মুভি রিভিউ

‘ইওর নেইম’ সিনেমা: একটি অনন্য ভালোবাসার গল্প

আবেগের বন্ধনে বাঁধা দুই আত্মা

- Advertisement -

ইওর নেইম ‘Kimino Na Wa’ মাকোটো শিনকাই’য়ের লিখিত ও পরিচালিত ২০১৬ সালের একটি জাপানিজ এনিমে ফিল্ম। গল্পটি জাপানের ‘ইটামোরি’ নামের একটি প্রত্যন্ত গ্রামের ‘মিতসুহা’ নামের একটা মেয়ের ও ‘টোকিও’ শহরের তাকিও নামের এক ছেলের। তারা দুজনই মাধমিক স্কুলের শিক্ষার্থী যারা একদিন আবিষ্কার করে তাদের শরীর নিজেদের মধ্যে এক্সচেঞ্জ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অর্থাৎ ‘মিতসুহা’র শরীরে তাকি এবং তাকির শরীরে মিতসুহার আত্না একদিন পর পর অদলবদল হচ্ছে।

জাপানিজ এনিমে তে আসলে ভিজ্যুয়ালসের ওপর তেমন গুরুত্ব দেয়না এর নির্মতাগন। তবে তারা সিনেমার গল্প, চরিত্র, ক্যামেরা অ্যাংগেল ও ইমোশন নিয়ে অনেকবেশি প্যাশনেট। তাইতো এনিমে মুভিতে যেসব গল্প-কাহিনী ও  চরিত্রের বিকাশ নিয়ে যে লেভেলের কাজ দেখানো হয় তা বড়বড় লাইভ অ্যাকশন সিনেমাতেও আমরা দেখতে পাইনা। তবে ‘ইওর নেইম’ সিনেমায় এসবের পাশাপাশি এবার ভিজ্যুয়ালস নিয়েও খুব ভালো কাজ করা হয়েছে ফলে এটি অন্যান্য এনিমে ফিল্ম থেকে একটু আলাদাই বলা চলে।

হাতে অংকিত কার্টুন যে এতটা রঙিন, ভাইব্রান্ট আর চোখ ধাঁধানো হতে পারে তা এই সিনেমা না দেখলে হয়ত বোঝাই যেত না। একই দৃশ্য আলাদা আলাদা ক্যমেরা অ্যাংগেল থেকে দেখানো বিশেষ করে একটা এনিমে মুভিতে, অনেক কঠিন কাজ। লাইভ অ্যাকশন মুভিগুলোতে এটি তেমন কোনো বড় ব্যাপার নাহলেও একটা কার্টুন মুভিতে এমনটা করতে পারা অনেক বড় একটা সাফল্য।

‘ইওর নেইম’ সিনেমার সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট হলো এর গল্প বর্ননার কৌশল। এতটা পরিপক্বতা ও স্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে এর গল্প এগিয়ে যায় যা সিনেমার চিত্রনাট্যকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে যায়। এমন নিখুঁত কাজ খুব কমই আমরা সিনেমায় দেখতে পাই। পুরো সিনেমা জুড়ে মস্তিষ্কে কিছু না কিছু চলতে থাকে, অবচেতন মন যেন ভাবতে থাকে, প্রশ্ন করতে থাকে, “এরপর কি হবে/কি হতে পারে? যা সিনেমার সাথে আপনাকে একদম আটকে রাখে।”

আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, ‘শরীরের অদলবদল (Body Exchange)’ এর মত এত ইউনিক একটা কনসেপ্টের মাঝেও ‘মিতসুহা’ ও ‘তাকি’র ভালোবাসাটা যেভাবে বিকশিত করা হয়েছে, যেভাবে তাদের লাভস্টোরি ডেভেলপ হয়েছে তা সত্যিই স্মরণীয়।

- Advertisement -

‘মিতসুহা’ ও ‘তাকি’ একে অপরের অপরিচিত। দুজনের জীবনধারাও সম্পুর্ন আলাদা। তবে, তাদের ‘শরীর বদল’ শুরু হওয়ার পর থেকে তারা যেভাবে একে অপরের ব্যাপারে জানতে থাকে, একজনের দৈনন্দিন সমস্যার মুখোমুখি  অন্যজন হয় এবং তারা তাদের এই আধ্যাত্মিক যোগাযোগ টায় কিভাবে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে তা আপনাকে ফিল করাবে।

কিন্তু, একদিন হঠাৎ করেই যখন তাদের শরীর বদল বন্ধ হয়ে যায় এবং তারা একে অপরকে পাগলের মত খুঁজতে থাকে কিন্তু খুঁজে না পাওয়ার যে কষ্টটা তারা অনুভব করে তা আপনিও অনুভব করবেন। মনে মনে প্রার্থনা আসে যেন যেকোনো মূল্যে তারা মিলিত হয়।

সিনেমার গল্পটা ইউনিক এতে কোনো সন্দেহ নাই। আর খুব সুন্দরভাবে গল্পটাকে সাজানোও হয়েছে। তবুও সিনেমার দ্বিতীয়ার্ধ দেখে মনের মধ্যে অনেকগুলো বিভ্রান্তি ও প্রশ্নের জন্ম হয়। অবশ্য এসকল প্রশ্নের উত্তর ও সিনেমা তার শেষ অংশে দিয়ে দেয়। সিনেমার শেষ দিকটা অতি আবেগময়, বিশেষকরে ‘মিতসুহা’ যখন টোকিও শহরে এসে তাকি কে খুঁজে পায় কিন্তু ‘তাকি’ তাকে চিনতে পারে না।

পরিশেষে যখন তাকি, মিতসুহা কে চিনে ফেলে ও দুজন মিলিত হয়, এক আনন্দের অশ্রু চোখ ভিজিয়ে দেয়। আসলে এতটা ইন্টেন্সিভ আর গভীর ইমোশন নিয়ে সিনেমাটি বিকশিত হয় যে সবসময়ই একটা অস্থিরতা কাজ করে ও প্রায়ই আবেগে কান্না চলে আসে।

‘ইওর নেইম’ সিনেমায় মূল কনসেপ্ট শরীর বদল হলেও এখানে টাইম ট্রাভেল নিয়ে ছোট্ট একটি প্লট আছে যা সিনেমার সবচেয়ে বড় ক্লাইম্যাক্স। তবে টাইম ট্রাভেল কিভাবে হলো, কেনোই বা হলো তা সিনেমায় দেখতে বেশি পছন্দ করবেন। তবে প্রত্যেকটা টাইম ট্রাভেল সিনেমায় যে প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায় যেমন মুরগী আগে নাকি মুরগির ডিম?

- Advertisement -

অর্থাৎ ‘তাকি’ কি আগে ‘মিতসুহা’ র রিবিন পেয়েছিলো নাকি আগে তাদের শরীর বদল শুরু হয়? আর এই প্রশ্নটা সিনেমা শেষ হলেও মাথায় ঘুরপাক খায়। আর কেনোই বা শরীর বদল হয় তাদের মধ্যে, এটিও সিনেমার ক্ল্যাইম্যাক্সের একটি বড় অংশ।

পরিচালক সিনেমার প্রত্যেকটা রহস্য ও প্রশ্নের উত্তর ব্যাখ্যা করেননি বা করার প্রয়োজন মনে করেননি। অনেকটা দর্শকদের ওপরেও ছেড়ে দিয়েছেন যাতে আমরা সিনেমা দেখার পাশাপাশি সিনেমার তৈরী করা রহস্য নিয়েও চিন্তা করি। আর সত্যটা এই যে, এই ব্যাপারটা সিনেমা দেখার মজাটা অনেকগুন বাড়িয়ে দেয়।

এই সিনেমার আরেকটি প্রশংসনীয় কাজ ছিলো এর সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষকতা। এখানে এত সুন্দর করে জাপানিজ সংস্কৃতিকে দেখানো হয়েছে ও সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। তারা কখনোই তাদের সংস্কৃতিতে অসম্মান করে না কিংবা ভূলে যায় না। যেখানে অন্যান্য ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তাদের পুর্বপুরুষের রীতিনীতি ও সংস্কৃতিকে ‘কুসংস্কার’ আখ্যা দিয়ে তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে সেখানে ‘ইওর নেইম’ এর মত সিনেমা সম্পূর্ণ বিপরীত।

- Advertisement -
- Advertisement -

আমিনুর রহমান

কন্টেন্ট রাইটার, দ্য ব্যাকস্পেস জার্নাল টিম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- Advertisement -
Back to top button