ইসলাম ধর্ম

হিজরত: রাসূল (সাঃ) এর সাহসিকতা ও আল্লাহর সাহায্যের গল্প

মক্কা থেকে মদিনা: ইসলামের ইতিহাসে এক মহাকাব্যিক যাত্রা

বিজ্ঞাপন

হিজরতের কিছুদিন আগে রাসূল (সাঃ) ভালো একটা উট কিনে আব্দুল্লাহ বিন আরিকাতের কাছে জমা রেখেছিলেন। সব সময় প্রস্তুত রাখার জন্য আব্দুল্লাহ বিন আরিকাত তখনো ইসলাম গ্রহণ করেননি তাকে অর্থের বিনিময়ে ঠিক করা হয়েছিল। সে নতুন পথ ধরে রাসূল (সাঃ) ও আবু বকর (রাঃ) মদিনায় পৌঁছে দিবে এইভাবে তাকে ঠিক করে রাখা হয়েছিল। এরকমভাবে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, আবু বকর (রাঃ) কে রাসূল (সাঃ) বলার পরেই তিনি রাজি হয়ে গেলেন, “ঠিক আছে, আজ রাতেই আমরা বের হব।”

হিজরতের শুরু

তো রাসূল (সাঃ) এখনো বাড়িতেই আছেন, কাফেরেরা বাড়ি ঘিরে ফেলেছে। ঘিরে ফেলার পরে আল্লাহ তায়ালা জানিয়ে দিলেন, আপনি সূরা ইয়াসিনের এই আয়াত পড়েন:

৮. إِنَّا جَعَلْنَا فِىٓ أَعْنَٰقِهِمْ أَغْلَٰلًا فَهِىَ إِلَى ٱلْأَذْقَانِ فَهُم مُّقْمَحُونَ

৯. وَجَعَলْنَا مِنۢ بَيْنِ أَيْدِيهِمْ سَদًّا وَمِنْ خَلْفِهِمْ সَدًّا فَأَغْشَيْنَٰهُمْ فَهُمْ لَا যُبْصِرُونَ

অর্থ: আমি তাদের গর্দানের চিবুক পর্যন্ত বেড়ী পরিয়েছি। ফলে তাদের মস্তক উর্দুগামী হয়ে গেছে। আমি তাদের সামনেও পিছনে প্রাচীর স্থাপন করেছি, অতঃপর তাদেরকে আবৃত করে দিয়েছি, ফলে তারা দেখে না (সূরা ইয়াসিন আয়াত ৮-৯)।

বিজ্ঞাপন

সে বালুতে ফুঁক দিয়ে বালু নিক্ষেপ করেন। এরপর রাসূল (সাঃ) বালুতে ফুঁক দিয়ে বালু নিক্ষেপ করলেন, সমস্ত কাফেরদের চোখের মধ্যে বালু ঢুকে গেল। তখন সবাই চোখ ডলাডলি করতেছিল, এই ফাঁকে রাসূল (সাঃ) বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লেন। এরপর আবু বক্কর সিদ্দিকের বাড়িতে উপস্থিত হলেন, আসমা বিনতে আবু বক্করের মেয়ে একটা মশকে কিছু খাবার এবং তার কোমরের ফিতা দিয়ে মশকের মুখ বেঁধে দিয়ে, তাদেরকে রওনা করিয়ে দিলেন।

হিজরতের পথ

এইভাবে আবু বক্কর সিদ্দিকী নিয়ে রাসূল (সাঃ) যাত্রা শুরু করলেন। মক্কা থেকে মদিনা উত্তর দিকে কিন্তু রাসূল (সাঃ) উত্তর দিকে না গিয়ে দক্ষিণ দিকে রওনা করলেন। কারণ তিনি জানতেন কাফেরেরা উত্তর দিকে খোঁজাখুঁজি শুরু করবে।

এই কারণে রাসূল (সাঃ) উত্তর দিকে না গিয়ে অন্তত ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে সাওর পর্বতের একটা গুহার মধ্যে রাসূল (সাঃ) আবু বক্কর সিদ্দিককে নিয়ে অবস্থান করলেন। সকাল বেলা যখন রাসুল (সাঃ) এর গৃহে কাফেরেরা প্রবেশ করলেন, তখন দেখা গেল রাসুল (সাঃ) এর বিছানায় হযরত আলী শুয়ে আছেন, রাসূল (সাঃ) নেই।

তখন তারা হযরত আলী (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমাদের সাথী কোথায়?” তখন আলি রাদিয়াল্লাহু বললেন, “আমি কি তোমাদের পাহারাদার? যে তার খবর তোমাদের বলবো?” তখন তারা ওখান থেকে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল।

আবু জাহেল ঘোষণা করলো, “মোহাম্মদ (সাঃ) কে জীবিত অথবা মৃত তার মস্তিষ্ক হাজির করতে পারলে ১০০ লাল উট পুরস্কার দেওয়া হবে।” এই ঘোষণা শোনার পর মুশরিকরা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল। এবং শেষ পর্যন্ত তারা গারে সাওরেও উপস্থিত হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু গুহার মুখে দেখে মাকড়সা জাল টানিয়ে রেখেছে, কবুতর বসে ডিম দিচ্ছে, এই দৃশ্য তারা দেখে বলল, “নিশ্চয় এখানে কোন মানুষ ঢুকে নাই। যদি মানুষ ঢুকতো মাকড়সার জাল ছিড়ে যেত, কবুতর উড়ে যেত।” এইভাবে এই গুহার মধ্যে রাসুল (সাঃ) ও আবু বক্কর সিদ্দিক তিন দিন তিন রাত কাটিয়েছিলেন।

আবু বক্কর সিদ্দিকের গোলাম আমর ইবনুল ফাহিরা উট চড়াতে চড়াতে ওখানে আসতেন, এবং দিনের বেলা তাদেরকে দুধ সরবরাহ করতেন। রাতের বেলা আবু বক্কর সিদ্দিকীর ছেলে ওখানে খাবার পৌঁছে দিতেন।

হিজরতের পরবর্তী ঘটনা

এইভাবে তিন দিন তিন রাত সেখানে অবস্থান করার পরে, যখন কাফেরেরা রাসুল সাঃ কে খোঁজার জন্য অনেক দূর দূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছিলেন, মক্কা অঞ্চল থেকে আরো দূরে যখন তার খুঁজে চলে গেছে, ঠিক তখনি রাসূল (সাঃ) আবু বকর সিদ্দিককে নিয়ে, রাসূল (সাঃ) ও আবু বকর সিদ্দিক একটা উটে এবং আব্দুল্লাহ বিন আরিকাত ও আমর ইবন ফাহিরা এরা দুজন আরেকটা উটে চরে নতুন পথ ধরে যাত্রা শুরু করলেন। তারা সরাসরি পশ্চিম দিকের পথ অবলম্বন করে লোহিত সাগরের কিনারা ধরে তারা অগ্রসর হতে লাগলেন।

এরপর সারাকা ইবনে মালেকের কাছে দুইটা লোক এসে বলল, “লহিত সাগরের তীরবর্তী থেকে কয়েকটা লোক যাচ্ছে, তো আমাদের তো মনে হয় মোহাম্মদ (সাঃ) ও আবু বক্কর সিদ্দিক পালাচ্ছে।” তখন সে মনে মনে চিন্তা করলো, “হ্যাঁ, এই কথা ঠিক।” ১০০ উটের লোভে সারাকা ইবনে মালেক বলল, “আরে না, ওরা তো আমার সামনে থেকে রওনা করছে, ওরা মুহাম্মদ (সাঃ), আবু বক্কর নয়।” এ বললে ওদেরকে বোকা বানিয়ে তাড়িয়ে দিল। এরপর দাসী কে বলল, “ঘোড়া প্রস্তুত করতে,” ঘোড়ায় চড়ে রাসুল (সাঃ) পিছু নিল।

এরপর রাসুল (সাঃ) এর কাছাকাছি যাওয়ার পর তার ঘোড়ার পা বালুর ভিতর হাঁটু পর্যন্ত বসে গেল, সে ঘোড়া থেকে ছিটকে পড়ে গেল। তখন সে ভাগ্যের তীর বের করে দেখলো তার ভাগ্য খারাপ। তারপরও সে আবার ঘোড়াটাকে তুলল, আবারো কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর, হঠাৎ করে ঘোড়ার পা আবারও বালুর ভিতর ঢুকে গেল, এবং চারিদিকে ধোঁয়ায় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেল, সে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। এরকম দৃশ্য দেখে সে ভীত হয়ে গেল।

বিজ্ঞাপন

তখন সে পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলল, “ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমি সারাকা। আমি আপনাকে ধরার জন্য বের হয়েছিলাম, আমি আপনাকে ধরবো না আর বলবো না। বরং আপনার এই পথে আছেন এটা আমি অন্য কাউকে জানতেও দিব না। আপনি চলে যান, কিন্তু আপনি আমাকে মাফ করে দেন। এবং আমাকে একটা আমলনামা লিখে দেন নিরাপত্তা চিঠি। নিশ্চয় আপনি মক্কা বিজয় করবেন, সেই মক্কা বিজয়ের দিনে আপনার লোকেরা যেন আমাকে হত্যা না করে।”

তখন আবু বক্কর সিদ্দিকের মাধ্যমে রাসুল (সাঃ) এই সারাকাকে একটা আমলনামা লিখে দিয়েছিলেন। এরপর কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর আবু বক্কর সিদ্দিক পেছনে তাকিয়ে দেখে আর একটা দল তাদের পিছনে অগ্রসর হচ্ছে।

তিনি বললেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ, পিছনে আরেকটা দল কারা যেন আসছে।” রাসূল (সাঃ) বললেন, “তাদের আসতে দাও।” তো এখানে যে দলটা আসছিল সেই দলের নেতা ছিল, বুরাইদা আসলামী সাহামী। এরা যখন রাসুল (সাঃ) এর কাছাকাছি আসলো তখন আল্লাহ রাসূল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, “এই দলপতি কি নাম তোমার?” উনি বললেন, “বুরাইদা।” তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, “বারদুন বুরাইদা মানে ঠান্ডা বাতাস, আমাদের তো ঠান্ডা বাতাসের দরকার।” তখন রাসুল সালাম জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কোন পরিবারের লোক?” তখন সে বলল, “আমি আসলাম পরিবারের লোক।”

আসলাম ইসলাম মানে তো শান্তি, তারমানে তুমি একটা শান্তি পরিবারের লোক। এরপর বললেন, “তুমি কোন গোত্রের লোক?” ও বললো, “আমি সাহাম গোত্রের লোক।” বুরাইদাতুল আসলামী সাহামী আরবীতে সাহাম মানে অংশ, তো রাসূল (সাঃ) বললেন, “(খারাজা সাহামুকা) তোমার অংশটা তো বের হয়ে আছে, তুমি তোমার অংশটা গ্রহণ করো।”

এই কথা বলার সাথে সাথে বুরাইদাতুল আসলামী সাহামী কালেমা পড়ে ইসলাম গ্রহণ করলেন। এর সাথে সাথে তার সাথে আরো ৬৯ জন লোক দিছ তারা-ও কালেমা পড়ে ইসলাম গ্রহণ করলেন। এবং তারা রাসুল সাঃ এর সাথে হিজরতের সিদ্ধান্ত নিল।

বিজ্ঞাপন

হিজরতের প্রস্তুতি

হিজরতের কিছুদিন আগে রাসূল (সাঃ) ভালো একটা উট কিনে আব্দুল্লাহ বিন আরিকাতের কাছে জমা রেখেছিলেন। সব সময় প্রস্তুত রাখার জন্য আব্দুল্লাহ বিন আরিকাত তখনো ইসলাম গ্রহণ করেননি তাকে অর্থের বিনিময়ে ঠিক করা হয়েছিল। সে নতুন পথ ধরে রাসূল (সাঃ) ও আবু বকর (রাঃ) মদিনায় পৌঁছে দিবে এইভাবে তাকে ঠিক করে রাখা হয়েছিল। এরকমভাবে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, আবু বকর (রাঃ) কে রাসূল (সাঃ) বলার পরেই তিনি রাজি হয়ে গেলেন, “ঠিক আছে, আজ রাতেই আমরা বের হব।”

ছবি: Image by Sketchepedia on Freepik


Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

আপনার মতামত জানান?

বিজ্ঞাপন
Back to top button

Discover more from অভিযাত্রী

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading