মুসা (আঃ) এর নয়টি মোজেজা: আল্লাহর শক্তির মহিমা
ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়ের প্রতি আল্লাহর নিদর্শন এবং ঈমানের আহ্বান
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنَا مُوۡسٰی تِسۡعَ اٰیٰتٍۭ بَیِّنٰتٍ فَسۡـَٔلۡ بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ اِذۡ جَآءَهُمۡ فَقَالَ لَهٗ فِرۡعَوۡنُ اِنِّیۡ لَاَظُنُّکَ یٰمُوۡسٰی مَسۡحُوۡرًا
অর্থ: আপনি বনী ইসরাঈলদের কে জিজ্ঞেস করেন, আমি মুসাকে নয়টি স্পষ্ট নিদর্শন দান করেছি। যখন তিনি তাদের কাছে আগমন করেন, ফেরাউন তাকে বলল, হে মুসা আমার ধারণা তুমি তো জাদুগ্রস্থ। [সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত-১০১]
ব্যাখ্যা
আল্লাহ তা’আলা বলেন, নিশ্চয়ই আমি মুসা (আঃ) কে নয়টি নিদর্শন দান করেছিলাম। নয়টা উজ্জ্বল নিদর্শন। মোজেজা, অর্থাৎ যে জিনিস মানুষকে কাবু করে ফেলে, মানুষ এটার মোকাবেলা করতে পারে না। এজন্য এটার নাম হল মোজেজা।
আল্লাহ তা’আলা বলেন নিশ্চয়ই আমি মুসা (আঃ) কে নয়টি নিদর্শন দান করেছিলাম, আপনি বনী ইসরাঈলদের কাছে জিজ্ঞেস করেন এটা সত্য কিনা। যখন মুসা (আঃ) তাদের কাছে এসেছিল, অতঃপর মুসা (আঃ) কে ফেরাউন বলল, নিশ্চয়ই আমি ধারণা করছি যে মুসা তুমি জাদুগ্রস্থ।
মুসা (আঃ) এর নয়টি মোজেজা
মুসা (আঃ) কে আল্লাহ তা’আলা নয়টি মোজেজা দিয়ে বানী ইসরাঈলদের কাছে তথা ফেরাউনের কাছে পাঠিয়েছিলেন। এগুলো সবই কুরআনে উল্লেখ আছে। সর্বপ্রথম দুইটা মোজেজা তাকে দান করা হয়েছে।
১. লাঠি সাপ হয়ে যাওয়া
মুসা (আঃ) মাদায়েন থেকে অর্থাৎ তার শ্বশুরবাড়ি থেকে ফেরার পথে, যখন তিনি নবুয়ত লাভ করেন, তখনই মুসা (আঃ) কে এই দুইটা মোজেজা আল্লাহ তা’আলা দান করেন। লাঠি প্রকন্ড অজগর সাপে পরিণত হওয়া আর হাত বগলে ঢুকালে আলোকিত হয়ে যাওয়া, আলোর প্রয়োজন হলে হাত ঢোকানো, আলোর প্রয়োজন না হলে দ্বিতীয়বার হাত বগলে দিলে স্বাভাবিক হয়ে যেত।
২. ডান হাত বগলে ঢুকাইয়া বের করলে আলোকিত হয়ে যায়
মুসা (আঃ) মাদায়েন থেকে অর্থাৎ তার শ্বশুরবাড়ি থেকে ফেরার পথে, যখন তিনি নবুয়ত লাভ করেন, তখনই মুসা (আঃ) কে এই দুইটা মোজেজা আল্লাহ তা’আলা দান করেন। লাঠি প্রকন্ড অজগর সাপে পরিণত হওয়া আর হাত বগলে ঢুকালে আলোকিত হয়ে যাওয়া, আলোর প্রয়োজন হলে হাত ঢোকানো, আলোর প্রয়োজন না হলে দ্বিতীয়বার হাত বগলে দিলে স্বাভাবিক হয়ে যেত।
আরও পাঁচটি মোজেজা
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
فَاَرۡسَلۡنَا عَلَیۡهِمُ الطُّوۡفَانَ وَ الۡجَرَادَ وَ الۡقُمَّلَ وَ الضَّفَادِعَ وَ الدَّمَ اٰیٰتٍ مُّفَصَّلٰتٍ ۟ فَاسۡتَکۡبَرُوۡا وَ کَانُوۡا قَوۡمًا مُّجۡرِمِیۡنَ
অর্থ: সুতরাং আমি তাদের উপর পাঠিয়ে দিলাম তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত প্রভৃতি বহুবিধ নিদর্শন একের পর এক। তারপরেও তারা গর্ব করতে থাকলো। বস্তুত তারা ছিল অপরাধপ্রবণ। [সূরা আল আ’রাফ, আয়াত-১৩৩]
এই একটা আয়াতে ৫টা মোজেজার কথা বলা হয়েছে:
১. তুফান
এমন ভাবে পানি আসলো সবকিছু পানিতে ডুবে গেল ফেরাউনদের কিপ্তিদের কোন কিছুই শুকনো থাকলো না। অথচ বনী ইসরাঈলদের কোন ক্ষতি হলো না। এভাবে এক সপ্তাহ পর্যন্ত ওদের উপর এই তুফান/বন্যা চলল। এরপর ওরা মুসা (আঃ) কে অনুরোধ করলো, আপনি আল্লাহর কাছে বলেন, এই বিপদটা দূর করে দিলে আমরা আপনার উপর ঈমান আনব। বনী ইসরাঈলদের কে মুক্ত করে দেবো, এভাবেই ফেরাউনের লোকজন মুসা (আঃ) কে বলেছিল।
এরপর আল্লাহ তা’আলা বিপদ দূর করলেন। তারা একমাস ভালো থাকলো। কিন্তু তারা ঈমান আনলো না। এক মাস পর পঙ্গপাল দিয়ে আল্লাহ তা’আলা তাদের শাস্তি দিলেন।
২. পঙ্গপাল
ফড়িং এর মত ওই গ্রাসোফার ফড়িং এরকম একটা পোকা এগুলো সমুদ্রের বা জঙ্গলের কোটি কোটি ঝাঁকে ঝাঁকে থাকে। ওরা যদি লোকালয়ে আসে এবং কোন বাগানে পরে তাহলে, মুহূর্তের মধ্যে বাগান খেয়ে ফেলে দিবে সব সাদা হয়ে যাবে। ওদের কে এই পঙ্গপাল দিয়ে এক সপ্তাহ সাজা দেওয়া হলো।
৩. ছারপোকা
ওখানে ওই একই কথা এক সপ্তাহ শাস্তি দেওয়া হল অঙ্গীকার করলো এই শাস্তি দূর করে দিলে আমরা ঈমান আনব তওবা করব। কিন্তু করলো না এক মাস আল্লাহ ওদেরকে ভালো রাখলেন। পঙ্গপালের পরে একমাস পরে ওদের মধ্যে আল্লাহ পাঠালেন ছারপোকা।
মুসা (আঃ) একটা টিলার উপর আঘাত করেছিলেন, ঐ টিলার ভিতরে ছারপোকা ছিল এগুলো সব বেরিয়ে ওদের এমন ভাবে পাকড়াও করল যে, এক সপ্তাহ পর্যন্ত দিবারাত্রি তে কোনো অবস্থাতেই তারা কোন জায়গায় হাত পা রাখতে পারেনি। যেখানেই রাখে ওখানেই ছারপোকা কামড়ায়।
৪. ব্যাঙ
এমনভাবে আল্লাহ ব্যাঙ পাঠিয়ে দিলেন, এক সপ্তাহ ব্যাঙের শাস্তি। ওরা হা করে খানা খাবে, এর মধ্যে ব্যাংক মুখে ঢুকে গেছে। তরকারির জন্য মসলা পিসেছে তার সাথে ব্যাঙ পিসা হয়ে গেছে। তরকারি পাক করতে লেগেছে খুলে দেখে সব ব্যাঙ। খাবারের মধ্যে ব্যাঙ, পানির মধ্যে ব্যাঙ, বিছানায় ব্যাঙ, সব জায়গায় ব্যাঙ। আর কি সেই ভয়ঙ্কর দুর্গন্ধ ব্যাঙ মরার। এই এক সপ্তাহ আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ব্যাঙ দিয়ে শাস্তি দিলেন।
৫. রক্ত
সর্বশেষ ৫ নম্বর হলো রক্ত। পানিতে হাত দিলে রক্ত হয়ে যেত। ফেরাউন তখন ঘোষণা করলো যে নবী ইসরাঈলীদের সঙ্গে কিপ্তিরা একসঙ্গে খানা খাবে, তাহলে ওদের সাথে ফ্রেশ খানা খেতে পারবে। কিন্তু কোনভাবে কাজ হলো না, ওরা হাত দিলে রক্ত।
পানির পিপাসায় অস্থির হয়ে গেল শেষ পর্যন্ত, বনি ইসরাইলদের ওরা বলল তোমরা পানি মুখে নিয়ে কুলি করে সেই পানি আমাদের মুখে দাও। এই ভাবে দেওয়া হলো, কিন্তু পানি ওদের মুখে পরার সাথে সাথে রক্ত হয়ে গেল।
সর্বশেষ দুইটি মোজেজা
৬. মুসা (আঃ) এর মুখ আগুনে পুরে তোতলা হয়ে গেছিল
মুসা (আঃ) এর মুখ আগুনে পুরে তোতলা হয়ে গেছিল, আগুনে পোড়া রোগ ভালো হয় না। কিন্তু এটা মুসা (আঃ) এর জন্য আল্লাহ তা’আলা ভালো করে দিয়েছিলেন। আল্লাহ বলেন,
قَالَ رَبِّ اشۡرَحۡ لِیۡ صَدۡرِیۡ وَ یَسِّرۡ لِیۡۤ اَمۡرِیۡ وَ احۡلُلۡ عُقۡدَۃً مِّنۡ لِّسَانِیۡ یَفۡقَهُوۡا قَوۡلِیۡ
বিজ্ঞাপন
অর্থ: মুসা বললেন, হে আমার পালনকর্তা আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন। এবং আমার কাজ সহজ করে দিন। এবং আমার জিহব্বা থেকে জড়তা দূর করে দিন। যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে। [সূরা ত্বহা, আয়াত ২৫-২৮]
মুসা (আঃ) যখন আল্লাহর কাছে এই দোয়াটা করলেন, আল্লাহ তাআলা ভালো করে দিলেন এটা আপনারা আমরাও ছেলেমেয়েদের ব্রেইন ভালো হওয়ার জন্য আমরা এই দোয়াটা শিখিয়ে দেই। তো মুখ ভালো হয়ে যাওয়া এটা একটা মোজেজা।
৭. সমুদ্র দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাওয়া
সমুদ্র দ্বিখণ্ডিত হয়ে গিয়ে, সেখানে বারোটা রাস্তা তৈরি হয়েছিল। এটা সর্বশেষ মোজেজা।
সারাংশ
মুসা (আঃ) এর নয়টি মোজেজা আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হয়। এগুলো ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়কে আল্লাহর শক্তি ও মহিমা প্রদর্শন করে। এই মোজেজাগুলো মানুষকে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার জন্য প্রেরণ করে।
আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি যে, তিনি আমাদের বক্ষ প্রশস্ত করে দেন, আমাদের কাজ সহজ করে দেন এবং আমাদের জিহব্বা থেকে জড়তা দূর করে দেন, যাতে আমরা আল্লাহর কথা বুঝতে পারি।
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.