নূহ (আঃ) এর বংশধরদের ইতিহাস ও তাৎপর্য: কোরআনের আলোকে বিশ্লেষণ
নূহ (আঃ) এর চার পুত্রের বংশধর ও তাদের প্রভাব: সাম, হাম, ইয়াফেস ও কেনানের কাহিনী
Disclaimer: This disclaimer informs readers that the content is based on historical and religious texts and interpretations, and neither the author nor the publisher claims ultimate authority on the subjects discussed. It also encourages readers to conduct their own research and form their own understanding of the information presented.
পরিচিতি
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَ لَقَدۡ اَرۡسَلۡنَا نُوۡحًا وَّ اِبۡرٰهِیۡمَ وَ جَعَلۡنَا فِیۡ ذُرِّیَّتِهِمَا النُّبُوَّۃَ وَ الۡکِتٰبَ فَمِنۡهُمۡ مُّهۡتَدٍ ۚ وَ کَثِیۡرٌ مِّنۡهُمۡ فٰسِقُوۡنَ
অর্থ: আমি নূহ ও ইব্রাহিমকে রসুল রূপে প্রেরণ করেছি এবং তাদের বংশধরের মধ্যে নবুওয়ত ও কিতাব অব্যাহত রেখেছি। অতঃপর তাদের কতক সৎপথপ্রাপ্ত হয়েছে এবং অধিকাংশ হয়েছে পাপাচারী। [সূরা হাদীদ, আয়াত-২৬]
নূহ (আঃ) এর পরিবার
নূহ (আঃ) এর চার পুত্রের নাম ও তাদের বংশধরদের ইতিহাস আমরা তাফসীরে পাই:
১. সাম ২. হাম ৩. ইয়াফেস ৪. কেনান
নূহ (আঃ) এর পিতার নাম নামাক এবং মাতার নাম সামখা বিনতে আনুস। নূহ (আঃ) এর পিতা-মাতা মুসলমান ছিলেন, যা তাঁর জন্য একটি সৌভাগ্য। অন্যদিকে, ইব্রাহিম (আঃ) এর পিতা-মাতা মুসলমান ছিলেন না, কিন্তু পরবর্তীতে ইব্রাহিম (আঃ) এর মাতা ওমাইরা ইসলাম গ্রহণ করেছেন।
নূহ (আঃ) এর চার পুত্র
নূহ (আঃ) এর চার পুত্রের মধ্যে কেনান ডুবে মারা গেছে, যা কোরআনে বর্ণিত আছে। নূহ (আঃ) যখন নৌকায় উঠেছেন, কেনান তখন একটি পাহাড়ে দাঁড়ানো ছিল। নূহ (আঃ) তাকে নৌকায় আরোহণ করতে বললেন, কিন্তু কেনান বললো, “না, আমি পাহাড়ে আশ্রয় নেব, পাহাড় আমাকে পানি থেকে রক্ষা করবে।” নূহ (আঃ) বললেন, “আজকে আল্লাহ ছাড়া কেউ রক্ষাকারী নেই।” কেনান নৌকায় উঠলো না এবং পানিতে ডুবে মারা গেল। এই কারণে কেনানের কোন বংশধর নেই।
নূহ (আঃ) এর বংশধরদের বিস্তার
সামের বংশধর
সাম হলো নূহ (আঃ) এর বড় পুত্র। তাঁর বংশধরদের সেমেটিক জাতি বলা হয়, যারা পৃথিবীতে সাদা মানুষ। মুসলমান, ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা সবাই সেমেটিক জাতি।
হামের বংশধর
হামের বংশধরদের পৃথিবীতে কালো মানুষ বলা হয়। “ছুদ” শব্দের অর্থ কালো, এর থেকে সুদান দেশের লোকেরা কালো। এই কালো মানুষ হওয়ার কারণ হলো, নূহ (আঃ) নৌকার আরোহীদের বলেছিলেন তারা স্ত্রী সহবাস করবে না। কিন্তু হাম স্ত্রী সহবাস করেছিল, যার ফলে তার বংশধর কালো হয়ে গেছে।
ইয়াফেসের বংশধর
ইয়াফেসের বংশধরদের ইয়াজুজ মাজুজ বলা হয়। ইয়াজুজ মাজুজের কথা পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আছে। জুলকারনাইন যখন পৃথিবীর উত্তর অঞ্চলের সফরে গেছেন, তখন সেখানকার লোকেরা অভিযোগ করেছে:
قَالُوۡا یٰذَاالۡقَرۡنَیۡنِ اِنَّ یَاۡجُوۡجَ وَ مَاۡجُوۡجَ مُفۡسِدُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ فَهَلۡ نَجۡعَلُ لَکَ خَرۡجًا عَلٰۤی اَنۡ تَجۡعَلَ بَیۡنَنَا وَ بَیۡنَهُمۡ
অর্থ: তারা বললঃ হে জুলকারনাইন ইয়াজুজ ও মাজুজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। আপনি বলেন আমরা আপনার জন্য কি কর ধার্য করবো এই শর্তে যে, আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন। [সূরা কাহফ, আয়াত-৯৪]
জুলকারনাইন বললেন, তাদের আর্থিক সাহায্য আমার প্রয়োজন নাই, কিন্তু ম্যানপাওয়ারের দরকার। এরপর জুলকারনাইন সেই দেয়ালটা নির্মাণ করে দিয়েছেন। ইয়াফেসের বংশধরদের মধ্যে ২১ টা জাতি ছিল, তার মধ্যে ১টা জাতিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, যাদেরকে তুর্ক বা তুর্কী বলা হয়।
জুলকারনাইনের প্রাচীর
জুলকারনাইন ইয়াফেসের বংশধরদের পৃথিবীর উত্তরাঞ্চলে একটি দেয়াল বা প্রাচীরে আবদ্ধ করে দেন। এই প্রাচীর সম্পর্কে বলা হয়, এটা তিন মাইল লম্বা, দুইটা পাহাড়ের মধ্যে, ২০ হাত উঁচু এবং ৫০ হাত চওড়া। এবং এর দেয়ালটা সম্পূর্ণ লোহা তার উপর গলিত তামা দিয়ে এটা নির্মাণ করা হয়েছে। লোহা এবং তামার কথা পবিত্র কোরআনে বলা আছে।
প্রাচীরের অবস্থান ও ইয়াজুজ মাজুজের অবস্থান
এখন এই বিষয়টা আমাদের কাছে অস্পষ্ট যে জুলকারনাইনের প্রাচীর এখন কোথায়, ইয়াজুজ মাজুজ এরা পৃথিবীর অনেক লোক তারা কোথায়? তার কারণ নূহ (আঃ) একেকটা ছেলের বংশধর এক একটা মহাদেশ জুড়ে।
বংশধর | মহাদেশ |
---|---|
সাম | এশিয়া |
হাম | আফ্রিকা |
ইয়াফেস | অজানা |
তাহলে ইয়াফেসের বংশধর তারা সংখ্যায় এত হবে যে একটা মহাদেশ ব্যাপী তাদের জনসংখ্যা হবে। কিন্তু এই লোকগুলার খবর আমরা বলতে পারছি না। কি একটা আশ্চর্য বিষয়।
মানুষের আবিষ্কার ও ইয়াজুজ মাজুজের অবস্থান
মানুষ পৃথিবীতে সব কিছু আবিষ্কার করার পরে, চাঁদে গেল, মঙ্গলে গেল। কিন্তু এই পৃথিবীর মধ্যে ইয়াজুজ মাজুজ কোথায় আছে তা কেউ বের করতে পারছে না। এখন এই বিষয়টা এমন আশ্চর্য বিষয় এটা পবিত্র কোরআনে আছে। পবিত্র কোরআনে না থাকলে এই বিষয়টা আমরা এড়িয়ে যেতাম।
প্রাচীরের ধ্বংস
পবিত্র কোরআনে প্রাচীর সম্পর্কে যেটা বলা আছে:
فَمَا اسۡطَاعُوۡۤا اَنۡ یَّظۡهَرُوۡهُ وَ مَا اسۡتَطَاعُوۡا لَهٗ نَقۡبًا
অর্থ: অতঃপর ইয়াজুজ ও মাজুজ তার উপর আহরণ করতে পারবে না এবং তা ভেদ করতে ও সক্ষম হলো না। [সূরা কাহফ, আয়াত-৯৭]
এই প্রাচীরের উপরে তারা চড়তেও পারবে না এবং এটা ছিদ্র করতে পারবে না।
কিয়ামতের পূর্বে প্রাচীরের ধ্বংস
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
قَالَ هٰذَا رَحۡمَۃٌ مِّنۡ رَّبِّیۡ ۚ فَاِذَا جَآءَ وَعۡدُ رَبِّیۡ جَعَلَهٗ دَکَّآءَ ۚ وَ کَانَ وَعۡدُ رَبِّیۡ حَقًّا
অর্থ: জুলকারনাইন বললেন এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ। যখন আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুতি সময় আসবে, তখন তিনি একে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবেন এবং আমার পালনকর্তা প্রতিশ্রুতি সত্য [সূরা কাহফ, আয়াত-৯৮]
এরপর যখন কিয়ামতের প্রতিশ্রুতি আসবে, তখন আল্লাহ তা’আলা এটাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিবেন। এবং রবের প্রতিশ্রুতি সত্য। কিয়ামতের পূর্বক্ষণে দেয়ালটাকে ধ্বংস করা হবে। আল্লাহতালা বলছেন যে এটা আল্লাহর হুকুমেই ধ্বংস হয়ে যাবে।
চিন্তার বিষয়
কিন্তু এ দেওয়ালে ওরা আরোহনও করতে পারবেনা ছিদ্র করতে পারবেনা। তাহলে দেয়ালটা পৃথিবীর কোথায় এটা মানুষ বলতে পারছে না। এটা চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, এতগুলো মানুষ পৃথিবীতে কোথায় আছে।
নিচে নূহ (আঃ) এর বংশধরদের ইতিহাস ও তাৎপর্য সম্পর্কে একটি তথ্যবহুল টেবিল দেওয়া হলো:
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
নূহ (আঃ) এর পরিবার | নূহ (আঃ) এর চার পুত্র: সাম, হাম, ইয়াফেস, কেনান। নূহ (আঃ) এর পিতার নাম নামাক এবং মাতার নাম সামখা বিনতে আনুস। |
কেনানের মৃত্যু | কেনান নূহ (আঃ) এর নৌকায় উঠতে অস্বীকার করে পাহাড়ে আশ্রয় নেয় এবং পানিতে ডুবে মারা যায়। কেনানের কোন বংশধর নেই। |
সামের বংশধর | সাম হলো নূহ (আঃ) এর বড় পুত্র। তাঁর বংশধরদের সেমেটিক জাতি বলা হয়, যারা পৃথিবীতে সাদা মানুষ। মুসলমান, ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা সবাই সেমেটিক জাতি। |
হামের বংশধর | হামের বংশধরদের পৃথিবীতে কালো মানুষ বলা হয়। “ছুদ” শব্দের অর্থ কালো, এর থেকে সুদান দেশের লোকেরা কালো। হাম নূহ (আঃ) এর নৌকায় স্ত্রী সহবাস করেছিল, যার ফলে তার বংশধর কালো হয়ে গেছে। |
ইয়াফেসের বংশধর | ইয়াফেসের বংশধরদের ইয়াজুজ মাজুজ বলা হয়। জুলকারনাইন ইয়াফেসের বংশধরদের পৃথিবীর উত্তরাঞ্চলে একটি দেয়াল বা প্রাচীরে আবদ্ধ করে দেন। এই প্রাচীর তিন মাইল লম্বা, দুইটা পাহাড়ের মধ্যে, ২০ হাত উঁচু এবং ৫০ হাত চওড়া। এবং এর দেয়ালটা সম্পূর্ণ লোহা তার উপর গলিত তামা দিয়ে এটা নির্মাণ করা হয়েছে। |
ইয়াজুজ মাজুজের অবস্থান | ইয়াজুজ মাজুজের অবস্থান এখনও অজানা। তারা পৃথিবীর কোথায় আছে তা কেউ বের করতে পারছে না। পবিত্র কোরআনে বলা আছে যে কিয়ামতের পূর্বে দেয়ালটাকে ধ্বংস করা হবে। |
প্রাচীরের ধ্বংস | আল্লাহ তায়ালা বলেন, যখন কিয়ামতের প্রতিশ্রুতি সময় আসবে, তখন তিনি একে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবেন। এবং রবের প্রতিশ্রুতি সত্য। |
উপসংহার
নূহ (আঃ) এর বংশধরদের ইতিহাস ও তাৎপর্য আমরা এই নিবন্ধে আলোচনা করেছি। এই বিষয়গুলো আমাদের কাছে অনেকটা অস্পষ্ট, কিন্তু পবিত্র কোরআনে এই বিষয়গুলোর উল্লেখ থাকায় আমরা এটা এড়িয়ে যেতে পারি না। আমরা নিজেদের গবেষণা করে এই বিষয়গুলোর উপর আমাদের নিজস্ব ধারণা গঠন করতে পারি।
আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদের নিবন্ধগুলো পড়তে থাকুন। আপনার মতামত ও প্রশ্নগুলো কমেন্ট সেকশনে জানান দিন। আমরা আপনার সাথে আলোচনা করতে খুশি।
Discover more from অভিযাত্রী
Subscribe to get the latest posts sent to your email.