সম্পাদকীয়

১% এর মধ্যে থাকার লড়াই: ৩টি ভয়ানক মার্কেট এবং অর্থ, স্বপ্ন ও ঝুঁকির মেলবন্ধন

ঝুঁকিপূর্ণ বাজারে অসম্ভব সাফল্যের প্রলোভন: ক্ষতির পরও কেন আমরা বারবার ফিরে আসি?

- Advertisement -

এমন অনেক মার্কেট আছে যেখানে সফলতার চান্স ১-১০% শতাংশ সর্বোচ্চ। কিন্তু তবুও এসব মার্কেটের সংখ্যা চারপাশে দিনদিন বাড়ছে, কমছে না। সবার একটাই নিয়ত, আর তা-হলো, “আমিও একদিন সফল হবো।” কিন্তু এই আর্থিকভাবে সফল হবার চক্করে পড়ে অনেকেই হচ্ছেন নিঃস্ব। কথায় আছে, “Time is Money.”

কিন্তু আমাদের জীবনের প্রত্যাশা তো কম নয়। তাই অনেকেই আমরা সংক্ষিপ্ত ও সহজ তরিকা চাই যা মূলত বাস্তবে বিদ্যমান নাই। কারণ এক জীবনে একজন মানুষের ঠিক কত টাকার প্রয়োজন আমাদের জানা নাই। কারো জন্য ১ কোটি টাকা যথেষ্ট হতে পারে, আবার কারো জন্য ১ হাজার কোটি টাকাও যথেষ্ট নয়!

ফরেক্স ট্রেডিং এমন একটি মার্কেট যেখানে প্রায় ৯০%-৯৫% শতাংশ মানুষ মার্কেটের ভুল প্রেডিকশনের কারণে টাকা হারান। মাত্র ৫%-১০% শতাংশ মানুষ জিতে থাকেন; অন্তত পরিসংখ্যান তো তাই দেখাচ্ছে। কিন্তু এই মার্কেট কত বড় আমাদের কি কোন ধারণা আছে? প্রতিদিন এই মার্কেটে মোটাদাগে নূন্যতম ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের ট্রেড করা হয়। এই বিশাল মার্কেটে এই বিশাল অঙ্কের ক্ষতির পরেও মানুষ ফের ফরেক্সে ট্রেড করেন।

আমরা সবাই নিজেকে তখন হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা ‘The Pursuit of Happyness’ এর বিখ্যাত অভিনেতা উইল স্মিথ হিসেবে নিজেকে কল্পনা করতে থাকি। মনে মনে ভাবি, “আপনা টাইম আয়েগা, আচ্ছে দিন আয়েগা…”

আমেরিকার একটি সংস্থা আছে যারা একাধিক স্টার্টআপে বিনিয়োগ করে থাকেন। এদের নাম হচ্ছে, ‘Venture Capital (VC)’। এই ভেঞ্চার ক্যাপিটালে একাধিক কোম্পানি টাকা দিয়ে থাকেন। এরমধ্যে আছে HP, Microsoft, Apple ইত্যাদি সহ একাধিক ধনী ব্যক্তি। এরকম সংস্থা এখন বহু দেশে দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশেও খুব ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও শুরু হয়েছে। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, এরাও জানেন যে, বিনিয়োগ করা সকল স্টার্টআপদের মধ্যে নূন্যতম ৭৫% শতাংশ ব্যর্থ হবে। মাত্র ২৫% শতাংশ নতুন স্টার্টআপ সফলতার মুখ দেখতে পারে।

- Advertisement -

সুতরাং কোম্পানির পর কোম্পানি খুলছে এবং ক্ষতির পর ক্ষতিও হচ্ছে। তবে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল মনে করে যে, যত বড় রিস্ক নেবে তত বড় সফলতা পাবে। মানে হলো, যদি ২৫% শতাংশ স্টার্টআপও সফল হয় তাহলে তাদের মধ্যে অন্তত ১০% শতাংশ এমন স্টার্টআপ হবে যা মোট বিনিয়োগের ক্ষতি পূরণ করে লাভ এনে দেবে। কিন্তু ভেঞ্চার ক্যাপিটাল তো আর ডুবছে না! এখন আপনার স্টার্টআপ যদি মনিটাইজেশন মডেল অনুসরণ না করে তাহলে হতে পারে সেখানে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের কোন আগ্রহ থাকবে না। আর ব্যক্তি উদ্যোগে নেওয়া স্টার্টআপদের সফলতা মাত্র ১%-৫% শতাংশ।

পুনরায়, এই বিশাল ক্ষতি দেখেও বাংলাদেশ এবং বিশেষ করে ভারত বিশাল স্টার্টআপ শুরু করেছে এবং ব্যর্থতার স্বীকার হচ্ছে। Paytm এবং বাইজুস এর মত অনেক বড় বড় স্টার্টআপ বাজে ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু পয়েন্ট হচ্ছে, হোক কোন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল টাকা দিক বা না-দিক আমরা নতুন নতুন কোম্পানি খুলেই যাচ্ছি। সর্বশেষ বাংলাদেশের স্টার্টআপ ‘OneFlix’ শুধু ব্যর্থ হয় নাই, ওদের ভুল পরিকল্পনার কারণে এখন জেলে সময় কাটাচ্ছে। আরো একটি ভুলভাল স্টার্টআপ ‘ইভ্যালি’ বর্তমানে দেউলিয়া। কিন্তু নতুন কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন হওয়া কি বন্ধ হয়েছে? না, কারণ আমরা সবাই ঐ ১% শতাংশের মধ্যে থাকতে চাই।

ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো এরকম আরো একটি মার্কেট। বর্তমানে ভার্চুয়াল ওয়ালেট কমবেশি সবাই ব্যবহার করছেন। ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে শুরু থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১ বিলিয়নের বেশি মানুষ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এই মার্কেট এখন এত বড় যে কতিপয় উন্নয়শীল দেশ বা চীন দেশের মোট রিজার্ভের কাছাকাছি।

২০২২ সালের তথ্য মতে ক্রিপ্টোকারেন্সির মোট মার্কেট ২.৪৬ ট্রিলিয়ন ডলার। যেখানে চীন দেশের মোট রিজার্ভ হলো ৩.২৩২ ট্রিলিয়ন ডলার (মে, ২০২৪)। কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতে টাকা বিনিয়োগ এবং সার্ভাইভ করতে পেরেছেন মাত্র ১০% শতাংশ মানুষ। এবং বেশি লাভের মধ্যে আছেন ফের ঐ ১%-৩% শতাংশ মানুষ (সর্বোচ্চ)।

এখানেও আমাদের মানসিক অবস্থা হচ্ছে এরকম যে, মাইনিং করে রাখি, বিটকয়েন তো আর ঝামেলা করবে না! কিন্তু বিটকয়েন অনেক শক্তিশালী ভার্চুয়াল মুদ্রা হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আন-প্রেডিক্টেবল এক্সচেঞ্জ মার্কেটে পরিণত হয়েছে। লাভ হচ্ছে না তা নয়। কিন্তু যখন ক্ষতি হচ্ছে তা ভয়াবহ।

- Advertisement -

শুধু তাই নয়, এই সমস্ত ভার্চুয়াল কয়েন মাইনিং করে ক্ষতির মধ্যে পড়ে এদেশে কেউ কেউ আত্মহত্যা করছে আবার কেউ কেউ জেলও খাটছে। কিন্তু দিনশেষে কি মাইনিং বন্ধ আছে? বিনিয়োগ বন্ধ আছে? না, কিছুই বন্ধ নাই উল্টো বাড়ছে। কারণ আমরা সবাই ঐ ১% শতাংশ মানুষের মধ্যে থাকতে চাই।

আপনি অনলাইন জুয়া বলুন, ক্যাসিনো বলুন, অপশন ট্রেডিং বলুন, ইনভেস্টমেন্ট বলুন সমস্ত জায়গায় নিরাপত্তা ৫০% শতাংশও নাই। কিন্তু তবুও আমাদের অনেক বড় আশা যে, আমরা একদিন ঐ ১% শতাংশের মধ্যে নিশ্চয় পড়বো যাদের মিনিট বা সেকেন্ডে লাখ টাকা আয় হচ্ছে।

বাকি আপনি সমঝদার, বুঝে নিন।

- Advertisement -
- Advertisement -

মেহেদি হাসান (বিকেল)

প্রধান সম্পাদক, অভিযাত্রী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- Advertisement -
Back to top button