গান্ধীর এক স্বগতোক্তি: মহাত্মার অন্তর্দৃষ্টি ও সংগ্রামের কাহিনী
মহাত্মা গান্ধীর জীবনের আবেগ, বিশ্বাস ও নেতৃত্বের প্রতিফলন
গান্ধীর এক স্বগতোক্তি: মহাত্মা গান্ধীর জীবনের বিভিন্ন দিক, তার আবেগ, সংগ্রাম, বিশ্বাস এবং নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পর্কে জানুন। এই লেখাটি আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে এবং আদর্শ জীবন গড়তে উৎসাহিত করে।
গান্ধীর এক স্বগতোক্তি
ঘটনার উর্মিমালা এক এক করে আছড়ে পড়ে জীবনের ওপর। কখনো জীবন উত্তেজিত হয়, কখনো শান্ত সমাহিত! তবে আজকাল আমি সে ভাবে নিজের আবেগকে বাইরে প্রকাশ হতে দিই না। জাহাজে কস্তুরবা বলেছিল, অদ্ভুত এক কাঠিন্য তৈরি করেছি আমি নিজের মধ্যে। সহজ মানুষ কঠিন হয়ে পড়লে ভয় লাগে, এ কথা জানিয়েছিল সে।
বোম্বাইয়ের এপোলো বন্দরে
বোম্বাইয়ের এপোলো বন্দরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমাদের নামার মুহূর্তটি আবেগঘন হতে পারতো। কিন্তু তাকে আমি প্রশ্রয় দিইনি। মাথায় পাগড়ি পরা লোকটিকে নিয়ে কত মানুষ কত না হর্ষধ্বনি করেছিলো সেদিন। কালো কুর্তার ভিতর সাদা জামা আর ধুতি ছিলো আমার পোশাক।
গাড়িতে উঠে কস্তুরবার মুখে লেগে থাকা হাসি আমি কোনও দিন ভুলবো না। দেশের বাতাসের শ্বাস পেয়ে কস্তুর সুর্যদেবকে মুখ ও হাত তুলে নমস্কার করেছিলো। জাহাজ ঘাটায় সমবেত ব্যক্তিবর্গ আমাদের করতালিতে স্বাগত জানায়। দেখি হাতে মালা হাতে দাঁড়িয়ে স্বয়ং গোখলে। অসুস্থ তিনি জানতাম, তাও এসেছেন বরণ করতে।
আমি আমাকে পরিয়ে দেওয়া তাঁর মালা তাঁকেই পরিয়ে দিলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, “আপনি সুস্থ আছেন?”
“সুস্থ আর অসুস্থের মাঝামাঝি” – তাঁর স্মিত জবাব।
- পা কিন্তু আপনার বেশ ফুলে রয়েছে।
- হ্যাঁ, আসলে আমার সব চিন্তা নিচে নেমে এসে জমা হয়েছে পায়ে।
বাক্য শেষ না করে এক স্বস্তিবাক্য জোড়েন তিনি। “চিন্তা করো না, আমার সব ভাবনা, দূর্ভাবনা এবার আমি তোমার মাথায় দিয়ে যাবো।” প্রশ্ন ফেরাই আমি, “আমি কি তার যোগ্য?” উত্তর আসে, “মালা তুমি আমার গলায় পরিয়েছো কিন্তু এ মালা আমি তোমার জন্যই এনেছিলাম।”
গোখলের সাথে কথোপকথন
সে সব বুঝলাম। তবে তার আগে তো আপনাকে সুস্থ হতে হবে। আমার কথা থাক। তার আগে বলি তোমায় দেখে আমি খুব ভরসা পাই। “আমাকে দেখে?” বিস্মিত আমি। “হ্যাঁ, তোমার দিকে তাকিয়ে আমি ভরসা পাই জানি নিশ্চিত পারবে তুমি।”
কি বলি আমি! তিনি বলেন, “ভরসা তো সবাই সবাইকে করতে পারে না তবে তোমাকে বিশ্বাস করার একটা কারণ রয়েছে।” জিজ্ঞাসা করি, “কি সে কারণ?” তিনি ধীরে বলেন, “আমি শুনি, সংযম।”
গুজরাতিদের সংবর্ধনা আমি শ্রদ্ধা চিত্তে গ্রহণ করলাম। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ পুনরায় এই সভায় আমার প্রতি তাঁর মুগ্ধতার কথা ব্যক্ত করলেন। ইংরেজিতে বলা তাঁর কথাগুলি ভারতীয়রা খুব পছন্দ করলেন। কিন্তু এমন সমাবেশে মাতৃভাষায় বলাই সমধিক শ্রেয়। তাই আমি মাতৃভাষা গুজরাতিতেই আমার কথা বলা শ্রেয় মনে করলাম শ্রোতাদের কাছে।
লন্ডনের শীত থেকে ভারতের শীত
লন্ডনের শীত পেরিয়ে ভারতের শীত এখনো আমায় কাবু করে নি। এর মধ্যে একবার পুণা যেতে হয়েছিলো। গোপাল কৃষ্ণগোখলের খুব ইচ্ছা ছিলো তলস্তয় খামার বা ফিনিক্স আশ্রমের মতো এ দেশের মাটিতে একটি আশ্রম তৈরি করি।
গোখলে এই আকাঙ্ক্ষা কে আন্তরিক ভাবে আশীর্বাদ জানান। কস্তুরবাও খুব খুশী, আবার এক সেবাব্রত সরাসরি চালানো যাবে। কিন্তু তার আগে যাওয়া প্রয়োজন রাজকোট – পোরবন্দর। আমার ধুতি, শার্ট ও পাগড়ির সাথে কিনলাম একটি কাশ্মিরী টুপি। শিকড়ে ফিরে যাওয়ার আগে ভিতর, বাইরে সহজ ও সাধারণ না হলে নিজেরই ভিতর অহং এর বিন্দু তৈরী হয়।
সেই বিন্দু তখন বৃহৎ আকার ধারণ করে নিজ ভূমের মানুষ পরবাসীতে পরিণত হয়, কোন কিছুই তার মেলে না আর। রাজকোট যেতে রাত হয়ে যায়, ঘুমোতে রাত হয়, একবার জল খেতে উঠতে গিয়ে হাত থেকে মাটির কলসী পরে ভেঙে ছড়িয়ে গেলো।
কস্তুরবা এসে সাফাইয়ের কাপড় আনাতে আমি বলি, “এ কাজ আমার, সব ভাঙা এক এক করে আমায় সরিয়ে ফেলতেই হবে।” গোখলে একবার বলেছিলেন, “হোয়াট বেঙ্গল থিংস টুডে, ইন্ডিয়া থিংস টুমোরো।”
বংগদেশ ভ্রমণ
সেই কথামতো আমরা ভ্রমণ শুরু করব। বংগদেশ, পূর্ব ভারত। কস্তুরবা চিরসাথী। তাকে নিয়ে যাত্রা করি। ধুতি শার্ট, কোট কাশ্মিরি টুপি তে খালি পায়ে এক তৃতীয় শ্রেণী কামরায় উঠে বসা। জানালার দিকে তাকাই আমি এক প্রৌঢ়।
সেই প্রৌঢ় জানে সমস্ত ভারতবর্ষ অপেক্ষা করে আছে তারই জন্য। তার তপোভূমি।
উপসংহার
গান্ধীর এই স্বগতোক্তি তার জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে। তার আবেগ, তার সংগ্রাম, তার বিশ্বাস এবং তার নেতৃত্বের গুণাবলী সবই এই লেখায় প্রতিফলিত হয়েছে। তার জীবনের এই ঘটনাগুলি আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে এবং আমাদেরকে তার মতো একটি আদর্শ জীবন গড়তে উৎসাহিত করে।
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.