সম্পাদকীয়

ডিজিটাল ডিভাইস: আমাদের অস্তিত্বের জন্য নতুন হুমকি?

কেমন হবে যদি আপনার স্মার্টফোন একটি ক্ষুদ্র বোমায় পরিণত হয়?

কেমন হবে যদি আপনার স্মার্টফোন একটি ক্ষুদ্র বোমায় পরিণত হয়? শুধু স্মার্টফোন নয়, আপনার হাতের ল্যাপটপ, ট্যাব, ডিজিটাল ওয়াচ সহ রুমে থাকা টেলিভিশন এবং সকল ধরণের ডিজিটাল ডিভাইস একটি ক্ষুদ্র বোমায় পরিণত হয়ে যায়? খুব সম্ভবত এমন হলে আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে নিমিষেই।

শুধুমাত্র স্মার্টফোনের পরিসংখ্যান নিয়ে কথা বলা যাক। বাংলাদেশে মোট ৫৬% শতাংশ মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। সংখ্যায় ৯ কোটি ৫২ লাখ প্রায়। এখন এই সমস্ত স্মার্টফোন যদি ক্ষুদ্র বোমায় রুপান্তরিত হয় তাহলে পুরো বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণ নিতে এক অন্ধকার দুনিয়ার ঠিক কত সময় লাগবে? সর্বোচ্চ কয়েক মিনিট মাত্র। তারচেয়ে ভয়ানক বিষয় হচ্ছে কি পরিমাণ মানুষ এতে মৃত্যুবরণ করতে পারেন তাও নির্মমভাবে?

কথাগুলো হয়তো একটু পাগল-পাগল শোনাচ্ছে, বোকা-বোকা শোনাচ্ছে কিন্তু আমি কোনো সায়েন্স ফিকশন সিনেমার রিভিউ লিখছি না। এই বিষয়গুলো বাস্তবে সংঘটিত হয়েছে। আমরা জানিনা পেগাসাস স্পাইওয়্যারের ক্ষমতা সম্পর্কে। কিন্তু এই স্পাইওয়্যার বাংলাদেশের মত দেশে মজুদ আছে আমাদের সারাক্ষণ নজরদারি করবার জন্য। গত কয়েক বছরে এই স্প্যাইওয়্যারের ব্যবহার এবং উপস্থিতি আরো স্পষ্টভাবে আমাদের সামনে এসেছে। খুব সম্ভবত আপনার স্মার্টফোনকে টুকরো একটি বোম তৈরীর জন্য এই স্প্যাইওয়্যার-ই যথেষ্ট।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর লেবাননের বৈরুতে পেজার নামক একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা রেডিওর ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে বার্তা আদান-প্রদান করে থাকে তা বিস্ফোরিত হয়ে কমপক্ষে ৯ জন নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ২,৮০০ জন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে একজন শিশুও মৃত্যুবরণ করেছে। এই পেজার একমুখী ছিলো। মানে এই পেজারগুলো শুধু বার্তা গ্রহণ করতে পারবে কিন্তু কোনো বার্তা পাঠাতে সক্ষম নয়।

হিজবুল্লাহ্‌ হচ্ছে ইরান সমর্থিত একটি শিয়া সশস্ত্র বাহিনী। এই সশস্ত্র বাহিনী ইসরায়েলের সাথে দীর্ঘদিন লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে নিরাপত্তা প্রদান করে যাচ্ছে। কিন্তু শক্রু যখন ইসরায়েল তখন হিজবুল্লাহ্‌ ডিজিটাল ডিভাইস পরিত্যাগ করে একমুখী পেজার ক্রয় করে বার্তা আদান-প্রদানের জন্য। এই পেজারগুলো সাধারণত বিভিন্ন হাসপাতাল, বড় বড় প্রতিষ্ঠান ইমার্জেন্সি যোগাযোগ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। পেজারের আরো নাম আছে যেমন, বীপার, ব্লিপার, পকেট বেল ইত্যাদি।

হিজবুল্লাহ্‌ যখন পেজার ক্রয় করে তখন তৃতীয় পক্ষের সাহায্য নেয়। মনে করা হচ্ছে, এতে মোসাদ (ইসরায়েলের ভয়ানক গোয়েন্দা সংস্থা) এর হাত ছিলো এবং ইসরায়েলকে এই বিস্ফোরণে সাহায্য করে। হিজবুল্লাহ্‌ প্রায় ৫,০০০ এর বেশি পেজার ক্রয় করে তাইওয়ান থেকে। আর এখানেই ঘটে ঘাপলা। প্রতিটি পেজারে আগে থেকেই লাগানো ছিলো বিস্ফোরক। এতে করে বিপ শব্দে একটি বার্তা পেজারে এলে সেটা খোলা মাত্রই বিস্ফোরিত হতে শুরু করে। এতে করে কারো হাত, কারো পা, কারো চোখ বা কারো প্রাইভেট পার্ট পর্যন্ত উড়ে গেছে।

যদিও এখন পর্যন্ত ইসরায়েল এই বিষয়টি অফিসিয়ালি স্বীকার করে নি কিন্তু এমন অত্যাধুনিক সাইবার যুদ্ধ কে করেছে তা সহজেই অনুমেয়। প্রায় প্রতিটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ বিষয়ে চলছে চর্চা, কড়চা এবং প্রশংসা। আরো আতঙ্কিত হতে হয়, বিশ্ব নেতারা যখন একটি ‘Terror’ হামলা কে গ্লোরিফাই করছেন সেটা বুঝেও! দেখেও!

ইসরায়েল অবশ্য এই পর্যন্তই ক্ষান্ত থাকে নাই। গাজায় গণহত্যা চালানোর পর এবার হিজবুল্লাহ্‌ সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান নেতা হাসান নাসরুল্লাহ সহ ডজনের বেশি শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যা করেছে। পেজার আর ওয়াকিটকির বিস্ফোরণের মাধ্যমে হিজবুল্লাহর যোগাযোগব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। বর্তমান ইরান, লেবানন ও ফিলিস্তিন বনাম ইসরায়েলের এই যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্র সহ বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন। বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যে ভয়ানক যুদ্ধাবস্থা বিরাজমান।

কিন্তু আমি যেখানে শুরু করেছিলাম সেখানেই ফিরে যাচ্ছি। একাধিক তথ্য মতে, ইসরায়েলের পেজার ও ওয়াকিটকি তে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য ১০-১৫ বছরের পরিকল্পনা চলমান ছিলো। এবং তারা আজ সফল হয়েছে। মানে এই কথাগুলো লিখতেও আমার এই দেশের সামরিক বাহিনীর প্রতি বমি আসতেছে। সমানে সাধারণ মানুষ মেরে এরা টেকনোলজিক্যাল জায়ান্ট হিসেবে নিজেদের জানান দিচ্ছে। মানুষের জীবন কে এরা জীবনই মনে করে না। অন্যদিকে লেবাননে শুধু মুসলিম নাই, এখানে একাধিক ধর্মের ও সেক্যুলার পন্থী মানুষও আছেন।

অবশ্য হত্যাকারীদের আবার কীসের নসিহত! এখন আমাদের অস্তিত্ব নিয়ে ভাবুন! যদি ইসরায়েল সামান্য পেজার-ওয়াকিটকি তে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে তাহলে আমাদের দামী দামী স্মার্টফোনকে একেকটি বোমায় রুপান্তরিত করতে এদের খুব বেশি সময় লাগবে না। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও পেগাসাস স্পাইওয়্যার এর উপস্থিতি স্পষ্ট টের পাওয়া গেছে, বাংলাদেশেও আছে।

বিজ্ঞাপন

সুতরাং এবার টার্গেট আর ফিলিস্তিন বা লেবানন নয়। এবার শক্রু কিন্তু ইসরায়েলও নয়। এবার আমরা-আমরাই শক্রুতে রুপান্তরিত হবার সমূহ সম্ভাবনার গেট উন্মোচন করলো ইসরায়েল। এই সমস্ত টেকনোলজি আমাদের আশেপাশে প্রায় দেশেই আছে। আজ যদি আমরা ধর্ম-বর্ণ-মত-আদর্শ নির্বিশেষে এই সাইবার আক্রমণের নিন্দা না করি তাহলে আগামীকাল সরকার একটা করে স্মার্টফোনকে বিস্ফোরিত করবে আর বলবে, “লোকটি টেরোরিস্ট ছিলো!”

বুদ্ধিজীবীরা বলবেন, “মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মানুষের মনে ‘ভয়’ ঢুকানো খুবই জরুরী।” সবাই চুপ আছেন তা নয়, কিন্তু অনেকেই কিছুই বলছেন না এ বিষয়ে। আগাম সতর্কতা কেউ নিচ্ছেন না। আগামীর দিনগুলো কেমন হবে কেউ ভাবছেন না। ধর্মের ভিত্তিতে ফিলিস্তিন বনাম ইসরায়েল চলছে।

আমার শুধু মুচকি হাসি পায় এটা ভেবে যে, “আগুন লাগলে সব বাড়িতেই আগুন লাগবে, এই জমিনে শুধু আমার বাড়ি আছে তা তো নয়!”

মেহেদি হাসান (বিকেল)

I'm MD Mehedi Hasan, also known by my pen name Mr. Bikel. I'm the admin of the site Ovizatri - News & Magazine. I am a versatile individual with a professional life that spans various fields. I work as a writer, actor, social worker, radio jockey, web developer, web designer, editor, presenter, blood donor, audio and video editor, photo editor, YouTuber, and drama director. I am also a developer and app developer at Microsoft.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button