ফলে মানুষের মনের পঞ্চ ইন্দ্রিয় সঠিকভাবে কাজ করার সুযোগ পায়। লেখক, কবি, চিত্রশিল্পী, কিংবা যে কোনো সৃজনশীল মানুষ চুপ থাকার মাধ্যমে তাদের কল্পনাগুলোকে সৃষ্টি করে থাকেন। তাই শিশুদেরকে সৃজনশীল হতে প্রতিদিন কিছুটা সময় চুপ থাকা অনুশীলন করানো যেতে পারে।

৬. অনিদ্রার সমস্যা দূর করে

অতিরিক্ত চাপের কারণে মানুষের অনিদ্রার সমস্যা হয়ে থাকে। শারীরিক ও মানসিক চাপের কারণে মানুষের ব্রেইন নিরন্তর উদ্দীপ্ত ও উদগ্রীব হয়ে পড়ে। আর এতেই অনেকের অনিদ্রার সমস্যা দেখা দেয়। আধুনিক গবেষণা অনুসারে অনিদ্রার এই সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি পেতে রোজ নিয়ম করে অন্তত দু’ঘন্টা চুপ থাকা উচিত। এছাড়াও কিছুটা সময় চুপ করে থাকলে মানাসিক অস্থিরতা কমে যায়। ফলে রক্তচাপ স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকে। আর ব্লাড প্রেসার নর্মাল থাকলে হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও থাকে না। সেজন্য সুস্থভাবে দীর্ঘদিন বাঁচতে প্রতিদিন কম করে হলেও ২ থেকে ৩ মিনিট একেবারে চুপ থাকার চেষ্টা করা উচিত।

৭. সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায়

চুপ থাকার মাধ্যমে আমরা অন্যদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে শিখি। এটি আমাদের সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে এবং সম্পর্কগুলোকে আরও মজবুত করে। যখন আমরা অন্যদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনি, তখন তারা আমাদের প্রতি আরও বেশি আস্থা ও সম্মান প্রদর্শন করে।

বিজ্ঞাপন

৮. আত্মবিশ্বাস বাড়ায়

নিয়মিত চুপ থাকার অভ্যাস আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়তা করে। এটি আমাদের নিজস্ব চিন্তা ও অনুভূতিগুলোকে আরও পরিষ্কারভাবে বুঝতে সাহায্য করে, যা আমাদের আত্মবিশ্বাসকে মজবুত করে।

যে যে জায়গাগুলোতে মানুষের চুপ থাকা জরুরি

১. কোনো সমস্যার কথা বলার সময়

যখন কেউ তার সমস্যার কথা শেয়ার করে, অথবা তার ভেতরে চলতে থাকা অনুভূতিগুলো প্রকাশ করে তখন সেই সময় খুব দ্রুত কোন উত্তর না দিয়ে, ঠিক ভুল বিচার না করে, শুধুমাত্র তার কথাগুলো চুপ করে মন দিয়ে শোনা উচিত। এই মুহূর্তগুলোতে আপনার পরামর্শের চেয়েও তার জন্য বেশি মূল্যবান ওষুধ হচ্ছে এই চুপ থাকাটা।

২. অর্থহীন বিতর্কিত আলোচনা বা অপ্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে

বিজ্ঞাপন

আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে থাকি। তার অনেকটায় ঘটে অর্থহীন বিতর্কিত আলোচনা বা অপ্রাসঙ্গিক বিষয় থেকে। আর এই ক্ষেত্রে বুদ্ধিমান মানুষ প্রাসঙ্গিক বিষয়ে অভিজ্ঞতা শেয়ার করে থাকেন এবং অপ্রাসঙ্গিক বিষয়গুলি মুচকি হেসে এড়িয়ে যান। তাই কোনো অর্থহীন বিতর্কে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। সুতরাং সেক্ষেত্রে চুপ থাকাটাই শ্রেয়। এতে মেধা পরিশ্রম যেমন কমে তেমনি উন্নত পার্সোনালিটি প্রকাশ পায়।

আজ এই পর্যন্তই। আপনারা সবাই ভালো থাকুন এবং সুস্থ থাকুন। আর আপনারাও আপনাদের মূল্যবান লেখাগুলো প্রকাশ করতে পারেন ‘অভিযাত্রী’ এর মাধ্যমে। ধন্যবাদ 😊


Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

সেলিনা আক্তার শাপলা

আমি একজন লেখিকা ও ব্লগার। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর দর্শন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছি।

Related Articles

Leave a Reply

বিজ্ঞাপন
Back to top button

Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading