জীবনী

জাবির ইবনে হাইয়ান: রসায়নশাস্ত্রের জনক

ইউরোপীয় রাসায়নিক জ্ঞান ও রসায়ন চিন্তাধারায় জাবির ইবনে হাইয়ানের প্রভাব

বিজ্ঞাপন

জাবির ইবনে হাইয়ান ছিলেন আরবীয় রসায়নশাস্ত্রের জনক। মধ্যযুগের রসায়নশাস্ত্রে আল-রাযীর পরেই তাঁর স্থান। আট শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ইরাকের কুফায় তাঁর কর্মজীবন বিকাশ লাভ করে। ইউরোপীয় আলকেমী বা রসায়নের উৎপত্তি ও বিকাশে তাঁর প্রভাব সুস্পষ্ট। রসায়নবিদ্যার তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করে জাবির বিশ্ব-ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছেন।

জাবির ইবনে হাইয়ানের পরিচয়

জাবিরের পুরো নাম, ‘জাবির ইবনে হাইয়ান আল আজদী আস-সুফি আল ওমাবী’। তিনি ছিলেন দক্ষিণ আরবের বিখ্যাত আজদ গোত্রভুক্ত। তাঁর পিতৃকুল ইরাকের কুফায় বসতি স্থাপন করেন। জাবিরের পিতা হাইয়ান ছিলেন পেশায় একজন চিকিৎসক। আট শতকের গোড়া থেকেই শিয়া মতাবলম্বীরা উমাইয়া রাজতন্ত্রের উচ্ছেদসাধনে যে আন্দোলন শুরু করে, হাইয়ান ছিলেন তাদের অন্যতম নেতা।

তাঁকে পারস্যের তুস নগরে উমাইয়াদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাবার দায়িত্ব দেয়া হয় এবং এই তুস নগরেই আনুমানিক ৭২২ খ্রিস্টাব্দে জাবিরের জন্ম হয়। সেজন্য জাবির তাঁর নামের সঙ্গে ‘আস-তুসী’ উপাধিও ধারণ করতেন। হাইয়ানের গোপন ষড়যন্ত্র তৎকালীন উমাইয়া খলিফার কর্ণগোচর হলে তিনি উমাইয়াদের হাতে ধৃত হন এবং রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের অপরাধে তাঁকে প্রাণদণ্ড দেয়া হয়।

এমতাবস্থায় জাবিরের মাতা শিশুপুত্র জাবিরকে নিয়ে দারুণ দুঃখকষ্টের সম্মুখীন হন। অবশেষে জীবন-সংগ্রামের দুস্তর বাধা অতিক্রম করে তিনি জাবিরকে নিয়ে দক্ষিণ আরবে তাদের স্বগোত্রীয়দের কাছে আশ্রয় নেন।

জাবির ইবনে হাইয়ানের শিক্ষাজীবন

দক্ষিণ আরবের ইয়েমেনেই জাবিরর বিদ্যারম্ভ হয়। শৈশবকাল থেকেই জাবিরের মধ্যে তীক্ষ্ণ মেধার স্ফূরণ ঘটে এবং গণিতে তাঁর অসাধারণ মেধা লক্ষ্য করে ইয়েমেনের বিখ্যাত গণিতজ্ঞ হারবী আল-হিময়ারী তাঁকে গণিত শিক্ষা দেন।

বিজ্ঞাপন

পরবর্তী জীবনে শিয়াদের ষষ্ঠ ইমাম জ্ঞানতাপস জাফর আস-সাদিক ছিলেন জাবিরের শিক্ষক। ধর্মগুরু এবং ধর্ম-বিশ্বাসে গোঁড়া হলেও জাফর আস-সাদিক ছিলেন সর্ববিদ্যাবিশারদ। কুরআন, হাদিস, ফিকাহ, তফসির ছাড়াও দর্শন, জ্যোতিষশাস্ত্র এবং বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তাঁর অসাধারণ বুৎপত্তি ছিল।

তাঁর সংস্পর্শে এসেই জাবিরের বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা শুরু হয় এবং তাঁর নিকটেই জাবির রসায়নে অসামান্য দক্ষতা অর্জন করেন। প্রখ্যাত জীবন-চরিত রচয়িতা ইবনে খাল্লিকান বলেন, জাবির এসময়ে জাফর আস-সাদিকের পাঁচশত বিজ্ঞান-বিষয়ক গ্রন্থ সন্নিবেশ করে একটি দুহাজার পৃষ্ঠার গ্রন্থ সংকলন করেন। রসায়ন ব্যতীত জাবির চিকিৎসাবিদ্যাও উত্তমরূপে শিক্ষা করেন।

শিক্ষা সমাপ্ত করে জাবির পিতার কর্মস্থল কুফায় আগমন করেন এবং তথায় চিকিৎসা-ব্যবসায় শুরু করেন। অতি অল্পসময়ের মধ্যই একজন নিপুণ চিকিৎসক হিসেবে তাঁর খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

এসময় জাবির বাগদাদের আব্বাসী খলিফাদের কৃপাদৃষ্টি লাভ করেন। উমাইয়া খলিফাদের হাতে জাবিরের পিতার করুণ মৃত্যুর ঘটনাও আব্বাসী খলিফাদের তাঁর প্রতি সহানুভূতি উদ্রেক করে। তাছাড়া আব্বাসী খলিফাদের প্রখ্যাত উজীর-বংশ বার্মাকীদের সঙ্গেও অপ্রত্যাশিতভাবে জাবিরের বন্ধুত্ব হয়ে যায়।

রসায়নবিদ জাবির ইবনে হাইয়ান

এসময় খলিফা হারুন অর-রশীদের (৭৮৬-৮০৯ খ্রিঃ) প্রধান উজীর ইয়াহিয়া বার্মাকীর এক সুন্দরী বাঁদীকে জাবির বিস্ময়করভাবে দুরারোগ্য রোগ থেকে নিরাময় করেন। তার ফলে জাবির বার্মাকীদের সঙ্গে বিশেষ করে জাফর বার্মাকীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ হয়ে ওঠেন এবং তাঁর মাধ্যমে খলিফা হারুন অর-রশীদের দরবারে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন এবং একাগ্রচিত্তে জ্ঞানসাধনার সুযোগ পান।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু ৮০৩ খ্রিস্টাব্দে বার্মাকীদের পতনের পর জাবির রাজানুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হন এবং কুফায় প্রত্যাবর্তন করেন। এই কুফাতেই ৮০৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রাণ-বিয়োগ ঘটে। যদিও তাঁর মৃত্যু-সন নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে।

পেশায় একজন চিকিৎসক হলেও জাবির ইবনে হাইয়ান রসায়নবিদ হিসেবেই বিশ্ববিখ্যাত। তিনি তাঁর পূর্বসূরীদের চেয়ে অধিকতর গুরুত্বারোপ করেছেন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ওপর। তাঁর মতে, রসায়নবিদের সবচেয়ে বড় কর্তব্য হচ্ছে হাতে-কলমে কাজ করা এবং পরীক্ষা চালানো। হাতে-কলমে কাজ না করলে কিংবা নিজে পরীক্ষা না চালালে রসায়নে কিছুমাত্র সাফল্য অর্জন করা এবং পূর্ণ জ্ঞানলাভ করা সম্ভব নয়।

এই হাতে-কলমে শিক্ষা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কারণেই জাবির ইবনে হাইয়ান রসায়নের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর প্রায় দু’শো বছর পর কুফায় রাস্তা পুনর্নির্মাণের সময় জাবিরের ল্যাবরেটরী আবিষ্কৃত হয় এবং সেখানে কিছু স্বর্ণসহ একটি থলে পাওয়া যায়।

সব ধাতুই আসলে এক

মিশর ও গ্রিসের পূর্বসূরীদের মতো জাবিরও বিশ্বাস করতেন যে, সব ধাতুই আসলে এক, অতএব এক ধাতুকে অন্য ধাতুতে পরিবর্তন করা সম্ভব; সোনা’ই সব ধাতুর মধ্যে খাঁটি, তারপর রূপার স্থান; এবং এমন একটি প্রক্রিয়া থাকা সম্ভব যার সাহায্যে টিন, সীসা, লোহা ও তামার মতো নিকৃষ্ট ধাতুগুলোকে উৎকৃষ্ট ধাতুতে পরিণত করা যেতে পারে। কিমিয়া বা রসায়নের সাধনায় এই ধারণাই জাবিরকে সবচেয়ে বেশি প্রেরণা ও উৎসাহ যুগিয়েছিল।

জাবির ইবনে হাইয়ানের মৌলিক অবদান সম্পর্কে পণ্ডিতগণ নিশ্চিত। রসায়নবিদ্যার দুটি প্রধান প্রক্রিয়া লঘুকরণ ও তাপ প্রয়োগে কোনো পদার্থকে চূর্ণ করার পদ্ধতিটি তিনিই প্রথম বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ব্যখ্যা করেন। এছাড়া রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় দ্রব্যাদি প্রস্তুত করার কাজে জাবিরের প্রত্যক্ষ জ্ঞান ছিল অসাধারণ।

বিজ্ঞাপন

তিনিই সর্বপ্রথম বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে রসায়নের প্রাথমিক প্রক্রিয়াগুলির অনুশীলন করার উপায় উদ্ভাবন করেন। পাতন, ঊর্ধ্বপাতন, পরিস্রাবণ, দ্রবণ, কেলাসন, ভস্মীকরণ, বাষ্পীভবন ও গলন প্রভৃতি রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলির সূত্রপাত তাঁর হাতেই সম্ভব হয়েছিল।

এছাড়া ইস্পাত তৈরি, ধাতুর শোধন, তরল ও বাষ্পীকরণ প্রণালী, বস্ত্র ও চর্ম রঞ্জন, ওয়াটার-প্রুফ, কাপড়ের ও লোহার মরিচা-রোধক বার্নিশ, চুলের নানারকম কলপ প্রভৃতি রাসায়নিক দ্রব্য প্রস্তুতের প্রণালী ও বিধি সম্বন্ধে বিস্তারিত বর্ণনা তিনি তাঁর রচনাবলীতে দিয়েছেন।

হস্তলিপির জন্য চিরস্থায়ী উজ্জ্বল রঙের কালি প্রস্তুতের প্রণালীও তাঁর লেখাতে পাওয়া যায়। এই কালি মূল্যবান সোনা থেকে প্রস্তুত না করে মারকাসাইট (marcasite) থেকে প্রস্তুত হতো। এছাড়া সিরকা পাতনপূর্বক সিরকা-প্রধান অম্ল তৈরি করতেও তিনি সক্ষম ছিলেন।

জাবিরের রাসায়নিক তত্ত্ব

জাবিরের রাসায়নিক তত্ত্ব অ্যারিস্টটলের তত্ত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত। ধাতুর উপাদান-সংক্রান্ত অ্যারিস্টটলের তত্ত্বের তিনি উন্নতি ঘটিয়েছিলেন। তাঁর তত্ত্বের ভিত্তি মোটামুটি নিম্নরূপ: বস্তু চারটি পদার্থ যথা- মাটি, পানি, বায়ু ও অগ্নি দ্বারা গঠিত।

এই মাটি, পানি, বায়ু ও অগ্নির গঠনে চারটি গুণ বা স্বভাব ক্রিয়াশীল। যেমন–তাপ, শৈত্য, শুষ্কতা ও আর্দ্রতা। আবার এ স্বভাব গঠনে ‘সালফার’ এবং ‘মার্কারী’ সহায়তা করে। সালফার এবং মার্কারী যখন বিশুদ্ধ হয়, তখন বিশুদ্ধ ধাতু গঠনে সহায়ক হয়; কিন্তু বিশুদ্ধ না হলে ধাতুর গঠন ত্রুটিপূর্ণ হয়।

বিজ্ঞাপন

তবে এ ত্রুটি একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় দূর করা যায়, এর নাম এলিস্কির (আল-ইকসীর)। এই ইকসীর গঠনে জাবির ভারসাম্যের তত্ত্ব প্রবর্তন করেন। তিনি খনিজ পদার্থকে তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করেন: (ক) সিজরিট জাতীয় উদ্বায়ী, যা তাপে উবে যায়; যেমন পারদ, কর্পূর ইত্যাদি। (খ) ধাতু যা আঘাতে প্রসারমান; যেমন সোনা, রূপা, লোহা প্রভৃতি। এবং (গ) যাকে প্রসারিত করা যায় না, কিন্তু যা চূর্ণ হয়ে যায়।

মোট কথা তিনি অ্যারিস্টটলের রাসায়নিক তত্ত্বের পুরো কাজটি এমন সুনিপুণভাবে করেছিলেন যে, অষ্টাদশ শতাব্দীতে আধুনিক রসায়নের যুগ শুরু হবার আগ পর্যন্ত কিছুটা পরিবর্তিত আকারে জাবিরের উন্নত চিন্তাই ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল।

জাবির ইবনে হাইয়ানের রচিত গ্রন্থ সমূহ

জাবির ইবনে হাইয়ান কতগুলো গ্রন্থ রচনা করেছিলেন, তা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। মধ্যযুগের অন্যান্য মনীষীর মতো জাবির ইবনে হাইয়ানও জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার ওপর গ্রন্থ রচনা করেন।

চিকিৎসাশাস্ত্রের ওপর তাঁর লেখা বিখ্যাত বইয়ের নাম ‘আল- জহর’ বা বিষ। মৌলিকতার দিক দিয়ে এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ গ্রন্থের ওপর গ্রিক চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রভাব থাকলেও জাবির এ বইতে গ্রিক নাম খুব কমই ব্যবহার করেছেন।

এছাড়া এ গ্রন্থে তিনি বিভিন্ন রোগ ও ভেষজের নামের ক্ষেত্রে আরবি পরিভাষা ব্যবহার করায় গ্রন্থটির মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বড় গ্রন্থ ব্যতীত জাবির চিকিৎসা-বিষয়ক ছোট ছোট পুস্তিকাও রচনা করেন।

বিজ্ঞাপন

এগুলোতে ভেষজতত্ত্ব, রোগনির্ণয়, ওষুধ নির্বাচন, এনাটমি বা শব-ব্যবচ্ছেদ প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে। এছাড়া চিকিৎসক হিসেবে তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথাও তিনি কোনো কোনো পুস্তিকায় উল্লেখ করেছেন।

রসায়নবিদ্যা সম্পর্কে ল্যাটিন ও আরবি ভাষায় জাবির ইবনে হাইয়ানের নামে যে একশোটি বই চালু আছে সেগুলোর অধিকাংশই তাঁর লেখা নয়। ইখওয়ান আস-সাফার মতো একটি ইসমাঈলী বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠী পরবর্তীকালে এর অধিকাংশ গ্রন্থ রচনা করেন।

তবুও বলা চলে, যে বইগুলোর সঙ্গে তাঁর নাম যুক্ত আছে চতুর্দশ শতাব্দীর পরবর্তী সময়ে ইউরোপ ও এশিয়া উভয় মহাদেশেই রসায়নবিদ্যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বই হিসেবে সেই বইগুলোই চালু ছিল। আরবি ভাষায় লেখা জাবির ইবনে হাইয়ানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থটির নাম ‘কিতাব আল-সুনদুক আল-হিকমা’।

এ গ্রন্থে তিনি নাইট্রিক এসিডের বিষয় উল্লেখসহ রসায়ন বিজ্ঞানে তাপে চূর্ণকরণ, কেলাসন, দ্রবণ, ঊর্ধ্বপাতন ও লঘুকরণ প্রক্রিয়ার নির্ভুল বর্ণনা দেন। উল্লিখিত গ্রন্থ ব্যতীত জাবির ইবনে হাইয়ানের ‘কিতাব আল-রাহমা (ক্ষমা-সংক্রান্ত বই)’, ‘কিতাব আল-তাজমি (একাগ্র-সংক্রান্ত)’ এবং ‘আল-জিবাক আল-শারকি (প্রাচ্যে পারদ-সংক্রান্ত)’ বইসহ আরও পাঁচটি বই আরবি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে।

ইউরোপীয় রাসায়নিক জ্ঞান ও রসায়ন

চিন্তাধারায় জাবির ইবনে হাইয়ানের প্রভাব প্রায় সব স্তরেই নজরে পড়ে। ধাতুর গুণাগুণ সম্বন্ধে জাবিরের মতামত নিঃসন্দেহে গ্রিক বৈজ্ঞানিকদের চেয়ে উন্নত ছিল- একথা প্রত্যেক ইউরোপীয় বৈজ্ঞানিক অকুণ্ঠচিত্তে স্বীকার করেন। এজন্যই বর্তমান বিশ্বের প্রত্যেক বৈজ্ঞানিকের নিকট জাবির (Geber) এত শ্রদ্ধার পাত্র।

বিজ্ঞাপন

এক কথায় ধাতু সম্পর্কে তাঁর মৌলিক মতামত আঠারো শতক পর্যন্ত ইউরোপের রসায়ন-শিক্ষায় বিনা দ্বিধায় গৃহীত হতো। এছাড়া চৌদ্দ শতক থেকে আঠারো শতক পর্যন্ত তাঁর লেখা বইগুলো ইউরোপ ও এশিয়ার বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিল।

আরবি ভাষায় লেখা জাবিরের গ্রন্থ থেকে বহু বৈজ্ঞানিক পরিভাষা যেমন, alkali, antimony, alembic, aludel tutia, realgar প্রভৃতি ল্যাটিন ভাষার মাধ্যমে ইউরোপীয় ভাষাসমূহে প্রবেশলাভ করেছে।

আরবি ভাষায় ‘জাবির’ শব্দের অর্থ যিনি শৃঙ্খলা বিধান করেন, সংস্কার সাধন করেন। আমাদের জ্ঞান-ভাণ্ডারের সংস্কার সাধন করে জাবির রসায়নশাস্ত্রের জন্মদান করেছেন, আমাদের জীবনধারাকে সুশৃঙ্খলভাবে রূপায়িত করবার, রসায়িত ও রঞ্জিত করবার এক আশ্চর্য জ্ঞানদীপ জ্বেলে গেছেন।

তাই তিনি নিখিল বিশ্বের স্মরণীয় ও বরণীয় এবং তাঁর জ্ঞানসম্পদ বিশ্বমানবের উত্তরাধিকার। যথার্থই তিনি বলে গেছেন- আমার টাকাকড়ি, ধনদৌলত আমার ছেলেরা ভাইয়েরা ভাগ করে নিয়ে ভোগ করবে। কিন্তু জ্ঞানের দরজায় বারবার আঘাত করে যে শিক্ষা আমি দিয়ে গেলাম, তাই আমার তাজ বা মুকুট হিসেবে চিরকাল শোভা পাবে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

আবদুল্লাহ আল মাসুদ

ছাত্র, রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন
Back to top button